কামরুল হাসান
সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার হলে একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। পরের দিন শুক্রবার অফিসের কাজ শুরু হয় দেরিতে। এক দিনের ছুটি লম্বা হয় দেড় দিনে। মনে মনে সেই সুখের হিসাব কষে ২৫ বছরের বেশি সময় আমার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল বৃহস্পতিবার। ওই যে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী’। সেই অন্তর্যামীর হাসিতে বেশির ভাগ ছুটিই আমার ভাগ্যে জোটেনি। দেখা যেত, সব বড় বড় ঘটনা ঘটছে বৃহস্পতিবার দিনে অথবা রাতে। আর ঘটনা ঘটলেই অফিস থেকে ফোন…দৌড় লাগাও, কিসের ছুটি! পত্রিকা অফিসের ক্রাইম রিপোর্টাররা হলো ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’, অতএব না করে রক্ষে নেই।
২০০০ সালের ৭ ডিসেম্বরও ছিল বৃহস্পতিবার, সাধের ছুটির দিন। বিকেলের দিকে বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে কী একটা নাটক দেখব বলে টিকিট কেটে বসে আছি। হঠাৎ অফিস থেকে চিফ রিপোর্টারের ফোন। ফোন ধরার আগেই মনে হলো, কোথাও কোনো ঝামেলা হয়েছে। যা ভাবলাম, তা-ই হলো। চিফ রিপোর্টার বললেন, বাড্ডার দিকে দৌড় লাগান, গায়িকা ডলি সায়ন্তনীকে লোকজন ঘেরাও করে আছে, তাঁর গাড়ি জনতা জ্বালিয়ে দিয়েছে। ডলি সায়ন্তনী তখন তুমুল জনপ্রিয়। ‘রং চটা জিনস’ ক্যাম্পাসের তরুণদের মুখে মুখে। কিসের নাটক দেখা, টিকিট রাস্তায় ফেলে ছুট দিলাম বাড্ডায়।
মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলগেটের দিকে আসতেই মনে হলো, রাস্তায় যানবাহন কম। ডিআইটি রোড ধরে রামপুরার দিকে যত এগোচ্ছি, গাড়ির সংখ্যা তত কমছে। রামপুরা ব্রিজে উঠে দেখি, উত্তরে বাড্ডার দিকের রাস্তা একেবারে ফাঁকা। ব্রিজের পরে পুলিশ ব্যারিকেড, কাউকে এগোতে দিচ্ছে না। ক্রাইম রিপোর্টারদের সুবিধা আছে। মোটরসাইকেল থামিয়ে পরিচয় দিতেই রাস্তা ছেড়ে দিল পুলিশ।
ডিআইটি রোডের বাড্ডা এলাকায় এখন যেখানে ইউলুপ আছে, সেখান থেকে কিছুটা সামনে গেলেই হাতের বামে আলাতুন নেসা স্কুল। স্কুলটি সড়ক লাগোয়া নয়, একটু ভেতরে। মনে হলো স্কুলের আশপাশেই ঘটনাস্থল। রাস্তায় হাজার হাজার ইটের টুকরো। পুলিশের একটি দল বাড্ডা থেকে গুলশান ১ নম্বরে যাওয়ার মোড়ে অবস্থান নিয়ে লোকজনের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে, আর লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট মারছে।
আলাতুন নেসা স্কুলের ভেতরে ঢুকে দেখি, একটি প্রাইভেট কার পুড়ে ছাই। গাড়ির আগুনে ভবনের বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমি যখন গেলাম, তখন আগুন নিভে গেলেও ধোঁয়া বের হচ্ছে। কী হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু লোকজন এত উত্তেজিত যে কেউ ঠিকমতো বলতে পারেন না। অবশেষে পেলাম স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে। তিনি লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
তাঁর কাছে জানতে চাইতেই পুরো ঘটনা বললেন। এবার তা আপনাদের বলি। ডলি সায়ন্তনীর সঙ্গে তাঁর প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তখন। রবি চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক চলছে। আগের ঘরের একটি মেয়ে আছে, নাম—কথা।
তাকে নিয়ে ডলি সায়ন্তনী স্কুল থেকে রামপুরার বাসায় ফিরছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজেই। বাসায় আসার পথে মধ্যবাড্ডা এলাকায় তাঁর গাড়িটি একটি শিশুকে চাপা দেয়। শিশুটি সামনের চাকায় লেগে গাড়ির নিচে পড়ে যায়, এরপর পেছনের চাকাটি তার গায়ের ওপর উঠে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। শিশুটির নাম রকি, সে আলাতুন নেসা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন সৌদিপ্রবাসী। দুই ভাইয়ের মধ্যে রকি বড়, থাকত দক্ষিণ বাড্ডায়।
বাড্ডার রাস্তায় এমনিতেই লোকজনের চলাচল বেশি। তারা শিশুকে চাপা পড়তে দেখে গাড়িটি আটক করে। লোকজন তাঁকে নামতে বললেও তিনি কোনোভাবেই গাড়ি থেকে নামছিলেন না। এরপর লোকজন তাঁকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডলি ফোন করেন তাঁর বন্ধু রবি চৌধুরীকে। একটু পরে রবি ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই বাচ্চার কিছু হয়নি বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এতে লোকজন আরও খেপে যায়। তাঁরা ডলিকে আটক এবং রবিকে মারধর করেন। পথচারীরা বাচ্চাটাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ডলির গাড়ি আলাতুন নেসা স্কুলের ভেতরে নিয়ে রাখে। লোকজনের ভিড়ে বাড্ডার মূল সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। যথারীতি খবর চলে যায় পুলিশের কাছে।
বাড্ডা থানার ওসি ছিলেন কামরুল ইসলাম। তিনি একদল পুলিশ পাঠান ঘটনা জানতে। তারা এসে ডলির পক্ষ নিয়ে উল্টো লোকজনের ওপর চোটপাট করতে শুরু করে। এতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ডলি ও রবি চৌধুরীকে কোনোভাবে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খবর আসে, শিশুটি মারা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। তখনই ডলির গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাত ১০টার দিকে বাড্ডা থানায় গিয়ে দেখি, ওসির রুমে ডলি ও রবি চৌধুরীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেলিম আশরাফ নামের এক সংগীত পরিচালকও সেখানে ছিলেন। ডলির কাছে গাড়ির কাগজ ও লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি পুলিশকে বলেন, সব কাগজ গাড়ির মধ্যে ছিল, পুড়ে গেছে। রাত ১০টার পর ডলির পক্ষ নিয়ে জনা বিশেক যুবক বাড্ডা থানার ভেতরে আসেন। তাঁরা থানার ভেতর থেকে সব সাংবাদিককে জোর করে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর আবদুল আওয়াল নামের একজনকে তিন-চার যুবক ধরে এনে বলেন, তিনি নিহত ছেলেটির চাচা। তিনি নাকি কোনো অভিযোগ দিতে চান না।
পরের দিন শুক্রবার সকালে রকির জানাজা হয় আলাতুন নেসা স্কুল মাঠে। হাজার হাজার মানুষ সেই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার পর লোকজন আবার সড়কে ব্যারিকেড দেয়। খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারাও আসেন। তাঁরা এসে জানান, ডলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় এই মামলা করেন রকির চাচা আবদুল আওয়াল। নুরুজ্জামান নামের এক দারোগা ছিলেন মামলার তদন্তকারী। তিনি সকালে ডলিকে আদালতে পাঠান। দুপুরের দিকে খবর আসে, ডলি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
রকির দাফন হওয়ার পর লোকজন যথারীতি নিজ নিজ কাজে বাড়ি চলে যায়। সময় যেতে থাকে। কিছুদিন পর পুলিশ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে ডলি সায়ন্তনীকে অব্যাহতি দেয়। মামলা থেকে বেঁচে যান তিনি।
সে সময় আমরা শুনছিলাম, নিহতের পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা চলছে। দুদিন পর ফলোআপের জন্য রকির বাড়িতে গেলে তার মা আমাকে বলেছিলেন, টাকার বিনিময়ে আমি ছেলের খুনিকে ক্ষমা করব না।
খুলনার আহসান আহমেদ রোডের দুই শিশু তনু ও তুতন সে সময় সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে বলেছিল, আর কোনো শিশুর যেন এভাবে সড়কে মৃত্যু না হয়।
তারপর অনেক পানি গড়িয়ে গেছে, আরও অনেক শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। এখন প্রায়ই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে সড়কে। সেদিনের দুই শিশুর আর্তি এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের লোকে শুনবে, মানবে—এমন সময় তখনো কারও ছিল না, এখনো হয়তো কারও নেই।
আরও পড়ুন:
সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার হলে একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। পরের দিন শুক্রবার অফিসের কাজ শুরু হয় দেরিতে। এক দিনের ছুটি লম্বা হয় দেড় দিনে। মনে মনে সেই সুখের হিসাব কষে ২৫ বছরের বেশি সময় আমার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল বৃহস্পতিবার। ওই যে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী’। সেই অন্তর্যামীর হাসিতে বেশির ভাগ ছুটিই আমার ভাগ্যে জোটেনি। দেখা যেত, সব বড় বড় ঘটনা ঘটছে বৃহস্পতিবার দিনে অথবা রাতে। আর ঘটনা ঘটলেই অফিস থেকে ফোন…দৌড় লাগাও, কিসের ছুটি! পত্রিকা অফিসের ক্রাইম রিপোর্টাররা হলো ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’, অতএব না করে রক্ষে নেই।
২০০০ সালের ৭ ডিসেম্বরও ছিল বৃহস্পতিবার, সাধের ছুটির দিন। বিকেলের দিকে বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে কী একটা নাটক দেখব বলে টিকিট কেটে বসে আছি। হঠাৎ অফিস থেকে চিফ রিপোর্টারের ফোন। ফোন ধরার আগেই মনে হলো, কোথাও কোনো ঝামেলা হয়েছে। যা ভাবলাম, তা-ই হলো। চিফ রিপোর্টার বললেন, বাড্ডার দিকে দৌড় লাগান, গায়িকা ডলি সায়ন্তনীকে লোকজন ঘেরাও করে আছে, তাঁর গাড়ি জনতা জ্বালিয়ে দিয়েছে। ডলি সায়ন্তনী তখন তুমুল জনপ্রিয়। ‘রং চটা জিনস’ ক্যাম্পাসের তরুণদের মুখে মুখে। কিসের নাটক দেখা, টিকিট রাস্তায় ফেলে ছুট দিলাম বাড্ডায়।
মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলগেটের দিকে আসতেই মনে হলো, রাস্তায় যানবাহন কম। ডিআইটি রোড ধরে রামপুরার দিকে যত এগোচ্ছি, গাড়ির সংখ্যা তত কমছে। রামপুরা ব্রিজে উঠে দেখি, উত্তরে বাড্ডার দিকের রাস্তা একেবারে ফাঁকা। ব্রিজের পরে পুলিশ ব্যারিকেড, কাউকে এগোতে দিচ্ছে না। ক্রাইম রিপোর্টারদের সুবিধা আছে। মোটরসাইকেল থামিয়ে পরিচয় দিতেই রাস্তা ছেড়ে দিল পুলিশ।
ডিআইটি রোডের বাড্ডা এলাকায় এখন যেখানে ইউলুপ আছে, সেখান থেকে কিছুটা সামনে গেলেই হাতের বামে আলাতুন নেসা স্কুল। স্কুলটি সড়ক লাগোয়া নয়, একটু ভেতরে। মনে হলো স্কুলের আশপাশেই ঘটনাস্থল। রাস্তায় হাজার হাজার ইটের টুকরো। পুলিশের একটি দল বাড্ডা থেকে গুলশান ১ নম্বরে যাওয়ার মোড়ে অবস্থান নিয়ে লোকজনের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছে, আর লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট মারছে।
আলাতুন নেসা স্কুলের ভেতরে ঢুকে দেখি, একটি প্রাইভেট কার পুড়ে ছাই। গাড়ির আগুনে ভবনের বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমি যখন গেলাম, তখন আগুন নিভে গেলেও ধোঁয়া বের হচ্ছে। কী হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু লোকজন এত উত্তেজিত যে কেউ ঠিকমতো বলতে পারেন না। অবশেষে পেলাম স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে। তিনি লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
তাঁর কাছে জানতে চাইতেই পুরো ঘটনা বললেন। এবার তা আপনাদের বলি। ডলি সায়ন্তনীর সঙ্গে তাঁর প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তখন। রবি চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক চলছে। আগের ঘরের একটি মেয়ে আছে, নাম—কথা।
তাকে নিয়ে ডলি সায়ন্তনী স্কুল থেকে রামপুরার বাসায় ফিরছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি নিজেই। বাসায় আসার পথে মধ্যবাড্ডা এলাকায় তাঁর গাড়িটি একটি শিশুকে চাপা দেয়। শিশুটি সামনের চাকায় লেগে গাড়ির নিচে পড়ে যায়, এরপর পেছনের চাকাটি তার গায়ের ওপর উঠে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। শিশুটির নাম রকি, সে আলাতুন নেসা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন সৌদিপ্রবাসী। দুই ভাইয়ের মধ্যে রকি বড়, থাকত দক্ষিণ বাড্ডায়।
বাড্ডার রাস্তায় এমনিতেই লোকজনের চলাচল বেশি। তারা শিশুকে চাপা পড়তে দেখে গাড়িটি আটক করে। লোকজন তাঁকে নামতে বললেও তিনি কোনোভাবেই গাড়ি থেকে নামছিলেন না। এরপর লোকজন তাঁকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডলি ফোন করেন তাঁর বন্ধু রবি চৌধুরীকে। একটু পরে রবি ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই বাচ্চার কিছু হয়নি বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এতে লোকজন আরও খেপে যায়। তাঁরা ডলিকে আটক এবং রবিকে মারধর করেন। পথচারীরা বাচ্চাটাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ডলির গাড়ি আলাতুন নেসা স্কুলের ভেতরে নিয়ে রাখে। লোকজনের ভিড়ে বাড্ডার মূল সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। যথারীতি খবর চলে যায় পুলিশের কাছে।
বাড্ডা থানার ওসি ছিলেন কামরুল ইসলাম। তিনি একদল পুলিশ পাঠান ঘটনা জানতে। তারা এসে ডলির পক্ষ নিয়ে উল্টো লোকজনের ওপর চোটপাট করতে শুরু করে। এতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ডলি ও রবি চৌধুরীকে কোনোভাবে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খবর আসে, শিশুটি মারা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ে জনতা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। তখনই ডলির গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাত ১০টার দিকে বাড্ডা থানায় গিয়ে দেখি, ওসির রুমে ডলি ও রবি চৌধুরীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেলিম আশরাফ নামের এক সংগীত পরিচালকও সেখানে ছিলেন। ডলির কাছে গাড়ির কাগজ ও লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি পুলিশকে বলেন, সব কাগজ গাড়ির মধ্যে ছিল, পুড়ে গেছে। রাত ১০টার পর ডলির পক্ষ নিয়ে জনা বিশেক যুবক বাড্ডা থানার ভেতরে আসেন। তাঁরা থানার ভেতর থেকে সব সাংবাদিককে জোর করে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর আবদুল আওয়াল নামের একজনকে তিন-চার যুবক ধরে এনে বলেন, তিনি নিহত ছেলেটির চাচা। তিনি নাকি কোনো অভিযোগ দিতে চান না।
পরের দিন শুক্রবার সকালে রকির জানাজা হয় আলাতুন নেসা স্কুল মাঠে। হাজার হাজার মানুষ সেই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার পর লোকজন আবার সড়কে ব্যারিকেড দেয়। খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারাও আসেন। তাঁরা এসে জানান, ডলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় এই মামলা করেন রকির চাচা আবদুল আওয়াল। নুরুজ্জামান নামের এক দারোগা ছিলেন মামলার তদন্তকারী। তিনি সকালে ডলিকে আদালতে পাঠান। দুপুরের দিকে খবর আসে, ডলি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
রকির দাফন হওয়ার পর লোকজন যথারীতি নিজ নিজ কাজে বাড়ি চলে যায়। সময় যেতে থাকে। কিছুদিন পর পুলিশ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে ডলি সায়ন্তনীকে অব্যাহতি দেয়। মামলা থেকে বেঁচে যান তিনি।
সে সময় আমরা শুনছিলাম, নিহতের পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা চলছে। দুদিন পর ফলোআপের জন্য রকির বাড়িতে গেলে তার মা আমাকে বলেছিলেন, টাকার বিনিময়ে আমি ছেলের খুনিকে ক্ষমা করব না।
খুলনার আহসান আহমেদ রোডের দুই শিশু তনু ও তুতন সে সময় সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে বলেছিল, আর কোনো শিশুর যেন এভাবে সড়কে মৃত্যু না হয়।
তারপর অনেক পানি গড়িয়ে গেছে, আরও অনেক শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। এখন প্রায়ই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে সড়কে। সেদিনের দুই শিশুর আর্তি এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের লোকে শুনবে, মানবে—এমন সময় তখনো কারও ছিল না, এখনো হয়তো কারও নেই।
আরও পড়ুন:
সাতক্ষীরার ওয়ারী গ্রামে ব্যবসায়ী স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বুকের ওপর ‘সরি জান, আই লাভ ইউ’ লিখে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ারিয়ার পালপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করেছে।
২ দিন আগেরাজধানীর উত্তরায় প্রকাশ্যে এক দম্পতিকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩ ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা রিমান্ডে নেওয়ার এ আদেশ দেন।
১১ দিন আগেরাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার কল্পনা (১৩) সাড়ে তিন মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
২৪ দিন আগেগণহত্যার সংজ্ঞা ও বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সনদ হলো Genocide Convention বা গণহত্যা সনদ, যা ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়। এই সনদের আওতায় একটি জাতি, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার লক্ষ্যে সংঘটিত অপরাধকেই গণহত্যা বলা হয়। এর মধ্যে হত্যা, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি,
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫