কামরুল হাসান

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের আলো। সেই আলোয় এগোচ্ছি।
এর মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। প্রথমে একটি-দুটি, তারপর মুহুর্মুহু। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেল আর গ্যাস গ্রেনেডের কানফাটা আওয়াজ। প্রথমে ১০ মিনিট চলল এভাবে। একটু থেমে আরও ২০ মিনিট। গুলি-বোমার সঙ্গে মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ। এত গুলি, বোমা আর মানুষের আওয়াজ জন্মেও শুনিনি। এই অবস্থায় এগোনো ঠিক হবে? সহকর্মী মোশতাক আহমেদ প্রশ্নটা (সবার মনের) করেই ফেললেন। হারুন আল রশীদ আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আরেকজন কাজী আনিছ—একবার এগোচ্ছেন তো পরক্ষণে পেছাচ্ছেন। আমরা এখন কী করব? আলোচনা করে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম—এগোব, যা থাকে কপালে। পল্টন মোড় থেকে আমরা এগোচ্ছি শাপলা চত্বরের দিকে, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী অবস্থান নিয়েছে। আমরা চারজন পথ চলছি সতর্কতার সঙ্গে। এটা ঠিক ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের ঘটনা। এখন মনে হয়, সেই রাতে আমরা হাঁটছিলাম যেন প্রাণ হাতে নিয়ে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তখন শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সেই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি ছিল কথিত নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে। সেই দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’। বিএনপি, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন সেই কর্মসূচিতে সমর্থন দিল। আর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সক্রিয় থাকল।
হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছিল। তাতে বলা হলো, হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশের ছয়টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে। সেই সব স্থানে সমাবেশ করে আবার ফিরে যাবে। দেশের সব কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় লোক আনার জন্য খবর দেওয়া হলো। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বসে হেফাজতের নেতারা এর সমন্বয় করতে শুরু করলেন। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ধরে নিয়েছিলেন, এটা নিছক সমাবেশের বেশি কিছু হবে না।
কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মে ভোরে সবার ভুল ভাঙা শুরু হলো। দেখা গেল, ফজরের নামাজের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছে। এক শ-দুই শ নয়, হাজারে হাজারে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে। বেলা বাড়ার আগেই তারা ঢাকার সব প্রবেশপথ দখল করে নিল। যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে অবরোধ তৈরি করল হেফাজতের কর্মীরা। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, পুরো রাজধানীই যেন হেফাজতের দখলে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকল। হেফাজতের নেতারাও ভাবলেন, শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাঁরা ঘোষণা দিলেন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে পুলিশ যে ভুল করেছে, তা আর তারা করতে চাইল না। মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশের সায় নেই। শুরু হলো দফায় দফায় আলোচনা। হেফাজতের নেতারা বারবার বললেন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোনো গোলযোগ হবে না।
আলোচনা চলছে, এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে হেফাজতের মিছিল এল। মিছিলটি পল্টন মোড়ে পুলিশি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। পুলিশ বাধা দিতেই শুরু হলো সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। ততক্ষণে হেফাজতের অনেক কর্মী মতিঝিল এলাকায় এসে পড়েছে। তারা মতিঝিলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করতে এবং আগুন দিতে শুরু করল। এবার শুধু ঢাকায় নয়, সড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দিল। পরিস্থিতি এমন, ঢাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যেদিকে তাকাই সব জ্বলছে। হেফাজতের কর্মীদের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পেলেন না।
সংঘর্ষের পর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিল। এবার ঘোষণা দেওয়া হলো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মতিঝিল ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ ধারণা করেছিল, দিনভর যে তাণ্ডব চলছিল, রাত নামলে তা থেমে যাবে। এ জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দিয়ে কর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমির সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরই হেফাজতের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সে সময় আমাকে বলেছিলেন, ৫ মে রাত ১০টায় পুলিশের সেই সময়ের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সচিবালয়ের উল্টো দিকে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি বৈঠক ডাকেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সব বিভাগের উপকমিশনার, র্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা বৈঠকে আসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হবে রাত ১২টায়। অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। এত বড় অভিযানে নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনে অজানা শঙ্কা। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনার বলে ওঠেন, তিনি এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সাহস দেখে অবাক হয়ে যান বৈঠকে থাকা সবাই।
র্যাবের সেই সময়ের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সেদিন আমাকে বলেছিলেন, প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, তিন দিক থেকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হবে। পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিক থেকে অভিযান চালালে মানুষের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে দুই দিক থেকে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। যাত্রাবাড়ীর দিকটা খোলা রাখা হয় হেফাজতের কর্মীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযান চালানো একটি দল যাবে পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা হয়ে, অন্য দলটি যাবে নটর ডেম কলেজের মোড় থেকে। তবে অভিযানের পর হেফাজতের কর্মীরা যাতে বঙ্গভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও আইসিডিতে হামলা চালাতে না পারে, তাই এসব সড়কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য খোলা রাখা হবে টিকাটুলী হয়ে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়ক।
পরিকল্পনা হয়, সামনে থাকবে র্যাব-পুলিশ। পেছনে ভারী অস্ত্র নিয়ে থাকবে বিজিবি। পরিকল্পনামতো রাত ১২টার মধ্যেই র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় নামতে শুরু করেন। পুরো অভিযান নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সমন্বয় করেন মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত ১টায় দুই দিক থেকে এগোতে থাকেন সবাই। আগে র্যাব-পুলিশ, পেছনে বিজিবি। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িবহর। সব বাহিনীর সদস্যদের গায়ে বুলেটরোধী পোশাক, হাতে শটগান, গ্যাস নিক্ষেপ করার অস্ত্র আর গ্যাস গ্রেনেড। আছে বিকট শব্দ করে ফেটে যাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড, সঙ্গে সাঁজোয়া যান, দাঙ্গা দমনের গাড়ি।
রাত আড়াইটা। মতিঝিল সড়কের আশপাশে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। র্যাব-পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড় ছেড়ে যায় সামনের দিকে। শাপলা চত্বরের সামনে একটি ট্রাকের ওপর মাইক বাঁধা। সেই ট্রাকে বসে হেফাজতের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। ট্রাকের নিচে রাস্তার ওপর হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, তারা মাইকে দেওয়া নির্দেশমতো স্লোগান দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ততক্ষণে হেফাজতের সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আর মাত্র ১৫-২০ গজ। তাঁদের দেখামাত্র শুরু হলো উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচামেচি। মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করলেন হেফাজতের নেতারা। সঙ্গে ভারী স্লোগান। বক্তারা বলেন, জীবন দিয়ে হলেও অবস্থান ধরে রাখবেন। র্যাব-পুলিশের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভে হাত নেড়ে, হাতের লাঠি দিয়ে সড়কে আঘাত করে চিৎকার করতে থাকে কর্মীরা।
রাত পৌনে ৩টা। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দ। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে স্বল্প শব্দের টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ল র্যাব-পুলিশ। কিন্তু বিধি বাম। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের শেল উল্টো নিজেদের দিকে চলে আসে। দ্রুত পেছন দিকে সরে যান সবাই। এরপর সাত-আট মিনিটের বিরতি।
রাত ৩টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হেফাজতের মাইকে তখনো চলছে জ্বালাময়ী বক্তব্য। এর মধ্যে একটি টিয়ার গ্যাসের শেল মঞ্চের ওপর পড়ার পরই থেমে যায় মাইকের শব্দ। যিনি এতক্ষণ এই জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনিই প্রথম লাফ দেন ট্রাকের ওপর থেকে। এরপর চলতে থাকে একের পর এক রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম ১০ মিনিটের মাথায় হেফাজতের কর্মীরা সরে যেতে শুরু করে। কেউ চলে যায় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে, কেউ পাশের ভবনে, কেউ অলিগলিতে। একটি ছোট ঘরে হেফাজতের শ-খানেক কর্মী আশ্রয় নেয়। সবাই কিশোর, তরুণ। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র।
মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো শাপলা চত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু তখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-সংলগ্ন এলাকায় চলছিল হেফাজতের কর্মীদের বিক্ষোভ। তারা বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। র্যাব-পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সেখানে পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করে হেফাজতের কর্মীরা। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানে ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হয়ে যায়।
আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে থাকি। হেফাজতমুক্ত গভীর রাতের শাপলা চত্বর এলাকা তখন বড়ই অচেনা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাঠি, জুতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, চিড়া, মুড়ি, কাপড়সহ নানা কিছু। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার—কাচ ভাঙা, কিছুটা দুমড়ানো-মোচড়ানো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল রক্তাক্ত এক কিশোর ও এক যুবক। যে ট্রাকে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, তার নিচে পলিথিনে মোড়ানো চার যুবকের লাশ। দিনের বেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়া সেই চার কর্মীর লাশ মঞ্চের কাছে এনে রাখা হয়েছিল।
এরপর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়া হেফাজতের কর্মীদের একে একে বের করে আনা হয়। কেউ বেরিয়ে আসে কান ধরে, কেউ দুই হাত উঁচু করে। তাদের নিরাপদে বের হয়ে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশের সদস্যরা হেফাজতের কর্মীদের বের করতে করতে বলেন, ‘বাবারা, চলে যান। আপনারা শান্তিতে থাকেন। দেশটারেও শান্তিতে থাকতে দেন।’
অভিযান শেষ। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, রোদ-ঝলমলে নতুন দিনের আলো। যে আলোয় কেটে যায় সব অন্ধকার।
আরও পড়ুন:

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের আলো। সেই আলোয় এগোচ্ছি।
এর মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। প্রথমে একটি-দুটি, তারপর মুহুর্মুহু। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেল আর গ্যাস গ্রেনেডের কানফাটা আওয়াজ। প্রথমে ১০ মিনিট চলল এভাবে। একটু থেমে আরও ২০ মিনিট। গুলি-বোমার সঙ্গে মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ। এত গুলি, বোমা আর মানুষের আওয়াজ জন্মেও শুনিনি। এই অবস্থায় এগোনো ঠিক হবে? সহকর্মী মোশতাক আহমেদ প্রশ্নটা (সবার মনের) করেই ফেললেন। হারুন আল রশীদ আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আরেকজন কাজী আনিছ—একবার এগোচ্ছেন তো পরক্ষণে পেছাচ্ছেন। আমরা এখন কী করব? আলোচনা করে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম—এগোব, যা থাকে কপালে। পল্টন মোড় থেকে আমরা এগোচ্ছি শাপলা চত্বরের দিকে, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী অবস্থান নিয়েছে। আমরা চারজন পথ চলছি সতর্কতার সঙ্গে। এটা ঠিক ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের ঘটনা। এখন মনে হয়, সেই রাতে আমরা হাঁটছিলাম যেন প্রাণ হাতে নিয়ে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তখন শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সেই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি ছিল কথিত নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে। সেই দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’। বিএনপি, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন সেই কর্মসূচিতে সমর্থন দিল। আর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সক্রিয় থাকল।
হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছিল। তাতে বলা হলো, হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশের ছয়টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে। সেই সব স্থানে সমাবেশ করে আবার ফিরে যাবে। দেশের সব কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় লোক আনার জন্য খবর দেওয়া হলো। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বসে হেফাজতের নেতারা এর সমন্বয় করতে শুরু করলেন। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ধরে নিয়েছিলেন, এটা নিছক সমাবেশের বেশি কিছু হবে না।
কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মে ভোরে সবার ভুল ভাঙা শুরু হলো। দেখা গেল, ফজরের নামাজের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছে। এক শ-দুই শ নয়, হাজারে হাজারে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে। বেলা বাড়ার আগেই তারা ঢাকার সব প্রবেশপথ দখল করে নিল। যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে অবরোধ তৈরি করল হেফাজতের কর্মীরা। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, পুরো রাজধানীই যেন হেফাজতের দখলে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকল। হেফাজতের নেতারাও ভাবলেন, শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাঁরা ঘোষণা দিলেন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে পুলিশ যে ভুল করেছে, তা আর তারা করতে চাইল না। মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশের সায় নেই। শুরু হলো দফায় দফায় আলোচনা। হেফাজতের নেতারা বারবার বললেন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোনো গোলযোগ হবে না।
আলোচনা চলছে, এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে হেফাজতের মিছিল এল। মিছিলটি পল্টন মোড়ে পুলিশি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। পুলিশ বাধা দিতেই শুরু হলো সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। ততক্ষণে হেফাজতের অনেক কর্মী মতিঝিল এলাকায় এসে পড়েছে। তারা মতিঝিলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করতে এবং আগুন দিতে শুরু করল। এবার শুধু ঢাকায় নয়, সড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দিল। পরিস্থিতি এমন, ঢাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যেদিকে তাকাই সব জ্বলছে। হেফাজতের কর্মীদের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পেলেন না।
সংঘর্ষের পর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিল। এবার ঘোষণা দেওয়া হলো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মতিঝিল ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ ধারণা করেছিল, দিনভর যে তাণ্ডব চলছিল, রাত নামলে তা থেমে যাবে। এ জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দিয়ে কর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমির সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরই হেফাজতের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সে সময় আমাকে বলেছিলেন, ৫ মে রাত ১০টায় পুলিশের সেই সময়ের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সচিবালয়ের উল্টো দিকে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি বৈঠক ডাকেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সব বিভাগের উপকমিশনার, র্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা বৈঠকে আসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হবে রাত ১২টায়। অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। এত বড় অভিযানে নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনে অজানা শঙ্কা। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনার বলে ওঠেন, তিনি এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সাহস দেখে অবাক হয়ে যান বৈঠকে থাকা সবাই।
র্যাবের সেই সময়ের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সেদিন আমাকে বলেছিলেন, প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, তিন দিক থেকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হবে। পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিক থেকে অভিযান চালালে মানুষের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে দুই দিক থেকে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। যাত্রাবাড়ীর দিকটা খোলা রাখা হয় হেফাজতের কর্মীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযান চালানো একটি দল যাবে পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা হয়ে, অন্য দলটি যাবে নটর ডেম কলেজের মোড় থেকে। তবে অভিযানের পর হেফাজতের কর্মীরা যাতে বঙ্গভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও আইসিডিতে হামলা চালাতে না পারে, তাই এসব সড়কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য খোলা রাখা হবে টিকাটুলী হয়ে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়ক।
পরিকল্পনা হয়, সামনে থাকবে র্যাব-পুলিশ। পেছনে ভারী অস্ত্র নিয়ে থাকবে বিজিবি। পরিকল্পনামতো রাত ১২টার মধ্যেই র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় নামতে শুরু করেন। পুরো অভিযান নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সমন্বয় করেন মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত ১টায় দুই দিক থেকে এগোতে থাকেন সবাই। আগে র্যাব-পুলিশ, পেছনে বিজিবি। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িবহর। সব বাহিনীর সদস্যদের গায়ে বুলেটরোধী পোশাক, হাতে শটগান, গ্যাস নিক্ষেপ করার অস্ত্র আর গ্যাস গ্রেনেড। আছে বিকট শব্দ করে ফেটে যাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড, সঙ্গে সাঁজোয়া যান, দাঙ্গা দমনের গাড়ি।
রাত আড়াইটা। মতিঝিল সড়কের আশপাশে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। র্যাব-পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড় ছেড়ে যায় সামনের দিকে। শাপলা চত্বরের সামনে একটি ট্রাকের ওপর মাইক বাঁধা। সেই ট্রাকে বসে হেফাজতের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। ট্রাকের নিচে রাস্তার ওপর হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, তারা মাইকে দেওয়া নির্দেশমতো স্লোগান দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ততক্ষণে হেফাজতের সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আর মাত্র ১৫-২০ গজ। তাঁদের দেখামাত্র শুরু হলো উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচামেচি। মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করলেন হেফাজতের নেতারা। সঙ্গে ভারী স্লোগান। বক্তারা বলেন, জীবন দিয়ে হলেও অবস্থান ধরে রাখবেন। র্যাব-পুলিশের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভে হাত নেড়ে, হাতের লাঠি দিয়ে সড়কে আঘাত করে চিৎকার করতে থাকে কর্মীরা।
রাত পৌনে ৩টা। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দ। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে স্বল্প শব্দের টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ল র্যাব-পুলিশ। কিন্তু বিধি বাম। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের শেল উল্টো নিজেদের দিকে চলে আসে। দ্রুত পেছন দিকে সরে যান সবাই। এরপর সাত-আট মিনিটের বিরতি।
রাত ৩টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হেফাজতের মাইকে তখনো চলছে জ্বালাময়ী বক্তব্য। এর মধ্যে একটি টিয়ার গ্যাসের শেল মঞ্চের ওপর পড়ার পরই থেমে যায় মাইকের শব্দ। যিনি এতক্ষণ এই জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনিই প্রথম লাফ দেন ট্রাকের ওপর থেকে। এরপর চলতে থাকে একের পর এক রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম ১০ মিনিটের মাথায় হেফাজতের কর্মীরা সরে যেতে শুরু করে। কেউ চলে যায় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে, কেউ পাশের ভবনে, কেউ অলিগলিতে। একটি ছোট ঘরে হেফাজতের শ-খানেক কর্মী আশ্রয় নেয়। সবাই কিশোর, তরুণ। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র।
মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো শাপলা চত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু তখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-সংলগ্ন এলাকায় চলছিল হেফাজতের কর্মীদের বিক্ষোভ। তারা বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। র্যাব-পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সেখানে পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করে হেফাজতের কর্মীরা। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানে ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হয়ে যায়।
আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে থাকি। হেফাজতমুক্ত গভীর রাতের শাপলা চত্বর এলাকা তখন বড়ই অচেনা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাঠি, জুতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, চিড়া, মুড়ি, কাপড়সহ নানা কিছু। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার—কাচ ভাঙা, কিছুটা দুমড়ানো-মোচড়ানো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল রক্তাক্ত এক কিশোর ও এক যুবক। যে ট্রাকে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, তার নিচে পলিথিনে মোড়ানো চার যুবকের লাশ। দিনের বেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়া সেই চার কর্মীর লাশ মঞ্চের কাছে এনে রাখা হয়েছিল।
এরপর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়া হেফাজতের কর্মীদের একে একে বের করে আনা হয়। কেউ বেরিয়ে আসে কান ধরে, কেউ দুই হাত উঁচু করে। তাদের নিরাপদে বের হয়ে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশের সদস্যরা হেফাজতের কর্মীদের বের করতে করতে বলেন, ‘বাবারা, চলে যান। আপনারা শান্তিতে থাকেন। দেশটারেও শান্তিতে থাকতে দেন।’
অভিযান শেষ। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, রোদ-ঝলমলে নতুন দিনের আলো। যে আলোয় কেটে যায় সব অন্ধকার।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের আলো। সেই আলোয় এগোচ্ছি।
এর মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। প্রথমে একটি-দুটি, তারপর মুহুর্মুহু। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেল আর গ্যাস গ্রেনেডের কানফাটা আওয়াজ। প্রথমে ১০ মিনিট চলল এভাবে। একটু থেমে আরও ২০ মিনিট। গুলি-বোমার সঙ্গে মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ। এত গুলি, বোমা আর মানুষের আওয়াজ জন্মেও শুনিনি। এই অবস্থায় এগোনো ঠিক হবে? সহকর্মী মোশতাক আহমেদ প্রশ্নটা (সবার মনের) করেই ফেললেন। হারুন আল রশীদ আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আরেকজন কাজী আনিছ—একবার এগোচ্ছেন তো পরক্ষণে পেছাচ্ছেন। আমরা এখন কী করব? আলোচনা করে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম—এগোব, যা থাকে কপালে। পল্টন মোড় থেকে আমরা এগোচ্ছি শাপলা চত্বরের দিকে, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী অবস্থান নিয়েছে। আমরা চারজন পথ চলছি সতর্কতার সঙ্গে। এটা ঠিক ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের ঘটনা। এখন মনে হয়, সেই রাতে আমরা হাঁটছিলাম যেন প্রাণ হাতে নিয়ে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তখন শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সেই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি ছিল কথিত নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে। সেই দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’। বিএনপি, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন সেই কর্মসূচিতে সমর্থন দিল। আর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সক্রিয় থাকল।
হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছিল। তাতে বলা হলো, হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশের ছয়টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে। সেই সব স্থানে সমাবেশ করে আবার ফিরে যাবে। দেশের সব কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় লোক আনার জন্য খবর দেওয়া হলো। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বসে হেফাজতের নেতারা এর সমন্বয় করতে শুরু করলেন। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ধরে নিয়েছিলেন, এটা নিছক সমাবেশের বেশি কিছু হবে না।
কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মে ভোরে সবার ভুল ভাঙা শুরু হলো। দেখা গেল, ফজরের নামাজের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছে। এক শ-দুই শ নয়, হাজারে হাজারে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে। বেলা বাড়ার আগেই তারা ঢাকার সব প্রবেশপথ দখল করে নিল। যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে অবরোধ তৈরি করল হেফাজতের কর্মীরা। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, পুরো রাজধানীই যেন হেফাজতের দখলে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকল। হেফাজতের নেতারাও ভাবলেন, শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাঁরা ঘোষণা দিলেন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে পুলিশ যে ভুল করেছে, তা আর তারা করতে চাইল না। মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশের সায় নেই। শুরু হলো দফায় দফায় আলোচনা। হেফাজতের নেতারা বারবার বললেন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোনো গোলযোগ হবে না।
আলোচনা চলছে, এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে হেফাজতের মিছিল এল। মিছিলটি পল্টন মোড়ে পুলিশি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। পুলিশ বাধা দিতেই শুরু হলো সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। ততক্ষণে হেফাজতের অনেক কর্মী মতিঝিল এলাকায় এসে পড়েছে। তারা মতিঝিলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করতে এবং আগুন দিতে শুরু করল। এবার শুধু ঢাকায় নয়, সড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দিল। পরিস্থিতি এমন, ঢাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যেদিকে তাকাই সব জ্বলছে। হেফাজতের কর্মীদের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পেলেন না।
সংঘর্ষের পর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিল। এবার ঘোষণা দেওয়া হলো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মতিঝিল ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ ধারণা করেছিল, দিনভর যে তাণ্ডব চলছিল, রাত নামলে তা থেমে যাবে। এ জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দিয়ে কর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমির সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরই হেফাজতের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সে সময় আমাকে বলেছিলেন, ৫ মে রাত ১০টায় পুলিশের সেই সময়ের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সচিবালয়ের উল্টো দিকে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি বৈঠক ডাকেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সব বিভাগের উপকমিশনার, র্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা বৈঠকে আসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হবে রাত ১২টায়। অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। এত বড় অভিযানে নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনে অজানা শঙ্কা। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনার বলে ওঠেন, তিনি এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সাহস দেখে অবাক হয়ে যান বৈঠকে থাকা সবাই।
র্যাবের সেই সময়ের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সেদিন আমাকে বলেছিলেন, প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, তিন দিক থেকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হবে। পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিক থেকে অভিযান চালালে মানুষের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে দুই দিক থেকে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। যাত্রাবাড়ীর দিকটা খোলা রাখা হয় হেফাজতের কর্মীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযান চালানো একটি দল যাবে পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা হয়ে, অন্য দলটি যাবে নটর ডেম কলেজের মোড় থেকে। তবে অভিযানের পর হেফাজতের কর্মীরা যাতে বঙ্গভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও আইসিডিতে হামলা চালাতে না পারে, তাই এসব সড়কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য খোলা রাখা হবে টিকাটুলী হয়ে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়ক।
পরিকল্পনা হয়, সামনে থাকবে র্যাব-পুলিশ। পেছনে ভারী অস্ত্র নিয়ে থাকবে বিজিবি। পরিকল্পনামতো রাত ১২টার মধ্যেই র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় নামতে শুরু করেন। পুরো অভিযান নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সমন্বয় করেন মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত ১টায় দুই দিক থেকে এগোতে থাকেন সবাই। আগে র্যাব-পুলিশ, পেছনে বিজিবি। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িবহর। সব বাহিনীর সদস্যদের গায়ে বুলেটরোধী পোশাক, হাতে শটগান, গ্যাস নিক্ষেপ করার অস্ত্র আর গ্যাস গ্রেনেড। আছে বিকট শব্দ করে ফেটে যাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড, সঙ্গে সাঁজোয়া যান, দাঙ্গা দমনের গাড়ি।
রাত আড়াইটা। মতিঝিল সড়কের আশপাশে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। র্যাব-পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড় ছেড়ে যায় সামনের দিকে। শাপলা চত্বরের সামনে একটি ট্রাকের ওপর মাইক বাঁধা। সেই ট্রাকে বসে হেফাজতের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। ট্রাকের নিচে রাস্তার ওপর হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, তারা মাইকে দেওয়া নির্দেশমতো স্লোগান দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ততক্ষণে হেফাজতের সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আর মাত্র ১৫-২০ গজ। তাঁদের দেখামাত্র শুরু হলো উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচামেচি। মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করলেন হেফাজতের নেতারা। সঙ্গে ভারী স্লোগান। বক্তারা বলেন, জীবন দিয়ে হলেও অবস্থান ধরে রাখবেন। র্যাব-পুলিশের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভে হাত নেড়ে, হাতের লাঠি দিয়ে সড়কে আঘাত করে চিৎকার করতে থাকে কর্মীরা।
রাত পৌনে ৩টা। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দ। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে স্বল্প শব্দের টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ল র্যাব-পুলিশ। কিন্তু বিধি বাম। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের শেল উল্টো নিজেদের দিকে চলে আসে। দ্রুত পেছন দিকে সরে যান সবাই। এরপর সাত-আট মিনিটের বিরতি।
রাত ৩টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হেফাজতের মাইকে তখনো চলছে জ্বালাময়ী বক্তব্য। এর মধ্যে একটি টিয়ার গ্যাসের শেল মঞ্চের ওপর পড়ার পরই থেমে যায় মাইকের শব্দ। যিনি এতক্ষণ এই জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনিই প্রথম লাফ দেন ট্রাকের ওপর থেকে। এরপর চলতে থাকে একের পর এক রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম ১০ মিনিটের মাথায় হেফাজতের কর্মীরা সরে যেতে শুরু করে। কেউ চলে যায় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে, কেউ পাশের ভবনে, কেউ অলিগলিতে। একটি ছোট ঘরে হেফাজতের শ-খানেক কর্মী আশ্রয় নেয়। সবাই কিশোর, তরুণ। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র।
মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো শাপলা চত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু তখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-সংলগ্ন এলাকায় চলছিল হেফাজতের কর্মীদের বিক্ষোভ। তারা বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। র্যাব-পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সেখানে পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করে হেফাজতের কর্মীরা। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানে ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হয়ে যায়।
আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে থাকি। হেফাজতমুক্ত গভীর রাতের শাপলা চত্বর এলাকা তখন বড়ই অচেনা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাঠি, জুতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, চিড়া, মুড়ি, কাপড়সহ নানা কিছু। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার—কাচ ভাঙা, কিছুটা দুমড়ানো-মোচড়ানো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল রক্তাক্ত এক কিশোর ও এক যুবক। যে ট্রাকে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, তার নিচে পলিথিনে মোড়ানো চার যুবকের লাশ। দিনের বেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়া সেই চার কর্মীর লাশ মঞ্চের কাছে এনে রাখা হয়েছিল।
এরপর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়া হেফাজতের কর্মীদের একে একে বের করে আনা হয়। কেউ বেরিয়ে আসে কান ধরে, কেউ দুই হাত উঁচু করে। তাদের নিরাপদে বের হয়ে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশের সদস্যরা হেফাজতের কর্মীদের বের করতে করতে বলেন, ‘বাবারা, চলে যান। আপনারা শান্তিতে থাকেন। দেশটারেও শান্তিতে থাকতে দেন।’
অভিযান শেষ। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, রোদ-ঝলমলে নতুন দিনের আলো। যে আলোয় কেটে যায় সব অন্ধকার।
আরও পড়ুন:

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের আলো। সেই আলোয় এগোচ্ছি।
এর মধ্যে হঠাৎ গুলির শব্দ। প্রথমে একটি-দুটি, তারপর মুহুর্মুহু। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাসের শেল আর গ্যাস গ্রেনেডের কানফাটা আওয়াজ। প্রথমে ১০ মিনিট চলল এভাবে। একটু থেমে আরও ২০ মিনিট। গুলি-বোমার সঙ্গে মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ। এত গুলি, বোমা আর মানুষের আওয়াজ জন্মেও শুনিনি। এই অবস্থায় এগোনো ঠিক হবে? সহকর্মী মোশতাক আহমেদ প্রশ্নটা (সবার মনের) করেই ফেললেন। হারুন আল রশীদ আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আরেকজন কাজী আনিছ—একবার এগোচ্ছেন তো পরক্ষণে পেছাচ্ছেন। আমরা এখন কী করব? আলোচনা করে নষ্ট করার মতো সময় নেই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম—এগোব, যা থাকে কপালে। পল্টন মোড় থেকে আমরা এগোচ্ছি শাপলা চত্বরের দিকে, যেখানে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী অবস্থান নিয়েছে। আমরা চারজন পথ চলছি সতর্কতার সঙ্গে। এটা ঠিক ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতের ঘটনা। এখন মনে হয়, সেই রাতে আমরা হাঁটছিলাম যেন প্রাণ হাতে নিয়ে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে তখন শাহবাগে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সেই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের কর্মসূচি ছিল কথিত নাস্তিক-ব্লগারদের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে। সেই দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ’। বিএনপি, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন সেই কর্মসূচিতে সমর্থন দিল। আর জামায়াতে ইসলামী কৌশলে সক্রিয় থাকল।
হেফাজতের এই কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছিল। তাতে বলা হলো, হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার চারপাশের ছয়টি প্রবেশপথে অবস্থান নেবে। সেই সব স্থানে সমাবেশ করে আবার ফিরে যাবে। দেশের সব কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকায় লোক আনার জন্য খবর দেওয়া হলো। ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় বসে হেফাজতের নেতারা এর সমন্বয় করতে শুরু করলেন। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ধরে নিয়েছিলেন, এটা নিছক সমাবেশের বেশি কিছু হবে না।
কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মে ভোরে সবার ভুল ভাঙা শুরু হলো। দেখা গেল, ফজরের নামাজের পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে হেফাজতের কর্মীরা ঢাকার দিকে আসছে। এক শ-দুই শ নয়, হাজারে হাজারে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে। বেলা বাড়ার আগেই তারা ঢাকার সব প্রবেশপথ দখল করে নিল। যানবাহন বন্ধ হয়ে গেল। পুলিশ ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে অবরোধ তৈরি করল হেফাজতের কর্মীরা। পরিস্থিতি দেখে মনে হলো, পুরো রাজধানীই যেন হেফাজতের দখলে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকল। হেফাজতের নেতারাও ভাবলেন, শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাঁরা ঘোষণা দিলেন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে পুলিশ যে ভুল করেছে, তা আর তারা করতে চাইল না। মতিঝিলের সমাবেশে পুলিশের সায় নেই। শুরু হলো দফায় দফায় আলোচনা। হেফাজতের নেতারা বারবার বললেন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, কোথাও কোনো গোলযোগ হবে না।
আলোচনা চলছে, এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে হেফাজতের মিছিল এল। মিছিলটি পল্টন মোড়ে পুলিশি বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। পুলিশ বাধা দিতেই শুরু হলো সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। ততক্ষণে হেফাজতের অনেক কর্মী মতিঝিল এলাকায় এসে পড়েছে। তারা মতিঝিলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করতে এবং আগুন দিতে শুরু করল। এবার শুধু ঢাকায় নয়, সড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দিল। পরিস্থিতি এমন, ঢাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্র। যেদিকে তাকাই সব জ্বলছে। হেফাজতের কর্মীদের হাত থেকে নারী সাংবাদিকেরাও রেহাই পেলেন না।
সংঘর্ষের পর তারা মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিল। এবার ঘোষণা দেওয়া হলো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মতিঝিল ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ ধারণা করেছিল, দিনভর যে তাণ্ডব চলছিল, রাত নামলে তা থেমে যাবে। এ জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দিয়ে কর্মীদের মতিঝিল ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমির সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। এতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপরই হেফাজতের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের ঘোষণা দেন।
এরপর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সে সময় আমাকে বলেছিলেন, ৫ মে রাত ১০টায় পুলিশের সেই সময়ের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার সচিবালয়ের উল্টো দিকে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে একটি বৈঠক ডাকেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, সব বিভাগের উপকমিশনার, র্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা বৈঠকে আসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হবে রাত ১২টায়। অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন। এত বড় অভিযানে নেতৃত্ব নিয়ে সবার মনে অজানা শঙ্কা। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আবদুল জলিল মণ্ডল নামে পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনার বলে ওঠেন, তিনি এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সাহস দেখে অবাক হয়ে যান বৈঠকে থাকা সবাই।
র্যাবের সেই সময়ের গোয়েন্দাপ্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান সেদিন আমাকে বলেছিলেন, প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, তিন দিক থেকে শাপলা চত্বরে অভিযান চালানো হবে। পরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন দিক থেকে অভিযান চালালে মানুষের সরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে দুই দিক থেকে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। যাত্রাবাড়ীর দিকটা খোলা রাখা হয় হেফাজতের কর্মীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অভিযান চালানো একটি দল যাবে পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা হয়ে, অন্য দলটি যাবে নটর ডেম কলেজের মোড় থেকে। তবে অভিযানের পর হেফাজতের কর্মীরা যাতে বঙ্গভবন, কমলাপুর রেলস্টেশন ও আইসিডিতে হামলা চালাতে না পারে, তাই এসব সড়কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য খোলা রাখা হবে টিকাটুলী হয়ে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়ক।
পরিকল্পনা হয়, সামনে থাকবে র্যাব-পুলিশ। পেছনে ভারী অস্ত্র নিয়ে থাকবে বিজিবি। পরিকল্পনামতো রাত ১২টার মধ্যেই র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা রাস্তায় নামতে শুরু করেন। পুরো অভিযান নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে সমন্বয় করেন মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে অভিযানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত ১টায় দুই দিক থেকে এগোতে থাকেন সবাই। আগে র্যাব-পুলিশ, পেছনে বিজিবি। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িবহর। সব বাহিনীর সদস্যদের গায়ে বুলেটরোধী পোশাক, হাতে শটগান, গ্যাস নিক্ষেপ করার অস্ত্র আর গ্যাস গ্রেনেড। আছে বিকট শব্দ করে ফেটে যাওয়া সাউন্ড গ্রেনেড, সঙ্গে সাঁজোয়া যান, দাঙ্গা দমনের গাড়ি।
রাত আড়াইটা। মতিঝিল সড়কের আশপাশে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। র্যাব-পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড় ছেড়ে যায় সামনের দিকে। শাপলা চত্বরের সামনে একটি ট্রাকের ওপর মাইক বাঁধা। সেই ট্রাকে বসে হেফাজতের নেতারা বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। ট্রাকের নিচে রাস্তার ওপর হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, তারা মাইকে দেওয়া নির্দেশমতো স্লোগান দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ততক্ষণে হেফাজতের সমাবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আর মাত্র ১৫-২০ গজ। তাঁদের দেখামাত্র শুরু হলো উত্তেজনা, চিৎকার-চেঁচামেচি। মাইকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করলেন হেফাজতের নেতারা। সঙ্গে ভারী স্লোগান। বক্তারা বলেন, জীবন দিয়ে হলেও অবস্থান ধরে রাখবেন। র্যাব-পুলিশের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভে হাত নেড়ে, হাতের লাঠি দিয়ে সড়কে আঘাত করে চিৎকার করতে থাকে কর্মীরা।
রাত পৌনে ৩টা। হঠাৎ ঠুসঠাস শব্দ। হেফাজতের কর্মীদের লক্ষ্য করে স্বল্প শব্দের টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ল র্যাব-পুলিশ। কিন্তু বিধি বাম। বাতাসে টিয়ার গ্যাসের শেল উল্টো নিজেদের দিকে চলে আসে। দ্রুত পেছন দিকে সরে যান সবাই। এরপর সাত-আট মিনিটের বিরতি।
রাত ৩টা বাজতে না বাজতেই শুরু হয় মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হেফাজতের মাইকে তখনো চলছে জ্বালাময়ী বক্তব্য। এর মধ্যে একটি টিয়ার গ্যাসের শেল মঞ্চের ওপর পড়ার পরই থেমে যায় মাইকের শব্দ। যিনি এতক্ষণ এই জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনিই প্রথম লাফ দেন ট্রাকের ওপর থেকে। এরপর চলতে থাকে একের পর এক রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। যেন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম ১০ মিনিটের মাথায় হেফাজতের কর্মীরা সরে যেতে শুরু করে। কেউ চলে যায় সোনালী ব্যাংকের ভেতরে, কেউ পাশের ভবনে, কেউ অলিগলিতে। একটি ছোট ঘরে হেফাজতের শ-খানেক কর্মী আশ্রয় নেয়। সবাই কিশোর, তরুণ। বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র।
মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো শাপলা চত্বর এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু তখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-সংলগ্ন এলাকায় চলছিল হেফাজতের কর্মীদের বিক্ষোভ। তারা বিভিন্ন জিনিসে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। র্যাব-পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। সেখানে পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করে হেফাজতের কর্মীরা। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানে ধীরে ধীরে সব ফাঁকা হয়ে যায়।
আমরা চারপাশ ঘুরে দেখতে থাকি। হেফাজতমুক্ত গভীর রাতের শাপলা চত্বর এলাকা তখন বড়ই অচেনা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাঠি, জুতা, ব্যাগ, খাবারের প্যাকেট, চিড়া, মুড়ি, কাপড়সহ নানা কিছু। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি প্রাইভেট কার—কাচ ভাঙা, কিছুটা দুমড়ানো-মোচড়ানো। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই দেখা গেল রক্তাক্ত এক কিশোর ও এক যুবক। যে ট্রাকে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, তার নিচে পলিথিনে মোড়ানো চার যুবকের লাশ। দিনের বেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়া সেই চার কর্মীর লাশ মঞ্চের কাছে এনে রাখা হয়েছিল।
এরপর বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেওয়া হেফাজতের কর্মীদের একে একে বের করে আনা হয়। কেউ বেরিয়ে আসে কান ধরে, কেউ দুই হাত উঁচু করে। তাদের নিরাপদে বের হয়ে চলে যেতে বলা হয়। পুলিশের সদস্যরা হেফাজতের কর্মীদের বের করতে করতে বলেন, ‘বাবারা, চলে যান। আপনারা শান্তিতে থাকেন। দেশটারেও শান্তিতে থাকতে দেন।’
অভিযান শেষ। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, রোদ-ঝলমলে নতুন দিনের আলো। যে আলোয় কেটে যায় সব অন্ধকার।
আরও পড়ুন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের
০৭ মে ২০২২
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের
০৭ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের
০৭ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিক। সড়কবাতিগুলোও ঘুমিয়ে। পায়ের নিচে ইট, পাথর, ভাঙা কাচ আর পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছাই। এখানে-সেখানে গাড়ির ধূম-উদ্গারী পোড়া কঙ্কাল। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। পথ চলতে ভরসা সেলফোনের
০৭ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে