Ajker Patrika

নির্বাচনী সহিংসতায় মামলা: গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য দুই গ্রাম

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ১০
নির্বাচনী সহিংসতায় মামলা: গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য দুই গ্রাম

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন (ইউপি)-পরবর্তী সহিংসতা ও একজন নিহতের ঘটনায় চারটি মামলার পর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দুটি গ্রাম অনেকটাই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুরো গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুরুষ সদস্যরা বাড়িঘর ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। কোনো বাড়িতে আবার নেই কেউই। ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। 

জানা গেছে, গত রোববার ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা এবং পুনরায় ভোট গণনার দাবি তুলে নয়ারচর ও আন্ডারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। এ সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোট গ্রহণকারী সংশ্লিষ্টদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দুটি কেন্দ্রের পরাজিত দুই ইউপি সদস্যের কর্মী-সমর্থকেরা এ ঘটনা ঘটায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অবরুদ্ধদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক দফায় ৩৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আব্দুল খালেক হোসেন নামে একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি পরাজিত ইউপি সদস্য জিয়াউরের সমর্থক ছিলেন। 

নির্বাচনী সহিংসতার পর সহস্রাধিক লোককে আসামি করে দুই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তিনটি এবং নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। এতে গা-ঢাকা দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের নয়ারচর ও চরআন্ডা গ্রামের অসংখ্য মানুষ। ফলে গ্রাম দুটি এখন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। পুরুষশূন্য তো হয়েছেই, কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়েও গা ঢাকা দিয়েছেন।

সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, মামলার খবর পেয়ে ঘটনায় জড়িতরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলা এবং উপজেলা গলাচিপাসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে গেছেন। 

এ বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, নির্বাচনকালীন এবং পরবর্তীতেও কিছুদিন গ্রামগঞ্জে আমেজ থাকে। কিন্তু এ ঘটনার কারণে পুরো চরমোন্তাজে বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়েও কর্মী-সমর্থকদের কোনো উৎসব-আমেজ নেই। এ পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হয় তাও বলা যাচ্ছে না।

ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেআইনিভাবে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে পুলিশের কাজে বাধা, হামলা চালিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের আহত করা, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও ক্ষতি সাধনের অপরাধে ঘটনার পরদিন গত সোমবার রাতে রাঙ্গাবালী থানায় এ চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে মোট ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এর মধ্যে আন্ডারচর কেন্দ্রে সহিংস ঘটনার মূল হোতা মজিবরকে গলাচিপা থেকে গ্রেপ্তার করে গত মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।   

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও একজন নিহতের ঘটনায় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম চরমোন্তাজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, চার মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত