Ajker Patrika

চড়া উত্তেজনার নিরুত্তাপ সমাপ্তি

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০০
চড়া উত্তেজনার নিরুত্তাপ সমাপ্তি

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন আওরঙ্গজেব খান লেনিন। তাঁর ছোট ভাই সেলিম ওমরাও খান ছিলেন নামকরা সাপ্তাহিক বিচিত্রার সাংবাদিক। সেই সুবাদে আমরা সাংবাদিকেরা তাঁকে ডাকতাম ‘লেনিন ভাই’ বলে।

গুলশানে সেই লেনিন ভাইয়ের দিনকাল ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন রাতে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে খুন হলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। কপাল পুড়ল লেনিন ভাইয়ের। তাঁকে গুলশান থানা থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো ঢাকা রেঞ্জে। তাঁর বদলে এলেন সুদর্শন ফারুক আহমেদ।

একদিন সকালে গুলশান থানায় ওসির রুমে উঁকি দিয়ে দেখি সাবেক ও বর্তমান দুই ওসি বসে গভীর আলোচনায় মগ্ন। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখেই দুজনে চুপ হয়ে গেলেন। আমি টের পেয়ে বললাম, কথা শেষ করেন, পরে আসছি।

গুলশান থানা তখন ছিল ১ ও ২ নম্বর গোলচত্বরের মাঝামাঝি একটি পুরোনো দোতলা বাড়িতে। সেই বাড়ির বসার ঘরটি ছিল ওসির কক্ষ। ওসির কক্ষের সামনে বিশাল আকারের একটি বারান্দা। দর্শনার্থী বসার জন্য বারান্দার দুপাশে দুটি কাঠের বেঞ্চ রাখা। একটি বেঞ্চে বসে তাঁদের কথা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

লেনিন ভাই কথা বলতেন উচ্চ স্বরে। সেই তুলনায় ফারুক আহমেদ বেশ অনুচ্চ। লেনিন ভাই ভেতরে যা বলছেন তার প্রায় সবই বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে। তিনি মাঝেমধ্যে গলার জোর আরও বাড়িয়ে দিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু ফারুক আহমেদের কথা শোনা যাচ্ছে না। হঠাৎ লেনিন ভাইয়ের একটি কথা আমার কানে আসার পর মনে হলো, এবার একটু আড়িপাতা যেতে পারে। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছি তাঁরা কী বলছেন। কিছু বিষয় আবছা আবছা বুঝতে পারলাম। মনে হলো তাঁরা কোনো নারীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে কথা বলছেন। তবে পুরো ঘটনা আর উদ্ধার করতে পারলাম না।

মিনিট বিশেক পরে বেরিয়ে এলেন লেনিন ভাই। বেরিয়েই হনহন করে হাঁটা দিলেন। আমি তাঁকে ডাক দিতেই ইশারা করলেন বাইরে চলে আসার জন্য। তাঁর পিছু নিয়ে থানার বাইরে এলাম। এটা ১৯৯৯ সালের ১৭-১৮ মার্চের ঘটনা।

লেনিন ভাইয়ের মেজাজ গরম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজের কপালকে দোষারোপ করছেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে যা বললেন তা শুনে পিলে চমকে গেল। বললেন, থানার ভেতরে কোনো এক ব্রিটিশ নারী নাকি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে আইজিপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি কমিশনারের কাছে এসেছে। তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। ফারুক আহমেদ নাকি তদন্ত কমিটির কোনো এক সদস্যকে বলেছেন, তিনি যোগদানের পর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা আগের ওসির আমলে হলেও হতে পারে। লেনিন ভাই আর বিস্তারিত কিছু জানেন না। শুধু এটুকু শুনেই মাথা গরম হয়েছে বলে ফারুক আহমেদের কাছে ছুটে এসেছেন। আমাকে বললেন, আমি যেন খোঁজ করে আসল ঘটনা বের করি। 
যেকোনো পেশাদার সংবাদকর্মীর জন্য খবরের এতটুকু ক্লুই যথেষ্ট। তাঁকে বিদায় দিয়ে গেলাম ওসি ফারুক আহমেদের কাছে। তিনি বেশ চিন্তিত, কিন্তু কিছু বললেন না। মনে হলো, বিষয়টি স্পর্শকাতর, কমিশনার ছাড়া কেউ কথা বলবেন না। এলাম কমিশনারের অফিসে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন এ কে এম শামসুদ্দিন। ডিএমপি সদর দপ্তরে ঢুকতেই যে লাল ভবন, এর দোতলায় বসতেন তিনি। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হতো। তাঁকে সহজেই পেয়ে গেলাম। কিন্তু তিনিও কিছু বলতে চাইলেন না। শুধু এটুকু বললেন, এসবির প্রধান নুরুল আলমকে প্রধান করে এ নিয়ে একটি কমিটি হয়েছে। নুরুল আলম ছাড়া কেউ কিছু জানেন না।

গেলাম এসবিতে, অ্যাডিশনাল আইজি অফিসে নেই। তিনি সিআইডির প্রধানের সঙ্গে জরুরি মিটিং করছেন। তখন সিআইডির প্রধান ছিলেন মুহা. নুরুল হুদা। পরে তিনি আইজিপি হয়েছিলেন। ঘণ্টা দেড়েক বসে থাকলাম, মিটিং আর শেষ হয় না। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুই বের করতে পারছি না। ছুটলাম পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপির কাছে, তিনি যদি কিছু বলেন।

এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী তখন আইজিপি। তিনি রেডিও-টিভিতে গান গাইতেন বুরহান সিদ্দিকী নামে। তাঁর একটি সুবিধা ছিল, তিনি নিজ থেকে কোনো কিছু বলতেন না, কিন্তু কোনো কিছু জানতে চাইলে অস্বীকার করতেন না। সারা দিনের দৌড়াদৌড়ির কথা তাঁকে বললাম। তিনি সব শুনে একজন কর্মকর্তার কাছে পাঠালেন। সেই কর্মকর্তা আমাকে একটি চিঠি পড়তে দিলেন, কিন্তু তার কপি আর দিলেন না।

চিঠিটি ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি জিওফ্রে ফেয়ারের লেখা। তিনি লিখেছেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে কর্মরত ২৭-২৮ বছরের এক ব্রিটিশ নারী গভীর রাতে নিজের বাসায় ঢুকে দেখেন ভেতরের সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। সেই রাতেই তিনি যান গুলশান থানায় অভিযোগ জানাতে। এরপর থানার চার পুলিশ সদস্য গভীর রাতে তাঁকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে আসার পর বাসায় ফিরে যান এবং দুই দিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যান। নিজের দেশে যাওয়ার পর প্রতিকার চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন। চিঠিতে বলা হয়, এ ঘটনার পর ঢাকায় বসবাস করা ব্রিটিশ নারীদের রাতের বেলা সঙ্গী ছাড়া থানায় যেতে বারণ করা হয়েছে।

সব নোট করে নিয়ে অফিসে গিয়ে লিখতে বসেছি, হঠাৎ শুনি বিবিসি বাংলা সেই খবরই প্রচার করছে। তাদের খবরে আমার চেয়ে আরও অনেক বেশি তথ্য। সেই খবর প্রচারের পর শুরু হলো তোলপাড়। এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি গরম হয়ে উঠল। এক দিন পর পত্রিকায় খবর এল—ঢাকা-লন্ডন সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।

মোহাম্মদ নাসিম তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ঘটনা নিয়ে তিনি প্রতিদিনই সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন, কিন্তু খবর আর থামছে না। অনেক পত্রিকা সেই খবরকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের খবর প্রচার করতে শুরু করল। পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে কমিটির পর কমিটি গঠন করা হলো, কিন্তু কথিত ধর্ষকদের আর খুঁজে পাওয়া গেল না।

অবশ্য তখন এ ঘটনা নিয়ে অন্য রকম একটি প্রচারও ছিল। বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশে তেল-গ্যাসক্ষেত্র ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো পিছিয়ে পড়ছিল। হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা কয়েকটি কোম্পানির পক্ষে চেষ্টা-তদবির করছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হন। এরপর বেনামি এই নারীর গল্প ফাঁদেন। অবশ্য এটা সত্যি, দূতাবাসের সেই চিঠিতে ধর্ষণের শিকার সেই নারীর কোনো নাম-পরিচয় ছিল না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার নাম-পরিচয় চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা সেটা দিতে পারছিলেন না। ডিএফআইডি তখন বাংলাদেশে একটি প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছিল। এ ঘটনার কারণে সেটাও থেমে যায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে যায়, এ নিয়ে প্রতিদিনই রেডিও এবং পত্রিকায় খবর হতে থাকে।

ঢাকায় তখন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন ডেভিড সি ওয়াকার। ১৯৯৯ সালের ২৩ মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ডেভিডের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাঁরা দুজনেই পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে একমত হন। বৈঠক চলতে থাকে আর আমরা এক ডজন সাংবাদিক ফলাফল জানতে অপেক্ষা করি। দীর্ঘ বৈঠকের পর বের হয়ে আসেন দুজনে। মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমাদের বলেন, থানায় ধর্ষণ নিয়ে যে খবর প্রচারিত হয়েছে, সেটি ঠিক নয়। সরকার তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে, গুলশান থানায় এ ধরনের ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তদন্তের সবকিছু ডেভিডকে বলা হয়েছে। বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার তাঁদের সঙ্গে একমত হয়েছেন বলে আমাদের বলা হয়। ডেভিড তখন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে বাংলাদেশ যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে, তাতে তিনি মুগ্ধ। এই যৌথ ব্রিফিংয়ের পর ঘটনাটি মোটামুটি থেমে যায়।

অনেক দিন পর গুলশান থানার সামনে দিয়ে উত্তর দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি সেদিন এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল, নাকি ঘটেনি? আমি আসলে এর কিছুই জানতে পারিনি। জীবনে কত ঘটনার যে রহস্য ভেদ করা সম্ভব হয়নি। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত