কামরুল হাসান

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতেন, ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী সেসবের কিছু কিছু অনায়াসে সাবাড় করে দিতেন। ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই ঘটত, তবে বড় চুরির ঘটনা হলে থানা-পুলিশ করা হতো। তখন ক্রাইম রিপোর্টাররাও খবর পেতেন।
এ রকম একটি চুরির ঘটনা কাভার করতে গেছি ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায়। তো সব দেখেশুনে কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলাম ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের (ডিপিএমজি) রুমে। এই পদে তখন ছিলেন নামকরা রম্যলেখক আতাউর রহমান। তাঁর কক্ষের দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম। তিনিও খুব ভালো ব্যবহার করলেন এবং সময় দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
কথা শেষে বেরিয়ে আসার মুখে একটা ভিজিটিং কার্ড চাইলেন। মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে তাঁর হাতে দিতেই সেটার দিকে তাকিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলেন। ডান হাত দিয়ে টেবিলের ওপর একটি চাটি মেরে বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ‘আরে...আপনি ক্রাইম রিপোর্টার? আমি জীবনে প্রথম ক্রাইম রিপোর্টার দেখলাম। আমার ধারণা ছিল, ক্রাইম রিপোর্টাররা দেখতে চোর চোর!’
এ রকম একজন উচ্চপদস্থ আমলা ও লেখকের মুখে এমন কথা শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো আমি দেখতে কী রকম?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে চট করে বলে দিলেন, ‘আপনি দেখতে বোকা বোকা।’
আমি ভেবেছিলাম, মুখের সামনে আমাকে নিয়ে হয়তো ভালো কিছু বলবেন। তখন বয়স কম, একটুতেই মন খারাপ হয়। সেই খারাপ মন নিয়ে অফিসে গিয়ে এক সহকর্মীকে বললাম। তিনি শুনে বললেন, ‘মন খারাপ কইরেন না। ক্রাইম রিপোর্টারদের ভাবমূর্তি অনেকটা পুলিশের মতো, কেউ ভালো চোখে দেখে না।’ এ ঘটনার বছর চারেক পরে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীও আমাকে সেই একই কথা বলেছিলেন। সেবার অবশ্য অত মন খারাপ হয়নি।
সেই মন খারাপ নিয়ে পরদিন আবার গেলাম ডাক বিভাগে সেই বড় চুরির ঘটনার ফলোআপ করতে। আবারও সেই আতাউর রহমানের কক্ষে। তবে আগের দিনের চেয়ে তিনি আরও ভালো ব্যবহার করলেন। বায়তুল মোকাররম থেকে স্যান্ডউইচ আর লাচ্ছি এনে খাওয়ালেন। পাশে বসিয়ে এটা-সেটা জানতে চাইলেন। খুশি হয়ে বারবার বলছিলেন, আমার নিউজ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম; কারণ, পুরো নিউজটা ছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ডিপিএমজি হিসেবে তার দায় আতাউর রহমানের ওপরও বর্তায়। সেই দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেসবে মাতলেন না। আমাকে বললেন, ‘আজ ডাক বিভাগের একটি মজার জিনিস আপনাকে দেখাব।’ বললাম, কী জিনিস? চলেন—বলেই তিনি হাঁটতে শুরু করলেন।
গুলিস্তানে জিপিও ভবনের ভেতরটা অনেকটা পুরোনো স্কুল ভবনের মতো। মাঝখানে বিশাল ফাঁকা জায়গা রেখে চারদিকে ভবন উঠেছে। বাইরে থেকে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না। আতাউর রহমান বসতেন জিপিওর পূর্ব দিকে, যেটা বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে। আর আমরা গেলাম পশ্চিম দিকের শেষ মাথার দোতলায়। সামনে আতাউর রহমান আর পেছনে আমি। যে কক্ষটির সামনে গেলাম, তার সামনে লেখা আরএলও—রিটার্ন লেটার অফিস। ডাক বিভাগে এর আগে আমি অনেকবার এসেছি, কিন্তু এ রকম কোনো বিভাগের নাম শুনিনি, দেখিনি। সেই অফিসের ভেতরে ডিপিএমজিকে দেখে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তিনি আরএলওর ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমি যা জানতে চাই, সব যেন বলা হয়। এরপর আমাকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললেন, ‘আপনি কথা বলেন, সব বুঝতে পারবেন।’
আগেই বলেছি, আরএলও নিয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমেই জানতে চাইলাম, এই অফিসের কাজ কী? ম্যানেজার আমাকে বললেন, সারা দেশের মানুষ যেসব চিঠি পাঠায়, সেগুলোর মধ্যে অনেক চিঠি কখনো প্রাপকের হাতে পৌঁছায় না ভুল বা অস্পষ্ট ঠিকানার কারণে। সেসব চিঠি ফেরত আসে জিপিওতে। আরএলও শাখা এসব চিঠি খুলে পড়ে দেখে, প্রাপক বা প্রেরকের নাম-ঠিকানা পেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর কারও ঠিকানা না থাকলে সেই চিঠি বছর শেষে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখন চিঠির ভেতরে নানা পণ্য পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। ঠিকানাবিহীন সেসব পণ্য বছর শেষে নিলামে তোলা হয়। ম্যানেজারের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মনে হলো, এ নিয়ে ভালো একটি ফিচার হতে পারে—‘যে চিঠি কোনো দিন পৌঁছাবে না প্রাপকের হাতে’। ম্যানেজারকে বললাম, এই অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ব্যবস্থা করে দিলেন।
ম্যানেজারের পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দেখি বিশাল কক্ষটির টেবিলের ওপরে হাজার হাজার চিঠির স্তূপ। ছয়-সাতজন মিলে সেই সব চিঠি পড়ছেন। কথা শুনে বুঝলাম, এঁদের কাজই হলো চিঠি পড়া। সারা দিন ধরে তাঁরা শুধু মানুষের চিঠিই পড়েন। আমি কিছু চিঠি পড়তে চাইলে কেউ আপত্তি করলেন না। একটি চিঠির খামের ওপরে লেখা—তারিন, রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের বহু তারিনের ভিড়ে প্রকৃত তারিনকে খুঁজে পায়নি ডাকপিয়ন। আরেক চিঠির ঠিকানা—গেদু চাচা, ঢাকা। একটির ঠিকানা মামুন, আজিমপুর; আরেকটির ঠিকানা তাহমিনা, বাসাবো। কেউ চিঠিতে পাঠিয়েছেন বিদেশি মুদ্রা, কেউবা ইমিটেশনের গয়না। নতুন স্ত্রীর জন্য শাড়ি-ব্লাউজ পাঠিয়েছেন একজন ভুল ঠিকানায়। এক প্রেমিকা প্রিয়জনের জন্য পাঠিয়েছেন সোহাগী ঠোঁটের লিপস্টিকের ছাপ। একজন রক্ত দিয়ে নাম লিখেছেন ‘ছালেহা’।
আরএলওর লোকেরা বললেন, প্রেমের বেশির ভাগ চিঠিতে থাকে ফুলের পাপড়ি, একটি বা দুটি করে। গ্রামের এক স্ত্রী অভিমান করে শহরের স্বামীকে লিখেছেন, ‘তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছ’। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন হারাগাছার রুবিনা। নোয়াখালীর জয়নাল শহরে চাকরিজীবী ছেলেকে লিখেছেন, ‘টাকা না পাঠালে আমরা না খেয়ে মরে যাব, বাবা’। কেউ একজন বোনের আত্মহত্যার খবর দিয়েছেন চিঠিতে। লেখাপড়া না জানা এক মায়ের পক্ষে একজন লিখেছেন, ‘তোমার মায়ের শরীরটা খুব খারাপ, দেখতে চাইলে শিগগির বাড়ি এসো’। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে মন খারাপ হয়ে গেল।
এসব আকুতিভরা চিঠি পড়তে পড়তে পাশে বসা একজন চিঠি নিয়ে একটি মজার গল্পও শোনালেন। বললেন, কয়েক বছর আগে এক বেকার যুবক আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তিন শ টাকা দাও, না দিলে আমি না খেয়ে মরে যাব।’ তো সেই চিঠি দেখে সবার দয়া হলো। তাঁরা ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে ২০০ টাকা সেই যুবকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর আবার চিঠি এল। সেই যুবক এবার আল্লাহর কাছে লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার কষ্টের কথা শুনে ঠিকই ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক বিভাগের চোরের দল তা থেকে ১০০ টাকা মেরে দিয়েছে।’ আমি এ চিঠির কথা শুনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
আরএলও শাখা নিয়ে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে একটি ফিচার ছাপা হয়েছিল জনকণ্ঠে। আতাউর রহমান সে জন্য ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছর আর জিপিওতে যাওয়া হয়নি। বছর চারেক আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে ঢুকলাম জিপিওর ভেতরে, সেখানে অনেক জায়গা। মনে হলো একবার আরএলও শাখাটা ঘুরে আসি। গিয়ে দেখি, পুরো চিঠির দপ্তরটা একটা ভাঙা রঙ্গমঞ্চ। সব ফাঁকা, কোনো চিঠি নেই কারও হাতে। সবাই বললেন, বোনের আদরমাখা আর মায়ের আকুতিভরা চিঠি কেউ আর ডাক বিভাগে দেন না। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ই-মেইলের যুগে আরএলও বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। মহাদেব সাহার মতো কেউ আর বলেন না, ‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বলো, ভালোবাসি’। মনে হলো, হাতে লেখা চিঠির যেন মৃত্যু ঘটেছে। শুধু শেষ যাত্রাটাই বাকি।
আরও পড়ুন:

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতেন, ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী সেসবের কিছু কিছু অনায়াসে সাবাড় করে দিতেন। ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই ঘটত, তবে বড় চুরির ঘটনা হলে থানা-পুলিশ করা হতো। তখন ক্রাইম রিপোর্টাররাও খবর পেতেন।
এ রকম একটি চুরির ঘটনা কাভার করতে গেছি ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায়। তো সব দেখেশুনে কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলাম ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের (ডিপিএমজি) রুমে। এই পদে তখন ছিলেন নামকরা রম্যলেখক আতাউর রহমান। তাঁর কক্ষের দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম। তিনিও খুব ভালো ব্যবহার করলেন এবং সময় দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
কথা শেষে বেরিয়ে আসার মুখে একটা ভিজিটিং কার্ড চাইলেন। মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে তাঁর হাতে দিতেই সেটার দিকে তাকিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলেন। ডান হাত দিয়ে টেবিলের ওপর একটি চাটি মেরে বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ‘আরে...আপনি ক্রাইম রিপোর্টার? আমি জীবনে প্রথম ক্রাইম রিপোর্টার দেখলাম। আমার ধারণা ছিল, ক্রাইম রিপোর্টাররা দেখতে চোর চোর!’
এ রকম একজন উচ্চপদস্থ আমলা ও লেখকের মুখে এমন কথা শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো আমি দেখতে কী রকম?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে চট করে বলে দিলেন, ‘আপনি দেখতে বোকা বোকা।’
আমি ভেবেছিলাম, মুখের সামনে আমাকে নিয়ে হয়তো ভালো কিছু বলবেন। তখন বয়স কম, একটুতেই মন খারাপ হয়। সেই খারাপ মন নিয়ে অফিসে গিয়ে এক সহকর্মীকে বললাম। তিনি শুনে বললেন, ‘মন খারাপ কইরেন না। ক্রাইম রিপোর্টারদের ভাবমূর্তি অনেকটা পুলিশের মতো, কেউ ভালো চোখে দেখে না।’ এ ঘটনার বছর চারেক পরে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীও আমাকে সেই একই কথা বলেছিলেন। সেবার অবশ্য অত মন খারাপ হয়নি।
সেই মন খারাপ নিয়ে পরদিন আবার গেলাম ডাক বিভাগে সেই বড় চুরির ঘটনার ফলোআপ করতে। আবারও সেই আতাউর রহমানের কক্ষে। তবে আগের দিনের চেয়ে তিনি আরও ভালো ব্যবহার করলেন। বায়তুল মোকাররম থেকে স্যান্ডউইচ আর লাচ্ছি এনে খাওয়ালেন। পাশে বসিয়ে এটা-সেটা জানতে চাইলেন। খুশি হয়ে বারবার বলছিলেন, আমার নিউজ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম; কারণ, পুরো নিউজটা ছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ডিপিএমজি হিসেবে তার দায় আতাউর রহমানের ওপরও বর্তায়। সেই দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেসবে মাতলেন না। আমাকে বললেন, ‘আজ ডাক বিভাগের একটি মজার জিনিস আপনাকে দেখাব।’ বললাম, কী জিনিস? চলেন—বলেই তিনি হাঁটতে শুরু করলেন।
গুলিস্তানে জিপিও ভবনের ভেতরটা অনেকটা পুরোনো স্কুল ভবনের মতো। মাঝখানে বিশাল ফাঁকা জায়গা রেখে চারদিকে ভবন উঠেছে। বাইরে থেকে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না। আতাউর রহমান বসতেন জিপিওর পূর্ব দিকে, যেটা বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে। আর আমরা গেলাম পশ্চিম দিকের শেষ মাথার দোতলায়। সামনে আতাউর রহমান আর পেছনে আমি। যে কক্ষটির সামনে গেলাম, তার সামনে লেখা আরএলও—রিটার্ন লেটার অফিস। ডাক বিভাগে এর আগে আমি অনেকবার এসেছি, কিন্তু এ রকম কোনো বিভাগের নাম শুনিনি, দেখিনি। সেই অফিসের ভেতরে ডিপিএমজিকে দেখে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তিনি আরএলওর ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমি যা জানতে চাই, সব যেন বলা হয়। এরপর আমাকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললেন, ‘আপনি কথা বলেন, সব বুঝতে পারবেন।’
আগেই বলেছি, আরএলও নিয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমেই জানতে চাইলাম, এই অফিসের কাজ কী? ম্যানেজার আমাকে বললেন, সারা দেশের মানুষ যেসব চিঠি পাঠায়, সেগুলোর মধ্যে অনেক চিঠি কখনো প্রাপকের হাতে পৌঁছায় না ভুল বা অস্পষ্ট ঠিকানার কারণে। সেসব চিঠি ফেরত আসে জিপিওতে। আরএলও শাখা এসব চিঠি খুলে পড়ে দেখে, প্রাপক বা প্রেরকের নাম-ঠিকানা পেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর কারও ঠিকানা না থাকলে সেই চিঠি বছর শেষে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখন চিঠির ভেতরে নানা পণ্য পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। ঠিকানাবিহীন সেসব পণ্য বছর শেষে নিলামে তোলা হয়। ম্যানেজারের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মনে হলো, এ নিয়ে ভালো একটি ফিচার হতে পারে—‘যে চিঠি কোনো দিন পৌঁছাবে না প্রাপকের হাতে’। ম্যানেজারকে বললাম, এই অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ব্যবস্থা করে দিলেন।
ম্যানেজারের পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দেখি বিশাল কক্ষটির টেবিলের ওপরে হাজার হাজার চিঠির স্তূপ। ছয়-সাতজন মিলে সেই সব চিঠি পড়ছেন। কথা শুনে বুঝলাম, এঁদের কাজই হলো চিঠি পড়া। সারা দিন ধরে তাঁরা শুধু মানুষের চিঠিই পড়েন। আমি কিছু চিঠি পড়তে চাইলে কেউ আপত্তি করলেন না। একটি চিঠির খামের ওপরে লেখা—তারিন, রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের বহু তারিনের ভিড়ে প্রকৃত তারিনকে খুঁজে পায়নি ডাকপিয়ন। আরেক চিঠির ঠিকানা—গেদু চাচা, ঢাকা। একটির ঠিকানা মামুন, আজিমপুর; আরেকটির ঠিকানা তাহমিনা, বাসাবো। কেউ চিঠিতে পাঠিয়েছেন বিদেশি মুদ্রা, কেউবা ইমিটেশনের গয়না। নতুন স্ত্রীর জন্য শাড়ি-ব্লাউজ পাঠিয়েছেন একজন ভুল ঠিকানায়। এক প্রেমিকা প্রিয়জনের জন্য পাঠিয়েছেন সোহাগী ঠোঁটের লিপস্টিকের ছাপ। একজন রক্ত দিয়ে নাম লিখেছেন ‘ছালেহা’।
আরএলওর লোকেরা বললেন, প্রেমের বেশির ভাগ চিঠিতে থাকে ফুলের পাপড়ি, একটি বা দুটি করে। গ্রামের এক স্ত্রী অভিমান করে শহরের স্বামীকে লিখেছেন, ‘তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছ’। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন হারাগাছার রুবিনা। নোয়াখালীর জয়নাল শহরে চাকরিজীবী ছেলেকে লিখেছেন, ‘টাকা না পাঠালে আমরা না খেয়ে মরে যাব, বাবা’। কেউ একজন বোনের আত্মহত্যার খবর দিয়েছেন চিঠিতে। লেখাপড়া না জানা এক মায়ের পক্ষে একজন লিখেছেন, ‘তোমার মায়ের শরীরটা খুব খারাপ, দেখতে চাইলে শিগগির বাড়ি এসো’। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে মন খারাপ হয়ে গেল।
এসব আকুতিভরা চিঠি পড়তে পড়তে পাশে বসা একজন চিঠি নিয়ে একটি মজার গল্পও শোনালেন। বললেন, কয়েক বছর আগে এক বেকার যুবক আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তিন শ টাকা দাও, না দিলে আমি না খেয়ে মরে যাব।’ তো সেই চিঠি দেখে সবার দয়া হলো। তাঁরা ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে ২০০ টাকা সেই যুবকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর আবার চিঠি এল। সেই যুবক এবার আল্লাহর কাছে লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার কষ্টের কথা শুনে ঠিকই ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক বিভাগের চোরের দল তা থেকে ১০০ টাকা মেরে দিয়েছে।’ আমি এ চিঠির কথা শুনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
আরএলও শাখা নিয়ে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে একটি ফিচার ছাপা হয়েছিল জনকণ্ঠে। আতাউর রহমান সে জন্য ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছর আর জিপিওতে যাওয়া হয়নি। বছর চারেক আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে ঢুকলাম জিপিওর ভেতরে, সেখানে অনেক জায়গা। মনে হলো একবার আরএলও শাখাটা ঘুরে আসি। গিয়ে দেখি, পুরো চিঠির দপ্তরটা একটা ভাঙা রঙ্গমঞ্চ। সব ফাঁকা, কোনো চিঠি নেই কারও হাতে। সবাই বললেন, বোনের আদরমাখা আর মায়ের আকুতিভরা চিঠি কেউ আর ডাক বিভাগে দেন না। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ই-মেইলের যুগে আরএলও বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। মহাদেব সাহার মতো কেউ আর বলেন না, ‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বলো, ভালোবাসি’। মনে হলো, হাতে লেখা চিঠির যেন মৃত্যু ঘটেছে। শুধু শেষ যাত্রাটাই বাকি।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতেন, ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী সেসবের কিছু কিছু অনায়াসে সাবাড় করে দিতেন। ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই ঘটত, তবে বড় চুরির ঘটনা হলে থানা-পুলিশ করা হতো। তখন ক্রাইম রিপোর্টাররাও খবর পেতেন।
এ রকম একটি চুরির ঘটনা কাভার করতে গেছি ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায়। তো সব দেখেশুনে কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলাম ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের (ডিপিএমজি) রুমে। এই পদে তখন ছিলেন নামকরা রম্যলেখক আতাউর রহমান। তাঁর কক্ষের দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম। তিনিও খুব ভালো ব্যবহার করলেন এবং সময় দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
কথা শেষে বেরিয়ে আসার মুখে একটা ভিজিটিং কার্ড চাইলেন। মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে তাঁর হাতে দিতেই সেটার দিকে তাকিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলেন। ডান হাত দিয়ে টেবিলের ওপর একটি চাটি মেরে বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ‘আরে...আপনি ক্রাইম রিপোর্টার? আমি জীবনে প্রথম ক্রাইম রিপোর্টার দেখলাম। আমার ধারণা ছিল, ক্রাইম রিপোর্টাররা দেখতে চোর চোর!’
এ রকম একজন উচ্চপদস্থ আমলা ও লেখকের মুখে এমন কথা শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো আমি দেখতে কী রকম?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে চট করে বলে দিলেন, ‘আপনি দেখতে বোকা বোকা।’
আমি ভেবেছিলাম, মুখের সামনে আমাকে নিয়ে হয়তো ভালো কিছু বলবেন। তখন বয়স কম, একটুতেই মন খারাপ হয়। সেই খারাপ মন নিয়ে অফিসে গিয়ে এক সহকর্মীকে বললাম। তিনি শুনে বললেন, ‘মন খারাপ কইরেন না। ক্রাইম রিপোর্টারদের ভাবমূর্তি অনেকটা পুলিশের মতো, কেউ ভালো চোখে দেখে না।’ এ ঘটনার বছর চারেক পরে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীও আমাকে সেই একই কথা বলেছিলেন। সেবার অবশ্য অত মন খারাপ হয়নি।
সেই মন খারাপ নিয়ে পরদিন আবার গেলাম ডাক বিভাগে সেই বড় চুরির ঘটনার ফলোআপ করতে। আবারও সেই আতাউর রহমানের কক্ষে। তবে আগের দিনের চেয়ে তিনি আরও ভালো ব্যবহার করলেন। বায়তুল মোকাররম থেকে স্যান্ডউইচ আর লাচ্ছি এনে খাওয়ালেন। পাশে বসিয়ে এটা-সেটা জানতে চাইলেন। খুশি হয়ে বারবার বলছিলেন, আমার নিউজ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম; কারণ, পুরো নিউজটা ছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ডিপিএমজি হিসেবে তার দায় আতাউর রহমানের ওপরও বর্তায়। সেই দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেসবে মাতলেন না। আমাকে বললেন, ‘আজ ডাক বিভাগের একটি মজার জিনিস আপনাকে দেখাব।’ বললাম, কী জিনিস? চলেন—বলেই তিনি হাঁটতে শুরু করলেন।
গুলিস্তানে জিপিও ভবনের ভেতরটা অনেকটা পুরোনো স্কুল ভবনের মতো। মাঝখানে বিশাল ফাঁকা জায়গা রেখে চারদিকে ভবন উঠেছে। বাইরে থেকে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না। আতাউর রহমান বসতেন জিপিওর পূর্ব দিকে, যেটা বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে। আর আমরা গেলাম পশ্চিম দিকের শেষ মাথার দোতলায়। সামনে আতাউর রহমান আর পেছনে আমি। যে কক্ষটির সামনে গেলাম, তার সামনে লেখা আরএলও—রিটার্ন লেটার অফিস। ডাক বিভাগে এর আগে আমি অনেকবার এসেছি, কিন্তু এ রকম কোনো বিভাগের নাম শুনিনি, দেখিনি। সেই অফিসের ভেতরে ডিপিএমজিকে দেখে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তিনি আরএলওর ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমি যা জানতে চাই, সব যেন বলা হয়। এরপর আমাকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললেন, ‘আপনি কথা বলেন, সব বুঝতে পারবেন।’
আগেই বলেছি, আরএলও নিয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমেই জানতে চাইলাম, এই অফিসের কাজ কী? ম্যানেজার আমাকে বললেন, সারা দেশের মানুষ যেসব চিঠি পাঠায়, সেগুলোর মধ্যে অনেক চিঠি কখনো প্রাপকের হাতে পৌঁছায় না ভুল বা অস্পষ্ট ঠিকানার কারণে। সেসব চিঠি ফেরত আসে জিপিওতে। আরএলও শাখা এসব চিঠি খুলে পড়ে দেখে, প্রাপক বা প্রেরকের নাম-ঠিকানা পেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর কারও ঠিকানা না থাকলে সেই চিঠি বছর শেষে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখন চিঠির ভেতরে নানা পণ্য পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। ঠিকানাবিহীন সেসব পণ্য বছর শেষে নিলামে তোলা হয়। ম্যানেজারের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মনে হলো, এ নিয়ে ভালো একটি ফিচার হতে পারে—‘যে চিঠি কোনো দিন পৌঁছাবে না প্রাপকের হাতে’। ম্যানেজারকে বললাম, এই অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ব্যবস্থা করে দিলেন।
ম্যানেজারের পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দেখি বিশাল কক্ষটির টেবিলের ওপরে হাজার হাজার চিঠির স্তূপ। ছয়-সাতজন মিলে সেই সব চিঠি পড়ছেন। কথা শুনে বুঝলাম, এঁদের কাজই হলো চিঠি পড়া। সারা দিন ধরে তাঁরা শুধু মানুষের চিঠিই পড়েন। আমি কিছু চিঠি পড়তে চাইলে কেউ আপত্তি করলেন না। একটি চিঠির খামের ওপরে লেখা—তারিন, রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের বহু তারিনের ভিড়ে প্রকৃত তারিনকে খুঁজে পায়নি ডাকপিয়ন। আরেক চিঠির ঠিকানা—গেদু চাচা, ঢাকা। একটির ঠিকানা মামুন, আজিমপুর; আরেকটির ঠিকানা তাহমিনা, বাসাবো। কেউ চিঠিতে পাঠিয়েছেন বিদেশি মুদ্রা, কেউবা ইমিটেশনের গয়না। নতুন স্ত্রীর জন্য শাড়ি-ব্লাউজ পাঠিয়েছেন একজন ভুল ঠিকানায়। এক প্রেমিকা প্রিয়জনের জন্য পাঠিয়েছেন সোহাগী ঠোঁটের লিপস্টিকের ছাপ। একজন রক্ত দিয়ে নাম লিখেছেন ‘ছালেহা’।
আরএলওর লোকেরা বললেন, প্রেমের বেশির ভাগ চিঠিতে থাকে ফুলের পাপড়ি, একটি বা দুটি করে। গ্রামের এক স্ত্রী অভিমান করে শহরের স্বামীকে লিখেছেন, ‘তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছ’। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন হারাগাছার রুবিনা। নোয়াখালীর জয়নাল শহরে চাকরিজীবী ছেলেকে লিখেছেন, ‘টাকা না পাঠালে আমরা না খেয়ে মরে যাব, বাবা’। কেউ একজন বোনের আত্মহত্যার খবর দিয়েছেন চিঠিতে। লেখাপড়া না জানা এক মায়ের পক্ষে একজন লিখেছেন, ‘তোমার মায়ের শরীরটা খুব খারাপ, দেখতে চাইলে শিগগির বাড়ি এসো’। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে মন খারাপ হয়ে গেল।
এসব আকুতিভরা চিঠি পড়তে পড়তে পাশে বসা একজন চিঠি নিয়ে একটি মজার গল্পও শোনালেন। বললেন, কয়েক বছর আগে এক বেকার যুবক আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তিন শ টাকা দাও, না দিলে আমি না খেয়ে মরে যাব।’ তো সেই চিঠি দেখে সবার দয়া হলো। তাঁরা ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে ২০০ টাকা সেই যুবকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর আবার চিঠি এল। সেই যুবক এবার আল্লাহর কাছে লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার কষ্টের কথা শুনে ঠিকই ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক বিভাগের চোরের দল তা থেকে ১০০ টাকা মেরে দিয়েছে।’ আমি এ চিঠির কথা শুনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
আরএলও শাখা নিয়ে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে একটি ফিচার ছাপা হয়েছিল জনকণ্ঠে। আতাউর রহমান সে জন্য ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছর আর জিপিওতে যাওয়া হয়নি। বছর চারেক আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে ঢুকলাম জিপিওর ভেতরে, সেখানে অনেক জায়গা। মনে হলো একবার আরএলও শাখাটা ঘুরে আসি। গিয়ে দেখি, পুরো চিঠির দপ্তরটা একটা ভাঙা রঙ্গমঞ্চ। সব ফাঁকা, কোনো চিঠি নেই কারও হাতে। সবাই বললেন, বোনের আদরমাখা আর মায়ের আকুতিভরা চিঠি কেউ আর ডাক বিভাগে দেন না। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ই-মেইলের যুগে আরএলও বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। মহাদেব সাহার মতো কেউ আর বলেন না, ‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বলো, ভালোবাসি’। মনে হলো, হাতে লেখা চিঠির যেন মৃত্যু ঘটেছে। শুধু শেষ যাত্রাটাই বাকি।
আরও পড়ুন:

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতেন, ডাক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারী সেসবের কিছু কিছু অনায়াসে সাবাড় করে দিতেন। ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই ঘটত, তবে বড় চুরির ঘটনা হলে থানা-পুলিশ করা হতো। তখন ক্রাইম রিপোর্টাররাও খবর পেতেন।
এ রকম একটি চুরির ঘটনা কাভার করতে গেছি ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায়। তো সব দেখেশুনে কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে গেলাম ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের (ডিপিএমজি) রুমে। এই পদে তখন ছিলেন নামকরা রম্যলেখক আতাউর রহমান। তাঁর কক্ষের দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম। তিনিও খুব ভালো ব্যবহার করলেন এবং সময় দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
কথা শেষে বেরিয়ে আসার মুখে একটা ভিজিটিং কার্ড চাইলেন। মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে তাঁর হাতে দিতেই সেটার দিকে তাকিয়ে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলেন। ডান হাত দিয়ে টেবিলের ওপর একটি চাটি মেরে বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ‘আরে...আপনি ক্রাইম রিপোর্টার? আমি জীবনে প্রথম ক্রাইম রিপোর্টার দেখলাম। আমার ধারণা ছিল, ক্রাইম রিপোর্টাররা দেখতে চোর চোর!’
এ রকম একজন উচ্চপদস্থ আমলা ও লেখকের মুখে এমন কথা শুনে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো আমি দেখতে কী রকম?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে চট করে বলে দিলেন, ‘আপনি দেখতে বোকা বোকা।’
আমি ভেবেছিলাম, মুখের সামনে আমাকে নিয়ে হয়তো ভালো কিছু বলবেন। তখন বয়স কম, একটুতেই মন খারাপ হয়। সেই খারাপ মন নিয়ে অফিসে গিয়ে এক সহকর্মীকে বললাম। তিনি শুনে বললেন, ‘মন খারাপ কইরেন না। ক্রাইম রিপোর্টারদের ভাবমূর্তি অনেকটা পুলিশের মতো, কেউ ভালো চোখে দেখে না।’ এ ঘটনার বছর চারেক পরে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীও আমাকে সেই একই কথা বলেছিলেন। সেবার অবশ্য অত মন খারাপ হয়নি।
সেই মন খারাপ নিয়ে পরদিন আবার গেলাম ডাক বিভাগে সেই বড় চুরির ঘটনার ফলোআপ করতে। আবারও সেই আতাউর রহমানের কক্ষে। তবে আগের দিনের চেয়ে তিনি আরও ভালো ব্যবহার করলেন। বায়তুল মোকাররম থেকে স্যান্ডউইচ আর লাচ্ছি এনে খাওয়ালেন। পাশে বসিয়ে এটা-সেটা জানতে চাইলেন। খুশি হয়ে বারবার বলছিলেন, আমার নিউজ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম; কারণ, পুরো নিউজটা ছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ডিপিএমজি হিসেবে তার দায় আতাউর রহমানের ওপরও বর্তায়। সেই দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেসবে মাতলেন না। আমাকে বললেন, ‘আজ ডাক বিভাগের একটি মজার জিনিস আপনাকে দেখাব।’ বললাম, কী জিনিস? চলেন—বলেই তিনি হাঁটতে শুরু করলেন।
গুলিস্তানে জিপিও ভবনের ভেতরটা অনেকটা পুরোনো স্কুল ভবনের মতো। মাঝখানে বিশাল ফাঁকা জায়গা রেখে চারদিকে ভবন উঠেছে। বাইরে থেকে সেটা একেবারেই বোঝা যায় না। আতাউর রহমান বসতেন জিপিওর পূর্ব দিকে, যেটা বায়তুল মোকাররমের উল্টো দিকে। আর আমরা গেলাম পশ্চিম দিকের শেষ মাথার দোতলায়। সামনে আতাউর রহমান আর পেছনে আমি। যে কক্ষটির সামনে গেলাম, তার সামনে লেখা আরএলও—রিটার্ন লেটার অফিস। ডাক বিভাগে এর আগে আমি অনেকবার এসেছি, কিন্তু এ রকম কোনো বিভাগের নাম শুনিনি, দেখিনি। সেই অফিসের ভেতরে ডিপিএমজিকে দেখে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তিনি আরএলওর ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমি যা জানতে চাই, সব যেন বলা হয়। এরপর আমাকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললেন, ‘আপনি কথা বলেন, সব বুঝতে পারবেন।’
আগেই বলেছি, আরএলও নিয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমেই জানতে চাইলাম, এই অফিসের কাজ কী? ম্যানেজার আমাকে বললেন, সারা দেশের মানুষ যেসব চিঠি পাঠায়, সেগুলোর মধ্যে অনেক চিঠি কখনো প্রাপকের হাতে পৌঁছায় না ভুল বা অস্পষ্ট ঠিকানার কারণে। সেসব চিঠি ফেরত আসে জিপিওতে। আরএলও শাখা এসব চিঠি খুলে পড়ে দেখে, প্রাপক বা প্রেরকের নাম-ঠিকানা পেলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর কারও ঠিকানা না থাকলে সেই চিঠি বছর শেষে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখন চিঠির ভেতরে নানা পণ্য পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। ঠিকানাবিহীন সেসব পণ্য বছর শেষে নিলামে তোলা হয়। ম্যানেজারের কথা শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মনে হলো, এ নিয়ে ভালো একটি ফিচার হতে পারে—‘যে চিঠি কোনো দিন পৌঁছাবে না প্রাপকের হাতে’। ম্যানেজারকে বললাম, এই অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ব্যবস্থা করে দিলেন।
ম্যানেজারের পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দেখি বিশাল কক্ষটির টেবিলের ওপরে হাজার হাজার চিঠির স্তূপ। ছয়-সাতজন মিলে সেই সব চিঠি পড়ছেন। কথা শুনে বুঝলাম, এঁদের কাজই হলো চিঠি পড়া। সারা দিন ধরে তাঁরা শুধু মানুষের চিঠিই পড়েন। আমি কিছু চিঠি পড়তে চাইলে কেউ আপত্তি করলেন না। একটি চিঠির খামের ওপরে লেখা—তারিন, রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের বহু তারিনের ভিড়ে প্রকৃত তারিনকে খুঁজে পায়নি ডাকপিয়ন। আরেক চিঠির ঠিকানা—গেদু চাচা, ঢাকা। একটির ঠিকানা মামুন, আজিমপুর; আরেকটির ঠিকানা তাহমিনা, বাসাবো। কেউ চিঠিতে পাঠিয়েছেন বিদেশি মুদ্রা, কেউবা ইমিটেশনের গয়না। নতুন স্ত্রীর জন্য শাড়ি-ব্লাউজ পাঠিয়েছেন একজন ভুল ঠিকানায়। এক প্রেমিকা প্রিয়জনের জন্য পাঠিয়েছেন সোহাগী ঠোঁটের লিপস্টিকের ছাপ। একজন রক্ত দিয়ে নাম লিখেছেন ‘ছালেহা’।
আরএলওর লোকেরা বললেন, প্রেমের বেশির ভাগ চিঠিতে থাকে ফুলের পাপড়ি, একটি বা দুটি করে। গ্রামের এক স্ত্রী অভিমান করে শহরের স্বামীকে লিখেছেন, ‘তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছ’। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন হারাগাছার রুবিনা। নোয়াখালীর জয়নাল শহরে চাকরিজীবী ছেলেকে লিখেছেন, ‘টাকা না পাঠালে আমরা না খেয়ে মরে যাব, বাবা’। কেউ একজন বোনের আত্মহত্যার খবর দিয়েছেন চিঠিতে। লেখাপড়া না জানা এক মায়ের পক্ষে একজন লিখেছেন, ‘তোমার মায়ের শরীরটা খুব খারাপ, দেখতে চাইলে শিগগির বাড়ি এসো’। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে মন খারাপ হয়ে গেল।
এসব আকুতিভরা চিঠি পড়তে পড়তে পাশে বসা একজন চিঠি নিয়ে একটি মজার গল্পও শোনালেন। বললেন, কয়েক বছর আগে এক বেকার যুবক আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তিন শ টাকা দাও, না দিলে আমি না খেয়ে মরে যাব।’ তো সেই চিঠি দেখে সবার দয়া হলো। তাঁরা ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে ২০০ টাকা সেই যুবকের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর আবার চিঠি এল। সেই যুবক এবার আল্লাহর কাছে লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার কষ্টের কথা শুনে ঠিকই ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক বিভাগের চোরের দল তা থেকে ১০০ টাকা মেরে দিয়েছে।’ আমি এ চিঠির কথা শুনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
আরএলও শাখা নিয়ে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে একটি ফিচার ছাপা হয়েছিল জনকণ্ঠে। আতাউর রহমান সে জন্য ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছর আর জিপিওতে যাওয়া হয়নি। বছর চারেক আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না পেয়ে ঢুকলাম জিপিওর ভেতরে, সেখানে অনেক জায়গা। মনে হলো একবার আরএলও শাখাটা ঘুরে আসি। গিয়ে দেখি, পুরো চিঠির দপ্তরটা একটা ভাঙা রঙ্গমঞ্চ। সব ফাঁকা, কোনো চিঠি নেই কারও হাতে। সবাই বললেন, বোনের আদরমাখা আর মায়ের আকুতিভরা চিঠি কেউ আর ডাক বিভাগে দেন না। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ই-মেইলের যুগে আরএলও বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। মহাদেব সাহার মতো কেউ আর বলেন না, ‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বলো, ভালোবাসি’। মনে হলো, হাতে লেখা চিঠির যেন মৃত্যু ঘটেছে। শুধু শেষ যাত্রাটাই বাকি।
আরও পড়ুন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৪ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৭ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৭ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে
২৩ জুলাই ২০২২
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৭ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৭ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে
২৩ জুলাই ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৪ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৭ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে
২৩ জুলাই ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৪ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৭ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৮ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ডাক বিভাগের বৈদেশিক শাখায় তখন খুব চুরি হতো। ডিএইচএল বা ফেডএক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার অত সহজলভ্য ছিল না। সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ডাক বিভাগের পার্সেল সার্ভিস। প্রবাসীরা পার্সেল সার্ভিসে যেসব পণ্য দেশে
২৩ জুলাই ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৪ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৭ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৭ দিন আগে