Ajker Patrika

জাহাজের তলায় ১৪ দিন ঝুলে ৪ নাইজেরীয়র ইউরোপযাত্রা, ব্রাজিলে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ৫৩
Thumbnail image

সমুদ্রপথে অবৈধ উপায়ে ইউরোপ যেতে চেয়েছিলেন নাইজেরিয়ার চার নাগরিক। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য জাহাজের রাডারের ওপর ছোট্ট একটি জায়গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসে ছিলেন তারা। এ অবস্থায় দশম দিনে গিয়ে খাবার এবং পানি দুটোই শেষ হয়ে যায় তাদের। এরপরও চার দিন টিকে গেছেন এই চারজন। কয়েক ফুট নিচে আছড়ে পড়ছিল যে আটলান্টিকের লবণাক্ত পানি, সেটাই খেয়েছেন কয়েক দিন। এরপর ভিটোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব বন্দরে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে।

মৃত্যুঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করা এই চার নাইজেরিয়ার নাগরিকের প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (৩,৫০০ মাইল) যাত্রা এটিই প্রমাণ করে যে, উন্নত জীবনের খোঁজে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কত বেশি ঝুঁকি নেয়!

চার জনের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী থ্যাংকগড ওপেমিপো ম্যাথিউ ইয়েয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি গির্জায়। সেখানে সাক্ষাৎকারে ইয়েয়ে বলেন, ‘আমার জন্য এটি ছিল এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। বোর্ডে (রাডারের ওপরের অংশ) থাকা সহজ নয়। আমি কাঁপছিলাম, ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি এখানে আছি।’

তবে উদ্ধার পাওয়ার পরও এই চারজনের জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন ইউরোপ যাওয়ার আশায়। কিন্তু উদ্ধার পাওয়ার পর দেখতে পেলেন, তারা অবতরণ করেছেন আটলান্টিকের অন্য পাড়ে, ব্রাজিলে। এই চারজনের মধ্যে দুজনকে অনুরোধের ভিত্তিতে নাইজেরিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। অপর দুজন, ইয়েয়ে এবং বায়েলসা রাজ্যের ৩৫ বছর বয়সী অধিবাসী রোমান এবিমেন ফ্রাইডে ব্রাজিলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।

ফ্রাইডে এর আগেও জাহাজে করে নাইজেরিয়া থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রার্থনা, ব্রাজিল সরকার আমার প্রতি করুণা করবে।’

এই দুজনই নাইজেরিয়া ছাড়তে চাওয়ার পেছনে একই ধরনের কারণ বলেছেন। অর্থনৈতিক কষ্ট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অপরাধ তাদের জন্মভূমি নাইজেরিয়া ত্যাগ করতে প্ররোচিত করেছিল। তা ছাড়া, তাদের সামনে খুব বেশি বিকল্পও ছিল না। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটি সহিংসতা, দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য এবং অপহরণের মতো সমস্যায় জর্জরিত।

লাগোস রাজ্যের অধিবাসী ইয়েয়ে বলেন, তার চিনাবাদাম এবং পাম তেলের খামার এই বছরের বন্যায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তার পরিবার এখন গৃহহীন। ইয়েয়ের আশা, পরিবারের সদস্যরাও শিগগিরই ব্রাজিলে তার কাছে চলে আসবে।

ফ্রাইডে শুনিয়েছেন জাহাজটিতে আসার গল্প। গত ২৭ জুন শুরু হয়েছিল তার এই যাত্রা। এক জেলে বন্ধু লাগোসে নোঙর করা লাইবেরিয়ার পতাকাযুক্ত পণ্যবাহী জাহাজ কেন ওয়েভের শক্ত অংশে নিয়ে গিয়ে তাকে রাডারে রেখে আসে। ফ্রাইডে অবাক হয়ে দেখেন, আগে থেকেই সেখানে ছিল আরও তিন ব্যক্তি। ফ্রাইডে ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, রাডারে থাকা তিন ব্যক্তি হয়তো যেকোনো সময় তাকে সাগরে ফেলে দেবে!

তবে জাহাজ চলতে শুরু করলে তারা সবাই ধরা না পড়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড সতর্ক হয়ে যায়। ফ্রাইডে বলেন, ‘তারা (জাহাজের নাবিক) আমাদের খুঁজে পেলে সাগরে ছুড়ে ফেলে দিত। তাই কোনো শব্দ না করার ব্যাপারে আমরা সতর্ক হয়ে যাই।’

আটলান্টিক মহাসাগরের হাত ছোঁয়া দূরত্বে থেকে দুই সপ্তাহ টিকে থাকা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। ফ্রাইডে বলেন, সাগরে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে রাডারের চারপাশে জাল তৈরি করে একটি দড়ি দিয়ে নিজেদের বেঁধে রেখেছিলেন তারা। নিচে তাকিয়ে দেখা যেত তিমি, হাঙরের মতো বড় প্রাণী। আঁটসাঁট অবস্থা এবং ইঞ্জিনের শব্দের কারণে ঘুমান ছিল অসম্ভব। আর ঝুঁকিও ছিল অনেক বেশি। ফ্রাইডে বলেন, ‘উদ্ধার পেয়ে আমি খুব খুশি।’

সাও পাওলোর আশ্রয় কেন্দ্রের পুরোহিত ফাদার পাওলো প্যারাইজ বলেছেন যে, তিনি জাহাজে লুকিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার আরও ঘটনা জানেন। কিন্তু এত বিপজ্জনক ঘটনা এর আগে কখনো দেখেননি। তাদের এই যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, নতুন করে শুরু করতে মানুষ কতটা লম্বা পথ পাড়ি দেয়। ফাদার পাওলো বলেন, ‘মানুষ অকল্পনীয় ও বিপজ্জনক সব কাজ করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত