Ajker Patrika

আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতার লিটমাস পরীক্ষা

প্রভাষ রঞ্জন ও আমান কুমার
আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতার লিটমাস পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটা আসলেই উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইনজীবী করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি (ডিইফ) ও ইসমাইল হানিয়াহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা এবং পরবর্তীকালে গাজায় একতরফা গণহত্যার জন্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে।

আইসিসি সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা শক্তি বা তাদের মিত্রদের নয়, তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের টার্গেট করার জন্য কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। আর এ কারণে ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদনটি প্রথম ও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, হামাস ও ইসরায়েল দুই পক্ষের নেতাদের অভিযুক্ত করে, আইনজীবী করিম খান আপাতদৃষ্টিতে ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, রাষ্ট্রপ্রধানেরা যেকোনো বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ফৌজদারি কার্যক্রম থেকে মুক্ত। আইসিসিতে অবশ্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নিজেকে সুরক্ষিত দাবি করতে পারেন না। আইসিসির আইনে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, সরকার বা সংসদের সদস্য, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা কোনো অবস্থাতেই তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অব্যাহতি পাবেন না।’

২০১৯ সালে জর্ডানের রেফারেলে আসা মামলায় আল-বশির আপিলের রায়ে আদালত একই রায় দেন। এই বিধানের কারণেই ওই আদালত ২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির যুদ্ধে তাঁর ভূমিকার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রাশিয়ার মতো ইসরায়েলও আইসিসির সদস্য নয়। এভাবে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন যে আইসিসি ইসরায়েলি নেতাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে কি না। এ ক্ষেত্রে আইসিসির এখতিয়ারের ভিত্তি হলো ফিলিস্তিন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষ। এভাবে আইসিসি চর্চা করতে পারে, যা আঞ্চলিক বিচারব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। এর মানে হলো, যদি কোনো অপরাধ আইসিসির কোনো সদস্যরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, তাহলে আদালত সেই অপরাধের ক্ষেত্রে এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারেন, এমনকি যদি এটি আইসিসির সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রের ব্যক্তিদের দ্বারাও সংঘটিত হয়। সুতরাং গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধগুলো আইসিসির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। একইভাবে, ইসরায়েলে হামাসের আচরণ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে, যদিও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধ থেকে প্রকৃত বিচারের জন্য সাধারণত একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে। আইসিসির ট্র্যাক রেকর্ড খুব উৎসাহব্যঞ্জক নয়, বিশেষ করে রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষেত্রে। সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের কথাই ধরা যাক। ২০০৯ সালে আইসিসি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সে সময় তিনি সুদানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি একটি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। তবে তিনি এখনো আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। অন্যদিকে কেনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো এবং তাঁর পূর্বসূরি উহুরু কেনিয়াত্তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। উভয়ের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু আদালত অবশেষে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং মামলা খারিজ করে দেন। একইভাবে, আইভরি কোস্টের সাবেক ফার্স্ট লেডি সিমোন গ্যাগবোর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, কিন্তু আইসিসি পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়। একইভাবে যদিও পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিঃসন্দেহে তাঁর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সীমিত করেছে, কিন্তু আইসিসির কাছে তাঁর আত্মসমর্পণ অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

আইসিসির কিছুটা হতাশাজনক ইতিহাস সত্ত্বেও ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, যদি আদালত আগামী মাসগুলোতে পরোয়ানা জারি করেন, তবে এটি ইসরায়েলের জন্য একটি বড় আইনি ও কূটনৈতিক ধাক্কা হবে। তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মামলা নিয়ে লড়াই করছে। দ্বিতীয়ত, এটি নেতানিয়াহুর আইসিসির পক্ষের দেশগুলোয় ভ্রমণকে আশঙ্কাজনকভাবে সীমিত করবে। কারণ, তাঁকে গ্রেপ্তার করার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে এই দেশগুলোর। তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে আন্তর্জাতিক আইন এমন একটি অসহায় অস্ত্র নয়, যা শক্তিশালীদের জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়। এ মামলাটি বিশ্বব্যাপী আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতার জন্য একটি লিটমাস পরীক্ষা হতে পারে। 

প্রভাষ রঞ্জন, অধ্যাপক, জিন্দাল গ্লোবাল ল স্কুল, আমান কুমার, গবেষক, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত