Ajker Patrika

ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি শিশুরা কী করছে?

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩, ১০: ২০
Thumbnail image

প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০০ নারী ও শিশু বিদেশে পাচার হচ্ছে। ইউনিসেফ বলছে, গত ১০ বছরে ১২ থেকে ৩০ বছর বয়সী অন্তত ৩ লাখ মানুষ শুধু ভারতেই পাচার হয়েছে। পাচারকৃতদের বাধ্য করা হয় দেহব্যবসা, ভিক্ষাবৃত্তি বা শিশুশ্রমে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে জ্যাকব সি নামের এক উন্নয়নকর্মী ভারতে পাচার হওয়া শিশুদের নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

জ্যাকব বলেন, ২০১৮ সালের জুনে দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে তাঁর আমির নামের এক শিশুর সঙ্গে দেখা হয়। শিশুটি বাংলাদেশ থেকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে খেলনা তৈরির একটি কারখানায় কাজ করছিল। 

আমির নামের শিশুটির কাছ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে থাকাকালীন তার পরিবার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করত। একদিন এক ব্যক্তি ভারতে উচ্চ বেতনে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের দুই ভাইকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। 

আমির বলে, তার স্পষ্ট মনে নেই, তারা ঠিক কত দিন হেঁটেছিল। গ্রামের পর গ্রাম, ফসলের মাঠ, বন, শহর পেরিয়ে তারা একটি ভ্যানের কাছে পৌঁছায়। দুই ভাই দুই রাত সেই ভ্যানের ভেতরে কাটায়। আর তাদের নিয়ে আসা সেই ব্যক্তি ভ্যানচালকের সঙ্গে কাছেই এক বাড়িতে ছিলেন। 

এর পরের দুই দিনে আরেক ব্যক্তি আরও কয়েকটি ছেলেকে নিয়ে আসেন। তখন শিশুর সংখ্যা হয় মোট ৭। 

এই সাত শিশুকে নিয়ে ভ্যানটি একটি বাড়ির সামনে থামে। বাড়িতে দিনে দিনে শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েক দিন পর আমির আর তার ভাই জানতে পারে, তারা এখন কলকাতায়।

সেই বাড়ি থেকে প্রথমে বাসে, পরে ট্রেনে করে তাদের বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমানা। এর বিস্তৃতি ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। সীমানার একটি বড় অংশই অরক্ষিত। মানুষ, মাদক ও জাল মুদ্রা পাচারের রুট এগুলো।

ইউএন ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ফর উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, এক দশক বা তার বেশি সময়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি শিশুকে ভারতের যৌনপল্লিতে পাচার করা হয়েছে। ঋণ, লিঙ্গবৈষম্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এখন রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশি জনসংখ্যাকে অরক্ষিত করে তুলেছে।

২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘চাইল্ড ট্রাফিকিং ইন ইন্ডিয়া: ইনসাইটস ফ্রম সিচুয়েশনাল ডেটা অ্যানালাইসিস অ্যান্ড দ্য নিড ফর টেক-ড্রাইভেন ইন্টারভেনশন স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, কর্ণাটক রাজ্যে শিশু পাচার ২০১৬ সালের (৬টি) তুলনায় ২০২২ সালে (১১০টি) ১৮ গুণ বেড়েছে। উত্তর প্রদেশ, বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশে শিশু পাচারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।

আসামের রাজধানী গুয়াহাটিভিত্তিক মানব পাচারবিরোধী অধিকারকর্মী আরতি জানান, মানব পাচারের কারণগুলোর পেছনে প্রধান দারিদ্র্য। বিহার, ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ থেকে দরিদ্র শিশুদের বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ ও দিল্লির মতো শহরগুলোতে পাচার করা হয় থাকে, যেখানে অর্থ আছে। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে জোরপূর্বক শ্রম থেকে মুনাফা হয় ১৫ হাজার ২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৬ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি কিডনি প্রায় আড়াই লাখ ডলারে বিক্রি করা যায়।

এক বছরের জন্য একটি শিশুকে দিয়ে যৌন ব্যবসার উপার্জন একাধিক নতুন গাড়ি কেনার সমান। ভারতে হোটেল ও ধাবাগুলো পাচার হওয়া শিশুদের সবচেয়ে বড় নিয়োগকর্তা। এর পরেই আছে অটোমোবাইল, পরিবহন ব্যবসা ও পোশাক কারখানা। ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রসাধনীশিল্পে নিযুক্ত হওয়ার উদাহরণও পাওয়া গেছে।

শিশু আমিরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখার আগে কয়েক মাস চেষ্টা করেও জ্যাকব তাকে খুঁজে পাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত