কামরুল হাসান

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি, ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা করবেন কি না। আমিও নাছোড়, কথা আমাকে বলতেই হবে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন বলতেন, খবর জোগাড়ের সময় মান-অপমান কোনো ব্যাপার নয়। সঠিক খবর হাতে পাওয়াটাই আসল কাজ। সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি, যা আছে কুলকপালে।
পাঁচ তারকা হোটেল লবির সুবিধা হলো, এসব জায়গায় যতক্ষণ খুশি বসে থাকতে কোনো বারণ নেই। আসনগুলোও বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুক্ষণ পরপর ওয়েটার এসে জানতে চান, কিছু লাগবে কি না। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড নেই, পকেটের অবস্থাও ভালো নয়। এক কাপ চায়ের দাম দেড় শ টাকা শুনে চায়ের তেষ্টা উবে গেল। বলছি ২০০২ সালের কথা। এটা ছিল সেই বছরের ২৬ আগস্টের সকাল।
যে লোকটার জন্য এত অপেক্ষা, তাঁর নাম-পরিচয় জানার আগে শানে-নজুলটা শুনুন। এর আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রোববার সকালে খবরের খোঁজে গিয়েছিলাম মালিবাগের এসবি অফিসে। তখন এসবির প্রধান ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। পরে তিনি পুলিশের আইজি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। আনোয়ারুল ইকবাল একসময় সিআইডির ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। তো সেদিন তাঁর রুমে বসে আছি, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে দুজন কর্মকর্তা এলেন। আমার উপস্থিতি দেখে ইশারা-ইঙ্গিতে তাঁদের কথা সারলেন। সেই ইশারার মধ্যে বুঝতে পারলাম, কোনো একটি বিশেষ ঘটনার তদন্তে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা আসছেন। তাঁর সঙ্গে এসবির প্রধানের বৈঠক হবে।
অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল খুব শক্ত মানুষ। তাঁকে এ কথা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। আর আমি জানতে চাইলেও তিনি উত্তর দেবেন না। এসবিতে আমার অনেক পরিচিত কর্মকর্তা। তাঁদের কারও কাছ থেকে এটা জানা যাবে। রুম থেকে বেরিয়ে পরিচিত একজন কর্মকর্তার কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বিষয়টি তুলতেই মনে হলো, তিনি ঘটনা জানেন। তবে পুরোটা আমাকে বললেন না। যেটুকু বললেন সেটা হলো, কোকা-কোলার কান্ট্রি ডিরেক্টর অজয় মিত্র গুলশান থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের ওপরমহলে হইচই শুরু হয়েছে। এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফোন করে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। সেই চাঁদার পরিমাণ অবিশ্বাস্য। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রথম টেলিফোনকে অতটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, বিষয়টা তত বড় হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সেই সন্ত্রাসী তাঁকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, এই মাসের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা না হলে বউ-বাচ্চার সামনে গুলি করে মেরে ফেলবে। এই হুমকিতে কান্ট্রি ডিরেক্টর খুবই ভয় পেয়েছেন। তিনি নিজের বারিধারার বাসা ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে উঠেছেন। এখন সেখানেই আছেন। কোকা-কোলা যেহেতু আমেরিকান কোম্পানি, সে কারণে মার্কিন প্রশাসন বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বললেন না। এমনকি কোন হোটেলে উঠেছেন, তা-ও বললেন না। ঢাকায় তখন দুটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অন্যটি স্টারউডের শেরাটন হোটেল।
আমার মাথায় সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, আরও বিস্তারিত তথ্য লাগবে। একটু খোঁজখবর করতে গিয়ে জানলাম, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। মনে হলো, পুলিশ ছাড়াও সব গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর করছে; কিন্তু সন্ত্রাসীকে কেউ ধরতে পারছে না।
এসবি অফিস থেকে বেরিয়ে ইস্কাটনের দিকে যাব। মৌচাক মোড়ে এসে দেখি, ইউএনবির সাইফুল হুদা (আমেরিকাপ্রবাসী) দাঁড়িয়ে। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বিট করতেন। তাঁর কাছে কোকা-কোলার প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, তাঁর বাল্যবন্ধু খালিদ রাজা কোকা-কোলায় বড় পদে চাকরি করেন। সেখানে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাইফুল হুদাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে ছুটলাম বিজয় সরণির দিকে, কোকা-কোলার ঢাকা অফিসে। সাইফুল হুদা কোকা-কোলায় এসে খালিদ রাজাকে বাইরে ডেকে এনে ফিসফাস করে সব বললেন। কিন্তু খালিদ রাজা এমন ভান করলেন, যেন কিছুই জানেন না। শুধু বললেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে লিখে দিতে হবে। আমরা তা-ই করলাম। সাদা কাগজে কয়েকটি প্রশ্ন লিখে সেটা খালিদ রাজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, ঢাকায় দুটি পাঁচ তারকা হোটেলের একটিতে অজয় মিত্র উঠেছেন। হোটেলের অভ্যর্থনায় গিয়ে খোঁজ করলেই কিছু না কিছু জানা যাবে। প্রথমে এলাম সোনারগাঁওয়ে। সেখানকার অভ্যর্থনা থেকে বলা হলো, এই নামে কেউ নেই। এবার গেলাম শেরাটনে। অজয় মিত্রের নাম বলতেই অভ্যর্থনায় থাকা এক নারী আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন, এই অতিথি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। অভ্যর্থনার কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর রুম নম্বর কত, তিনি সেটাও বললেন না।
সব পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে একাধিক ইন্টারকম সংযোগ থাকে। সেখান থেকে অতিথিদের সঙ্গে কথাও বলা যায়। কিছুক্ষণ লবিতে বসে অপেক্ষা করলাম। এরপর একটি ইন্টারকমের কাছে গিয়ে তাতে শূন্য ডায়াল করতেই মনে হলো, ইনফরমেশনের কেউ ধরেছেন। তাঁর কাছে অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি সেই রুমের পিএবিএক্স নম্বর বললেন। মনে হলো জাদুর কাঠি পেয়ে গেলাম। কল দিলাম সেই নম্বরে। এক নারী ফোন ধরে জানতে চাইলেন, কাকে চাই। আমি অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি পরিচয় জানতে চাইলেন। এরপর সাংবাদিক শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। আমাকে লাইনে রেখে নারী-পুরুষ হিন্দিতে কথা বললেন। এরপর আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে ফোনটা রেখে দিলেন।
আমি হোটেল না ছেড়ে অভ্যর্থনায় বসেই থাকলাম। ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন দিলাম। এবার অজয় মিত্র নিজেই ফোন ধরলেন। খাঁটি বাংলায় বললেন, আমি কেন তাঁর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনার ওপর হুমকির বিষয়টি কাগজে এলে আপনি নিরাপদ হবেন। মনে হলো, এ কথায় কাজ হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, ভাবার জন্য একটু সময় দিন। আমি বললাম, অভ্যর্থনায় আছি।
আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আড়াই ঘণ্টা পর অজয় মিত্র নিচে নামলেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। কথায় মনে হলো, তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন আর চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে সবই বললেন। শর্ত ছিল, তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। কোকা-কোলার নিয়ম অনুযায়ী কেউ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারেন না।
অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে প্রথম ফোন করা হয় ১৪ আগস্ট (২০০২), এরপর ১৯ আগস্ট। ফোন করে বলা হয়, বাংলাদেশে কোকা-কোলা বিক্রির বিপরীতে প্রতি বোতলের জন্য তাকে ১০ পয়সা দিতে হবে। এই হিসাবে মাসে ৫০ লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। সেটা না দিলে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে এবং কোকা-কোলার বিপণনব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আমি জানতে চাইলাম, যিনি ফোন করেছিলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর কেমন? তিনি বললেন, কম বয়স, কিন্তু গলাটা বেশ ভরাট। কী নাম বলেছেন? বললেন, জাহাঙ্গীর ফেরদৌস বা কালা জাহাঙ্গীর। অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে ফোন করার আগে লোকটি তাঁর গতিবিধির সব তথ্য অনেক দিন ধরে জোগাড় করেছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান কোন গাড়িতে চলেন, কখন বাসা থেকে বের হন—সব তিনি জানেন। অজয় মিত্র আমাকে বললেন, এ ঘটনা নিয়ে তিনি গুলশান থানায় ২০ আগস্ট জিডি করেছেন।
অজয় মিত্র আরও বললেন, জিডি করার পর পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম ও আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী তাঁকে ফোন করেন। তাঁর বারিধারার বাসায় পাহারাও বসানো হয়। কিন্তু তার পরও কেউ তাঁকে ফলো করছিল। হোটেলে আসার পরও ফোন এসেছে। বলা হয়েছে, কত দিন হোটেলে থাকবি?
পরে জানতে পারি, চাঁদা দেওয়ার টোপ দিয়ে ফার্মগেট থেকে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। এফবিআই কর্মকর্তা তাঁকে জেরাও করেছিলেন। এটা ছিল ডামি চাঁদাবাজ। কালা জাহাঙ্গীর এ ঘটনার পর খুবই ক্ষুব্ধ হন।
অজয় মিত্রকে নিয়ে আমার তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ আগস্ট ২০০২। সেখানে অজয় মিত্রের কোনো বক্তব্য ছাপা হয়নি। তবে কোকা-কোলার মূল প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা ফার ইস্টের একটি বক্তব্য ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, কোকা-কোলা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থাশীল।
সেই খবর প্রকাশের পর কালা জাহাঙ্গীর ফোন করে প্রতিবাদ জানান। অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি লিখিত প্রতিবাদও পাঠান। কিন্তু তখনকার পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম আমাকে বলেছিলেন, এই হুমকিদাতা যে কালা জাহাঙ্গীর, সে ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত। কয়েক দিন পর শুনলাম, অজয় মিত্র বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কোকা-কোলার অফিস বিজয় সরণি থেকে গুলশানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অজয় মিত্র চলে যাওয়ার কিছুদিন পর জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সোনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ডিবি অফিসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সোনিয়া আমাকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীরের মাসে খরচ ৭০ লাখ টাকার বেশি। সেই টাকার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোকা-কোলার কর্তাকেও সে ছেড়ে দিত না।
সেদিন সোনিয়ার এই কথা শুনে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেন অজয় মিত্র!
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি, ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা করবেন কি না। আমিও নাছোড়, কথা আমাকে বলতেই হবে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন বলতেন, খবর জোগাড়ের সময় মান-অপমান কোনো ব্যাপার নয়। সঠিক খবর হাতে পাওয়াটাই আসল কাজ। সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি, যা আছে কুলকপালে।
পাঁচ তারকা হোটেল লবির সুবিধা হলো, এসব জায়গায় যতক্ষণ খুশি বসে থাকতে কোনো বারণ নেই। আসনগুলোও বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুক্ষণ পরপর ওয়েটার এসে জানতে চান, কিছু লাগবে কি না। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড নেই, পকেটের অবস্থাও ভালো নয়। এক কাপ চায়ের দাম দেড় শ টাকা শুনে চায়ের তেষ্টা উবে গেল। বলছি ২০০২ সালের কথা। এটা ছিল সেই বছরের ২৬ আগস্টের সকাল।
যে লোকটার জন্য এত অপেক্ষা, তাঁর নাম-পরিচয় জানার আগে শানে-নজুলটা শুনুন। এর আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রোববার সকালে খবরের খোঁজে গিয়েছিলাম মালিবাগের এসবি অফিসে। তখন এসবির প্রধান ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। পরে তিনি পুলিশের আইজি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। আনোয়ারুল ইকবাল একসময় সিআইডির ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। তো সেদিন তাঁর রুমে বসে আছি, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে দুজন কর্মকর্তা এলেন। আমার উপস্থিতি দেখে ইশারা-ইঙ্গিতে তাঁদের কথা সারলেন। সেই ইশারার মধ্যে বুঝতে পারলাম, কোনো একটি বিশেষ ঘটনার তদন্তে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা আসছেন। তাঁর সঙ্গে এসবির প্রধানের বৈঠক হবে।
অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল খুব শক্ত মানুষ। তাঁকে এ কথা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। আর আমি জানতে চাইলেও তিনি উত্তর দেবেন না। এসবিতে আমার অনেক পরিচিত কর্মকর্তা। তাঁদের কারও কাছ থেকে এটা জানা যাবে। রুম থেকে বেরিয়ে পরিচিত একজন কর্মকর্তার কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বিষয়টি তুলতেই মনে হলো, তিনি ঘটনা জানেন। তবে পুরোটা আমাকে বললেন না। যেটুকু বললেন সেটা হলো, কোকা-কোলার কান্ট্রি ডিরেক্টর অজয় মিত্র গুলশান থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের ওপরমহলে হইচই শুরু হয়েছে। এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফোন করে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। সেই চাঁদার পরিমাণ অবিশ্বাস্য। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রথম টেলিফোনকে অতটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, বিষয়টা তত বড় হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সেই সন্ত্রাসী তাঁকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, এই মাসের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা না হলে বউ-বাচ্চার সামনে গুলি করে মেরে ফেলবে। এই হুমকিতে কান্ট্রি ডিরেক্টর খুবই ভয় পেয়েছেন। তিনি নিজের বারিধারার বাসা ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে উঠেছেন। এখন সেখানেই আছেন। কোকা-কোলা যেহেতু আমেরিকান কোম্পানি, সে কারণে মার্কিন প্রশাসন বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বললেন না। এমনকি কোন হোটেলে উঠেছেন, তা-ও বললেন না। ঢাকায় তখন দুটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অন্যটি স্টারউডের শেরাটন হোটেল।
আমার মাথায় সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, আরও বিস্তারিত তথ্য লাগবে। একটু খোঁজখবর করতে গিয়ে জানলাম, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। মনে হলো, পুলিশ ছাড়াও সব গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর করছে; কিন্তু সন্ত্রাসীকে কেউ ধরতে পারছে না।
এসবি অফিস থেকে বেরিয়ে ইস্কাটনের দিকে যাব। মৌচাক মোড়ে এসে দেখি, ইউএনবির সাইফুল হুদা (আমেরিকাপ্রবাসী) দাঁড়িয়ে। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বিট করতেন। তাঁর কাছে কোকা-কোলার প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, তাঁর বাল্যবন্ধু খালিদ রাজা কোকা-কোলায় বড় পদে চাকরি করেন। সেখানে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাইফুল হুদাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে ছুটলাম বিজয় সরণির দিকে, কোকা-কোলার ঢাকা অফিসে। সাইফুল হুদা কোকা-কোলায় এসে খালিদ রাজাকে বাইরে ডেকে এনে ফিসফাস করে সব বললেন। কিন্তু খালিদ রাজা এমন ভান করলেন, যেন কিছুই জানেন না। শুধু বললেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে লিখে দিতে হবে। আমরা তা-ই করলাম। সাদা কাগজে কয়েকটি প্রশ্ন লিখে সেটা খালিদ রাজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, ঢাকায় দুটি পাঁচ তারকা হোটেলের একটিতে অজয় মিত্র উঠেছেন। হোটেলের অভ্যর্থনায় গিয়ে খোঁজ করলেই কিছু না কিছু জানা যাবে। প্রথমে এলাম সোনারগাঁওয়ে। সেখানকার অভ্যর্থনা থেকে বলা হলো, এই নামে কেউ নেই। এবার গেলাম শেরাটনে। অজয় মিত্রের নাম বলতেই অভ্যর্থনায় থাকা এক নারী আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন, এই অতিথি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। অভ্যর্থনার কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর রুম নম্বর কত, তিনি সেটাও বললেন না।
সব পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে একাধিক ইন্টারকম সংযোগ থাকে। সেখান থেকে অতিথিদের সঙ্গে কথাও বলা যায়। কিছুক্ষণ লবিতে বসে অপেক্ষা করলাম। এরপর একটি ইন্টারকমের কাছে গিয়ে তাতে শূন্য ডায়াল করতেই মনে হলো, ইনফরমেশনের কেউ ধরেছেন। তাঁর কাছে অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি সেই রুমের পিএবিএক্স নম্বর বললেন। মনে হলো জাদুর কাঠি পেয়ে গেলাম। কল দিলাম সেই নম্বরে। এক নারী ফোন ধরে জানতে চাইলেন, কাকে চাই। আমি অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি পরিচয় জানতে চাইলেন। এরপর সাংবাদিক শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। আমাকে লাইনে রেখে নারী-পুরুষ হিন্দিতে কথা বললেন। এরপর আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে ফোনটা রেখে দিলেন।
আমি হোটেল না ছেড়ে অভ্যর্থনায় বসেই থাকলাম। ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন দিলাম। এবার অজয় মিত্র নিজেই ফোন ধরলেন। খাঁটি বাংলায় বললেন, আমি কেন তাঁর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনার ওপর হুমকির বিষয়টি কাগজে এলে আপনি নিরাপদ হবেন। মনে হলো, এ কথায় কাজ হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, ভাবার জন্য একটু সময় দিন। আমি বললাম, অভ্যর্থনায় আছি।
আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আড়াই ঘণ্টা পর অজয় মিত্র নিচে নামলেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। কথায় মনে হলো, তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন আর চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে সবই বললেন। শর্ত ছিল, তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। কোকা-কোলার নিয়ম অনুযায়ী কেউ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারেন না।
অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে প্রথম ফোন করা হয় ১৪ আগস্ট (২০০২), এরপর ১৯ আগস্ট। ফোন করে বলা হয়, বাংলাদেশে কোকা-কোলা বিক্রির বিপরীতে প্রতি বোতলের জন্য তাকে ১০ পয়সা দিতে হবে। এই হিসাবে মাসে ৫০ লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। সেটা না দিলে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে এবং কোকা-কোলার বিপণনব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আমি জানতে চাইলাম, যিনি ফোন করেছিলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর কেমন? তিনি বললেন, কম বয়স, কিন্তু গলাটা বেশ ভরাট। কী নাম বলেছেন? বললেন, জাহাঙ্গীর ফেরদৌস বা কালা জাহাঙ্গীর। অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে ফোন করার আগে লোকটি তাঁর গতিবিধির সব তথ্য অনেক দিন ধরে জোগাড় করেছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান কোন গাড়িতে চলেন, কখন বাসা থেকে বের হন—সব তিনি জানেন। অজয় মিত্র আমাকে বললেন, এ ঘটনা নিয়ে তিনি গুলশান থানায় ২০ আগস্ট জিডি করেছেন।
অজয় মিত্র আরও বললেন, জিডি করার পর পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম ও আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী তাঁকে ফোন করেন। তাঁর বারিধারার বাসায় পাহারাও বসানো হয়। কিন্তু তার পরও কেউ তাঁকে ফলো করছিল। হোটেলে আসার পরও ফোন এসেছে। বলা হয়েছে, কত দিন হোটেলে থাকবি?
পরে জানতে পারি, চাঁদা দেওয়ার টোপ দিয়ে ফার্মগেট থেকে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। এফবিআই কর্মকর্তা তাঁকে জেরাও করেছিলেন। এটা ছিল ডামি চাঁদাবাজ। কালা জাহাঙ্গীর এ ঘটনার পর খুবই ক্ষুব্ধ হন।
অজয় মিত্রকে নিয়ে আমার তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ আগস্ট ২০০২। সেখানে অজয় মিত্রের কোনো বক্তব্য ছাপা হয়নি। তবে কোকা-কোলার মূল প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা ফার ইস্টের একটি বক্তব্য ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, কোকা-কোলা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থাশীল।
সেই খবর প্রকাশের পর কালা জাহাঙ্গীর ফোন করে প্রতিবাদ জানান। অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি লিখিত প্রতিবাদও পাঠান। কিন্তু তখনকার পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম আমাকে বলেছিলেন, এই হুমকিদাতা যে কালা জাহাঙ্গীর, সে ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত। কয়েক দিন পর শুনলাম, অজয় মিত্র বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কোকা-কোলার অফিস বিজয় সরণি থেকে গুলশানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অজয় মিত্র চলে যাওয়ার কিছুদিন পর জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সোনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ডিবি অফিসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সোনিয়া আমাকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীরের মাসে খরচ ৭০ লাখ টাকার বেশি। সেই টাকার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোকা-কোলার কর্তাকেও সে ছেড়ে দিত না।
সেদিন সোনিয়ার এই কথা শুনে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেন অজয় মিত্র!
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি, ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা করবেন কি না। আমিও নাছোড়, কথা আমাকে বলতেই হবে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন বলতেন, খবর জোগাড়ের সময় মান-অপমান কোনো ব্যাপার নয়। সঠিক খবর হাতে পাওয়াটাই আসল কাজ। সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি, যা আছে কুলকপালে।
পাঁচ তারকা হোটেল লবির সুবিধা হলো, এসব জায়গায় যতক্ষণ খুশি বসে থাকতে কোনো বারণ নেই। আসনগুলোও বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুক্ষণ পরপর ওয়েটার এসে জানতে চান, কিছু লাগবে কি না। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড নেই, পকেটের অবস্থাও ভালো নয়। এক কাপ চায়ের দাম দেড় শ টাকা শুনে চায়ের তেষ্টা উবে গেল। বলছি ২০০২ সালের কথা। এটা ছিল সেই বছরের ২৬ আগস্টের সকাল।
যে লোকটার জন্য এত অপেক্ষা, তাঁর নাম-পরিচয় জানার আগে শানে-নজুলটা শুনুন। এর আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রোববার সকালে খবরের খোঁজে গিয়েছিলাম মালিবাগের এসবি অফিসে। তখন এসবির প্রধান ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। পরে তিনি পুলিশের আইজি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। আনোয়ারুল ইকবাল একসময় সিআইডির ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। তো সেদিন তাঁর রুমে বসে আছি, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে দুজন কর্মকর্তা এলেন। আমার উপস্থিতি দেখে ইশারা-ইঙ্গিতে তাঁদের কথা সারলেন। সেই ইশারার মধ্যে বুঝতে পারলাম, কোনো একটি বিশেষ ঘটনার তদন্তে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা আসছেন। তাঁর সঙ্গে এসবির প্রধানের বৈঠক হবে।
অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল খুব শক্ত মানুষ। তাঁকে এ কথা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। আর আমি জানতে চাইলেও তিনি উত্তর দেবেন না। এসবিতে আমার অনেক পরিচিত কর্মকর্তা। তাঁদের কারও কাছ থেকে এটা জানা যাবে। রুম থেকে বেরিয়ে পরিচিত একজন কর্মকর্তার কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বিষয়টি তুলতেই মনে হলো, তিনি ঘটনা জানেন। তবে পুরোটা আমাকে বললেন না। যেটুকু বললেন সেটা হলো, কোকা-কোলার কান্ট্রি ডিরেক্টর অজয় মিত্র গুলশান থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের ওপরমহলে হইচই শুরু হয়েছে। এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফোন করে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। সেই চাঁদার পরিমাণ অবিশ্বাস্য। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রথম টেলিফোনকে অতটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, বিষয়টা তত বড় হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সেই সন্ত্রাসী তাঁকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, এই মাসের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা না হলে বউ-বাচ্চার সামনে গুলি করে মেরে ফেলবে। এই হুমকিতে কান্ট্রি ডিরেক্টর খুবই ভয় পেয়েছেন। তিনি নিজের বারিধারার বাসা ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে উঠেছেন। এখন সেখানেই আছেন। কোকা-কোলা যেহেতু আমেরিকান কোম্পানি, সে কারণে মার্কিন প্রশাসন বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বললেন না। এমনকি কোন হোটেলে উঠেছেন, তা-ও বললেন না। ঢাকায় তখন দুটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অন্যটি স্টারউডের শেরাটন হোটেল।
আমার মাথায় সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, আরও বিস্তারিত তথ্য লাগবে। একটু খোঁজখবর করতে গিয়ে জানলাম, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। মনে হলো, পুলিশ ছাড়াও সব গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর করছে; কিন্তু সন্ত্রাসীকে কেউ ধরতে পারছে না।
এসবি অফিস থেকে বেরিয়ে ইস্কাটনের দিকে যাব। মৌচাক মোড়ে এসে দেখি, ইউএনবির সাইফুল হুদা (আমেরিকাপ্রবাসী) দাঁড়িয়ে। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বিট করতেন। তাঁর কাছে কোকা-কোলার প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, তাঁর বাল্যবন্ধু খালিদ রাজা কোকা-কোলায় বড় পদে চাকরি করেন। সেখানে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাইফুল হুদাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে ছুটলাম বিজয় সরণির দিকে, কোকা-কোলার ঢাকা অফিসে। সাইফুল হুদা কোকা-কোলায় এসে খালিদ রাজাকে বাইরে ডেকে এনে ফিসফাস করে সব বললেন। কিন্তু খালিদ রাজা এমন ভান করলেন, যেন কিছুই জানেন না। শুধু বললেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে লিখে দিতে হবে। আমরা তা-ই করলাম। সাদা কাগজে কয়েকটি প্রশ্ন লিখে সেটা খালিদ রাজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, ঢাকায় দুটি পাঁচ তারকা হোটেলের একটিতে অজয় মিত্র উঠেছেন। হোটেলের অভ্যর্থনায় গিয়ে খোঁজ করলেই কিছু না কিছু জানা যাবে। প্রথমে এলাম সোনারগাঁওয়ে। সেখানকার অভ্যর্থনা থেকে বলা হলো, এই নামে কেউ নেই। এবার গেলাম শেরাটনে। অজয় মিত্রের নাম বলতেই অভ্যর্থনায় থাকা এক নারী আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন, এই অতিথি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। অভ্যর্থনার কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর রুম নম্বর কত, তিনি সেটাও বললেন না।
সব পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে একাধিক ইন্টারকম সংযোগ থাকে। সেখান থেকে অতিথিদের সঙ্গে কথাও বলা যায়। কিছুক্ষণ লবিতে বসে অপেক্ষা করলাম। এরপর একটি ইন্টারকমের কাছে গিয়ে তাতে শূন্য ডায়াল করতেই মনে হলো, ইনফরমেশনের কেউ ধরেছেন। তাঁর কাছে অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি সেই রুমের পিএবিএক্স নম্বর বললেন। মনে হলো জাদুর কাঠি পেয়ে গেলাম। কল দিলাম সেই নম্বরে। এক নারী ফোন ধরে জানতে চাইলেন, কাকে চাই। আমি অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি পরিচয় জানতে চাইলেন। এরপর সাংবাদিক শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। আমাকে লাইনে রেখে নারী-পুরুষ হিন্দিতে কথা বললেন। এরপর আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে ফোনটা রেখে দিলেন।
আমি হোটেল না ছেড়ে অভ্যর্থনায় বসেই থাকলাম। ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন দিলাম। এবার অজয় মিত্র নিজেই ফোন ধরলেন। খাঁটি বাংলায় বললেন, আমি কেন তাঁর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনার ওপর হুমকির বিষয়টি কাগজে এলে আপনি নিরাপদ হবেন। মনে হলো, এ কথায় কাজ হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, ভাবার জন্য একটু সময় দিন। আমি বললাম, অভ্যর্থনায় আছি।
আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আড়াই ঘণ্টা পর অজয় মিত্র নিচে নামলেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। কথায় মনে হলো, তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন আর চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে সবই বললেন। শর্ত ছিল, তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। কোকা-কোলার নিয়ম অনুযায়ী কেউ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারেন না।
অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে প্রথম ফোন করা হয় ১৪ আগস্ট (২০০২), এরপর ১৯ আগস্ট। ফোন করে বলা হয়, বাংলাদেশে কোকা-কোলা বিক্রির বিপরীতে প্রতি বোতলের জন্য তাকে ১০ পয়সা দিতে হবে। এই হিসাবে মাসে ৫০ লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। সেটা না দিলে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে এবং কোকা-কোলার বিপণনব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আমি জানতে চাইলাম, যিনি ফোন করেছিলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর কেমন? তিনি বললেন, কম বয়স, কিন্তু গলাটা বেশ ভরাট। কী নাম বলেছেন? বললেন, জাহাঙ্গীর ফেরদৌস বা কালা জাহাঙ্গীর। অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে ফোন করার আগে লোকটি তাঁর গতিবিধির সব তথ্য অনেক দিন ধরে জোগাড় করেছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান কোন গাড়িতে চলেন, কখন বাসা থেকে বের হন—সব তিনি জানেন। অজয় মিত্র আমাকে বললেন, এ ঘটনা নিয়ে তিনি গুলশান থানায় ২০ আগস্ট জিডি করেছেন।
অজয় মিত্র আরও বললেন, জিডি করার পর পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম ও আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী তাঁকে ফোন করেন। তাঁর বারিধারার বাসায় পাহারাও বসানো হয়। কিন্তু তার পরও কেউ তাঁকে ফলো করছিল। হোটেলে আসার পরও ফোন এসেছে। বলা হয়েছে, কত দিন হোটেলে থাকবি?
পরে জানতে পারি, চাঁদা দেওয়ার টোপ দিয়ে ফার্মগেট থেকে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। এফবিআই কর্মকর্তা তাঁকে জেরাও করেছিলেন। এটা ছিল ডামি চাঁদাবাজ। কালা জাহাঙ্গীর এ ঘটনার পর খুবই ক্ষুব্ধ হন।
অজয় মিত্রকে নিয়ে আমার তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ আগস্ট ২০০২। সেখানে অজয় মিত্রের কোনো বক্তব্য ছাপা হয়নি। তবে কোকা-কোলার মূল প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা ফার ইস্টের একটি বক্তব্য ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, কোকা-কোলা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থাশীল।
সেই খবর প্রকাশের পর কালা জাহাঙ্গীর ফোন করে প্রতিবাদ জানান। অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি লিখিত প্রতিবাদও পাঠান। কিন্তু তখনকার পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম আমাকে বলেছিলেন, এই হুমকিদাতা যে কালা জাহাঙ্গীর, সে ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত। কয়েক দিন পর শুনলাম, অজয় মিত্র বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কোকা-কোলার অফিস বিজয় সরণি থেকে গুলশানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অজয় মিত্র চলে যাওয়ার কিছুদিন পর জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সোনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ডিবি অফিসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সোনিয়া আমাকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীরের মাসে খরচ ৭০ লাখ টাকার বেশি। সেই টাকার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোকা-কোলার কর্তাকেও সে ছেড়ে দিত না।
সেদিন সোনিয়ার এই কথা শুনে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেন অজয় মিত্র!
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি, ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা করবেন কি না। আমিও নাছোড়, কথা আমাকে বলতেই হবে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন বলতেন, খবর জোগাড়ের সময় মান-অপমান কোনো ব্যাপার নয়। সঠিক খবর হাতে পাওয়াটাই আসল কাজ। সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি, যা আছে কুলকপালে।
পাঁচ তারকা হোটেল লবির সুবিধা হলো, এসব জায়গায় যতক্ষণ খুশি বসে থাকতে কোনো বারণ নেই। আসনগুলোও বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুক্ষণ পরপর ওয়েটার এসে জানতে চান, কিছু লাগবে কি না। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড নেই, পকেটের অবস্থাও ভালো নয়। এক কাপ চায়ের দাম দেড় শ টাকা শুনে চায়ের তেষ্টা উবে গেল। বলছি ২০০২ সালের কথা। এটা ছিল সেই বছরের ২৬ আগস্টের সকাল।
যে লোকটার জন্য এত অপেক্ষা, তাঁর নাম-পরিচয় জানার আগে শানে-নজুলটা শুনুন। এর আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট রোববার সকালে খবরের খোঁজে গিয়েছিলাম মালিবাগের এসবি অফিসে। তখন এসবির প্রধান ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। পরে তিনি পুলিশের আইজি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। আনোয়ারুল ইকবাল একসময় সিআইডির ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। তো সেদিন তাঁর রুমে বসে আছি, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে দুজন কর্মকর্তা এলেন। আমার উপস্থিতি দেখে ইশারা-ইঙ্গিতে তাঁদের কথা সারলেন। সেই ইশারার মধ্যে বুঝতে পারলাম, কোনো একটি বিশেষ ঘটনার তদন্তে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা আসছেন। তাঁর সঙ্গে এসবির প্রধানের বৈঠক হবে।
অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল খুব শক্ত মানুষ। তাঁকে এ কথা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হবে না। আর আমি জানতে চাইলেও তিনি উত্তর দেবেন না। এসবিতে আমার অনেক পরিচিত কর্মকর্তা। তাঁদের কারও কাছ থেকে এটা জানা যাবে। রুম থেকে বেরিয়ে পরিচিত একজন কর্মকর্তার কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বিষয়টি তুলতেই মনে হলো, তিনি ঘটনা জানেন। তবে পুরোটা আমাকে বললেন না। যেটুকু বললেন সেটা হলো, কোকা-কোলার কান্ট্রি ডিরেক্টর অজয় মিত্র গুলশান থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের ওপরমহলে হইচই শুরু হয়েছে। এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফোন করে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছে। সেই চাঁদার পরিমাণ অবিশ্বাস্য। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রথম টেলিফোনকে অতটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, বিষয়টা তত বড় হয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সেই সন্ত্রাসী তাঁকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছে, এই মাসের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা না হলে বউ-বাচ্চার সামনে গুলি করে মেরে ফেলবে। এই হুমকিতে কান্ট্রি ডিরেক্টর খুবই ভয় পেয়েছেন। তিনি নিজের বারিধারার বাসা ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে উঠেছেন। এখন সেখানেই আছেন। কোকা-কোলা যেহেতু আমেরিকান কোম্পানি, সে কারণে মার্কিন প্রশাসন বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বললেন না। এমনকি কোন হোটেলে উঠেছেন, তা-ও বললেন না। ঢাকায় তখন দুটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, অন্যটি স্টারউডের শেরাটন হোটেল।
আমার মাথায় সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, আরও বিস্তারিত তথ্য লাগবে। একটু খোঁজখবর করতে গিয়ে জানলাম, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। মনে হলো, পুলিশ ছাড়াও সব গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজখবর করছে; কিন্তু সন্ত্রাসীকে কেউ ধরতে পারছে না।
এসবি অফিস থেকে বেরিয়ে ইস্কাটনের দিকে যাব। মৌচাক মোড়ে এসে দেখি, ইউএনবির সাইফুল হুদা (আমেরিকাপ্রবাসী) দাঁড়িয়ে। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বিট করতেন। তাঁর কাছে কোকা-কোলার প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, তাঁর বাল্যবন্ধু খালিদ রাজা কোকা-কোলায় বড় পদে চাকরি করেন। সেখানে গেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাইফুল হুদাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তুলে ছুটলাম বিজয় সরণির দিকে, কোকা-কোলার ঢাকা অফিসে। সাইফুল হুদা কোকা-কোলায় এসে খালিদ রাজাকে বাইরে ডেকে এনে ফিসফাস করে সব বললেন। কিন্তু খালিদ রাজা এমন ভান করলেন, যেন কিছুই জানেন না। শুধু বললেন, কিছু জানার থাকলে তাঁকে লিখে দিতে হবে। আমরা তা-ই করলাম। সাদা কাগজে কয়েকটি প্রশ্ন লিখে সেটা খালিদ রাজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, ঢাকায় দুটি পাঁচ তারকা হোটেলের একটিতে অজয় মিত্র উঠেছেন। হোটেলের অভ্যর্থনায় গিয়ে খোঁজ করলেই কিছু না কিছু জানা যাবে। প্রথমে এলাম সোনারগাঁওয়ে। সেখানকার অভ্যর্থনা থেকে বলা হলো, এই নামে কেউ নেই। এবার গেলাম শেরাটনে। অজয় মিত্রের নাম বলতেই অভ্যর্থনায় থাকা এক নারী আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বললেন, এই অতিথি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। অভ্যর্থনার কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম, তাঁর রুম নম্বর কত, তিনি সেটাও বললেন না।
সব পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে একাধিক ইন্টারকম সংযোগ থাকে। সেখান থেকে অতিথিদের সঙ্গে কথাও বলা যায়। কিছুক্ষণ লবিতে বসে অপেক্ষা করলাম। এরপর একটি ইন্টারকমের কাছে গিয়ে তাতে শূন্য ডায়াল করতেই মনে হলো, ইনফরমেশনের কেউ ধরেছেন। তাঁর কাছে অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি সেই রুমের পিএবিএক্স নম্বর বললেন। মনে হলো জাদুর কাঠি পেয়ে গেলাম। কল দিলাম সেই নম্বরে। এক নারী ফোন ধরে জানতে চাইলেন, কাকে চাই। আমি অজয় মিত্রের নাম বলতেই তিনি পরিচয় জানতে চাইলেন। এরপর সাংবাদিক শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। আমাকে লাইনে রেখে নারী-পুরুষ হিন্দিতে কথা বললেন। এরপর আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না বলে ফোনটা রেখে দিলেন।
আমি হোটেল না ছেড়ে অভ্যর্থনায় বসেই থাকলাম। ঘণ্টাখানেক পর আবার ফোন দিলাম। এবার অজয় মিত্র নিজেই ফোন ধরলেন। খাঁটি বাংলায় বললেন, আমি কেন তাঁর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনার ওপর হুমকির বিষয়টি কাগজে এলে আপনি নিরাপদ হবেন। মনে হলো, এ কথায় কাজ হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, ভাবার জন্য একটু সময় দিন। আমি বললাম, অভ্যর্থনায় আছি।
আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আড়াই ঘণ্টা পর অজয় মিত্র নিচে নামলেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। কথায় মনে হলো, তিনি খুবই ভয় পেয়েছেন। আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন আর চারদিকে তাকাচ্ছিলেন। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে সবই বললেন। শর্ত ছিল, তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। কোকা-কোলার নিয়ম অনুযায়ী কেউ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারেন না।
অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে প্রথম ফোন করা হয় ১৪ আগস্ট (২০০২), এরপর ১৯ আগস্ট। ফোন করে বলা হয়, বাংলাদেশে কোকা-কোলা বিক্রির বিপরীতে প্রতি বোতলের জন্য তাকে ১০ পয়সা দিতে হবে। এই হিসাবে মাসে ৫০ লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। সেটা না দিলে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে এবং কোকা-কোলার বিপণনব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আমি জানতে চাইলাম, যিনি ফোন করেছিলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর কেমন? তিনি বললেন, কম বয়স, কিন্তু গলাটা বেশ ভরাট। কী নাম বলেছেন? বললেন, জাহাঙ্গীর ফেরদৌস বা কালা জাহাঙ্গীর। অজয় মিত্র বললেন, তাঁকে ফোন করার আগে লোকটি তাঁর গতিবিধির সব তথ্য অনেক দিন ধরে জোগাড় করেছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান কোন গাড়িতে চলেন, কখন বাসা থেকে বের হন—সব তিনি জানেন। অজয় মিত্র আমাকে বললেন, এ ঘটনা নিয়ে তিনি গুলশান থানায় ২০ আগস্ট জিডি করেছেন।
অজয় মিত্র আরও বললেন, জিডি করার পর পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম ও আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী তাঁকে ফোন করেন। তাঁর বারিধারার বাসায় পাহারাও বসানো হয়। কিন্তু তার পরও কেউ তাঁকে ফলো করছিল। হোটেলে আসার পরও ফোন এসেছে। বলা হয়েছে, কত দিন হোটেলে থাকবি?
পরে জানতে পারি, চাঁদা দেওয়ার টোপ দিয়ে ফার্মগেট থেকে এক যুবককে পুলিশ আটক করেছিল। এফবিআই কর্মকর্তা তাঁকে জেরাও করেছিলেন। এটা ছিল ডামি চাঁদাবাজ। কালা জাহাঙ্গীর এ ঘটনার পর খুবই ক্ষুব্ধ হন।
অজয় মিত্রকে নিয়ে আমার তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৭ আগস্ট ২০০২। সেখানে অজয় মিত্রের কোনো বক্তব্য ছাপা হয়নি। তবে কোকা-কোলার মূল প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা ফার ইস্টের একটি বক্তব্য ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, কোকা-কোলা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থাশীল।
সেই খবর প্রকাশের পর কালা জাহাঙ্গীর ফোন করে প্রতিবাদ জানান। অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি লিখিত প্রতিবাদও পাঠান। কিন্তু তখনকার পুলিশ কমিশনার আবদুল কাইয়ুম আমাকে বলেছিলেন, এই হুমকিদাতা যে কালা জাহাঙ্গীর, সে ব্যাপারে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত। কয়েক দিন পর শুনলাম, অজয় মিত্র বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কোকা-কোলার অফিস বিজয় সরণি থেকে গুলশানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অজয় মিত্র চলে যাওয়ার কিছুদিন পর জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সোনিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ডিবি অফিসে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সোনিয়া আমাকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীরের মাসে খরচ ৭০ লাখ টাকার বেশি। সেই টাকার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোকা-কোলার কর্তাকেও সে ছেড়ে দিত না।
সেদিন সোনিয়ার এই কথা শুনে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেন অজয় মিত্র!
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি। ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা
১১ মার্চ ২০২৩
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি। ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা
১১ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি। ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা
১১ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অপেক্ষা নাকি মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কোন মনীষী কথাটা বলেছিলেন, সেটা আর মনে নেই। কিন্তু কথা যে সত্যি, তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আড়াই ঘণ্টা ধরে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে বসে আছি। ভদ্রলোকের দেখা নেই। অবশ্য এর মধ্যে তাঁর সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছে ইন্টারকমে। তিনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার সঙ্গে দেখা
১১ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে