Ajker Patrika

‘কানাডায় দুদকের হেড অফিস করা হোক’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৭ জুন ২০২১, ১৫: ৫৮
‘কানাডায় দুদকের হেড অফিস করা হোক’

ঢাকা: গত বছর দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছিল কানাডার টরন্টো শহরের ‘বেগম পাড়া’। ওই সময় হাইকোর্ট কানাডায় বাড়ি কেনা সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছিলেন। প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারসহ অনেক বাংলাদেশি ‘বেগম পাড়ায়’ বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন বলেও জানিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশি কোটিপতিদের স্ত্রী এবং সন্তানরা টরন্টোর এই এলাকায় বাস করেন বলে জানা যায়।

ধারণা করা হয় দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে কানাডায়। এ কারণে দুদকের প্রধান কার্যালয় আপাতত সে দেশেই করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, বাংলাদেশে আপাতত দুদকের হেড অফিস রাখার দরকার নাই। কানাডায় করা হোক। আরেকটি মালয়েশিয়ায় ব্রাঞ্চ করুক। একটি আমেরিকায় করুক, অস্ট্রেলিয়ায় করুক, দুবাই করুক। এইখান থেকে তাহলে আমরা বুঝতে পারবো সঠিক চিত্রটা কী।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার করার সুযোগ রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জাপার এই সংসদ সদস্য বলেন, আমরা বারবার বলছিলাম, আমাদের কালোটাকা বলতে কোনো টাকা নাই। টাকা সব বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনেন। এখন আমেরিকা থেকে টাকা ফেরত আসছে। কেন আসতেছে? কারণ তারা জানেন এই দেশে যদি টাকা আনেন তাহলে হিসাব দিতে হবে না। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে অথবা কোনো সম্পদ কেনে তাহলে টেন পারসেন্ট দিয়ে এই টাকা লগ্নি করতে পারবেন। আমরা চাই আমাদের দেশের টাকা দেশে থাকুক। দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে আমরা কোনো সুযোগ দেব না? আপনি টকশো দেখে, পত্রিকা পড়ে আর আমাদের বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত হবেন না।

আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব খুব কঠিন। কিন্তু ওনার কর্তৃত্ব অত্যন্ত দুর্বল–এমন মন্তব্য করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘উনি কর্তৃত্ব, অথোরিটি খাটাতে পারেন না। ওনার যে মন্ত্রণালয় এর মধ্যেই উনি কর্তৃত্ব খাটান। কিন্তু বাইরে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে ব্যাংক এখানে ওনার কোনো কর্তৃত্ব নেই। অন্যান্য যে শিডিউল (তফসিলি) ব্যাংক আছে, লিজিং কোম্পানিগুলো আছে, ইনস্যুরেন্সগুলো আছে, কোনো জায়গায় যদি কর্তৃত্ব না থাকে অবাধে সবকিছু হবে। একটি ব্যাংক থেকে আরেকটি ব্যাংক টাকা নিচ্ছে। একটি ব্যাংকের ডাইরেক্টর অন্য ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ওই ব্যাংকের ডাইরেক্টর এই ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। টাকাটা নিয়ে তারা হুন্ডি করে বিদেশে পাচার করতেছে। এইভাবে তারা বহু টাকা, হাজার হাজার লক্ষ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করতেছে।’

জাপার এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি বলবো, ইতিমধ্যে হাইকোর্ট আমাদের বলে দিছেন যে আপনারা আমাদেরকে লিস্ট দেন, কারা কারা বিদেশে বাড়ি করেছেন, বেগমপাড়া বলেন, যে পাড়া বলেন। আমেরিকায় কারা বাড়ি করেছে, মালয়েশিয়ায় কারা বাড়ি করেছে লিস্ট দেন। সাম্প্রতিক কালে গিয়ে, দীর্ঘকাল যারা সেখানে বসবাস করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন তারা তো সেখানে বাড়ি করবেন। কিন্তু সেই লিস্টটা কিন্তু বারবার দুদক দিতে পারে নাই। দুদক যায় আর আসে-এইভাবে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হবে, কিছুই হবে না।’

পিকে হালাদারের অর্থ আত্মসাৎ ঠেকাতে ও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই যে পিকে হালদার উনি এতগুলো টাকা নিলেন। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অডিট সেকশন আছে। তারা যদি সব সময় অডিট করত তাহলে কিন্তু এইটা হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অডিট করে ওই ব্যাংকগুলোকে, লিজিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাহলে কিন্তু কেউ চুরি করার সুযোগ পায় না। চুরি করার সুযোগটা আমরা করে দিচ্ছি। অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে বসে বসে কী করবেন? সমস্ত দোষ মন্ত্রীর ঘাড়ে পড়ে। আসলে মন্ত্রীর তো করার কিছু থাকে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অডিট করবে প্রতি মাসে, তাহলে তারা এই সমস্ত টাকা পাচার করতে পারে না। এই সমস্ত বাজে ঋণ হতে পারে না। দেশটা আজকে অনেক উন্নয়নের দিকে গেছে। আরও উন্নয়ন হতো। নিজস্ব টাকায় একটা পদ্মা ব্রিজ না, আরও একটা পদ্মা ব্রিজ আমরা করতে পারব যদি আমরা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মটা একটু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসেন।’

সরকার তৎপর হলে পিকে হালদারের বিদেশ পালানো ঠেকানো যেত বলে উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘পিকে হালদার চলে গেল, বলল আমরা মাত্র নয় মিনিটের জন্য ধরতে পারি নাই। তাকে নয় ঘণ্টা আগে থেকে অ্যারেস্ট করলেন না কেন? টাকাটা দেশে রেখে দিতাম। পারল না কেন? এইটা আমরা মন্ত্রীর দোষ দেব কি? সবার কিন্তু দায়িত্ব ভাগ করা আছে। আমি মনে করি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার জন্য আজকে এইগুলো হচ্ছে। অর্থাৎ অথোরিটি নাই। এখানে দুইটা জিনিস দরকার। একটা হচ্ছে নেতৃত্ব, আরেকটা কর্তৃত্ব। নেতৃত্ব ঠিকই দিচ্ছেন, কিন্তু কর্তৃত্ব নেই।’

করোনার মধ্যেও পুঁজিবাজারে চাঙাভাব অর্থনীতির ভালো অবস্থাকেই নির্দেশ করছে বলেই মনে করছেন ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাতের কথা বলতে গেলে প্রথম বলতে হয় শেয়ার মার্কেটের কথা উঠেছে, আমি ৪২ বছর এই মার্কেটের সঙ্গে আছি। শেয়ার মার্কেট এই করোনা ভাইরাসের মধ্যেও সব থেকে উঁচু স্তরে আছে। আমরা বাড়িতে থাকি, মার্কেটে যেতে পারি না। আমাদের মতো লোকেরা যদি মার্কেটে যেতে পারত এই মার্কেট আজকে ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হতো। এই কোভিডের মধ্যেও কিন্তু ৩ হাজার কোটি টাকার কাছে চলে গেছে। শেয়ার মার্কেট হচ্ছে অর্থনীতির ব্যারোমিটার, তার মানে ব্যারোমিটার ঠিক আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...