Ajker Patrika

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পাচার: জড়িত দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা, শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ জাতিসংঘের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১: ৫৩
Thumbnail image

মালয়েশিয়ায় যেসব বাংলাদেশি সরাসরি কাজের ব্যবস্থা না করে কিংবা ভুয়া নিয়োগ নিয়ে শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছেন, তাঁদের সুরক্ষা দিতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞরা এই আহ্বান জানিয়েছেন। 

এমন সময়ে জাতিসংঘের তরফ থেকে এই আহ্বান জানানো হলো, যখন দেশটিতে এক নারীসহ ৪৫ বাংলাদেশিকে আটকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, কাজের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। এসব খবরে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। 

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে অপরাধী চক্র রয়েছে। এই চক্রগুলো ভুয়া নিয়োগ দিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাঁরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা আরও বলেন, এই শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর এতে করে ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই শ্রমিকেরা মালয়েশিয়ায় আসার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। একটা সময় বাধ্য হয়ে তাঁরা ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি দিন থাকছেন। এর ফলে তাঁরা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে থাকছেন। অনেক সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনেক সময়ই তাঁরা নিপীড়িত হচ্ছেন। 

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক বাংলাদেশি কাজ ছাড়া মাসের পর মাস থাকছেন। এটা কোনো টেকসই উদ্যোগ নয়। এটি অসম্মানজনক। মানবিক বিবেচনায় প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। 

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমরা তথ্য পেয়েছি, উভয় দেশের সরকারের উচ্চ–পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা এই কারবারের সঙ্গে জড়িত বা এটিকে ছাড় দিচ্ছেন। এটি অগ্রহণযোগ্য এবং এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এই অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। তাঁরা বলেছেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া উভয় ক্ষেত্রেই এই বেসরকারি বাণিজ্য এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর (রিক্রুটিং এজেন্সি) বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত। 

যেখানে শোষণ–নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করে দেওয়ার কারণে অনেক অভিবাসীকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে এবং কিছু দুর্বল ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকা অভিবাসীকে অপরাধী করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে তদন্ত করে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। 

বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবসা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নির্দেশিকা নীতির অধীনে দেশটিকে বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে। এ ছাড়া মালয়েশিয়াকে শোষণের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত, সুরক্ষা এবং সহায়তা করতে, মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা কার্যকর করতে এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলোকে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় থেকে কাজ করার অনুমোদন না থাকায় ৪৫ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির অভিবাসন দপ্তর। তারা জানিয়েছে, যে বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। এ ছাড়া বাকি চারজনের একজন ভারতীয়, ইন্দোনেশীয় তিনজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত