কামরুল হাসান
নভেম্বরের ঠান্ডাটা তখনো জেঁকে বসেনি, কিছুটা তুলতুলে। গায়ে হালকা শীতের কাপড়। মোটরবাইক জোরে চালালেই ঠান্ডা লাগছে। বাইকের পেছনে সহকর্মী বন্ধু আহমেদ দীপু, পায়ের চিকিৎসা করিয়ে কিছুদিন আগে ভারত থেকে ফিরেছে। ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবন থেকে বাসায় ফিরছি আমরা। দীপুর বাসা শাহজাহানপুরে, সেখানে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে আমি আসব লালমাই ভবন, সিদ্ধেশ্বরীতে। রাত ১১টা কি সাড়ে ১১টা হবে।
মালিবাগ মোড়ে এসে দেখি রাস্তায় পুলিশের বড় বড় গাড়ি। বেশির ভাগই ডিবি বা সিআইডির গাড়ির মতো। রোজই এ পথে যাই। এমনিতে রাতের বেলা মালিবাগ মোড়ের সিআইডি-এসবির অফিসের দিকটা খুব নিরিবিলি থাকে। রাতে এত গাড়ি দেখে একটু অবাক হলাম। বাইকের মুখ ঘুরিয়ে সিআইডির গেটের কাছে গিয়ে দেখি, ভেতরেও অনেক মানুষ। কী হচ্ছে? অচেনা একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি চোখ বড় করে তাকালেন। একটু পরে গেটের বাইরে পেয়ে গেলাম পরিচিত এক কর্মকর্তার গাড়িচালককে। এত কর্তাসমাগমের কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, রাতে বড় অভিযান হবে। তবে অভিযানটা কিসের, তা তিনি জানেন না।
সংবাদকর্মীদের জন্য এতটুকু ক্লুই যথেষ্ট। হাতের মুঠোয় অফিসের দেওয়া মোবাইল ফোন। সেই ফোনে কল দিলাম অফিসে। সিনিয়র ফটোসাংবাদিক ইয়াসিন কবীর জয় অফিসেই আছেন। তাঁকে অভিযানের কথা বলতেই বললেন, ‘খাড়াও, আইতাছি।’ মিনিট দশেকের মধ্যে জয় এসে হাজির।
আমরা বসে আছি সিআইডি অফিসের সামনের রাস্তার পশ্চিম পাশের ফুটপাতে। পরিকল্পনা হলো, পুলিশের গাড়ি বের হলেই পিছু নেব, যা থাকে কপালে। কিন্তু গাড়ি আর সহজে বের হয় না। অবশেষে রাত দেড়টার দিকে মনে হলো, সবাই নড়াচড়া করছেন। আমরাও প্রস্তুত। গাড়িগুলো মৌচাক ছেড়ে মগবাজারের দিকে চলে যাচ্ছে। আমরাও গাড়ির পেছনে পেছনে। বহরে গোটা বিশেক গাড়ি। সেই বহর মহাখালী পেরিয়ে গুলশান ১ নম্বরের দিকে এগোতে থাকল। আমরা আর হাল ছাড়ছি না। বহর এসে থামল গুলশান ১০০ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে। মুহূর্তের মধ্যে জনা পঞ্চাশেক পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেললেন। এরপর শুরু হলো চিরুনি তল্লাশি। ঘণ্টাখানেক সবাই চুপচাপ। বেরিয়ে এলেন কর্মকর্তারা। মনে হলো তাঁরা বেশ হতাশ। আমরা তখনো বুঝতে পারছি না কিসের অভিযান। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বাড়িটি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির। তিনি সমাজে খুবই পরিচিত।
আমি আর জয় যতটা সম্ভব নিজেদের আড়াল করেই অভিযান দেখছি। কিন্তু এত আড়ালের পরও এক পুলিশ সদস্য আমাদের চিনে ফেললেন। জয়ের হাতে ক্যামেরার ব্যাগ দেখে তিনি এগিয়ে এসে কিছুটা অবাক হয়ে হেসে ফেললেন। তাঁর কাছ থেকে প্রথম জানলাম, এই অভিযান হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর শরিফুল হক ডালিমকে ধরার জন্য। পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার কাছে গোপন সূত্রে খবর এসেছিল, খুনি ডালিম ছদ্মবেশ নিয়ে দেশে এসে ঘোরাফেরা করছেন। তিনি গুলশান এলাকার কোনো এক বাসায় আস্তানা গেড়েছেন। তাঁকে ধরতেই এই বিশাল গাড়িবহর নামানো হয়েছে। অভিযানের দলটি প্রথমে যে বাড়িতে ঢুকেছিল, সেটা খুনি ডালিমের এক আত্মীয়ের বাড়ি।
কিন্তু সেই বাড়িতে তাঁকে পাওয়া গেল না। এরপর আর কোন কোন বাড়িতে অভিযান হবে, তা তিনি জানেন না। তবে বললেন, সারা রাত আরও অনেক বাড়িতেই অভিযান হবে।
পরিচিত সেই পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে এ খবর শুনে একটু আরাম পেলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সারা রাত এই অভিযানের পেছনে পেছনে থাকব। কিন্তু অভিযানের কারণ শুনে স্বস্তি পেলেও পুলিশ দলের অস্বস্তির কারণ হয়ে গেলাম একটু পরেই। সেই পুলিশ সদস্য আমাদের উপস্থিতির কথা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিলেন। আমাদের উপস্থিতিতে তাঁরা মহাবিরক্ত।
১০০ নম্বর সড়ক থেকে বেরিয়ে এবার পুলিশের বহর যাচ্ছে গুলশান থানার দিকে। গুলশান ১ ও ২ নম্বরের মাঝামাঝি একটি বাড়িতে ছিল গুলশান থানা। গাড়ির বহর গিয়ে সেখানে থামল। আমরাও গেলাম। গুলশান থানার ওসি আমার পরিচিত। তিনি বাইরে আমাদের দেখে একটু অবাক হলেন। তবে কিছু বললেন না। একটু পর এক কনস্টেবল আমাদের কাছে এসে বললেন, থানার ভেতরে বড় স্যার আপনাদের ডাকছেন।
থানা ভবনের নিচতলায় গুলশান থানার ওসির রুমে বসার আর কোনো জায়গা নেই। নানা পদের কর্মকর্তা। একটু ঢুঁ দিতেই মুখ দেখে ফেললেন সেই কর্মকর্তা। তিনি হলেন আবদুল হান্নান খান। সিআইডির বিশেষ সুপার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদারককারী কর্মকর্তা। পরে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর এই ডাকসাইটে কর্মকর্তা মারা যান। হান্নান খান আমার সুপরিচিত, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই মিয়া, কী শুরু করছ? একটা কাজও আরামে করতে দিবা না?’ আমি বললাম, কিছুই তো করিনি। কথা শুনে হেসে ফেললেন। বললেন, ‘দেখো মিয়া, একটা মামলার পেছনে কত মানুষের পরিশ্রম থাকে, কত কষ্ট থাকে। তোমরা তো দু লাইন লিখেই খালাস!’ হান্নান খানের পাশের লোকটির মুখ গম্ভীর। তিনি আবদুল কাহার আকন্দ। আমরা দলে থাকি, সেটা তিনি কোনোভাবেই চান না।
হান্নান খান আমাদের শর্ত দিলেন, দলের সঙ্গে থাকা যাবে, তবে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা যাবে না, নোটও করা যাবে না। আমরা তাঁর সব শর্ত মেনে নিলাম। সঙ্গে থাকার অনুমতি মিলল।
পরের অভিযান শুরু ৩০ মিনিট পরে। এবার গাড়িবহর চলল গুলশান ২ নম্বর ছাড়িয়ে উত্তর দিকে। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে একদল পুলিশ চোখের পলকে বাড়িটি ঘিরে ফেলল। আরেক দল ভেতরে গিয়ে তল্লাশি শুরু করল। সেই বাড়ি এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর। তাঁর ভাই তখনকার বড় নেতা। একটু পরে সেখানে এলেন নামকরা এক টিভি উপস্থাপক। ঘণ্টাখানেক পরে শুরু হলো হইচই। কী হচ্ছে তা বোঝার জন্য আমরা ঢুকলাম বাড়ির ভেতরে। দেখি পুলিশের দলটিকে তাঁরা সমানে বকাঝকা করছেন। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ফোন করা হয়েছে। আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেখে একজনের ইশারা পেয়ে দারোয়ান ভেতর থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন। আমরা চাইলেও আর বের হতে পারব না।
দেখি, গৃহকর্তা আর তাঁর বন্ধুরা সবাই মিলে পুলিশকে ভর্ৎসনা করছেন আর ভুল অভিযানের জন্য কৈফিয়ত চাইছেন। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। আমরা যে বের হব, তারও উপায় নেই। পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিক দেখে গৃহকর্তার রাগ আরও চড়ে গেছে। তিনি যা মুখে এল, তা-ই বলতে থাকলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার তাঁকে অনুরোধ করে ঠান্ডা হতে বললেও তিনি শুনছেন না। একপর্যায়ে তাঁকে বলা হলো, একটি ভুল খবরে এই অভিযান হয়েছে। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে।
তারপরও গৃহকর্তা নাছোড়। শর্ত জুড়ে দিলেন, মুচলেকা না দিলে তিনি কাউকে বের হতে দেবেন না। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। অগত্যা মুচলেকা দিতেই হলো। গৃহকর্তা যখন গেটের তালা খুলে দিলেন, তখন ভোর হয়ে গেছে।
১৯৯৮ সালের ২৭ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতের ঘটনা। পরদিন শনিবার অফিসে এসে যা দেখেছি, লিখে ফেললাম। আর ২৯ নভেম্বর রোববার জনকণ্ঠে তা ছাপা হলো। সেই রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর অবশ্য তেমন কিছুই হয়নি, শুধু আবদুল কাহার আকন্দ ছয় মাস কথা বলেননি আমার সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
নভেম্বরের ঠান্ডাটা তখনো জেঁকে বসেনি, কিছুটা তুলতুলে। গায়ে হালকা শীতের কাপড়। মোটরবাইক জোরে চালালেই ঠান্ডা লাগছে। বাইকের পেছনে সহকর্মী বন্ধু আহমেদ দীপু, পায়ের চিকিৎসা করিয়ে কিছুদিন আগে ভারত থেকে ফিরেছে। ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবন থেকে বাসায় ফিরছি আমরা। দীপুর বাসা শাহজাহানপুরে, সেখানে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে আমি আসব লালমাই ভবন, সিদ্ধেশ্বরীতে। রাত ১১টা কি সাড়ে ১১টা হবে।
মালিবাগ মোড়ে এসে দেখি রাস্তায় পুলিশের বড় বড় গাড়ি। বেশির ভাগই ডিবি বা সিআইডির গাড়ির মতো। রোজই এ পথে যাই। এমনিতে রাতের বেলা মালিবাগ মোড়ের সিআইডি-এসবির অফিসের দিকটা খুব নিরিবিলি থাকে। রাতে এত গাড়ি দেখে একটু অবাক হলাম। বাইকের মুখ ঘুরিয়ে সিআইডির গেটের কাছে গিয়ে দেখি, ভেতরেও অনেক মানুষ। কী হচ্ছে? অচেনা একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি চোখ বড় করে তাকালেন। একটু পরে গেটের বাইরে পেয়ে গেলাম পরিচিত এক কর্মকর্তার গাড়িচালককে। এত কর্তাসমাগমের কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, রাতে বড় অভিযান হবে। তবে অভিযানটা কিসের, তা তিনি জানেন না।
সংবাদকর্মীদের জন্য এতটুকু ক্লুই যথেষ্ট। হাতের মুঠোয় অফিসের দেওয়া মোবাইল ফোন। সেই ফোনে কল দিলাম অফিসে। সিনিয়র ফটোসাংবাদিক ইয়াসিন কবীর জয় অফিসেই আছেন। তাঁকে অভিযানের কথা বলতেই বললেন, ‘খাড়াও, আইতাছি।’ মিনিট দশেকের মধ্যে জয় এসে হাজির।
আমরা বসে আছি সিআইডি অফিসের সামনের রাস্তার পশ্চিম পাশের ফুটপাতে। পরিকল্পনা হলো, পুলিশের গাড়ি বের হলেই পিছু নেব, যা থাকে কপালে। কিন্তু গাড়ি আর সহজে বের হয় না। অবশেষে রাত দেড়টার দিকে মনে হলো, সবাই নড়াচড়া করছেন। আমরাও প্রস্তুত। গাড়িগুলো মৌচাক ছেড়ে মগবাজারের দিকে চলে যাচ্ছে। আমরাও গাড়ির পেছনে পেছনে। বহরে গোটা বিশেক গাড়ি। সেই বহর মহাখালী পেরিয়ে গুলশান ১ নম্বরের দিকে এগোতে থাকল। আমরা আর হাল ছাড়ছি না। বহর এসে থামল গুলশান ১০০ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে। মুহূর্তের মধ্যে জনা পঞ্চাশেক পুলিশ সদস্য গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেললেন। এরপর শুরু হলো চিরুনি তল্লাশি। ঘণ্টাখানেক সবাই চুপচাপ। বেরিয়ে এলেন কর্মকর্তারা। মনে হলো তাঁরা বেশ হতাশ। আমরা তখনো বুঝতে পারছি না কিসের অভিযান। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বাড়িটি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির। তিনি সমাজে খুবই পরিচিত।
আমি আর জয় যতটা সম্ভব নিজেদের আড়াল করেই অভিযান দেখছি। কিন্তু এত আড়ালের পরও এক পুলিশ সদস্য আমাদের চিনে ফেললেন। জয়ের হাতে ক্যামেরার ব্যাগ দেখে তিনি এগিয়ে এসে কিছুটা অবাক হয়ে হেসে ফেললেন। তাঁর কাছ থেকে প্রথম জানলাম, এই অভিযান হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর শরিফুল হক ডালিমকে ধরার জন্য। পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার কাছে গোপন সূত্রে খবর এসেছিল, খুনি ডালিম ছদ্মবেশ নিয়ে দেশে এসে ঘোরাফেরা করছেন। তিনি গুলশান এলাকার কোনো এক বাসায় আস্তানা গেড়েছেন। তাঁকে ধরতেই এই বিশাল গাড়িবহর নামানো হয়েছে। অভিযানের দলটি প্রথমে যে বাড়িতে ঢুকেছিল, সেটা খুনি ডালিমের এক আত্মীয়ের বাড়ি।
কিন্তু সেই বাড়িতে তাঁকে পাওয়া গেল না। এরপর আর কোন কোন বাড়িতে অভিযান হবে, তা তিনি জানেন না। তবে বললেন, সারা রাত আরও অনেক বাড়িতেই অভিযান হবে।
পরিচিত সেই পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে এ খবর শুনে একটু আরাম পেলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সারা রাত এই অভিযানের পেছনে পেছনে থাকব। কিন্তু অভিযানের কারণ শুনে স্বস্তি পেলেও পুলিশ দলের অস্বস্তির কারণ হয়ে গেলাম একটু পরেই। সেই পুলিশ সদস্য আমাদের উপস্থিতির কথা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিলেন। আমাদের উপস্থিতিতে তাঁরা মহাবিরক্ত।
১০০ নম্বর সড়ক থেকে বেরিয়ে এবার পুলিশের বহর যাচ্ছে গুলশান থানার দিকে। গুলশান ১ ও ২ নম্বরের মাঝামাঝি একটি বাড়িতে ছিল গুলশান থানা। গাড়ির বহর গিয়ে সেখানে থামল। আমরাও গেলাম। গুলশান থানার ওসি আমার পরিচিত। তিনি বাইরে আমাদের দেখে একটু অবাক হলেন। তবে কিছু বললেন না। একটু পর এক কনস্টেবল আমাদের কাছে এসে বললেন, থানার ভেতরে বড় স্যার আপনাদের ডাকছেন।
থানা ভবনের নিচতলায় গুলশান থানার ওসির রুমে বসার আর কোনো জায়গা নেই। নানা পদের কর্মকর্তা। একটু ঢুঁ দিতেই মুখ দেখে ফেললেন সেই কর্মকর্তা। তিনি হলেন আবদুল হান্নান খান। সিআইডির বিশেষ সুপার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদারককারী কর্মকর্তা। পরে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর এই ডাকসাইটে কর্মকর্তা মারা যান। হান্নান খান আমার সুপরিচিত, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই মিয়া, কী শুরু করছ? একটা কাজও আরামে করতে দিবা না?’ আমি বললাম, কিছুই তো করিনি। কথা শুনে হেসে ফেললেন। বললেন, ‘দেখো মিয়া, একটা মামলার পেছনে কত মানুষের পরিশ্রম থাকে, কত কষ্ট থাকে। তোমরা তো দু লাইন লিখেই খালাস!’ হান্নান খানের পাশের লোকটির মুখ গম্ভীর। তিনি আবদুল কাহার আকন্দ। আমরা দলে থাকি, সেটা তিনি কোনোভাবেই চান না।
হান্নান খান আমাদের শর্ত দিলেন, দলের সঙ্গে থাকা যাবে, তবে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা যাবে না, নোটও করা যাবে না। আমরা তাঁর সব শর্ত মেনে নিলাম। সঙ্গে থাকার অনুমতি মিলল।
পরের অভিযান শুরু ৩০ মিনিট পরে। এবার গাড়িবহর চলল গুলশান ২ নম্বর ছাড়িয়ে উত্তর দিকে। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে একদল পুলিশ চোখের পলকে বাড়িটি ঘিরে ফেলল। আরেক দল ভেতরে গিয়ে তল্লাশি শুরু করল। সেই বাড়ি এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর। তাঁর ভাই তখনকার বড় নেতা। একটু পরে সেখানে এলেন নামকরা এক টিভি উপস্থাপক। ঘণ্টাখানেক পরে শুরু হলো হইচই। কী হচ্ছে তা বোঝার জন্য আমরা ঢুকলাম বাড়ির ভেতরে। দেখি পুলিশের দলটিকে তাঁরা সমানে বকাঝকা করছেন। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ফোন করা হয়েছে। আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেখে একজনের ইশারা পেয়ে দারোয়ান ভেতর থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন। আমরা চাইলেও আর বের হতে পারব না।
দেখি, গৃহকর্তা আর তাঁর বন্ধুরা সবাই মিলে পুলিশকে ভর্ৎসনা করছেন আর ভুল অভিযানের জন্য কৈফিয়ত চাইছেন। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। আমরা যে বের হব, তারও উপায় নেই। পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিক দেখে গৃহকর্তার রাগ আরও চড়ে গেছে। তিনি যা মুখে এল, তা-ই বলতে থাকলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার তাঁকে অনুরোধ করে ঠান্ডা হতে বললেও তিনি শুনছেন না। একপর্যায়ে তাঁকে বলা হলো, একটি ভুল খবরে এই অভিযান হয়েছে। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে।
তারপরও গৃহকর্তা নাছোড়। শর্ত জুড়ে দিলেন, মুচলেকা না দিলে তিনি কাউকে বের হতে দেবেন না। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। অগত্যা মুচলেকা দিতেই হলো। গৃহকর্তা যখন গেটের তালা খুলে দিলেন, তখন ভোর হয়ে গেছে।
১৯৯৮ সালের ২৭ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতের ঘটনা। পরদিন শনিবার অফিসে এসে যা দেখেছি, লিখে ফেললাম। আর ২৯ নভেম্বর রোববার জনকণ্ঠে তা ছাপা হলো। সেই রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর অবশ্য তেমন কিছুই হয়নি, শুধু আবদুল কাহার আকন্দ ছয় মাস কথা বলেননি আমার সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ নৌ সীমানার মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে দুই জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও একজন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর মতলব উত্তর মোহনপুরের চড় আব্দুল্লাহপুর নাছিরার চরে নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
১ দিন আগেরাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবারও অস্ত্রের মুখে একটি পরিবারকে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে মোহাম্মদপুরের বছিলাসংলগ্ন লাউতলা এলাকার ৮ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তত্ত্বাবধায়ক নাসিমা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
২৮ নভেম্বর ২০২৪রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
০৮ নভেম্বর ২০২৪পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
০৭ নভেম্বর ২০২৪