কামরুল হাসান

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই লোক কী করে সন্ত্রাসী হতে পারেন, তার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না গ্রামবাসী।
সেদিন নেউরা গ্রামের মানুষের মতো আমরাও ধন্দে পড়েছিলাম। এমন একজন সন্ত্রাসী কী করে সরকারের অনুমোদিত সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মকসুদে পৌঁছাতে পারেননি।
২০০২ সালের নভেম্বর মাস। সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্ট সবে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। অভিযানের ভয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা ডেরা ছেড়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল। সে সময় বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর গন্তব্য ছিল ভারতের কলকাতা। কয়েকজন ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও পাড়ি জমান। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ যেতে পারেন, তা তখন পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ সেই খবর এল বিমানবন্দর থেকে।
২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ছিল সোমবার। সকালের দিকে এক পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে বললেন, বিদেশে পালানোর সময় এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন। লন্ডনগামী উড়োজাহাজ থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর একটু হলেই উড়াল দিত উড়োজাহাজটি। তিনি সেই সন্ত্রাসীর নাম জানেন না, অথবা বলতে চাইলেন না।
বিমানবন্দরের রাস্তা সেদিন ফাঁকাই ছিল। বন্দরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ও লাগল না। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানালেন, উড়োজাহাজ থেকে যাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে, তিনি এখন আর বিমানবন্দরের ভেতরে নেই। সেনা সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোথায় নিয়ে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।
বিমানবন্দর নামে তখনো কোনো থানা হয়নি। উত্তরা থানা এসব দেখভাল করত। মনে হলো, উত্তরা থানায় গেলে সন্ত্রাসীর হদিস পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! থানার সামনের রাস্তা সেনাবাহিনী আর পুলিশের গাড়িতে ঠাসা। ভেতরে বড় কর্মকর্তারা সেই ব্যক্তিকে জেরা করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে দেখি, ওসির চেয়ারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বসা; তাঁর সামনে গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাঁরা খুব ছোট করে একটি ব্রিফ দিলেন।
এক কর্মকর্তা বললেন, যে লোকটি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুর রশিদ, পিতার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম রোজিয়া বেগম, বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে, নেউরা গ্রামে। তিনি নোট দেখে দেখে বললেন, এই লোকটি সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডন হয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন।ফ্লাইটটির সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি উড়োজাহাজে উঠে বসেছিলেন।
উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে নামিয়ে আনেন। আমাদের কেউ একজন জানতে চাইলেন, কীভাবে খবর পেলেন? ওই কর্মকর্তা বললেন, সেই সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। উড়োজাহাজে সেই ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি তাঁকে চিনতে পেরে পুলিশকে ফোন করে জানান। আমরা জানতে চাইলাম, তাঁর সঙ্গে আর কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন? এবার কর্মকর্তা একটু ভেবে বললেন, হ্যাঁ, আরও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর নাম নজরুল কোরেশি। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রোডাকশন ডিরেক্টর।
এতটুকু শুনে আমরা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না, আবদুর রশিদের সঙ্গে চ্যানেলের কর্মকর্তারই-বা কী সম্পর্ক। এর মধ্যে আমাদের এক সাংবাদিক বলে ওঠেন, তিনি কি সন্ত্রাসী কালা ফারুক? এবার সেই কর্মকর্তা মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বলেন, ‘এবার আপনারা আসতে পারেন।’
কালা ফারুকের নাম শুনেই সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁর ফিরিস্তি বলা শুরু করলেন। একজন বললেন, তিনি তো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভিপি রিয়াদ খুনের আসামি। আরেকজন বললেন, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের যে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হলো, সেই মামলায় কালা ফারুকের নাম ছিল। থানার ভেতরে তখনো জেরা চলছে। আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বেশির ভাগ খবরের শুরুতে কোনো কিছু জানা না গেলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে ডালপালা ছড়াতে থাকে, কালা ফারুকের ঘটনাও সেভাবে মোটাতাজা হতে শুরু করল। বিকেলের আগেই অনেক কিছু প্রকাশ হয়ে গেল। আমরা জানতে পারলাম, কালা ফারুক আসলে সুইডেনে যাচ্ছিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে।
তাঁকে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুইডেনের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি দলকে সেখানে পাঠানোর জন্য নির্ধারণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। সেই দলের প্রধান ছিলেন গায়ক শুভ্র দেব। ওই দলে গায়িকা শাকিলা জাফর ও অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমীর যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পকলা একাডেমির তালিকা অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার অনাপত্তি দেয়।
এরপরই তাঁরা ভিসা নেন। তবে সেদিন প্রথম দফায় যাচ্ছিলেন দলের মাত্র দুজন সদস্য। তাঁদের একজন কালা ফারুক, অন্যজন হলেন নজরুল কোরেশি। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কালা ফারুকের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের কাজ করে দিয়েছিলেন নজরুল কোরেশি। অবশ্য ধরা পড়ার দিন রাতে চ্যানেলটি থেকে বলা হয়েছিল, এটা নজরুল কোরেশির ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
সে সময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। একদিন ফলোআপের সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালা ফারুকের জন্য তদবির করেছিলেন। সেদিন তিনি আমাকে সেই ব্যবসায়ীর নামও বলেছিলেন ‘অব দ্য রেকর্ড’। আমি সেই নাম আর লিখতে পারিনি।
পরদিন সকালে চমকে ওঠার মতো খবর পেলাম। কালা ফারুক নিহত হয়েছেন রাতে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কী হয়েছিল রাতে? উত্তরা থানার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, কালা ফারুক ছিলেন কাফরুল থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁকে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় অভিযানের সময় তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশও গুলি চালায়।
সে সময় কালা ফারুক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ গুলি করে। সেই গুলিতে ফারুক নিহত হন। কাফরুল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাছিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, দারোগা হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। দুপুরের দিকে মর্গে গিয়ে পেলাম ফরেনসিকের প্রভাষক নুর হোসেনকে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বললেন, গায়ে শটগানের অসংখ্য গুলি আছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা বলতে আর কিছুই লাগবে না যে এটা ছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধের আদি সংস্করণ।
কালা ফারুকের লাশ দুই দিন মর্গে পড়ে ছিল। কেউ নিতে আসেনি। পরে তাঁর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল কথা হলো কুমিল্লার সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, কুমিল্লা বিমানবন্দরের রাস্তায় যেতে কালা ফারুকের কবর দেখা যায়।
কালা ফারুক নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন পর লালমাটিয়া থেকে আমার অফিসে এলেন কালা ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা। তিনি ছিলেন কালা ফারুকের ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী। পরে তাঁকে বিয়ে করেন ফারুক। কুমিল্লায় স্বপ্না নামে তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান ছিল। শুক্লা আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন, এক ব্যবসায়ী পুলিশকে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন।
শুক্লার কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমানের কথা। তিনিও একই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন। আমি জানি না, তাঁর সঙ্গে কালা ফারুকের কিসের বিরোধ ছিল। তবে এটুকু বুঝি, এসব প্রভাবশালী নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন, এরপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলেন। কালা ফারুকের ভাগ্যে হয়তো সেটাই জুটেছিল।
তবে প্রিয় পাঠক, এত দিন পরেও সেই প্রভাবশালীর নাম বলতে না পারার ব্যর্থতাকে নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, নামটি যে অব দ্য রেকর্ড।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই লোক কী করে সন্ত্রাসী হতে পারেন, তার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না গ্রামবাসী।
সেদিন নেউরা গ্রামের মানুষের মতো আমরাও ধন্দে পড়েছিলাম। এমন একজন সন্ত্রাসী কী করে সরকারের অনুমোদিত সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মকসুদে পৌঁছাতে পারেননি।
২০০২ সালের নভেম্বর মাস। সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্ট সবে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। অভিযানের ভয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা ডেরা ছেড়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল। সে সময় বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর গন্তব্য ছিল ভারতের কলকাতা। কয়েকজন ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও পাড়ি জমান। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ যেতে পারেন, তা তখন পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ সেই খবর এল বিমানবন্দর থেকে।
২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ছিল সোমবার। সকালের দিকে এক পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে বললেন, বিদেশে পালানোর সময় এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন। লন্ডনগামী উড়োজাহাজ থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর একটু হলেই উড়াল দিত উড়োজাহাজটি। তিনি সেই সন্ত্রাসীর নাম জানেন না, অথবা বলতে চাইলেন না।
বিমানবন্দরের রাস্তা সেদিন ফাঁকাই ছিল। বন্দরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ও লাগল না। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানালেন, উড়োজাহাজ থেকে যাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে, তিনি এখন আর বিমানবন্দরের ভেতরে নেই। সেনা সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোথায় নিয়ে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।
বিমানবন্দর নামে তখনো কোনো থানা হয়নি। উত্তরা থানা এসব দেখভাল করত। মনে হলো, উত্তরা থানায় গেলে সন্ত্রাসীর হদিস পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! থানার সামনের রাস্তা সেনাবাহিনী আর পুলিশের গাড়িতে ঠাসা। ভেতরে বড় কর্মকর্তারা সেই ব্যক্তিকে জেরা করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে দেখি, ওসির চেয়ারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বসা; তাঁর সামনে গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাঁরা খুব ছোট করে একটি ব্রিফ দিলেন।
এক কর্মকর্তা বললেন, যে লোকটি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুর রশিদ, পিতার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম রোজিয়া বেগম, বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে, নেউরা গ্রামে। তিনি নোট দেখে দেখে বললেন, এই লোকটি সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডন হয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন।ফ্লাইটটির সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি উড়োজাহাজে উঠে বসেছিলেন।
উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে নামিয়ে আনেন। আমাদের কেউ একজন জানতে চাইলেন, কীভাবে খবর পেলেন? ওই কর্মকর্তা বললেন, সেই সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। উড়োজাহাজে সেই ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি তাঁকে চিনতে পেরে পুলিশকে ফোন করে জানান। আমরা জানতে চাইলাম, তাঁর সঙ্গে আর কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন? এবার কর্মকর্তা একটু ভেবে বললেন, হ্যাঁ, আরও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর নাম নজরুল কোরেশি। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রোডাকশন ডিরেক্টর।
এতটুকু শুনে আমরা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না, আবদুর রশিদের সঙ্গে চ্যানেলের কর্মকর্তারই-বা কী সম্পর্ক। এর মধ্যে আমাদের এক সাংবাদিক বলে ওঠেন, তিনি কি সন্ত্রাসী কালা ফারুক? এবার সেই কর্মকর্তা মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বলেন, ‘এবার আপনারা আসতে পারেন।’
কালা ফারুকের নাম শুনেই সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁর ফিরিস্তি বলা শুরু করলেন। একজন বললেন, তিনি তো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভিপি রিয়াদ খুনের আসামি। আরেকজন বললেন, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের যে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হলো, সেই মামলায় কালা ফারুকের নাম ছিল। থানার ভেতরে তখনো জেরা চলছে। আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বেশির ভাগ খবরের শুরুতে কোনো কিছু জানা না গেলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে ডালপালা ছড়াতে থাকে, কালা ফারুকের ঘটনাও সেভাবে মোটাতাজা হতে শুরু করল। বিকেলের আগেই অনেক কিছু প্রকাশ হয়ে গেল। আমরা জানতে পারলাম, কালা ফারুক আসলে সুইডেনে যাচ্ছিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে।
তাঁকে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুইডেনের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি দলকে সেখানে পাঠানোর জন্য নির্ধারণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। সেই দলের প্রধান ছিলেন গায়ক শুভ্র দেব। ওই দলে গায়িকা শাকিলা জাফর ও অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমীর যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পকলা একাডেমির তালিকা অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার অনাপত্তি দেয়।
এরপরই তাঁরা ভিসা নেন। তবে সেদিন প্রথম দফায় যাচ্ছিলেন দলের মাত্র দুজন সদস্য। তাঁদের একজন কালা ফারুক, অন্যজন হলেন নজরুল কোরেশি। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কালা ফারুকের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের কাজ করে দিয়েছিলেন নজরুল কোরেশি। অবশ্য ধরা পড়ার দিন রাতে চ্যানেলটি থেকে বলা হয়েছিল, এটা নজরুল কোরেশির ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
সে সময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। একদিন ফলোআপের সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালা ফারুকের জন্য তদবির করেছিলেন। সেদিন তিনি আমাকে সেই ব্যবসায়ীর নামও বলেছিলেন ‘অব দ্য রেকর্ড’। আমি সেই নাম আর লিখতে পারিনি।
পরদিন সকালে চমকে ওঠার মতো খবর পেলাম। কালা ফারুক নিহত হয়েছেন রাতে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কী হয়েছিল রাতে? উত্তরা থানার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, কালা ফারুক ছিলেন কাফরুল থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁকে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় অভিযানের সময় তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশও গুলি চালায়।
সে সময় কালা ফারুক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ গুলি করে। সেই গুলিতে ফারুক নিহত হন। কাফরুল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাছিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, দারোগা হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। দুপুরের দিকে মর্গে গিয়ে পেলাম ফরেনসিকের প্রভাষক নুর হোসেনকে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বললেন, গায়ে শটগানের অসংখ্য গুলি আছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা বলতে আর কিছুই লাগবে না যে এটা ছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধের আদি সংস্করণ।
কালা ফারুকের লাশ দুই দিন মর্গে পড়ে ছিল। কেউ নিতে আসেনি। পরে তাঁর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল কথা হলো কুমিল্লার সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, কুমিল্লা বিমানবন্দরের রাস্তায় যেতে কালা ফারুকের কবর দেখা যায়।
কালা ফারুক নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন পর লালমাটিয়া থেকে আমার অফিসে এলেন কালা ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা। তিনি ছিলেন কালা ফারুকের ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী। পরে তাঁকে বিয়ে করেন ফারুক। কুমিল্লায় স্বপ্না নামে তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান ছিল। শুক্লা আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন, এক ব্যবসায়ী পুলিশকে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন।
শুক্লার কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমানের কথা। তিনিও একই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন। আমি জানি না, তাঁর সঙ্গে কালা ফারুকের কিসের বিরোধ ছিল। তবে এটুকু বুঝি, এসব প্রভাবশালী নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন, এরপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলেন। কালা ফারুকের ভাগ্যে হয়তো সেটাই জুটেছিল।
তবে প্রিয় পাঠক, এত দিন পরেও সেই প্রভাবশালীর নাম বলতে না পারার ব্যর্থতাকে নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, নামটি যে অব দ্য রেকর্ড।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই লোক কী করে সন্ত্রাসী হতে পারেন, তার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না গ্রামবাসী।
সেদিন নেউরা গ্রামের মানুষের মতো আমরাও ধন্দে পড়েছিলাম। এমন একজন সন্ত্রাসী কী করে সরকারের অনুমোদিত সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মকসুদে পৌঁছাতে পারেননি।
২০০২ সালের নভেম্বর মাস। সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্ট সবে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। অভিযানের ভয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা ডেরা ছেড়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল। সে সময় বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর গন্তব্য ছিল ভারতের কলকাতা। কয়েকজন ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও পাড়ি জমান। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ যেতে পারেন, তা তখন পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ সেই খবর এল বিমানবন্দর থেকে।
২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ছিল সোমবার। সকালের দিকে এক পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে বললেন, বিদেশে পালানোর সময় এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন। লন্ডনগামী উড়োজাহাজ থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর একটু হলেই উড়াল দিত উড়োজাহাজটি। তিনি সেই সন্ত্রাসীর নাম জানেন না, অথবা বলতে চাইলেন না।
বিমানবন্দরের রাস্তা সেদিন ফাঁকাই ছিল। বন্দরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ও লাগল না। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানালেন, উড়োজাহাজ থেকে যাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে, তিনি এখন আর বিমানবন্দরের ভেতরে নেই। সেনা সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোথায় নিয়ে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।
বিমানবন্দর নামে তখনো কোনো থানা হয়নি। উত্তরা থানা এসব দেখভাল করত। মনে হলো, উত্তরা থানায় গেলে সন্ত্রাসীর হদিস পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! থানার সামনের রাস্তা সেনাবাহিনী আর পুলিশের গাড়িতে ঠাসা। ভেতরে বড় কর্মকর্তারা সেই ব্যক্তিকে জেরা করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে দেখি, ওসির চেয়ারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বসা; তাঁর সামনে গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাঁরা খুব ছোট করে একটি ব্রিফ দিলেন।
এক কর্মকর্তা বললেন, যে লোকটি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুর রশিদ, পিতার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম রোজিয়া বেগম, বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে, নেউরা গ্রামে। তিনি নোট দেখে দেখে বললেন, এই লোকটি সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডন হয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন।ফ্লাইটটির সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি উড়োজাহাজে উঠে বসেছিলেন।
উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে নামিয়ে আনেন। আমাদের কেউ একজন জানতে চাইলেন, কীভাবে খবর পেলেন? ওই কর্মকর্তা বললেন, সেই সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। উড়োজাহাজে সেই ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি তাঁকে চিনতে পেরে পুলিশকে ফোন করে জানান। আমরা জানতে চাইলাম, তাঁর সঙ্গে আর কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন? এবার কর্মকর্তা একটু ভেবে বললেন, হ্যাঁ, আরও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর নাম নজরুল কোরেশি। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রোডাকশন ডিরেক্টর।
এতটুকু শুনে আমরা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না, আবদুর রশিদের সঙ্গে চ্যানেলের কর্মকর্তারই-বা কী সম্পর্ক। এর মধ্যে আমাদের এক সাংবাদিক বলে ওঠেন, তিনি কি সন্ত্রাসী কালা ফারুক? এবার সেই কর্মকর্তা মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বলেন, ‘এবার আপনারা আসতে পারেন।’
কালা ফারুকের নাম শুনেই সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁর ফিরিস্তি বলা শুরু করলেন। একজন বললেন, তিনি তো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভিপি রিয়াদ খুনের আসামি। আরেকজন বললেন, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের যে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হলো, সেই মামলায় কালা ফারুকের নাম ছিল। থানার ভেতরে তখনো জেরা চলছে। আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বেশির ভাগ খবরের শুরুতে কোনো কিছু জানা না গেলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে ডালপালা ছড়াতে থাকে, কালা ফারুকের ঘটনাও সেভাবে মোটাতাজা হতে শুরু করল। বিকেলের আগেই অনেক কিছু প্রকাশ হয়ে গেল। আমরা জানতে পারলাম, কালা ফারুক আসলে সুইডেনে যাচ্ছিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে।
তাঁকে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুইডেনের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি দলকে সেখানে পাঠানোর জন্য নির্ধারণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। সেই দলের প্রধান ছিলেন গায়ক শুভ্র দেব। ওই দলে গায়িকা শাকিলা জাফর ও অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমীর যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পকলা একাডেমির তালিকা অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার অনাপত্তি দেয়।
এরপরই তাঁরা ভিসা নেন। তবে সেদিন প্রথম দফায় যাচ্ছিলেন দলের মাত্র দুজন সদস্য। তাঁদের একজন কালা ফারুক, অন্যজন হলেন নজরুল কোরেশি। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কালা ফারুকের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের কাজ করে দিয়েছিলেন নজরুল কোরেশি। অবশ্য ধরা পড়ার দিন রাতে চ্যানেলটি থেকে বলা হয়েছিল, এটা নজরুল কোরেশির ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
সে সময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। একদিন ফলোআপের সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালা ফারুকের জন্য তদবির করেছিলেন। সেদিন তিনি আমাকে সেই ব্যবসায়ীর নামও বলেছিলেন ‘অব দ্য রেকর্ড’। আমি সেই নাম আর লিখতে পারিনি।
পরদিন সকালে চমকে ওঠার মতো খবর পেলাম। কালা ফারুক নিহত হয়েছেন রাতে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কী হয়েছিল রাতে? উত্তরা থানার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, কালা ফারুক ছিলেন কাফরুল থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁকে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় অভিযানের সময় তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশও গুলি চালায়।
সে সময় কালা ফারুক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ গুলি করে। সেই গুলিতে ফারুক নিহত হন। কাফরুল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাছিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, দারোগা হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। দুপুরের দিকে মর্গে গিয়ে পেলাম ফরেনসিকের প্রভাষক নুর হোসেনকে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বললেন, গায়ে শটগানের অসংখ্য গুলি আছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা বলতে আর কিছুই লাগবে না যে এটা ছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধের আদি সংস্করণ।
কালা ফারুকের লাশ দুই দিন মর্গে পড়ে ছিল। কেউ নিতে আসেনি। পরে তাঁর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল কথা হলো কুমিল্লার সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, কুমিল্লা বিমানবন্দরের রাস্তায় যেতে কালা ফারুকের কবর দেখা যায়।
কালা ফারুক নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন পর লালমাটিয়া থেকে আমার অফিসে এলেন কালা ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা। তিনি ছিলেন কালা ফারুকের ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী। পরে তাঁকে বিয়ে করেন ফারুক। কুমিল্লায় স্বপ্না নামে তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান ছিল। শুক্লা আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন, এক ব্যবসায়ী পুলিশকে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন।
শুক্লার কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমানের কথা। তিনিও একই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন। আমি জানি না, তাঁর সঙ্গে কালা ফারুকের কিসের বিরোধ ছিল। তবে এটুকু বুঝি, এসব প্রভাবশালী নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন, এরপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলেন। কালা ফারুকের ভাগ্যে হয়তো সেটাই জুটেছিল।
তবে প্রিয় পাঠক, এত দিন পরেও সেই প্রভাবশালীর নাম বলতে না পারার ব্যর্থতাকে নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, নামটি যে অব দ্য রেকর্ড।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্ডারি হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই লোক কী করে সন্ত্রাসী হতে পারেন, তার হিসাব মেলাতে পারছিলেন না গ্রামবাসী।
সেদিন নেউরা গ্রামের মানুষের মতো আমরাও ধন্দে পড়েছিলাম। এমন একজন সন্ত্রাসী কী করে সরকারের অনুমোদিত সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মকসুদে পৌঁছাতে পারেননি।
২০০২ সালের নভেম্বর মাস। সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্ট সবে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। অভিযানের ভয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা ডেরা ছেড়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল। সে সময় বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর গন্তব্য ছিল ভারতের কলকাতা। কয়েকজন ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও পাড়ি জমান। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় কেউ যেতে পারেন, তা তখন পর্যন্ত শুনিনি। হঠাৎ সেই খবর এল বিমানবন্দর থেকে।
২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ছিল সোমবার। সকালের দিকে এক পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে বললেন, বিদেশে পালানোর সময় এক শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন। লন্ডনগামী উড়োজাহাজ থেকে তাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর একটু হলেই উড়াল দিত উড়োজাহাজটি। তিনি সেই সন্ত্রাসীর নাম জানেন না, অথবা বলতে চাইলেন না।
বিমানবন্দরের রাস্তা সেদিন ফাঁকাই ছিল। বন্দরে পৌঁছাতে খুব বেশি সময়ও লাগল না। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানালেন, উড়োজাহাজ থেকে যাঁকে নামিয়ে আনা হয়েছে, তিনি এখন আর বিমানবন্দরের ভেতরে নেই। সেনা সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোথায় নিয়ে গেছেন, তা তাঁরা জানেন না।
বিমানবন্দর নামে তখনো কোনো থানা হয়নি। উত্তরা থানা এসব দেখভাল করত। মনে হলো, উত্তরা থানায় গেলে সন্ত্রাসীর হদিস পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড! থানার সামনের রাস্তা সেনাবাহিনী আর পুলিশের গাড়িতে ঠাসা। ভেতরে বড় কর্মকর্তারা সেই ব্যক্তিকে জেরা করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক থানার ভেতরে ঢুকে দেখি, ওসির চেয়ারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বসা; তাঁর সামনে গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাঁরা খুব ছোট করে একটি ব্রিফ দিলেন।
এক কর্মকর্তা বললেন, যে লোকটি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম আবদুর রশিদ, পিতার নাম তাজুল ইসলাম, মায়ের নাম রোজিয়া বেগম, বাড়ি কুমিল্লা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে, নেউরা গ্রামে। তিনি নোট দেখে দেখে বললেন, এই লোকটি সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডন হয়ে ইউরোপ যাচ্ছিলেন।ফ্লাইটটির সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি উড়োজাহাজে উঠে বসেছিলেন।
উড়োজাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে নামিয়ে আনেন। আমাদের কেউ একজন জানতে চাইলেন, কীভাবে খবর পেলেন? ওই কর্মকর্তা বললেন, সেই সন্ত্রাসী এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন। উড়োজাহাজে সেই ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি তাঁকে চিনতে পেরে পুলিশকে ফোন করে জানান। আমরা জানতে চাইলাম, তাঁর সঙ্গে আর কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন? এবার কর্মকর্তা একটু ভেবে বললেন, হ্যাঁ, আরও একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর নাম নজরুল কোরেশি। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রোডাকশন ডিরেক্টর।
এতটুকু শুনে আমরা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না, আবদুর রশিদের সঙ্গে চ্যানেলের কর্মকর্তারই-বা কী সম্পর্ক। এর মধ্যে আমাদের এক সাংবাদিক বলে ওঠেন, তিনি কি সন্ত্রাসী কালা ফারুক? এবার সেই কর্মকর্তা মুখে কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিয়ে বলেন, ‘এবার আপনারা আসতে পারেন।’
কালা ফারুকের নাম শুনেই সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁর ফিরিস্তি বলা শুরু করলেন। একজন বললেন, তিনি তো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভিপি রিয়াদ খুনের আসামি। আরেকজন বললেন, কিছুদিন আগে হা-মীম গ্রুপের যে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হলো, সেই মামলায় কালা ফারুকের নাম ছিল। থানার ভেতরে তখনো জেরা চলছে। আমরা থানা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বেশির ভাগ খবরের শুরুতে কোনো কিছু জানা না গেলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে ডালপালা ছড়াতে থাকে, কালা ফারুকের ঘটনাও সেভাবে মোটাতাজা হতে শুরু করল। বিকেলের আগেই অনেক কিছু প্রকাশ হয়ে গেল। আমরা জানতে পারলাম, কালা ফারুক আসলে সুইডেনে যাচ্ছিলেন একটি সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে।
তাঁকে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুইডেনের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি দলকে সেখানে পাঠানোর জন্য নির্ধারণ করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। সেই দলের প্রধান ছিলেন গায়ক শুভ্র দেব। ওই দলে গায়িকা শাকিলা জাফর ও অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমীর যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পকলা একাডেমির তালিকা অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার অনাপত্তি দেয়।
এরপরই তাঁরা ভিসা নেন। তবে সেদিন প্রথম দফায় যাচ্ছিলেন দলের মাত্র দুজন সদস্য। তাঁদের একজন কালা ফারুক, অন্যজন হলেন নজরুল কোরেশি। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, কালা ফারুকের জন্য যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের কাজ করে দিয়েছিলেন নজরুল কোরেশি। অবশ্য ধরা পড়ার দিন রাতে চ্যানেলটি থেকে বলা হয়েছিল, এটা নজরুল কোরেশির ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে চ্যানেলের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
সে সময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। একদিন ফলোআপের সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালা ফারুকের জন্য তদবির করেছিলেন। সেদিন তিনি আমাকে সেই ব্যবসায়ীর নামও বলেছিলেন ‘অব দ্য রেকর্ড’। আমি সেই নাম আর লিখতে পারিনি।
পরদিন সকালে চমকে ওঠার মতো খবর পেলাম। কালা ফারুক নিহত হয়েছেন রাতে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কী হয়েছিল রাতে? উত্তরা থানার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, কালা ফারুক ছিলেন কাফরুল থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি। তাঁকে নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকায় অভিযানের সময় তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশও গুলি চালায়।
সে সময় কালা ফারুক পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ গুলি করে। সেই গুলিতে ফারুক নিহত হন। কাফরুল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাছিন আহমেদ আমাকে বলেছিলেন, দারোগা হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছেন। দুপুরের দিকে মর্গে গিয়ে পেলাম ফরেনসিকের প্রভাষক নুর হোসেনকে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বললেন, গায়ে শটগানের অসংখ্য গুলি আছে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এটা বলতে আর কিছুই লাগবে না যে এটা ছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধের আদি সংস্করণ।
কালা ফারুকের লাশ দুই দিন মর্গে পড়ে ছিল। কেউ নিতে আসেনি। পরে তাঁর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। গতকাল কথা হলো কুমিল্লার সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, কুমিল্লা বিমানবন্দরের রাস্তায় যেতে কালা ফারুকের কবর দেখা যায়।
কালা ফারুক নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন পর লালমাটিয়া থেকে আমার অফিসে এলেন কালা ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা। তিনি ছিলেন কালা ফারুকের ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী। পরে তাঁকে বিয়ে করেন ফারুক। কুমিল্লায় স্বপ্না নামে তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান ছিল। শুক্লা আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন, এক ব্যবসায়ী পুলিশকে টাকা দিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করিয়েছেন।
শুক্লার কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমানের কথা। তিনিও একই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন। আমি জানি না, তাঁর সঙ্গে কালা ফারুকের কিসের বিরোধ ছিল। তবে এটুকু বুঝি, এসব প্রভাবশালী নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন, এরপর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলেন। কালা ফারুকের ভাগ্যে হয়তো সেটাই জুটেছিল।
তবে প্রিয় পাঠক, এত দিন পরেও সেই প্রভাবশালীর নাম বলতে না পারার ব্যর্থতাকে নিশ্চয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, নামটি যে অব দ্য রেকর্ড।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় এই ব্যক্তি জড়িত বলে তার সহযোদ্ধাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে এই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁকে বার বার মাস্ক খুলতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণ আসলে হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
এই ব্যক্তি কে, তাঁর পরিচয় কী, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে হাদির পাশে মাস্ক পরা ওই ব্যক্তিকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলছেন অনেকেই। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আলোচিত ফয়সাল করিম কে?
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস
২০ মে ২০২৩
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস
২০ মে ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস
২০ মে ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

কুমিল্লা শহরতলির নেউরা গ্রামের লোকজন খবরটি শুনে খুবই হতবাক হয়েছিলেন। তাঁরা কস্মিনকালেও জানতে পারেননি, তাঁদের গ্রামের ভালো মানুষটি ‘সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়’। তা-ও যেনতেন নয়, রীতিমতো ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত’ তকমা আঁটা সন্ত্রাসী। এত দিন যে লোকটি দুহাতে দান-খয়রাত করেছেন, মসজিদ-এতিমখানা বানিয়েছেন, বিপদগ্রস
২০ মে ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৩ মিনিট আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে