Ajker Patrika

হত্যার আগে দলবেঁধে ধর্ষণ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ২১: ১২
হত্যার আগে দলবেঁধে ধর্ষণ

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় স্কুলছাত্রীকে ভয়াবহ নির্যাতনে হত্যার আগে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয় বলে ময়নাতদন্তে প্রমাণ মিলেছে।

ময়নাতদন্তের অনুলিপি আজকের পত্রিকার কাছে আছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ছাত্রী (১৪) দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়। এ কারণেই তার গোপনাঙ্গের ভেতরে ও বাইরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে প্যাঁচানোর কারণে তার গলার মাঝ বরাবর গোলাকার দাগ রয়েছে। বাম চোখের নিচেও আঘাতের কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। পেটে দুটি, গলায় পাঁচটি ও পেছন দিকে মাজার ওপর মেরুদণ্ড বরাবর তিনটি ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণে তার শ্বাসনালি ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রীর ঘাড়ের পেছন দিকে ছয়টি ও ডান পায়ের পাতার ওপর ছয়টি স্থানে পোড়ার ক্ষত রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় জ্বলন্ত সিগারেট জাতীয় কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছিল। ঘাড়ের নিচ থেকে দুই পা পর্যন্ত ফুটন্ত তরল পদার্থ ঢেলে পোড়ানো হয়েছে। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার সুতপা রায়, মেডিকেল অফিসার রুমন রহমান ও কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, আনুমানিক চলতি বছরের ১৩ জুলাই ভোর ৪টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

এ ঘটনায় পুলিশ আপন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। ওই যুবক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি একাই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে আদালতকে জানান।

তবে মামলার বাদী ওই ছাত্রীর বাবা দাবি করে আসছিলেন, একজন আসামির একার পক্ষে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। এ মামলায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মামলাটির তদন্তের ভার সিআইডিকে দেওয়ারও দাবি জানান।

ছাত্রীর বাবা আরও বলেন, তাঁর মেয়েকে হত্যার পর কয়েকজন যুবক এলাকা ছাড়া ছিলেন। এ তথ্যও পুলিশকে দেওয়া হয়। ওই দিন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সময় সকালে বাড়ির সামনে একটি হাতের ব্রেসলেট ছেঁড়া অবস্থায় পড়েছিল। সেটিও পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক কারণে তাঁর মেয়ের হত্যার মূল ঘটনাকে পুলিশ আড়াল করছে বলে দাবি করেন তিনি।

গত বুধবার জানতে চাইলে ছাত্রীর বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণের পর আমার মেয়েকে হত্যা করার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও, এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখন বেশি কিছু বলতে পারব না।’

এ বিষয়ে মিরপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমল হোসেন বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা মামলাটি নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছি। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। যেহেতু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এসেছে, সেহেতু ডিএনএ পরীক্ষায় একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়ে আরও পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে।’

চলতি বছরের ১৫ জুলাই সকালে উপজেলার ভাঙা বটতলা এলাকার একটি ভুট্টাখেত থেকে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই পুলিশ মিরপুর পৌরসভার কুরিপোল মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও আমলা সরকারি কলেজের ছাত্র আপনকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। আপন এখন কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে, ইসির খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমছে, সবুজসংকেত যুক্তরাষ্ট্রের

গণপূর্তের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১ স্থপতি বরখাস্ত

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত