Ajker Patrika

‘এই হল আমার, আমার কথাতেই চলবে’, প্রাধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেত্রী

কুবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৪: ২০
‘এই হল আমার, আমার কথাতেই চলবে’, প্রাধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেত্রী

‘এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে। যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দিব। আপনাকে এই হলের দায়িত্ব কে দিয়েছে?’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানের উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিন। 

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হল পরিদর্শনে এসে কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ফাইজা এমন আচরণ করেন। 

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান বলেন, ‘হলে কোন শিক্ষার্থী উঠবে আর কোন শিক্ষার্থী উঠবে না, এই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী তো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হল সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি, তা শুধু ফাইজার জন্য সম্ভব হচ্ছে না।’ 

তবে এ ধরনের কথা অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্যারকে এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম—এই হল তো আমারও।’ 

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা হলের ২১৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আইসিটি বিভাগের ১২তম আবর্তনের প্রেয়সী সানা অন্য কক্ষে স্থানান্তর হওয়ার জন্য হল প্রভোস্ট বরাবর আবেদন করেন। তাঁকে ২১৬ নম্বর কক্ষের একটি সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রেয়সী তাঁর বরাদ্দ পাওয়া সিটে উঠতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম আবর্তনের রায়হানা আনজুম মিমকে অবস্থান করতে দেখেন। সমাধানের জন্য হল প্রভোস্টকে ফোন দিলে প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান এসে মিমকে এখানে অবস্থানের কারণ জানতে চান। কাজী ফাইজা মেহজাবিন এখানে তাঁকে থাকতে বলেছেন বলে জানান। পরে এ নিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রভোস্টকে উদ্দেশ ওপরে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন। 

ঘটনার সময় হলে অবস্থারত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফাইজার এমন আচরণ নতুন কিছু না। সে একজন শিক্ষক সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারে তাহলে ভাবুন আমাদের সাথে কী ধরনের আচরণ করে থাকে! প্রতিদিন সকাল বেলা তার চিল্লাচিল্লিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। হলে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থী তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।’ 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ওই হলের হাউস টিউটর মো. আল আমিন বলেন, ‘হল প্রভোস্টের সাথে ফাইজার আচরণ শিক্ষার্থী সুলভ নয়।’ 

এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান বলেন, ‘হলে কোন শিক্ষার্থী উঠবে আর কোন শিক্ষার্থী উঠবে না, এই এখতিয়ার সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী তো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হল সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি তা শুধু ফাইজার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।’ 

অবশ্য শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও নানা ইস্যুতে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। 

গত বছরের ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা হলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে হলে উঠতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে সিটে ওঠানো হয়। কিন্তু হল উদ্বোধনের পর থেকেই ছাত্রলীগ নেত্রী ফাইজা নিজের মতো সিট বদল করতে থাকেন। এ ছাড়া বরাদ্দকৃত সিটে না উঠতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি তাঁর মতো শিক্ষার্থীদের সিটে তোলেন। শুধু তাই নয়, রাত ৯টার পর হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না, হল গেটে শিক্ষার্থীদের কেউ এগিয়ে দিতে পারবে না—এমন নানা নিয়ম তৈরি করেছেন ফাইজা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের হল প্রশাসন সিট দিয়েছে। কিন্তু ফাইজার কথা হচ্ছে, সেই সিট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে নাকি ছাত্রলীগ করতে হবে! যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না তাদের সিট নিয়ে সে বরাবর ঝামেলা করে।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম আবর্তনের কোনো শিক্ষার্থীকে শেখ হাসিনা হল প্রশাসন সিট বরাদ্দ দেয়নি। কিন্তু কাজী ফাইজা মেহজাবিন হলে সিঙ্গেল সিটে থাকা শিক্ষার্থীদের ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করছেন। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী পাঁচ থেকে দশ দিনের জন্য বাড়ি গেলেই তাঁর সিটে অন্য কাউকে তুলে দেওয়ার ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে হল প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সিট বাঁচিয়েছেন। 

এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র শেখ হাসিনা হলে কোনো গণরুম নেই। তবে ক্ষমতা সংহত করতে নবীন শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করতে হলের গেম রুমকে গণরুম বানানোর পরিকল্পনাও করছেন ফাইজা—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি চার থেকে পাঁচ দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়ে বলে হলে না আসলে নাকি আমার সিট বাতিল করে দিবে। আমার সিট বাতিল করার সে কে? সেও শিক্ষার্থী, আমিও শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে হল প্রশাসনের সাথে কথা বলে আমি আমার সিট বহাল রেখেছি।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের সংক্ষিপ্ত কমিটির একজন বলেন, ‘গেমরুমকে গণরুম বানাবে বলে শুনেছি। এই বিষয়ে প্রভোস্ট স্যারের সাথে ফাইজার কথা-কাটাকাটিও হয়েছে যতদূর জানি।’ 

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কাজী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, ‘আমি এ রকম কিছুই করি নাই। হলের সিটে এলোটমেন্ট তো আমি দেই না। হলে প্রশাসন দেয়। আমাদের হলে অবৈধ কিছু হয় না।’ 

হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা হল উদ্বোধনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও প্রথম আসন বরাদ্দের লিস্টে নাম আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু কাজী ফাইজা মেহজাবিনই ফির ১ হাজার ২৫০ টাকা হল প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেননি। বিষয়টি হল প্রশাসনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ‘সবাই দিলেও সে হল প্রশাসনকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। আমি বেশ কয়েকবার বলেছি কিন্তু সে নানা অজুহাতে দেখায়। নিয়ম অনুযায়ী তার সিট বাতিল হওয়ার কথা। আমি তার সাথে এই ব্যাপারে সামনে কথা বলব। হল প্রশাসনকে টাকা বুঝিয়ে না দিলে আমি তার সিট বাতিল করার প্রক্রিয়ার দিকে আগাব।’ 

এ ব্যাপারে ফাইজা বলেন, ‘আমার টাকা কিছু বাকি ছিল। সেটা আমি দিয়ে দিয়েছি। স্যার সম্ভবত এখনো বিষয়টি পাননি।’ 

সার্বিক অভিযোগের ব্যাপারে হল প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ‘অনেক মেয়ে নানা সময় তাকে নিয়ে আমাকে অভিযোগ করেছে। তখন মেয়েদের আমি বুঝিয়েছি লিখিত ডকুমেন্ট দিলে আমার ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। কিন্তু মেয়েরা এখানে পড়তে এসেছে। তাদের পরবর্তী সময়ে অসুবিধার কথা চিন্তা করে আর কোনো অভিযোগ করেনি। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নিতে পারিনি।’ 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘এখানে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আছে। প্রভোস্ট স্যারও নাকি ছাত্রলীগ সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে। এখানে দুইজনের দুই রকমের বক্তব্য শুনছি। আমরা তদন্ত করে দেখব এবং যদি ফাইজা এমন কিছু বলে থাকে তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। হল ছাত্রলীগের না, হল প্রশাসনের প্রশাসন চালাবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু প্রগতিশীল রাজনীতি করি, এখন কয়েকটা মেয়ে হলে ছাত্রলীগের ব্যানারে উঠুক আমরাও চাই। যেহেতু হলে সিট সংকট এখন যদি কোনো মেয়ে হলে উঠতে চায়, সেহেতু গণরুমকে আমরা সাংগঠনিকভাবে পজিটিভ ভাবেই দেখি।’ 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘হল চালাবে প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা এখানে আসবে কেন? আমি বিষয়টা অবগত হয়েছি। বিষয়টা আলোচনা করে দেখব।’ 

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা হলের বাইরে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে। বাসে থাপ্পড় মারার ঘটনাও রয়েছে। গত বছরের ৯ নভেম্বর বাসে সিট রাখাকে কেন্দ্র করে এক ছেলে শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেই শিক্ষার্থীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত