Ajker Patrika

আদর্শ বীরাপ্পন, নায়িকা সোনিয়া

কামরুল হাসান
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৪৭
আদর্শ বীরাপ্পন, নায়িকা সোনিয়া

মায়াবী চোখের নিষ্পাপ চাহনি। তাকালে মনে হয় ভেতরটা পড়া যায়। এমন লোককে ভালো না বেসে পারবে কেউ? মেয়েটির এই কথার কী জবাব দেব বুঝতে পারছি না। আমরা শুধু তাঁর কথা শুনছি। অপরূপ সুন্দরী তরুণীর এই অভিব্যক্তির কোনো জবাবও আমাদের কাছে নেই।

আমি অনেকক্ষণ ধরে মেয়েটিকে দেখছি। তিনি একটু অন্য রকম। কিছু মানুষ আছে, একটুতেই চোখে হুড়মুড়িয়ে পানি চলে আসে, মেয়েটি একদমই সে রকম নয়। ঋজু ও বুদ্ধিমতী। চোখের দৃষ্টি স্থির। পলক না ফেলে মেপে মেপে কথা বলেন, ঠিক যতটুকু দরকার।

এই তরুণীর সঙ্গে আমাদের কথোপকথনটাকে ইন্টারোগেশন বলাই ভালো। এটা আসলে কোনো স্বাভাবিক আলাপও নয়। রীতিমতো পুলিশি জেরা। ডিবির এএসপি আকতারুজ্জামান রুনু সেই জেরা করছেন। আর আমি তাঁর পাশে বসে শুনছি। ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর, বুধবারের সন্ধ্যা। আমরা বসেছি মিন্টো রোডের পুরোনো ডিবি ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে। ডিবির দুজন কর্মকর্তা সেই কক্ষে বসেন।

যে মেয়েটির সঙ্গে আমাদের এই কথাবার্তা, তাঁর নাম সোনিয়া আক্তার পিংকি। বয়স উনিশ-কুড়ি হবে। মেয়েটির অন্য একটি পরিচয় আছে। তিনি শীর্ষসন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। জাহাঙ্গীরকে ধরিয়ে দিতে ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সরকার। রাজধানীর সব সন্ত্রাসীর কাছে সোনিয়ার মর্যাদা ‘রানির’ মতো। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে তাঁরা থাকেন। দুজন অস্ত্রধারী যুবক দিন-রাত সেখানে পাহারা দেন, যাতে কেউ সোনিয়াকে ফুলের টোকাটিও দিতে না পারে।

এত পাহারার মধ্যে ৫ ডিসেম্বর ভোরে পুলিশ সেই বাসায় হানা দিয়ে সোনিয়াকে আটক করে, সঙ্গে তাঁর দেহরক্ষী শফিকেও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় আরও একজন অস্ত্রধারী ওই বাসায় ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে চিনতে না পারায় তিনি সেখান থেকে কেটে পড়েন।

ডিবি কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান রুনু আমাকে বললেন, বাসাটির চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন কালা জাহাঙ্গীর ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া। আটকের দুই দিন আগে তাঁদের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে অনেকে যোগ দিয়েছিলেন। এর পরই কালা জাহাঙ্গীরের হদিস জানতে পারে পুলিশ। এরপর তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী সোনিয়াকে তুলে আনা হয়। রুনু আমাকে বললেন, ‘চিন্তা কইরেন না, কান টানলে মাথাও আইব।’ এর আগে একবার কালা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করেছিলেন রুনু। সে কারণে কালা জাহাঙ্গীরের গতিবিধির কিছু তথ্য তিনি জানতেন। আমারও ধারণা ছিল, এবারও কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে পারবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তা সম্ভব হয়নি।

ডিবির এই কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছিলাম, যেন সোনিয়ার একটি ইন্টারভিউ নেওয়ার সুযোগ আমাকে করে দেন। তিনি বলেছিলেন, মাগরিবের নামাজের পর তিনি জেরা করবেন, তখন কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে। সেই সুযোগ নিতে তাঁর অফিসে এসেছি। আমার সামনেই সোনিয়াকে জেরা করছেন তিনি। দরকারমতো আমিও দু-একটা প্রশ্ন করছি।

প্রথমে যে কটি বাক্য দিয়ে এই লেখা শুরু করেছি, সেটা ছিল আমার একটি প্রশ্নের জবাব। সোনিয়ার কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, এত বড় সন্ত্রাসীকে তিনি বিয়ে করলেন কেন? পরের প্রশ্ন ছিল, আপনার ডাকনাম কী? সোনিয়া সঙ্গে সঙ্গে বললেন, বাসায় সবাই ডাকে পিংকি, জাহাঙ্গীর ডাকে ‘বেগম মমতাজ’ বলে। এ কথা শুনে আখতারুজ্জামান রুনু হেসে বললেন, ‘হে কি তোরে লইয়া তাজমহল বানাইব?’ মেয়েটি সে কথারও জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক কী বলেছিলেন, সেটা এখন আর মনে নেই।

সোনিয়ার এই জেরা চলছিল তিন ঘণ্টার বেশি। আখতারুজ্জামান রুনু বারবার জানতে চাচ্ছিলেন, কালা জাহাঙ্গীর কোথায়? সোনিয়া বললেন, তিনি অসুস্থ, দিনাজপুরে আছেন। টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। তবে সোনিয়ার সব কথা বিশ্বাস করছিলেন না রুনু।

সোনিয়া বললেন, কয়েক দিন আগে তাঁদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। সেই অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও এসেছিলেন। অভিযানের আগাম খবর হয়তো ওই কর্মকর্তারাই ফাঁস করে দেন। তার পরও সেদিন বাসার বাইরে থেকে কালা জাহাঙ্গীরের দেহরক্ষী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আমি বারবার জানতে চাইছিলাম কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বিয়ের ব্যাপারে। সোনিয়া বললেন, ১৯৯৯ সালে সূত্রাপুরের আইজি গেট এলাকায় তাঁরা থাকতেন। সেখানে কলেজে পড়ার সময় কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর প্রেম হয়। প্রেম থেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত। এতে অবশ্য অভিভাবকদের সম্মতি ছিল না। তবে পরে তাঁরা মেনে নেন। সোনিয়ার বাবার নাম আবদুল আজিজ। চার ভাই, সাত বোনের মধ্যে সবার ছোট সোনিয়া। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানায়।

উত্তরার বাড়িতে কবে এলেন জানতে চাইলে সোনিয়া বললেন, এক বছর আগে, পাঁচতলা বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাট তাঁরা ভাড়া নেন ১২ হাজার টাকায়। এর আগে থাকতেন ফরিদাবাদে। নিরাপত্তার কারণে বাসাটি ছেড়ে দেন।

আমি জানতে চেয়েছিলাম, সোনিয়াকে গ্রেপ্তারের কথাটি জাহাঙ্গীর জানেন কি না। জবাবে সোনিয়া বললেন, পুলিশ যখন বাসায় ঢোকে, তখন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলছিলেন। তখনই গ্রেপ্তারের খবর জেনে গেছেন।

পুলিশের জেরার জবাবে সোনিয়া বললেন, জাহাঙ্গীরের মাসে আয় ৭০ লাখ টাকার বেশি। ঢাকার অর্ধেক এলাকা তাঁর নিয়ন্ত্রণে। পুরো রাজধানী পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে পাঁচজন নিয়ন্ত্রণ করে। আইজি গেট দেখে কচি। কারওয়ান বাজার পিচ্চি হান্নানের সঙ্গে ভাগে চালায় জাহাঙ্গীর। আক্তার দেখে মহাখালী। সেনপাড়া পর্বতা, ভাষানটেক, মিরপুর-কাফরুল দেখে কিলার আব্বাস ও আলম। গার্মেন্টসের চাঁদা আদায় করে সাহাবুদ্দিন। বস্তির টাকা তোলে মুরব্বি সাহাবুদ্দিন। প্রতিটা সেক্টরে ২০-২৫ জন করে আছে।

কোন খাত থেকে কালা জাহাঙ্গীরের টাকা আসত বেশি? সোনিয়া বললেন, বেশির ভাগ টাকা আসত মিরপুর এলাকার গার্মেন্টস, মৎস্য খামার ও নির্মাণকাজের চাঁদাবাজি থেকে। এই টাকার অধিকাংশই খরচ হতো অস্ত্র কেনায়। কিছুদিন আগে তিনি (কালা জাহাঙ্গীর) ৩০ লাখ টাকার অস্ত্র কিনেছেন টিসিবি থেকে। টিসিবিই হলো তাঁর অস্ত্রের মূল জোগানদাতা। সেখানে তাঁর এক লোক আছে, সে ভুয়া লাইসেন্স জোগাড় করে অস্ত্র কিনে দেয় কালা জাহাঙ্গীরকে।

আমি জানতে চাইলাম, বাসায় থাকার সময় জাহাঙ্গীর কী করতেন? সোনিয়া বললেন, বাসায় প্রচুর ভিডিও গেম আছে। আর আছে মাসুদ রানার অসংখ্য সিরিজ বই। তিনি বাসায় বসে মাসুদ রানা সিরিজ পড়েন আর ভিডিও গেম খেলেন।

কবে জানলেন যে কালা জাহাঙ্গীর এত বড় সন্ত্রাসী? সোনিয়া বললেন, এসব তিনি নিজেই বলতেন। তিনি চাইতেন, এ দেশে সবচেয়ে বড় অস্ত্রভান্ডার তাঁর হবে। তিনি চাইতেন বীরাপ্পন (ভারতের একসময়ের ত্রাস চন্দনদস্যু বীরাপ্পন) হতে। সময় পেলে বীরাপ্পনের গল্প শোনাতেন। শোনাতেন তাঁর বাহাদুরির কথা।

সোনিয়ার সেই সাক্ষাৎকার বেশ বড় করে পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সোনিয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর সোনিয়ার আর কোনো খোঁজ পাইনি।

২০০৫ সালে কালা জাহাঙ্গীরের মা পেয়ারা বেগম আমাকে বলেছিলেন, জাহাঙ্গীরের সবকিছু দেখভাল করত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিটেল। একদিন রাতে সে এসে বলল, র‍্যাবের ধাওয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। সোনিয়ার পেটে তখন বাচ্চা। সেই অবস্থায় টেলিফোনে সোনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয় জাহাঙ্গীরের। ঝগড়ার একপর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে নিজের মাথায় গুলি করেন জাহাঙ্গীর। ফোনের অন্য প্রান্তে তখন সোনিয়া ছিলেন। জাহাঙ্গীরকে কোনো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই বাড়িতেই মারা যান তিনি। রাতে তাঁর বাহিনীর লোকেরা তাঁকে সাততলা বস্তিতে দাফন করেন। এটা ছিল ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর।
পেয়ারা বেগম বলছিলেন, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সোনিয়ার সঙ্গে তাঁদের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। জাহাঙ্গীরের একটি ছেলে আছে। তাঁর ধারণা, সোনিয়া বিয়ে করেছেন, আর পরিচয় আড়াল করে ছেলেটিকে বড় করছেন। বৃদ্ধা বললেন, সেই নাতির জন্য তাঁর মন খুব পোড়ে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত