Ajker Patrika

সাধারণ এক নারীর জীবনবোধ

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ০৯: ৪২
সাধারণ এক নারীর জীবনবোধ

একদিন রাতে হঠাৎ এক নারীর ফোন। নিজের পরিচয় সম্পর্কে শুধু জানালেন, তিনি ফিরোজ আল মামুনের স্ত্রী। তারপর বললেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, বিরাট চাকরি করেন, কাঁড়ি কাঁড়ি বেতন পান। কিন্তু আমার মতো অসহায় মানুষের কথা কখনো ভেবেছেন? খোঁজ নিয়েছেন, আমরা কীভাবে এত বছর ধরে বেঁচে আছি? কেউ কি নিয়েছে?’ তারপর কান্নার শব্দ। আর কোনো কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতেই তিনি ফোন রেখে দিলেন। এই নারীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ মেঘ জমলে যেমন লাগে, ঠিক সেই রকম বিষণ্ন-নিঃস্ব মনে হলো নিজেকে।

একটু পরে মনে হলো, ফোনটা পেয়ে ভালোই হয়েছে। অনেক দিন ধরে আমি এই নারীকেই যেন খুঁজছি। কিন্তু ঠিকানা না জানায় হদিস করতে পারিনি। এবার অন্তত ফোন নম্বরটা পাওয়া গেল। দুই দিন পরে ফোন দিলাম, ধরল তার কিশোরী মেয়ে। মাকে চাইতেই ধরিয়ে দিল। পরিচয় দিয়ে বললাম, কাল আসতে চাই। প্রথমে একটু ইতস্তত করলেন, তারপর বাড়ির ঠিকানা দিলেন।

পুরান ঢাকার বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি। সেই গলি ধরে লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়িটি খুঁজতে ঘাম ছুটে গেল। বাড়ি না বলে একে বাসা বলাই ভালো। জরাজীর্ণ বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি আর দুই সন্তান। দুই হাজার টাকার এই ভাড়াটের খোঁজ আশপাশের বাসিন্দারাও ঠিকমতো জানেন না। সারাটা জীবন নীরব থাকা এই নারী আমাকে কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। পাশে বসা ছেলে মায়ের হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, মা, বলো, সবাই জানুক। এর পরই মুখ খুললেন নিলুফার।

তার আগে বলি নিলুফারের বাড়িতে যাওয়ার হেতু। ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আমার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হইচই পড়ে গিয়েছিল। সেটি প্রকাশের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তখনকার আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদকে এর জন্য তিনবার সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখ্যাও দিতে হয়েছিল।

সেই খবরে বলা হয়েছিল, জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সুইডেনপ্রবাসী বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু ২৩ বছর পলাতক থাকার পর ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর আত্মসমর্পণের পর ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অতি দ্রুততার সঙ্গে ফাঁসির সাজা মওকুফ করে দেন। সেদিনই তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। জিন্টু ও তাঁর সহযোগীদের হাতে যাঁরা খুন হয়েছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন নিলুফার ইয়াসমিন লিলি নামের এই নারীর স্বামী ফিরোজ আল মামুন।

নিলুফারের বাড়িতে আলাদা করে বসার কোনো বন্দোবস্ত নেই। কথা হচ্ছিল তাঁর চৌকিতে বসে। সেটির এক পাশে আমি, অন্য পাশে তিনি, তাঁর ছেলে সুমন ও মেয়ে সোমা। তিনি আমাকে বললেন, ১৯৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি ডেমরা এলাকায় তাঁর স্বামী ফিরোজ আল মামুন খুন হন। তাঁর সঙ্গে খুন হয়েছিলেন আবদুল খালেক রানা নামের এক ব্যবসায়ী। সে সময় এক হোটেল কর্মচারী তাঁকে জানিয়েছিলেন, অভিসার সিনেমা হলের পাশের একটি হোটেলে জিন্টু ও মানিকের সঙ্গে ফিরোজকেও দেখা গিয়েছিল। তখন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

সেই ঘটনায় মহিউদ্দিন জিন্টু, গালকাটা কামাল, শহীদ হোসেন ও আবুল কাসেম মানিকের ফাঁসির আদেশ হয়। পরে এরশাদ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে আবুল কাশেম মানিকের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দেন। তবে জিন্টু ও শহীদ পলাতক ছিলেন।

নিলুফার বললেন, ফিরোজ আল মামুন যখন খুন হন, তখন তাঁর কোলে দুই মাস আর দেড় বছর বয়সী দুই শিশু। কোথাও কোনো সহায় নেই। দিশেহারা হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। থানায় মামলা করেন। কিন্তু মূল আসামির নামই বাদ রাখা হয়। মামলার শুনানির সময় তিনি সামরিক আদালতে স্বামীর হত্যাকারী হিসেবে জিন্টুর নাম বলেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পান যখন জিন্টুসহ হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হয়।

স্বামীর হত্যাকারীদের শাস্তি হয়েছে—এই স্বস্তি নিয়ে নিলুফার এবার ঝাঁপিয়ে পড়েন সন্তানদের গড়ে তুলতে। সংসারের হাল ধরতে শ্যামলীর একটি এতিমখানায় শিশু লালন-পালনের কাজ নেন। নিলুফারের সেই ছেলে-মেয়ে এরপর বড় হয়। ক্লান্তিকর অতীত পেরিয়ে যখন কিছুটা সুখের মুখ দেখতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই আবার তাঁর জীবনে ঝড় বয়ে যায়। মহিউদ্দিন জিন্টুর ফাঁসির দণ্ড রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দিয়েছেন—এ কথা শুনে হতাশায় ভেঙে পড়েন নিলুফার। তবে ঘটনাটি নিয়ে চারদিকে এত আলোচনা হলেও পরিবারটি কিছুই জানতে পারেনি। তাঁর ছেলে সুমন একটি বাড়িতে টিউশনি করতে গিয়ে পুরোনো পত্রিকা পড়ে সব জানতে পারেন। এরপর বাড়ি ফিরে মাকে জানান।

নিলুফার বললেন, ফিরোজ নিহত হওয়ার সময় মেয়ে সোমার বয়স ছিল দেড় বছর আর সুমনের দুই মাস। বাবার কোনো স্মৃতিই তাদের মনে নেই। সুমন ছবি আঁকতে পারে। অসহায় পরিবারটির খরচ জোগাড় হচ্ছিল ভালো আঁকিয়ে সুমনের টিউশনির টাকায়।

নিলুফার বলেছিলেন, লাশ পাওয়ার পর সেই হোটেলের কর্মচারী আবার তাঁর কাছে এসে খুনের ঘটনা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জিন্টু ও মানিকের সঙ্গে সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল তাঁর হোটেলে বসে খুনের ব্যাপারে আলাপ করেছেন। টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল ফিরোজকে খুন করেন। লাশ দাফনের পর তিনি নিজে ডেমরা থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন। পুলিশ মামলার বিবরণ লিখে তাঁকে সই করতে বললে তিনি সই করেন। এরপর চার্জশিট দেওয়ার সময় জিন্টুর নাম বাদ দেওয়া হয়।

হত্যা মামলাটির বিচার হয় তৎকালীন সামরিক আদালত-১-এ। আদালত নিলুফারের জবানবন্দি নেওয়ার পর মামলাটি আবার তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচার শেষে মামলার রায় ঘোষণা হয় ১৯৮২ সালের ২০ জুলাই। রায়ে তখনকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল, তাঁর দুই সহযোগী শহীদ হোসেন ও আবুল কাসেম মানিকের সঙ্গে মহিউদ্দিন জিন্টুরও ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর করার আগে নিলুফারের সামনে কামালকে হাজির করা হয়েছিল। তখন কামাল তাঁর কাছে মাফ চেয়ে বলেছিলেন, ‘ফিরোজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না। টাকার বিনিময়ে আমি তাঁকে খুন করেছি।’ কারা টাকা দিয়েছিল, আপনি তা জানতে চেয়েছিলেন? জবাবে নিলুফার বললেন, ‘হ্যাঁ, কামাল বলেছিল, মানিক ও জিন্টু তাঁকে খুন করার জন্য টাকা দিয়ে ভাড়া করেছিল।’

এই খুনের ১০-১২ দিন পর সে সময়ের এক মন্ত্রীও তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। খুনের সঙ্গে জিন্টু ও মানিক জড়িত ছিলেন বলে জানালে তিনি ‘দেখবেন’ বলে চলে যান। সেই আশ্বাসে ২৩ বছর কাটে। কিন্তু কেউ কিছুই করেননি।

স্বামীকে হারানোর পর দুই সন্তান নিয়ে নিলুফার বিপাকে পড়েন। বনগ্রামের বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যান মায়ের কাছে। প্রাণে-মানে বাঁচতে এতিমখানায় কাজ নেন। ২০ বছর সেখানেই শিশু লালন-পালনের কাজ করেন। মাত্র দুই বছর আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় সেই কাজ ছেড়ে দেন।

নিলুফার বলেছিলেন, স্বামীর খুনির সাজা মওকুফের কথা শুনে তিনি খুব কেঁদেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও। একবার তাঁরা একসঙ্গে আত্মহত্যা করবেন বলেও স্থির করেছিলেন। কিন্তু পরে মনে হয়েছিল, তাঁদের মতো গরিব মানুষের কোনো কিছুতেই কোনো আক্ষেপ নেই, কারও কাছে কিছু চাওয়ার নেই। জীবনে তাঁদের কোনো প্রাপ্তি নেই—সবই হারানোর। তাহলে শুধু শুধু কেন মরতে যাবেন। এরপর সিদ্ধান্ত বদল করেন।

নিলুফারের সঙ্গে কথা শেষ করে ফিরছি। রাস্তায় চলছি, কিন্তু ঘোর কাটছে না। অতিসাধারণ এক নারীর এই জীবনবোধ আমাকে হতবাক করেছে। মনে হয়েছিল, এই নারী সাধারণ কেউ নন, তিনি বড় কোনো দার্শনিক আর আমি তাঁর শিক্ষার্থীমাত্র।

আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত