নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
বাবার কাঁচামালের ব্যবসায় সহায়তা করতে ঢাকায় আসা। চাঁদপুরের ছোটখাটো গড়নের সেই আবদুল হান্নানই একসময় হয়ে ওঠেন ত্রাস, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান। অপরাধের মাধ্যমে আয় করেন বিপুল অর্থসম্পদ। ঢাকার অপরাধজগতে সুব্রত বাইনদের সেভেন স্টার গ্রুপের প্রতিপক্ষ ফাইভ স্টার গ্রুপের অন্যতম সদস্য।
তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন পিচ্চি হান্নান। ২০০৪ সালের ২৩ জুন উত্তরায় অল্পের জন্য র্যাবের হাত থেকে ফসকে গেলেও ২৬ জুন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ২১টি হত্যা মামলার এই আসামি। একসময় তাঁর জানাশোনা ছিল অনেকের সঙ্গে, আশপাশেও ছিলেন অনেকে। এখন মা, দুই বোন, ভগ্নিপতি, ভাগনে-ভাগনি ছাড়া আপন ভাইয়েরাও তাঁর পরিচয় দিতে চান না। মা-বোনদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ রাখেন না তাঁর দুই স্ত্রী, সন্তানেরা।
কেমন আছে পিচ্চি হান্নানের পরিবার। সেই খোঁজ নিতে সম্প্রতি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সন্তোষপুরে যাওয়া। ভাঙাচোরা পাকা সড়কে রিকশা থেকে নেমে কাঁচা সড়ক ধরে কয়েক কদম যেতেই দেখা গেল, ১৪-১৫ বছর বয়সী তিন-চারজন শিশু খেলছে। হান্নানের বাড়ি কোনটা জানতে চাইলে তাদের একজনের পাল্টা প্রশ্ন, কোন হান্নান? পিচ্চি হান্নান বলতেই সে বলল, তিনি আমার মামা। আমার সঙ্গে আসেন। সে আমাদের নিয়ে গেল মিনিট হাঁটা দূরত্বের একটি বাড়িতে। কাছাকাছি আর কোনো বাড়ি নেই। বিশাল ওই বাড়ির এক পাশে দুটি, অন্য পাশে একটি টিনের ঘর। সব ঘরের সামনেই বড় ও চওড়া বারান্দা।
পথ দেখানো ছেলেটি অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটিতে ঢুকে গেল। ওই ঘরেই থাকেন পিচ্চি হান্নানের মা আয়েশা বেগম। তিনি ভেতরে ডাকলেন। বারান্দায় বসে কথা বলার ইচ্ছা জানালে ভেসে এল বৃদ্ধার অভিমানী গলা, ‘কেন, আমরা কি মানুষ না? আমগো ঘরে আইবো না কেন?’ এরপর ভেতর থেকে থেমে থেমে আসে কান্নার আওয়াজ। এই প্রতিবেদক এবং নাতির অনেক অনুরোধেও আর কথা বলেননি তিনি। চলল অপেক্ষা। বাড়ির অপর তিন সদস্যের মধ্যে ওই ছেলেটির মা পারভীন আক্তার ও বোন গেছেন চাঁদপুর শহরে। পারভীনের স্বামী খোকন ব্যাপারীও আশপাশে নেই।
সন্ত্রাসীর অন্দরমহল (পর্ব ১) সম্পর্কিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ির বাইরে পুকুরের ঘাটলা থেকে এলেন খোকন ব্যাপারী। তাঁর অনুরোধেও কাজ হলো না। খোকন জানালেন, হান্নান বেঁচে থাকতেই তাঁর অনুরোধে শাশুড়িকে দেখাশোনার জন্য স্ত্রী-সন্তানসহ এ বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে প্রবাসী। বারান্দা থেকেই দেখা যায়, আয়েশা বেগমের ঘরটিতে প্রয়োজনীয় আসবাব, একটি টেলিভিশন, নিত্যব্যবহার্য জিনিস ছাড়া আর কিছু নেই। ঘরে হান্নানের কোনো ছবি নেই—প্রশ্ন করতেই খোকন বললেন, ‘এই ঘরের বেড়ায় তার দুইডা ছবি আছিলো। মরার পর ওইডি পুলিশ নিয়া গ্যাছে।’
তখনো ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। খোকন জানালেন, কেউ ছেলের কথা জানতে চাইলে বা মনে পড়লে তাঁর শাশুড়ির কান্না সহজে থামে না। এই ছেলের প্রতি তাঁর টান অনেক বেশি। হান্নানেরও মায়ের প্রতি ভীষণ টান ছিল। একবার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে চাঁদপুর হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন হান্নান। সেটাই ছিল মা-ছেলের শেষ দেখা। হান্নানের মৃত্যুর খবর গোপন রাখতে তাঁর লাশ গ্রামে আসার আগেই আয়েশা বেগমকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বড় মেয়ে বুলি আক্তারের শ্বশুরবাড়ি এখলাশপুর গ্রামে। দাফনের এক সপ্তাহ পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে বাড়িতে আনা হয় তাঁকে। পাঁচ বছর পর তিনি জানতে পারেন, হান্নান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। এরপর থেকে তাঁর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ সময় কাটে জায়নামাজে। মাঝে মাঝে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যান দুটি খেত পেরিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে। বসে থাকেন ছেলের কবরের পাশে। দেয়ালঘেরা একটি জায়গায় মাঝে ফাঁকা রেখে দুটি কবর। কোনো নামফলক নেই। এক পাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু কবরটি হান্নানের। আরেকটি তাঁর স্বামী ওয়াজিউল্লাহর। মাঝের জায়গাটি তাঁর জন্য।
বলে চলেন খোকন। ঢাকায় হান্নানের দুটি বাড়ি। এর একটি পুরান ঢাকার আইজি গেটে। বিয়ে করেছিলেন দুটি। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন মেয়ে, এক ছেলে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক মেয়ে। তবে হান্নান থাকতেন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আইজি গেটের বাড়িতে। তিনি বেঁচে থাকতে আত্মীয়স্বজন ওই বাড়িতেই যেত। এখনো প্রথম স্ত্রী ওই বাড়িতেই থাকেন। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো খোঁজ জানেন না। দুই স্ত্রীর নামও জানেন না। যেদিন হান্নানের লাশ গ্রামে আনা হয়েছিল, সেদিন দুই স্ত্রীই তাঁদের সন্তান নিয়ে এসেছিলেন। খোকন বলেন, ‘হের (হান্নান) বউ, হোলা-মাইয়ারা কবর দেখতে আইয়ে নো। কোনো দিন আমগো খোঁজখবরও লয় নো। তাগো মনো ডর, যদি ভাইয়ের টাকার ভাগ আমগোরে দিতে অয়।’ একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘তাগো কথা কী আর কমু, আপন ভাইয়েরাই তো খোঁজখবর লয় নো। ভাই (হান্নান) মরার পর পরিচয়ও দেয় নো।’ তখনো পাওয়া যাচ্ছিল আয়েশা বেগমের কান্নার আওয়াজ।
তবে খোকনের ছেলে জানায়, চার বছর আগে হঠাৎ তার বড় মামি এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছেন। ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে মানুষ আসে তার মামার কবর দেখতে।
ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই হাতের ডানে একটি মসজিদ। পিচ্চি হান্নানের অর্থায়নে নির্মিত এই মসজিদের সামনে তাঁর ছোট ভাই সৌদিপ্রবাসী রহিমের আধাপাকা বাড়ি। সেখানে রহিমের স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন। তাঁদের সঙ্গে হান্নানের মা ও ছোট বোনের কোনো যোগাযোগ নেই। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে হান্নান দ্বিতীয় হলেও ভাইদের মধ্যে বড়। মেজ ভাই শফিক ও সেজ ভাই রফিক ঢাকায় থাকেন। বড় বোন বুলি মাঝেমধ্যে মা-বোনের খোঁজ নিলেও ভাইয়েরা নেন না। ভাইয়েরা হান্নানের পরিচয়ও দেন না।
মসজিদ ও রহিমের বাড়ির মাঝখান দিয়ে গেছে একটি সরু পথ। মসজিদের পেছনেই হান্নানদের পারিবারিক কবরস্থান। কবরের ওপর শুকনো পাতার স্তূপ, জংলা গাছ, দেয়ালের পলেস্তারায় শেওলার মোটা আস্তরণ।
ফেরার পথে স্থানীয় ফিরোজপুর বাজারে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। ওই বাজারেই ছিল হান্নানের বাবার কাঁচামাল ও মুদির দোকান। ঢাকায় আসার আগে যেখানে হান্নানও বসতেন। আলাপকালে বাজারের লোকজন জানান, ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ হান্নানকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে জানলেও গ্রামে তিনি ছিলেন সহজ, সরল, সদালাপী। টেলিভিশন, পত্রিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তাঁর নাম দেখে তাঁদের বিশ্বাসই হতো না। এলাকায় কোনো খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন না। ঈদে অসহায়দের কাপড় ও আর্থিক সহায়তা দিতেন।
বাজারেই দেখা হয় হান্নানের ছোটবেলার বন্ধু মো. মোস্তফার সঙ্গে। একসময় প্রবাসে থাকলেও এখন এলাকায় ইজিবাইক চালান। তিনি বললেন, ‘এলাকার মানুষ তারে ভালো জানতো। এলাকার মানুষের লগে কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করে নাই।’
ফেরার সময় বারবার কানে বাজছিল খোকন ব্যাপারীর কথা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা কবর দেখতে আসেন না। ভাইয়েরা পরিচয়ও দেন না।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
বাবার কাঁচামালের ব্যবসায় সহায়তা করতে ঢাকায় আসা। চাঁদপুরের ছোটখাটো গড়নের সেই আবদুল হান্নানই একসময় হয়ে ওঠেন ত্রাস, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান। অপরাধের মাধ্যমে আয় করেন বিপুল অর্থসম্পদ। ঢাকার অপরাধজগতে সুব্রত বাইনদের সেভেন স্টার গ্রুপের প্রতিপক্ষ ফাইভ স্টার গ্রুপের অন্যতম সদস্য।
তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন পিচ্চি হান্নান। ২০০৪ সালের ২৩ জুন উত্তরায় অল্পের জন্য র্যাবের হাত থেকে ফসকে গেলেও ২৬ জুন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ২১টি হত্যা মামলার এই আসামি। একসময় তাঁর জানাশোনা ছিল অনেকের সঙ্গে, আশপাশেও ছিলেন অনেকে। এখন মা, দুই বোন, ভগ্নিপতি, ভাগনে-ভাগনি ছাড়া আপন ভাইয়েরাও তাঁর পরিচয় দিতে চান না। মা-বোনদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ রাখেন না তাঁর দুই স্ত্রী, সন্তানেরা।
কেমন আছে পিচ্চি হান্নানের পরিবার। সেই খোঁজ নিতে সম্প্রতি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সন্তোষপুরে যাওয়া। ভাঙাচোরা পাকা সড়কে রিকশা থেকে নেমে কাঁচা সড়ক ধরে কয়েক কদম যেতেই দেখা গেল, ১৪-১৫ বছর বয়সী তিন-চারজন শিশু খেলছে। হান্নানের বাড়ি কোনটা জানতে চাইলে তাদের একজনের পাল্টা প্রশ্ন, কোন হান্নান? পিচ্চি হান্নান বলতেই সে বলল, তিনি আমার মামা। আমার সঙ্গে আসেন। সে আমাদের নিয়ে গেল মিনিট হাঁটা দূরত্বের একটি বাড়িতে। কাছাকাছি আর কোনো বাড়ি নেই। বিশাল ওই বাড়ির এক পাশে দুটি, অন্য পাশে একটি টিনের ঘর। সব ঘরের সামনেই বড় ও চওড়া বারান্দা।
পথ দেখানো ছেলেটি অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটিতে ঢুকে গেল। ওই ঘরেই থাকেন পিচ্চি হান্নানের মা আয়েশা বেগম। তিনি ভেতরে ডাকলেন। বারান্দায় বসে কথা বলার ইচ্ছা জানালে ভেসে এল বৃদ্ধার অভিমানী গলা, ‘কেন, আমরা কি মানুষ না? আমগো ঘরে আইবো না কেন?’ এরপর ভেতর থেকে থেমে থেমে আসে কান্নার আওয়াজ। এই প্রতিবেদক এবং নাতির অনেক অনুরোধেও আর কথা বলেননি তিনি। চলল অপেক্ষা। বাড়ির অপর তিন সদস্যের মধ্যে ওই ছেলেটির মা পারভীন আক্তার ও বোন গেছেন চাঁদপুর শহরে। পারভীনের স্বামী খোকন ব্যাপারীও আশপাশে নেই।
সন্ত্রাসীর অন্দরমহল (পর্ব ১) সম্পর্কিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ির বাইরে পুকুরের ঘাটলা থেকে এলেন খোকন ব্যাপারী। তাঁর অনুরোধেও কাজ হলো না। খোকন জানালেন, হান্নান বেঁচে থাকতেই তাঁর অনুরোধে শাশুড়িকে দেখাশোনার জন্য স্ত্রী-সন্তানসহ এ বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে প্রবাসী। বারান্দা থেকেই দেখা যায়, আয়েশা বেগমের ঘরটিতে প্রয়োজনীয় আসবাব, একটি টেলিভিশন, নিত্যব্যবহার্য জিনিস ছাড়া আর কিছু নেই। ঘরে হান্নানের কোনো ছবি নেই—প্রশ্ন করতেই খোকন বললেন, ‘এই ঘরের বেড়ায় তার দুইডা ছবি আছিলো। মরার পর ওইডি পুলিশ নিয়া গ্যাছে।’
তখনো ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। খোকন জানালেন, কেউ ছেলের কথা জানতে চাইলে বা মনে পড়লে তাঁর শাশুড়ির কান্না সহজে থামে না। এই ছেলের প্রতি তাঁর টান অনেক বেশি। হান্নানেরও মায়ের প্রতি ভীষণ টান ছিল। একবার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে চাঁদপুর হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন হান্নান। সেটাই ছিল মা-ছেলের শেষ দেখা। হান্নানের মৃত্যুর খবর গোপন রাখতে তাঁর লাশ গ্রামে আসার আগেই আয়েশা বেগমকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বড় মেয়ে বুলি আক্তারের শ্বশুরবাড়ি এখলাশপুর গ্রামে। দাফনের এক সপ্তাহ পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে বাড়িতে আনা হয় তাঁকে। পাঁচ বছর পর তিনি জানতে পারেন, হান্নান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। এরপর থেকে তাঁর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ সময় কাটে জায়নামাজে। মাঝে মাঝে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যান দুটি খেত পেরিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে। বসে থাকেন ছেলের কবরের পাশে। দেয়ালঘেরা একটি জায়গায় মাঝে ফাঁকা রেখে দুটি কবর। কোনো নামফলক নেই। এক পাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু কবরটি হান্নানের। আরেকটি তাঁর স্বামী ওয়াজিউল্লাহর। মাঝের জায়গাটি তাঁর জন্য।
বলে চলেন খোকন। ঢাকায় হান্নানের দুটি বাড়ি। এর একটি পুরান ঢাকার আইজি গেটে। বিয়ে করেছিলেন দুটি। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন মেয়ে, এক ছেলে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক মেয়ে। তবে হান্নান থাকতেন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আইজি গেটের বাড়িতে। তিনি বেঁচে থাকতে আত্মীয়স্বজন ওই বাড়িতেই যেত। এখনো প্রথম স্ত্রী ওই বাড়িতেই থাকেন। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো খোঁজ জানেন না। দুই স্ত্রীর নামও জানেন না। যেদিন হান্নানের লাশ গ্রামে আনা হয়েছিল, সেদিন দুই স্ত্রীই তাঁদের সন্তান নিয়ে এসেছিলেন। খোকন বলেন, ‘হের (হান্নান) বউ, হোলা-মাইয়ারা কবর দেখতে আইয়ে নো। কোনো দিন আমগো খোঁজখবরও লয় নো। তাগো মনো ডর, যদি ভাইয়ের টাকার ভাগ আমগোরে দিতে অয়।’ একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘তাগো কথা কী আর কমু, আপন ভাইয়েরাই তো খোঁজখবর লয় নো। ভাই (হান্নান) মরার পর পরিচয়ও দেয় নো।’ তখনো পাওয়া যাচ্ছিল আয়েশা বেগমের কান্নার আওয়াজ।
তবে খোকনের ছেলে জানায়, চার বছর আগে হঠাৎ তার বড় মামি এসে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছেন। ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে মানুষ আসে তার মামার কবর দেখতে।
ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই হাতের ডানে একটি মসজিদ। পিচ্চি হান্নানের অর্থায়নে নির্মিত এই মসজিদের সামনে তাঁর ছোট ভাই সৌদিপ্রবাসী রহিমের আধাপাকা বাড়ি। সেখানে রহিমের স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন। তাঁদের সঙ্গে হান্নানের মা ও ছোট বোনের কোনো যোগাযোগ নেই। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে হান্নান দ্বিতীয় হলেও ভাইদের মধ্যে বড়। মেজ ভাই শফিক ও সেজ ভাই রফিক ঢাকায় থাকেন। বড় বোন বুলি মাঝেমধ্যে মা-বোনের খোঁজ নিলেও ভাইয়েরা নেন না। ভাইয়েরা হান্নানের পরিচয়ও দেন না।
মসজিদ ও রহিমের বাড়ির মাঝখান দিয়ে গেছে একটি সরু পথ। মসজিদের পেছনেই হান্নানদের পারিবারিক কবরস্থান। কবরের ওপর শুকনো পাতার স্তূপ, জংলা গাছ, দেয়ালের পলেস্তারায় শেওলার মোটা আস্তরণ।
ফেরার পথে স্থানীয় ফিরোজপুর বাজারে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। ওই বাজারেই ছিল হান্নানের বাবার কাঁচামাল ও মুদির দোকান। ঢাকায় আসার আগে যেখানে হান্নানও বসতেন। আলাপকালে বাজারের লোকজন জানান, ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ হান্নানকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে জানলেও গ্রামে তিনি ছিলেন সহজ, সরল, সদালাপী। টেলিভিশন, পত্রিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তাঁর নাম দেখে তাঁদের বিশ্বাসই হতো না। এলাকায় কোনো খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন না। ঈদে অসহায়দের কাপড় ও আর্থিক সহায়তা দিতেন।
বাজারেই দেখা হয় হান্নানের ছোটবেলার বন্ধু মো. মোস্তফার সঙ্গে। একসময় প্রবাসে থাকলেও এখন এলাকায় ইজিবাইক চালান। তিনি বললেন, ‘এলাকার মানুষ তারে ভালো জানতো। এলাকার মানুষের লগে কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করে নাই।’
ফেরার সময় বারবার কানে বাজছিল খোকন ব্যাপারীর কথা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা কবর দেখতে আসেন না। ভাইয়েরা পরিচয়ও দেন না।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
সাতক্ষীরার ওয়ারী গ্রামে ব্যবসায়ী স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বুকের ওপর ‘সরি জান, আই লাভ ইউ’ লিখে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়ার পালপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করেছে।
৩ দিন আগেরাজধানীর উত্তরায় প্রকাশ্যে এক দম্পতিকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩ ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা রিমান্ডে নেওয়ার এ আদেশ দেন।
১৩ দিন আগেরাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার কল্পনা (১৩) সাড়ে তিন মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গণহত্যার সংজ্ঞা ও বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সনদ হলো Genocide Convention বা গণহত্যা সনদ, যা ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়। এই সনদের আওতায় একটি জাতি, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার লক্ষ্যে সংঘটিত অপরাধকেই গণহত্যা বলা হয়। এর মধ্যে হত্যা, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি,
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫