কামরুল হাসান

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে