কামরুল হাসান

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
ষাটোর্ধ্ব এই নারীকে প্রথম দেখায় বেশ হকচকিয়ে গেলাম। চোখধাঁধানো নীল ক্রেপ জর্জেটের শাড়ির সঙ্গে সোনালি ফ্রেমের চশমা, কানে মোটিফ দেওয়া সোনার দুল। গলায় সীতাহার কিংবা নেকলেস, কানের সঙ্গে মিল করা হাতের বালা। ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক, আলোয় চিকচিক করছে। রোজকার জীবনে এরকম সাজ কিছুটা অস্বাভাবিক। দেখে মনে হতে পারে, এইমাত্র বিয়েবাড়ি থেকে এলেন।
অনভ্যস্ত চোখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বুঝি?
মুচকি হাসলেন, বললেন সাজগোজ দেখে বলছেন? আমি সব সময় এ রকমই সাজি। সাজলে মন ভালো থাকে। এবার বলেন, আপনি কী জানতে চান?
সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বললাম, আপনার ছেলে সম্পর্কে জানতে এসেছি।
হাসি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। চুপচাপ কিছুক্ষণ। কিছুই বলছেন না, আমিও নীরব। এ রকম পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বেশ উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, আপনি নিষ্ঠুরতা দেখেছেন? নিষ্ঠুরতা!’
কী বলব বুঝতে পারছি না, হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
তিনিও আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন না, বলতে থাকলেন। ‘ধরেন, এই ঘরটাতে আপনাকে রোজ বেঁধে মারধর করা হবে। ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো হবে। পা ওপরের দিকে তুলে বেঁধে রাখা হবে। কান ধরে চার ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। পারবেন সহ্য করতে?’
আমি বললাম, না, অসম্ভব!
এবার একটু উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘এটা আমার পরিবারে হয়েছে, ভাবতে পারেন? আমার পরিবার মানে আমার নিজের ঘরে। এক দিন-দুই দিন নয়, দিনের পর দিন।’
বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন। চোখের পানিতে মুখের মেকআপ গলে পড়ছে। আমি টেবিল থেকে টিস্যু বক্সটা সামনে এনে ধরি। তিনি দুই হাতে মুখ ঢেকে বেশ জোরে কেঁদে ওঠেন। বললেন, ‘আমি তো মা। কাকে বলব এ কথা?’
একটু শান্ত হলে আমি জানতে চাইলাম, কে এটা করেছে?
–‘আপনি যার সম্পর্কে জানতে এসেছেন, সে এই নির্মমতা চালিয়েছে তার আপন ভাইয়ের ওপর। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।’
তো আপনারা সব দেখে চুপ থাকলেন?
‘দেখুন, আমরা স্বামী–স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থেকেছি। কোনো দিন সংসারের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। যখন তাকালাম, তখন সব শেষ। ভাইয়ের হাতে মার খেতে খেতে আমার এক ছেলে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেল।’ তিনি আর বলতে পারছেন না। গলা ধরে আসছে। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ। এরপর আমাকে বসিয়ে রেখে খাসকামরায় গেলেন। ফিরে এলেন হাতে টাওয়াল নিয়ে। দেখি মুখে কোনো মেকআপ নেই। গলার ভারী গয়নাটাও নেই। এই সুলতানা জাহান একেবারে ভিন্ন এক মানুষ।
‘আপনি ইমন সম্পর্কে কতটা জানেন? প্রশ্ন করলেন সুলতানা জাহান। বললাম, পুলিশ ফাইলে যা আছে, সেটুকুই।
‘জানেন, ইমন কত নিষ্ঠুর! সে শুধু নিজের ভাইকেই মারেনি। প্রতিপক্ষ ভেবে নিজের বোনের স্বামীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। জেলের ভেতরে তাঁকে মারধর করিয়েছে। তার জন্য আমাদের বারবার হেনস্তা হতে হয়েছে। অফিসের লোকজন আমাকে চেনে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মা হিসেবে। এটা কি কোনো মায়ের পরিচয় হতে পারে?’
বললাম, এটা কেন হলো?
সুলতানা জাহান একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, বললেন, ‘এসএসসি পাসের পর তাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। সেটাই আমার কাল হলো। ওই মোটরসাইকেলের কারণেই সন্ত্রাসী হয়ে গেল ইমন। আরেকটি কথা বলি, ছোটবেলা থেকেই ইমন খুব ঠান্ডা মাথায় অন্যায় কাজ করত। তার মিথ্যে কথা সত্যির চেয়েও শক্ত। অনেক সময় আমি নিজেও গুলিয়ে ফেলেছি।’
–তো এখন কি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে?
‘সম্পর্ক সেই অর্থে নেই। কিন্তু নিজের সন্তান তো, পেটে ধরেছি—অস্বীকার করব কী করে?’
সুলতানা জাহানের সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির চেম্বারে বসে এই আলাপচারিতায় ততক্ষণে প্রায় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাইরে খোলা আকাশের নিচে আমার মোটরসাইকেল পার্ক করা। বৃষ্টিতে হেলমেট ভিজে গেছে। হেলমেট ছাড়া আমি বাইক চালাতে পারি না, কানে বাতাস লাগে। কিন্তু উঠতেও পারছি না। তিনি বলেই যাচ্ছেন। হাতের ডিজিটাল রেকর্ড অন করা, সবই ধারণ করা হচ্ছে তাতে।
এই আলাপচারিতা ছিল ২০০৮ সালের ১৬ মার্চের। এর কয়েক দিন আগে (৭ মার্চ, ২০০৮) সুলতানা জাহানের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেই থেকে কারাগারেই আছেন পুলিশের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন।
ঢাকায় ফিরিয়ে আনা ইমনকে সে সময় দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি পুলিশ। সেই রিপোর্টের জন্যই সুলতানা জাহানের কাছে যাওয়া। শুরুতে তিনি কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন।
পুলিশের তালিকাভুক্ত বা এর বাইরে বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, তাদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা। সেই তুলনায় ইমন ব্যতিক্রম। তাঁর পরিবার উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত। সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের অভিযোগ ছিল ইমনের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
সুলতানা জাহানের কথায় জানা গেল, চার ভাই এক বোনের মধ্যে ইমন তৃতীয়। বাবা মল্লিক আবদুল্লাহ হারুন মারা গেছেন অনেক আগে। সুলতানা জাহান ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেন। ইমনের বড় ভাই সোহান অসুস্থ হয়ে মারা যান। আরেক ভাই সুমন শেরপুরে খুন হন প্রতিপক্ষের হাতে। ছোট ভাই লিমন যাঁকে ইমন মারধর করতেন, তিনি এখন ঘরবন্দী মানসিক রোগী। তাঁকে সব সময় বাসায় আটকে রাখা হয়। ছোট বোন মল্লিকা এখন মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
ইমনকে বিয়ে করাননি—প্রশ্ন করতেই সুলতানা জাহান বললেন, ‘সন্ত্রাসীকে কে বিয়ে করবে?’
‘টিটনের নাম শুনেছেন?’ বললাম, শুনেছি। সুলতানা জাহান বললেন, ‘টিটনের ছোট বোন শাহনাজ পারভিন লীনাকে বিয়ে করেছিল '৯৬–৯৭ সালের দিকে। একটি ছেলে আছে।’
বললাম, নাতিকে দেখেছেন? কাছে রাখতে ইচ্ছে করেনি? একটা টানা নিঃশ্বাস ফেলে সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমার জীবন তো স্বাভাবিক মানুষের জীবন না রে ভাই। কী করব?’
সুলতানা জাহান আমাকে বলেছিলেন, ইমন এসএসসি পাসের পর বখাটে হয়ে যান। তিনি এইচএসসিতে ভালো ফল করেননি। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।
কীভাবে ইমন বাজে লোকদের পাল্লায় পড়লেন, তার প্রথম ঘটনাটি আপনার মনে আছে?
সুলতানা জাহান একটু থামলেন। এরপর বললেন, ‘এটা ’৯০–৯১ হবে। সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। গলাকাটা সাত্তার নামের এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝগড়া হলো ইমনের। এরপর হঠাৎ শুনি কে বা কারা ইমনকে ছুরিকাঘাত করেছে। ইমন বলেছিল, রফিক ও পাং বাবু নাকি তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল।
এরপর বেশ কয়েক দিন বাসায় ছিল। একটু সুস্থ হয়েই শুরু করল দৌড়াদৌড়ি। ছুরিকাঘাতের প্রতিশোধ নেবে। এই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকল। কয়েক দিন পর থেকে বাসায় পুলিশ আসা শুরু হলো। ইমন আর বাড়ি থাকে না। এই শুরু হলো পলাতক জীবন। সে জীবন আর শেষ হলো না। কখনো এখানে, কখনো ওখানে। কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এই ঢাকায় তো পরের দিন কলকাতায়—এভাবেই এত দিন কাটছিল।’
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে? সুলতানা জাহান বললেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে সরকারি সফরে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে সে কলকাতা থেকে দিল্লিতে হোটেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। আমি তাকে নিয়ে আজমির শরিফে গেলাম। খাজা বাবার মাজার ছুঁয়ে শপথ করাই সন্ত্রাসী কাজ না করার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কথা, পথ আর ছাড়ল না। এরপর ১০ বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কাগজে দেখলাম, কলকাতা পুলিশ তাকে ফেরত দিয়েছে।’
ভারতে ইমনের জীবন কেমন ছিল, সেটা কি জানতেন? বা তাঁর বাড়িতে কখনো গিয়েছেন? সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমি তো দিল্লি থেকেই চলে এসেছিলাম। কলকাতায় আর যাওয়া হয়নি। তবে কলকাতায় সে বউ নিয়ে থাকত, সেটা জানতাম। মাঝে মাঝে ফোন করত।’
ভারত থেকে ফেরত আনার পর মালিবাগ সিআইডি অফিসে ইমনকে অনেক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ইমন পুলিশকে বলেছিলেন, ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে ইমন কারাগারেই আছেন।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ইমন ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরে ঢাকার সিআইডি পুলিশ বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানায়। এরপর কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইমন সেখানে নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন স্বপন সরকার। সেই নামে সব পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন কলকাতায়।
এই গ্রেপ্তারের আগে ২০০১ সালের ৩০ জুন ইমন প্রথম ধরা পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের হাতে। তখন ইমন স্ত্রী লীনাকে নিয়ে থাকতেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের উত্তরা কটেজে। ধরা পড়ার পর এঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে (ফরেনার্স আইন) কলকাতায় মামলা হয়। ইমনের স্ত্রী লীনা আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তি পান। আর ইমনের ছয় মাসের জেল হয়।
১৯৯৮ সালে বনানী ট্রাম্পস ক্লাবে চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী সোহেল চৌধুরী খুনের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইমনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক মাস জেল খাটার পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে যান। কলকাতার গড়িয়াহাটের কনক সরকারের বাড়িতে ওঠেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুন কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০১ সালে জামিন পান। সে বছরের অক্টোবরে ইমন দেশে ফেরেন। ২০০৪ সালে র্যাবের ধাওয়া খেয়ে তিনি আবার কলকাতায় চলে যান।
একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাং বাবুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠে ইমনের। এ হত্যা মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করা হলেও কোনো দিন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ’৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বদৌলতে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পাং বাবু খুনের পর ইমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার মামুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল ও জোসেফকে নিয়ে নিজের বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী একসময় ‘ইমন-মামুন গ্রুপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পরে অস্ত্র মামলায় মামুনের সাজা হয়। এদের হাতে এক ডজনের বেশি মানুষ খুন হয়।
ইমনের মায়ের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা বেশ বড় করে ছাপা হয় কাগজে (১৭ মার্চ, ২০০৮, প্রথম আলো)। এরপর অনেক দিন সুলতানা জাহানের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বছর দুয়েক পর একটি বিপণিবিতানে দেখা। আমাকে দেখেই চিনলেন। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সেই রিপোর্টে আপনি আমাকে ডোবাবেন, কিন্তু কেন ডোবালেন না? আমি তো সন্ত্রাসীর মা। লোকে আমাকে সেটাই মনে করে।’ আমি কিছু বললাম না। তিনি হেসে বিদায় নিলেন। আমিও অনুভব করলাম এক মায়ের বুকফাটা কষ্ট।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
ষাটোর্ধ্ব এই নারীকে প্রথম দেখায় বেশ হকচকিয়ে গেলাম। চোখধাঁধানো নীল ক্রেপ জর্জেটের শাড়ির সঙ্গে সোনালি ফ্রেমের চশমা, কানে মোটিফ দেওয়া সোনার দুল। গলায় সীতাহার কিংবা নেকলেস, কানের সঙ্গে মিল করা হাতের বালা। ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক, আলোয় চিকচিক করছে। রোজকার জীবনে এরকম সাজ কিছুটা অস্বাভাবিক। দেখে মনে হতে পারে, এইমাত্র বিয়েবাড়ি থেকে এলেন।
অনভ্যস্ত চোখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বুঝি?
মুচকি হাসলেন, বললেন সাজগোজ দেখে বলছেন? আমি সব সময় এ রকমই সাজি। সাজলে মন ভালো থাকে। এবার বলেন, আপনি কী জানতে চান?
সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বললাম, আপনার ছেলে সম্পর্কে জানতে এসেছি।
হাসি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। চুপচাপ কিছুক্ষণ। কিছুই বলছেন না, আমিও নীরব। এ রকম পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বেশ উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, আপনি নিষ্ঠুরতা দেখেছেন? নিষ্ঠুরতা!’
কী বলব বুঝতে পারছি না, হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
তিনিও আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন না, বলতে থাকলেন। ‘ধরেন, এই ঘরটাতে আপনাকে রোজ বেঁধে মারধর করা হবে। ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো হবে। পা ওপরের দিকে তুলে বেঁধে রাখা হবে। কান ধরে চার ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। পারবেন সহ্য করতে?’
আমি বললাম, না, অসম্ভব!
এবার একটু উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘এটা আমার পরিবারে হয়েছে, ভাবতে পারেন? আমার পরিবার মানে আমার নিজের ঘরে। এক দিন-দুই দিন নয়, দিনের পর দিন।’
বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন। চোখের পানিতে মুখের মেকআপ গলে পড়ছে। আমি টেবিল থেকে টিস্যু বক্সটা সামনে এনে ধরি। তিনি দুই হাতে মুখ ঢেকে বেশ জোরে কেঁদে ওঠেন। বললেন, ‘আমি তো মা। কাকে বলব এ কথা?’
একটু শান্ত হলে আমি জানতে চাইলাম, কে এটা করেছে?
–‘আপনি যার সম্পর্কে জানতে এসেছেন, সে এই নির্মমতা চালিয়েছে তার আপন ভাইয়ের ওপর। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।’
তো আপনারা সব দেখে চুপ থাকলেন?
‘দেখুন, আমরা স্বামী–স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থেকেছি। কোনো দিন সংসারের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। যখন তাকালাম, তখন সব শেষ। ভাইয়ের হাতে মার খেতে খেতে আমার এক ছেলে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেল।’ তিনি আর বলতে পারছেন না। গলা ধরে আসছে। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ। এরপর আমাকে বসিয়ে রেখে খাসকামরায় গেলেন। ফিরে এলেন হাতে টাওয়াল নিয়ে। দেখি মুখে কোনো মেকআপ নেই। গলার ভারী গয়নাটাও নেই। এই সুলতানা জাহান একেবারে ভিন্ন এক মানুষ।
‘আপনি ইমন সম্পর্কে কতটা জানেন? প্রশ্ন করলেন সুলতানা জাহান। বললাম, পুলিশ ফাইলে যা আছে, সেটুকুই।
‘জানেন, ইমন কত নিষ্ঠুর! সে শুধু নিজের ভাইকেই মারেনি। প্রতিপক্ষ ভেবে নিজের বোনের স্বামীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। জেলের ভেতরে তাঁকে মারধর করিয়েছে। তার জন্য আমাদের বারবার হেনস্তা হতে হয়েছে। অফিসের লোকজন আমাকে চেনে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মা হিসেবে। এটা কি কোনো মায়ের পরিচয় হতে পারে?’
বললাম, এটা কেন হলো?
সুলতানা জাহান একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, বললেন, ‘এসএসসি পাসের পর তাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। সেটাই আমার কাল হলো। ওই মোটরসাইকেলের কারণেই সন্ত্রাসী হয়ে গেল ইমন। আরেকটি কথা বলি, ছোটবেলা থেকেই ইমন খুব ঠান্ডা মাথায় অন্যায় কাজ করত। তার মিথ্যে কথা সত্যির চেয়েও শক্ত। অনেক সময় আমি নিজেও গুলিয়ে ফেলেছি।’
–তো এখন কি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে?
‘সম্পর্ক সেই অর্থে নেই। কিন্তু নিজের সন্তান তো, পেটে ধরেছি—অস্বীকার করব কী করে?’
সুলতানা জাহানের সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির চেম্বারে বসে এই আলাপচারিতায় ততক্ষণে প্রায় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাইরে খোলা আকাশের নিচে আমার মোটরসাইকেল পার্ক করা। বৃষ্টিতে হেলমেট ভিজে গেছে। হেলমেট ছাড়া আমি বাইক চালাতে পারি না, কানে বাতাস লাগে। কিন্তু উঠতেও পারছি না। তিনি বলেই যাচ্ছেন। হাতের ডিজিটাল রেকর্ড অন করা, সবই ধারণ করা হচ্ছে তাতে।
এই আলাপচারিতা ছিল ২০০৮ সালের ১৬ মার্চের। এর কয়েক দিন আগে (৭ মার্চ, ২০০৮) সুলতানা জাহানের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেই থেকে কারাগারেই আছেন পুলিশের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন।
ঢাকায় ফিরিয়ে আনা ইমনকে সে সময় দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি পুলিশ। সেই রিপোর্টের জন্যই সুলতানা জাহানের কাছে যাওয়া। শুরুতে তিনি কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন।
পুলিশের তালিকাভুক্ত বা এর বাইরে বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, তাদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা। সেই তুলনায় ইমন ব্যতিক্রম। তাঁর পরিবার উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত। সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের অভিযোগ ছিল ইমনের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
সুলতানা জাহানের কথায় জানা গেল, চার ভাই এক বোনের মধ্যে ইমন তৃতীয়। বাবা মল্লিক আবদুল্লাহ হারুন মারা গেছেন অনেক আগে। সুলতানা জাহান ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেন। ইমনের বড় ভাই সোহান অসুস্থ হয়ে মারা যান। আরেক ভাই সুমন শেরপুরে খুন হন প্রতিপক্ষের হাতে। ছোট ভাই লিমন যাঁকে ইমন মারধর করতেন, তিনি এখন ঘরবন্দী মানসিক রোগী। তাঁকে সব সময় বাসায় আটকে রাখা হয়। ছোট বোন মল্লিকা এখন মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
ইমনকে বিয়ে করাননি—প্রশ্ন করতেই সুলতানা জাহান বললেন, ‘সন্ত্রাসীকে কে বিয়ে করবে?’
‘টিটনের নাম শুনেছেন?’ বললাম, শুনেছি। সুলতানা জাহান বললেন, ‘টিটনের ছোট বোন শাহনাজ পারভিন লীনাকে বিয়ে করেছিল '৯৬–৯৭ সালের দিকে। একটি ছেলে আছে।’
বললাম, নাতিকে দেখেছেন? কাছে রাখতে ইচ্ছে করেনি? একটা টানা নিঃশ্বাস ফেলে সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমার জীবন তো স্বাভাবিক মানুষের জীবন না রে ভাই। কী করব?’
সুলতানা জাহান আমাকে বলেছিলেন, ইমন এসএসসি পাসের পর বখাটে হয়ে যান। তিনি এইচএসসিতে ভালো ফল করেননি। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।
কীভাবে ইমন বাজে লোকদের পাল্লায় পড়লেন, তার প্রথম ঘটনাটি আপনার মনে আছে?
সুলতানা জাহান একটু থামলেন। এরপর বললেন, ‘এটা ’৯০–৯১ হবে। সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। গলাকাটা সাত্তার নামের এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝগড়া হলো ইমনের। এরপর হঠাৎ শুনি কে বা কারা ইমনকে ছুরিকাঘাত করেছে। ইমন বলেছিল, রফিক ও পাং বাবু নাকি তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল।
এরপর বেশ কয়েক দিন বাসায় ছিল। একটু সুস্থ হয়েই শুরু করল দৌড়াদৌড়ি। ছুরিকাঘাতের প্রতিশোধ নেবে। এই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকল। কয়েক দিন পর থেকে বাসায় পুলিশ আসা শুরু হলো। ইমন আর বাড়ি থাকে না। এই শুরু হলো পলাতক জীবন। সে জীবন আর শেষ হলো না। কখনো এখানে, কখনো ওখানে। কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এই ঢাকায় তো পরের দিন কলকাতায়—এভাবেই এত দিন কাটছিল।’
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে? সুলতানা জাহান বললেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে সরকারি সফরে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে সে কলকাতা থেকে দিল্লিতে হোটেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। আমি তাকে নিয়ে আজমির শরিফে গেলাম। খাজা বাবার মাজার ছুঁয়ে শপথ করাই সন্ত্রাসী কাজ না করার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কথা, পথ আর ছাড়ল না। এরপর ১০ বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কাগজে দেখলাম, কলকাতা পুলিশ তাকে ফেরত দিয়েছে।’
ভারতে ইমনের জীবন কেমন ছিল, সেটা কি জানতেন? বা তাঁর বাড়িতে কখনো গিয়েছেন? সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমি তো দিল্লি থেকেই চলে এসেছিলাম। কলকাতায় আর যাওয়া হয়নি। তবে কলকাতায় সে বউ নিয়ে থাকত, সেটা জানতাম। মাঝে মাঝে ফোন করত।’
ভারত থেকে ফেরত আনার পর মালিবাগ সিআইডি অফিসে ইমনকে অনেক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ইমন পুলিশকে বলেছিলেন, ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে ইমন কারাগারেই আছেন।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ইমন ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরে ঢাকার সিআইডি পুলিশ বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানায়। এরপর কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইমন সেখানে নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন স্বপন সরকার। সেই নামে সব পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন কলকাতায়।
এই গ্রেপ্তারের আগে ২০০১ সালের ৩০ জুন ইমন প্রথম ধরা পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের হাতে। তখন ইমন স্ত্রী লীনাকে নিয়ে থাকতেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের উত্তরা কটেজে। ধরা পড়ার পর এঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে (ফরেনার্স আইন) কলকাতায় মামলা হয়। ইমনের স্ত্রী লীনা আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তি পান। আর ইমনের ছয় মাসের জেল হয়।
১৯৯৮ সালে বনানী ট্রাম্পস ক্লাবে চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী সোহেল চৌধুরী খুনের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইমনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক মাস জেল খাটার পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে যান। কলকাতার গড়িয়াহাটের কনক সরকারের বাড়িতে ওঠেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুন কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০১ সালে জামিন পান। সে বছরের অক্টোবরে ইমন দেশে ফেরেন। ২০০৪ সালে র্যাবের ধাওয়া খেয়ে তিনি আবার কলকাতায় চলে যান।
একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাং বাবুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠে ইমনের। এ হত্যা মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করা হলেও কোনো দিন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ’৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বদৌলতে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পাং বাবু খুনের পর ইমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার মামুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল ও জোসেফকে নিয়ে নিজের বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী একসময় ‘ইমন-মামুন গ্রুপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পরে অস্ত্র মামলায় মামুনের সাজা হয়। এদের হাতে এক ডজনের বেশি মানুষ খুন হয়।
ইমনের মায়ের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা বেশ বড় করে ছাপা হয় কাগজে (১৭ মার্চ, ২০০৮, প্রথম আলো)। এরপর অনেক দিন সুলতানা জাহানের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বছর দুয়েক পর একটি বিপণিবিতানে দেখা। আমাকে দেখেই চিনলেন। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সেই রিপোর্টে আপনি আমাকে ডোবাবেন, কিন্তু কেন ডোবালেন না? আমি তো সন্ত্রাসীর মা। লোকে আমাকে সেটাই মনে করে।’ আমি কিছু বললাম না। তিনি হেসে বিদায় নিলেন। আমিও অনুভব করলাম এক মায়ের বুকফাটা কষ্ট।
কামরুল হাসান

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
ষাটোর্ধ্ব এই নারীকে প্রথম দেখায় বেশ হকচকিয়ে গেলাম। চোখধাঁধানো নীল ক্রেপ জর্জেটের শাড়ির সঙ্গে সোনালি ফ্রেমের চশমা, কানে মোটিফ দেওয়া সোনার দুল। গলায় সীতাহার কিংবা নেকলেস, কানের সঙ্গে মিল করা হাতের বালা। ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক, আলোয় চিকচিক করছে। রোজকার জীবনে এরকম সাজ কিছুটা অস্বাভাবিক। দেখে মনে হতে পারে, এইমাত্র বিয়েবাড়ি থেকে এলেন।
অনভ্যস্ত চোখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বুঝি?
মুচকি হাসলেন, বললেন সাজগোজ দেখে বলছেন? আমি সব সময় এ রকমই সাজি। সাজলে মন ভালো থাকে। এবার বলেন, আপনি কী জানতে চান?
সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বললাম, আপনার ছেলে সম্পর্কে জানতে এসেছি।
হাসি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। চুপচাপ কিছুক্ষণ। কিছুই বলছেন না, আমিও নীরব। এ রকম পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বেশ উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, আপনি নিষ্ঠুরতা দেখেছেন? নিষ্ঠুরতা!’
কী বলব বুঝতে পারছি না, হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
তিনিও আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন না, বলতে থাকলেন। ‘ধরেন, এই ঘরটাতে আপনাকে রোজ বেঁধে মারধর করা হবে। ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো হবে। পা ওপরের দিকে তুলে বেঁধে রাখা হবে। কান ধরে চার ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। পারবেন সহ্য করতে?’
আমি বললাম, না, অসম্ভব!
এবার একটু উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘এটা আমার পরিবারে হয়েছে, ভাবতে পারেন? আমার পরিবার মানে আমার নিজের ঘরে। এক দিন-দুই দিন নয়, দিনের পর দিন।’
বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন। চোখের পানিতে মুখের মেকআপ গলে পড়ছে। আমি টেবিল থেকে টিস্যু বক্সটা সামনে এনে ধরি। তিনি দুই হাতে মুখ ঢেকে বেশ জোরে কেঁদে ওঠেন। বললেন, ‘আমি তো মা। কাকে বলব এ কথা?’
একটু শান্ত হলে আমি জানতে চাইলাম, কে এটা করেছে?
–‘আপনি যার সম্পর্কে জানতে এসেছেন, সে এই নির্মমতা চালিয়েছে তার আপন ভাইয়ের ওপর। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।’
তো আপনারা সব দেখে চুপ থাকলেন?
‘দেখুন, আমরা স্বামী–স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থেকেছি। কোনো দিন সংসারের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। যখন তাকালাম, তখন সব শেষ। ভাইয়ের হাতে মার খেতে খেতে আমার এক ছেলে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেল।’ তিনি আর বলতে পারছেন না। গলা ধরে আসছে। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ। এরপর আমাকে বসিয়ে রেখে খাসকামরায় গেলেন। ফিরে এলেন হাতে টাওয়াল নিয়ে। দেখি মুখে কোনো মেকআপ নেই। গলার ভারী গয়নাটাও নেই। এই সুলতানা জাহান একেবারে ভিন্ন এক মানুষ।
‘আপনি ইমন সম্পর্কে কতটা জানেন? প্রশ্ন করলেন সুলতানা জাহান। বললাম, পুলিশ ফাইলে যা আছে, সেটুকুই।
‘জানেন, ইমন কত নিষ্ঠুর! সে শুধু নিজের ভাইকেই মারেনি। প্রতিপক্ষ ভেবে নিজের বোনের স্বামীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। জেলের ভেতরে তাঁকে মারধর করিয়েছে। তার জন্য আমাদের বারবার হেনস্তা হতে হয়েছে। অফিসের লোকজন আমাকে চেনে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মা হিসেবে। এটা কি কোনো মায়ের পরিচয় হতে পারে?’
বললাম, এটা কেন হলো?
সুলতানা জাহান একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, বললেন, ‘এসএসসি পাসের পর তাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। সেটাই আমার কাল হলো। ওই মোটরসাইকেলের কারণেই সন্ত্রাসী হয়ে গেল ইমন। আরেকটি কথা বলি, ছোটবেলা থেকেই ইমন খুব ঠান্ডা মাথায় অন্যায় কাজ করত। তার মিথ্যে কথা সত্যির চেয়েও শক্ত। অনেক সময় আমি নিজেও গুলিয়ে ফেলেছি।’
–তো এখন কি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে?
‘সম্পর্ক সেই অর্থে নেই। কিন্তু নিজের সন্তান তো, পেটে ধরেছি—অস্বীকার করব কী করে?’
সুলতানা জাহানের সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির চেম্বারে বসে এই আলাপচারিতায় ততক্ষণে প্রায় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাইরে খোলা আকাশের নিচে আমার মোটরসাইকেল পার্ক করা। বৃষ্টিতে হেলমেট ভিজে গেছে। হেলমেট ছাড়া আমি বাইক চালাতে পারি না, কানে বাতাস লাগে। কিন্তু উঠতেও পারছি না। তিনি বলেই যাচ্ছেন। হাতের ডিজিটাল রেকর্ড অন করা, সবই ধারণ করা হচ্ছে তাতে।
এই আলাপচারিতা ছিল ২০০৮ সালের ১৬ মার্চের। এর কয়েক দিন আগে (৭ মার্চ, ২০০৮) সুলতানা জাহানের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেই থেকে কারাগারেই আছেন পুলিশের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন।
ঢাকায় ফিরিয়ে আনা ইমনকে সে সময় দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি পুলিশ। সেই রিপোর্টের জন্যই সুলতানা জাহানের কাছে যাওয়া। শুরুতে তিনি কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন।
পুলিশের তালিকাভুক্ত বা এর বাইরে বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, তাদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা। সেই তুলনায় ইমন ব্যতিক্রম। তাঁর পরিবার উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত। সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের অভিযোগ ছিল ইমনের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
সুলতানা জাহানের কথায় জানা গেল, চার ভাই এক বোনের মধ্যে ইমন তৃতীয়। বাবা মল্লিক আবদুল্লাহ হারুন মারা গেছেন অনেক আগে। সুলতানা জাহান ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেন। ইমনের বড় ভাই সোহান অসুস্থ হয়ে মারা যান। আরেক ভাই সুমন শেরপুরে খুন হন প্রতিপক্ষের হাতে। ছোট ভাই লিমন যাঁকে ইমন মারধর করতেন, তিনি এখন ঘরবন্দী মানসিক রোগী। তাঁকে সব সময় বাসায় আটকে রাখা হয়। ছোট বোন মল্লিকা এখন মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
ইমনকে বিয়ে করাননি—প্রশ্ন করতেই সুলতানা জাহান বললেন, ‘সন্ত্রাসীকে কে বিয়ে করবে?’
‘টিটনের নাম শুনেছেন?’ বললাম, শুনেছি। সুলতানা জাহান বললেন, ‘টিটনের ছোট বোন শাহনাজ পারভিন লীনাকে বিয়ে করেছিল '৯৬–৯৭ সালের দিকে। একটি ছেলে আছে।’
বললাম, নাতিকে দেখেছেন? কাছে রাখতে ইচ্ছে করেনি? একটা টানা নিঃশ্বাস ফেলে সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমার জীবন তো স্বাভাবিক মানুষের জীবন না রে ভাই। কী করব?’
সুলতানা জাহান আমাকে বলেছিলেন, ইমন এসএসসি পাসের পর বখাটে হয়ে যান। তিনি এইচএসসিতে ভালো ফল করেননি। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।
কীভাবে ইমন বাজে লোকদের পাল্লায় পড়লেন, তার প্রথম ঘটনাটি আপনার মনে আছে?
সুলতানা জাহান একটু থামলেন। এরপর বললেন, ‘এটা ’৯০–৯১ হবে। সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। গলাকাটা সাত্তার নামের এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝগড়া হলো ইমনের। এরপর হঠাৎ শুনি কে বা কারা ইমনকে ছুরিকাঘাত করেছে। ইমন বলেছিল, রফিক ও পাং বাবু নাকি তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল।
এরপর বেশ কয়েক দিন বাসায় ছিল। একটু সুস্থ হয়েই শুরু করল দৌড়াদৌড়ি। ছুরিকাঘাতের প্রতিশোধ নেবে। এই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকল। কয়েক দিন পর থেকে বাসায় পুলিশ আসা শুরু হলো। ইমন আর বাড়ি থাকে না। এই শুরু হলো পলাতক জীবন। সে জীবন আর শেষ হলো না। কখনো এখানে, কখনো ওখানে। কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এই ঢাকায় তো পরের দিন কলকাতায়—এভাবেই এত দিন কাটছিল।’
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে? সুলতানা জাহান বললেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে সরকারি সফরে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে সে কলকাতা থেকে দিল্লিতে হোটেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। আমি তাকে নিয়ে আজমির শরিফে গেলাম। খাজা বাবার মাজার ছুঁয়ে শপথ করাই সন্ত্রাসী কাজ না করার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কথা, পথ আর ছাড়ল না। এরপর ১০ বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কাগজে দেখলাম, কলকাতা পুলিশ তাকে ফেরত দিয়েছে।’
ভারতে ইমনের জীবন কেমন ছিল, সেটা কি জানতেন? বা তাঁর বাড়িতে কখনো গিয়েছেন? সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমি তো দিল্লি থেকেই চলে এসেছিলাম। কলকাতায় আর যাওয়া হয়নি। তবে কলকাতায় সে বউ নিয়ে থাকত, সেটা জানতাম। মাঝে মাঝে ফোন করত।’
ভারত থেকে ফেরত আনার পর মালিবাগ সিআইডি অফিসে ইমনকে অনেক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ইমন পুলিশকে বলেছিলেন, ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে ইমন কারাগারেই আছেন।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ইমন ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরে ঢাকার সিআইডি পুলিশ বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানায়। এরপর কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইমন সেখানে নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন স্বপন সরকার। সেই নামে সব পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন কলকাতায়।
এই গ্রেপ্তারের আগে ২০০১ সালের ৩০ জুন ইমন প্রথম ধরা পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের হাতে। তখন ইমন স্ত্রী লীনাকে নিয়ে থাকতেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের উত্তরা কটেজে। ধরা পড়ার পর এঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে (ফরেনার্স আইন) কলকাতায় মামলা হয়। ইমনের স্ত্রী লীনা আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তি পান। আর ইমনের ছয় মাসের জেল হয়।
১৯৯৮ সালে বনানী ট্রাম্পস ক্লাবে চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী সোহেল চৌধুরী খুনের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইমনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক মাস জেল খাটার পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে যান। কলকাতার গড়িয়াহাটের কনক সরকারের বাড়িতে ওঠেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুন কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০১ সালে জামিন পান। সে বছরের অক্টোবরে ইমন দেশে ফেরেন। ২০০৪ সালে র্যাবের ধাওয়া খেয়ে তিনি আবার কলকাতায় চলে যান।
একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাং বাবুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠে ইমনের। এ হত্যা মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করা হলেও কোনো দিন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ’৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বদৌলতে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পাং বাবু খুনের পর ইমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার মামুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল ও জোসেফকে নিয়ে নিজের বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী একসময় ‘ইমন-মামুন গ্রুপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পরে অস্ত্র মামলায় মামুনের সাজা হয়। এদের হাতে এক ডজনের বেশি মানুষ খুন হয়।
ইমনের মায়ের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা বেশ বড় করে ছাপা হয় কাগজে (১৭ মার্চ, ২০০৮, প্রথম আলো)। এরপর অনেক দিন সুলতানা জাহানের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বছর দুয়েক পর একটি বিপণিবিতানে দেখা। আমাকে দেখেই চিনলেন। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সেই রিপোর্টে আপনি আমাকে ডোবাবেন, কিন্তু কেন ডোবালেন না? আমি তো সন্ত্রাসীর মা। লোকে আমাকে সেটাই মনে করে।’ আমি কিছু বললাম না। তিনি হেসে বিদায় নিলেন। আমিও অনুভব করলাম এক মায়ের বুকফাটা কষ্ট।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
ষাটোর্ধ্ব এই নারীকে প্রথম দেখায় বেশ হকচকিয়ে গেলাম। চোখধাঁধানো নীল ক্রেপ জর্জেটের শাড়ির সঙ্গে সোনালি ফ্রেমের চশমা, কানে মোটিফ দেওয়া সোনার দুল। গলায় সীতাহার কিংবা নেকলেস, কানের সঙ্গে মিল করা হাতের বালা। ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক, আলোয় চিকচিক করছে। রোজকার জীবনে এরকম সাজ কিছুটা অস্বাভাবিক। দেখে মনে হতে পারে, এইমাত্র বিয়েবাড়ি থেকে এলেন।
অনভ্যস্ত চোখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বুঝি?
মুচকি হাসলেন, বললেন সাজগোজ দেখে বলছেন? আমি সব সময় এ রকমই সাজি। সাজলে মন ভালো থাকে। এবার বলেন, আপনি কী জানতে চান?
সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বললাম, আপনার ছেলে সম্পর্কে জানতে এসেছি।
হাসি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। চুপচাপ কিছুক্ষণ। কিছুই বলছেন না, আমিও নীরব। এ রকম পিনপতন নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বেশ উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, আপনি নিষ্ঠুরতা দেখেছেন? নিষ্ঠুরতা!’
কী বলব বুঝতে পারছি না, হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
তিনিও আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন না, বলতে থাকলেন। ‘ধরেন, এই ঘরটাতে আপনাকে রোজ বেঁধে মারধর করা হবে। ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো হবে। পা ওপরের দিকে তুলে বেঁধে রাখা হবে। কান ধরে চার ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। পারবেন সহ্য করতে?’
আমি বললাম, না, অসম্ভব!
এবার একটু উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘এটা আমার পরিবারে হয়েছে, ভাবতে পারেন? আমার পরিবার মানে আমার নিজের ঘরে। এক দিন-দুই দিন নয়, দিনের পর দিন।’
বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন। চোখের পানিতে মুখের মেকআপ গলে পড়ছে। আমি টেবিল থেকে টিস্যু বক্সটা সামনে এনে ধরি। তিনি দুই হাতে মুখ ঢেকে বেশ জোরে কেঁদে ওঠেন। বললেন, ‘আমি তো মা। কাকে বলব এ কথা?’
একটু শান্ত হলে আমি জানতে চাইলাম, কে এটা করেছে?
–‘আপনি যার সম্পর্কে জানতে এসেছেন, সে এই নির্মমতা চালিয়েছে তার আপন ভাইয়ের ওপর। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।’
তো আপনারা সব দেখে চুপ থাকলেন?
‘দেখুন, আমরা স্বামী–স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থেকেছি। কোনো দিন সংসারের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। যখন তাকালাম, তখন সব শেষ। ভাইয়ের হাতে মার খেতে খেতে আমার এক ছেলে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেল।’ তিনি আর বলতে পারছেন না। গলা ধরে আসছে। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ। এরপর আমাকে বসিয়ে রেখে খাসকামরায় গেলেন। ফিরে এলেন হাতে টাওয়াল নিয়ে। দেখি মুখে কোনো মেকআপ নেই। গলার ভারী গয়নাটাও নেই। এই সুলতানা জাহান একেবারে ভিন্ন এক মানুষ।
‘আপনি ইমন সম্পর্কে কতটা জানেন? প্রশ্ন করলেন সুলতানা জাহান। বললাম, পুলিশ ফাইলে যা আছে, সেটুকুই।
‘জানেন, ইমন কত নিষ্ঠুর! সে শুধু নিজের ভাইকেই মারেনি। প্রতিপক্ষ ভেবে নিজের বোনের স্বামীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। জেলের ভেতরে তাঁকে মারধর করিয়েছে। তার জন্য আমাদের বারবার হেনস্তা হতে হয়েছে। অফিসের লোকজন আমাকে চেনে শীর্ষ সন্ত্রাসীর মা হিসেবে। এটা কি কোনো মায়ের পরিচয় হতে পারে?’
বললাম, এটা কেন হলো?
সুলতানা জাহান একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, বললেন, ‘এসএসসি পাসের পর তাকে একটা মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। সেটাই আমার কাল হলো। ওই মোটরসাইকেলের কারণেই সন্ত্রাসী হয়ে গেল ইমন। আরেকটি কথা বলি, ছোটবেলা থেকেই ইমন খুব ঠান্ডা মাথায় অন্যায় কাজ করত। তার মিথ্যে কথা সত্যির চেয়েও শক্ত। অনেক সময় আমি নিজেও গুলিয়ে ফেলেছি।’
–তো এখন কি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে?
‘সম্পর্ক সেই অর্থে নেই। কিন্তু নিজের সন্তান তো, পেটে ধরেছি—অস্বীকার করব কী করে?’
সুলতানা জাহানের সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির চেম্বারে বসে এই আলাপচারিতায় ততক্ষণে প্রায় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাইরে খোলা আকাশের নিচে আমার মোটরসাইকেল পার্ক করা। বৃষ্টিতে হেলমেট ভিজে গেছে। হেলমেট ছাড়া আমি বাইক চালাতে পারি না, কানে বাতাস লাগে। কিন্তু উঠতেও পারছি না। তিনি বলেই যাচ্ছেন। হাতের ডিজিটাল রেকর্ড অন করা, সবই ধারণ করা হচ্ছে তাতে।
এই আলাপচারিতা ছিল ২০০৮ সালের ১৬ মার্চের। এর কয়েক দিন আগে (৭ মার্চ, ২০০৮) সুলতানা জাহানের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেই থেকে কারাগারেই আছেন পুলিশের তালিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন।
ঢাকায় ফিরিয়ে আনা ইমনকে সে সময় দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি পুলিশ। সেই রিপোর্টের জন্যই সুলতানা জাহানের কাছে যাওয়া। শুরুতে তিনি কোনো কথা বলতে চাইছিলেন না। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন।
পুলিশের তালিকাভুক্ত বা এর বাইরে বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, তাদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা। সেই তুলনায় ইমন ব্যতিক্রম। তাঁর পরিবার উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত। সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের অভিযোগ ছিল ইমনের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
সুলতানা জাহানের কথায় জানা গেল, চার ভাই এক বোনের মধ্যে ইমন তৃতীয়। বাবা মল্লিক আবদুল্লাহ হারুন মারা গেছেন অনেক আগে। সুলতানা জাহান ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেন। ইমনের বড় ভাই সোহান অসুস্থ হয়ে মারা যান। আরেক ভাই সুমন শেরপুরে খুন হন প্রতিপক্ষের হাতে। ছোট ভাই লিমন যাঁকে ইমন মারধর করতেন, তিনি এখন ঘরবন্দী মানসিক রোগী। তাঁকে সব সময় বাসায় আটকে রাখা হয়। ছোট বোন মল্লিকা এখন মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
ইমনকে বিয়ে করাননি—প্রশ্ন করতেই সুলতানা জাহান বললেন, ‘সন্ত্রাসীকে কে বিয়ে করবে?’
‘টিটনের নাম শুনেছেন?’ বললাম, শুনেছি। সুলতানা জাহান বললেন, ‘টিটনের ছোট বোন শাহনাজ পারভিন লীনাকে বিয়ে করেছিল '৯৬–৯৭ সালের দিকে। একটি ছেলে আছে।’
বললাম, নাতিকে দেখেছেন? কাছে রাখতে ইচ্ছে করেনি? একটা টানা নিঃশ্বাস ফেলে সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমার জীবন তো স্বাভাবিক মানুষের জীবন না রে ভাই। কী করব?’
সুলতানা জাহান আমাকে বলেছিলেন, ইমন এসএসসি পাসের পর বখাটে হয়ে যান। তিনি এইচএসসিতে ভালো ফল করেননি। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।
কীভাবে ইমন বাজে লোকদের পাল্লায় পড়লেন, তার প্রথম ঘটনাটি আপনার মনে আছে?
সুলতানা জাহান একটু থামলেন। এরপর বললেন, ‘এটা ’৯০–৯১ হবে। সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। গলাকাটা সাত্তার নামের এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝগড়া হলো ইমনের। এরপর হঠাৎ শুনি কে বা কারা ইমনকে ছুরিকাঘাত করেছে। ইমন বলেছিল, রফিক ও পাং বাবু নাকি তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল।
এরপর বেশ কয়েক দিন বাসায় ছিল। একটু সুস্থ হয়েই শুরু করল দৌড়াদৌড়ি। ছুরিকাঘাতের প্রতিশোধ নেবে। এই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকল। কয়েক দিন পর থেকে বাসায় পুলিশ আসা শুরু হলো। ইমন আর বাড়ি থাকে না। এই শুরু হলো পলাতক জীবন। সে জীবন আর শেষ হলো না। কখনো এখানে, কখনো ওখানে। কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এই ঢাকায় তো পরের দিন কলকাতায়—এভাবেই এত দিন কাটছিল।’
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে? সুলতানা জাহান বললেন, ‘মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। ১৯৯৭ সালে দিল্লিতে সরকারি সফরে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে সে কলকাতা থেকে দিল্লিতে হোটেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। আমি তাকে নিয়ে আজমির শরিফে গেলাম। খাজা বাবার মাজার ছুঁয়ে শপথ করাই সন্ত্রাসী কাজ না করার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কথা, পথ আর ছাড়ল না। এরপর ১০ বছর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কাগজে দেখলাম, কলকাতা পুলিশ তাকে ফেরত দিয়েছে।’
ভারতে ইমনের জীবন কেমন ছিল, সেটা কি জানতেন? বা তাঁর বাড়িতে কখনো গিয়েছেন? সুলতানা জাহান বললেন, ‘আমি তো দিল্লি থেকেই চলে এসেছিলাম। কলকাতায় আর যাওয়া হয়নি। তবে কলকাতায় সে বউ নিয়ে থাকত, সেটা জানতাম। মাঝে মাঝে ফোন করত।’
ভারত থেকে ফেরত আনার পর মালিবাগ সিআইডি অফিসে ইমনকে অনেক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ইমন পুলিশকে বলেছিলেন, ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলার সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে ইমন কারাগারেই আছেন।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ইমন ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরে ঢাকার সিআইডি পুলিশ বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানায়। এরপর কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইমন সেখানে নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন স্বপন সরকার। সেই নামে সব পরিচয়পত্র জোগাড় করেছিলেন কলকাতায়।
এই গ্রেপ্তারের আগে ২০০১ সালের ৩০ জুন ইমন প্রথম ধরা পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের হাতে। তখন ইমন স্ত্রী লীনাকে নিয়ে থাকতেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের উত্তরা কটেজে। ধরা পড়ার পর এঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে (ফরেনার্স আইন) কলকাতায় মামলা হয়। ইমনের স্ত্রী লীনা আদালতে দোষ স্বীকার করে মুক্তি পান। আর ইমনের ছয় মাসের জেল হয়।
১৯৯৮ সালে বনানী ট্রাম্পস ক্লাবে চিত্রনায়িকা দিতির স্বামী সোহেল চৌধুরী খুনের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ইমনকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক মাস জেল খাটার পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে ভারতে চলে যান। কলকাতার গড়িয়াহাটের কনক সরকারের বাড়িতে ওঠেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুন কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০১ সালে জামিন পান। সে বছরের অক্টোবরে ইমন দেশে ফেরেন। ২০০৪ সালে র্যাবের ধাওয়া খেয়ে তিনি আবার কলকাতায় চলে যান।
একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাং বাবুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠে ইমনের। এ হত্যা মামলায় তাঁকে প্রধান আসামি করা হলেও কোনো দিন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ’৯১ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বদৌলতে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পাং বাবু খুনের পর ইমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার মামুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল ও জোসেফকে নিয়ে নিজের বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী একসময় ‘ইমন-মামুন গ্রুপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। পরে অস্ত্র মামলায় মামুনের সাজা হয়। এদের হাতে এক ডজনের বেশি মানুষ খুন হয়।
ইমনের মায়ের সঙ্গে আমার আলাপচারিতা বেশ বড় করে ছাপা হয় কাগজে (১৭ মার্চ, ২০০৮, প্রথম আলো)। এরপর অনেক দিন সুলতানা জাহানের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বছর দুয়েক পর একটি বিপণিবিতানে দেখা। আমাকে দেখেই চিনলেন। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সেই রিপোর্টে আপনি আমাকে ডোবাবেন, কিন্তু কেন ডোবালেন না? আমি তো সন্ত্রাসীর মা। লোকে আমাকে সেটাই মনে করে।’ আমি কিছু বললাম না। তিনি হেসে বিদায় নিলেন। আমিও অনুভব করলাম এক মায়ের বুকফাটা কষ্ট।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
০৩ জুলাই ২০২১
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
০৩ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
০৩ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ঘণ্টা দুয়েক বসিয়ে রেখে রাত ১০টার পর কথা বলতে রাজি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, নামকরা চিকিৎসক সুলতানা জাহান। একে একে সব রোগী বিদায় করলেন, তারপর ডাকলেন আমাকে। দেখি, বিশাল ঘরটার এক কোণে তিনি একাই বসে।
০৩ জুলাই ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে