Ajker Patrika

জমির দালাল এমপি আনিস বিক্রি করেন নদীর জমি

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
Thumbnail image

জমির দালাল থেকে উত্থানের শুরু হয় ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এ বি এম আনিসুজ্জামান আনিসের। একটি কোম্পানিকে জমি পাইয়ে দিতে স্থানীয়দের সঙ্গে বিভেদে জড়িয়ে দুই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়ে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে উঠে আসে তাঁর নাম। দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে দুবার পৌরসভার মেয়র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন আনিস।

সরকার পতনের পর ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাবেক এমপি আনিসের বিরুদ্ধে। তাঁরা জানান, খুন, চাঁদাবাজি, দখলদারির পাশাপাশি আনিসের টর্চার সেলে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো মানুষকে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আনিসের প্রত্যক্ষ মদদে যুবলীগ নেতা পারভেজ খুন হন। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ৪ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মাস্টার খুনেও উঠে আসে আনিসের নাম। দুই ঘটনায় আনিসকে প্রধান আসামি করা হলেও প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে যান তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুতিয়া নদী দখল করে জাল দলিল বানিয়ে একটি কোম্পানির কাছে তা বিক্রি করে আনিস হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুলের বিপরীত পাশে রয়েছে তাঁর ১০ তলা বিলাসবহুল মেয়র টাওয়ার। ত্রিশালের চেলেরঘাটে আট একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন পেপার মিল। কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ একর জমি। রয়েছে ১০টি ট্রাক ও বিলাসবহুল গাড়ি। পৌরসভার পুকুর দখল করে মার্কেট নির্মাণের পর নিজের নামে দিয়েছেন ভাড়া।

স্থানীয় মনজুর রহমান বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগেও পৌরসভার সামনে গরুর হাটসংলগ্ন একটি পুকুর ছিল। তা লিজ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসায় টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু আনিস মেয়র থাকাকালীন হঠাৎ পুকুরটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। সেগুলো থেকে প্রতি মাসে এখনো নিয়মিত ভাড়া নেন তিনি।’

ত্রিশাল পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে আনিসের রাত-দিন পরিবর্তন হয়েছে। গাড়ি-বাড়িসহ শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।’

পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলু মণ্ডল বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড, জমি দখল, দলীয় বিভেদ সৃষ্টি করে ত্রিশালে আনিস ত্রাস করেছেন। আনিস ও তাঁর ছেলের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকেই।’

ত্রিশাল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মামুনুর রশীদ বলেন, ২০১১ সালে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আনিস। এরপর দলের বিরুদ্ধে গিয়ে টানা দুবার মেয়র হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন। মেয়র থাকাকালীন অবৈধভাবে তিনি শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। ২০২২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনে দুদকে অভিযোগ করি। তবে সেই অভিযোগটি আলোর মুখ দেখেনি।’

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত এ বি এম আনিসুজ্জামান আনিসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এখানে আমি যোগদান করার আগে সাবেক এমপি আনিসের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে অভিযোগটি কী পর্যায়ে রয়েছে, আমার জানা নেই। এখন যদি তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করে, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত