কামরুল হাসান

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে বিচ্ছিরি ফরমায়েশি কাজে আটকে গেলাম সেদিন। গেলাম পরের দিন। বাড়ির নিচতলার এক ফ্ল্যাটে গিয়ে কলবেল বাজাতেই মাঝবয়সী এক নারী এসে দরজা খুলে দিলেন। ভিক্টরের সঙ্গে আমাকে দেখে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। মনে হলো, আমার আসার কথা বাড়ির লোকেরা আগে থেকেই জানতেন।
একটু পর ড্রয়িংরুমে এলেন এক বয়স্ক নারী। ভিক্টর পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘উনি থ্যালমা গোমেজ’। তাঁর বাম হাতে ধরা নীল রঙের একটি চিঠির খাম। খামটি আমার হাতে দিতে দিতে বললেন, ‘এই চিঠি আমার জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছে। সাত দিন ধরে খেতে ও ঘুমাতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে, তারাও অস্থির।’
চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি বিদেশ থেকে আসা। খামের ওপরে প্রেরকের ঠিকানা বলতে লেখা, হিলি গোমেজ, লন্ডন। প্রাপকের নামের জায়গায় ‘থ্যালমা গোমেজ, হাসনাবাদ, নবাবগঞ্জ, খালপাড়, ঢাকা’ লেখা। খামের ওপরে ডান দিকে বাহরাইনের ডাকটিকিট লাগানো। ভেতরে হ্যাট পরা এক বৃদ্ধের পোস্টকার্ড সাইজের রঙিন ছবি, ছবির উল্টো দিকে ‘হিলি গোমেজ’ নাম সই করা। তার পাশে থ্যালমা গোমেজের নাম। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা, ‘আমি তোমাকে ভুলিনি, আমি ফিরে এসেছি, আজ জীবিত থাকলেও নেই।’ আরেক পাশে ছোট করে চারটি নাম লেখা—শান্তি, দিলীপ, বাদল ও করুণা।
ছবিটা হাতে নিয়ে বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলাম, উনি কে। আমার মুখের কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধা বললেন, আমার স্বামী। ৪৩ বছর আগে এক ব্রিটিশ জাহাজসমেত নিখোঁজ হন জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে। এত বছরেও তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক দিন আগে এই চিঠি এসেছে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, এই ছবি দেখে চিনতে পারলেন? জবাব তৈরিই ছিল। বললেন, ঠোঁট ও কানের লতি দেখে চিনেছি। পাশে অন্য চারটি নাম কার? ‘এগুলো আমার ছেলেমেয়ের নাম।’ আমার সামনে সোফায় বসা ভিক্টর এসব শুনতে শুনতে বললেন, চিঠিটা আসার পর পুরো পরিবার আনন্দ-বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না।
থ্যালমা বললেন, চিঠিটা ২২ জানুয়ারি (২০০০ সাল) নবাবগঞ্জের ঠিকানায় এসেছে। এরপর তিনি চিঠিটি নিয়ে গ্রিন রোডে মেয়ের বাসায় আসেন। এটা তাঁর ছোট মেয়ে করুণার বাসা। থ্যালমা বললেন, চিঠি পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এত দিন নিখোঁজ লোকটি বেঁচে আছেন, হয়তো তাঁর কোনো বন্ধু বাহরাইন থেকে চিঠিটা ডাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এটুকু বলতেই তাঁর গলা ধরে আসে।
আমি থ্যালমার মুখের দিকে তাকাই। তাঁর চোখে দুকূল ভাসানো ভালোবাসা। বয়সের ভারে চামড়া ভেতরে আশ্রয় নেওয়া চোখের নিচে বিন্দু বিন্দু পানি। এই অবস্থায় কাউকে প্রশ্ন করা সহজ নয়। তবু কীভাবে শুরু করব, ভাবতে ভাবতে বললাম, গোমেজ সাহেব কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন? প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই মনে হলো, মাটিতে ঠিক কোপটি পড়েছে। রোদ পেয়ে অমনি দলে দলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো সব স্মৃতি।
থ্যালমা বলতে শুরু করলেন। নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ খালপাড়ের যে গ্রামে তাঁরা থাকতেন, ৪৪ বছর আগে সে গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলেন দুরন্ত যুবক হিলি গোমেজ। পেশায় জাহাজের নাবিক। ঘুরে বেড়াতেন বন্দর থেকে বন্দরে। সাগরে বেড়ানোর নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল কৈশোর থেকেই। সে কারণে শখ করে জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন।
স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। বড় মেয়ে শান্তির বয়স তখন ১০। দ্বিতীয় ছেলে দিলীপ ৬, আর বাদল ৪ বছর। ছোট মেয়ে করুণার জন্ম ১৯৫৬ সালের মে মাসে।
হিলি গোমেজ তখন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানির একটি জাহাজে চাকরি করতেন। আমটাটা, আমটালি, আমব্রেলা ও আমবার্ড নামে চারটি জাহাজ ছিল এই কোম্পানির। হিলি গোমেজ জাহাজে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন করুণার জন্মের খবর। খবর শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাবা। কোম্পানির জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এলে ক্যাপ্টেনকে না বলেই সোজা হাসনাবাদের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ১৬ জুন রাতে স্টিমারযোগে মইনট ঘাট (বর্তমানে বিলুপ্ত) হয়ে বাড়িতে আসেন হিলি গোমেজ। বাড়িতে এসে মেয়েকে একনজর দেখে সে রাতেই আবার চলে যান। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাঁদের জাহাজ যায় করাচি বন্দরে, সেখান থেকে জাপানে। জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে জাহাজটি ছাড়ার ৮ দিন পর সেটি নিখোঁজ হয়।
থ্যালমা সেই ঘটনা জানতে পারেন দেড় মাস পর। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর বাসায় চিঠি দিয়ে জানায়, বন্দর থেকে ছাড়ার পর জাহাজটি নিখোঁজ হয়। ক্রুসহ জাহাজে লোক ছিলেন ২৮৪ জন। দুর্ঘটনায় পড়ার আগে জাহাজ থেকে ‘এসওএস’ বার্তা পাওয়ার পর কাছের বন্দর থেকে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
চিঠিতে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিল, বিশাল আয়তনের এই জাহাজ ডুবতে কমপক্ষে ১২ দিন লাগার কথা। কিন্তু তারা জাহাজটির কাউকেই খুঁজে পায়নি। এই জাহাজে কাজ করতেন তাঁদের গ্রামের আরেক যুবক সনাতন। শেষ মুহূর্তে ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাঁকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এসে জানান, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল দেখে অসম্মতি জানান। তিনি বলেন, এ জাহাজের মালামাল না কমালে গভীর সাগরে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথা না শুনে নতুন ক্যাপ্টেন নিয়োগ করেন। জাহাজের প্রথম ক্যাপ্টেন সে সময় হিলিকে এ জাহাজে যেতে নিষেধ করেন, কিন্তু হিলি তাঁর কথা শোনেননি।
থ্যালমা বললেন, এ ঘটনা ১৯৫৬ সালের। এরপর দীর্ঘ সময় জাহাজ ও নাবিকদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। সর্বশেষ করাচি বন্দর থেকে হিলি তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন। জাহাজে চাকরি করার সময় কোম্পানি প্রতি মাসে ৭০ টাকা করে তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় পাঠাত। হিলি নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস পর তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
থ্যালমা বলেন, হিলি নিখোঁজ হওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে পানিতে পড়েন তিনি। অভাব-অনটন তখন নিত্যসঙ্গী। খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তান শান্তি ও দিলীপকে অনাথ আশ্রমে পাঠান। একজন মিশনারি ফাদার তাঁদের দেখাশোনা করেন। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, কিন্তু কোম্পানি তাঁকে জানিয়ে দেয়, যুদ্ধে জাহাজ বিধ্বস্ত না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান নেই। এভাবে দিন চলে যায়।
থ্যালমার অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে হতে চার সন্তান বড় হয়। বড় ছেলে দিলীপ আমেরিকায় ভালো চাকরি করেন। বাদল চাকরি করেন ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে। বড় মেয়ে শান্তি স্বামীর সঙ্গে মুম্বাইবাসী। সেদিনের এক মাসের কন্যা করুণাও মাঝবয়সী নারী। থ্যালমার বয়সও কম হয়নি, তিনি তখন ৭২-এ। চোখে ভালো দেখতে না পেলেও ছবিতে একপলক দেখেই স্বামীকে চিনতে পারেন।
থ্যালমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। সেদিন করুণা আমাকে বলেছিলেন, বাবাকে নিজের চোখে না দেখলেও তাঁর সব গল্প মুখস্থ। শুনেছেন, বাবা তাঁর বড় মেয়ে শান্তির জন্য বিভিন্ন বন্দর থেকে ডাকে কেক পাঠাতেন। সেই কেকের মধ্যে লুকানো থাকত কানের দুল বা নাকফুলের মতো উপহার। কেকটা মুখে দিলেই বেরিয়ে আসত উপহার। সেই উপহার পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলতেন শান্তিদি। করুণা বারবার বললেন, আমি যেন ভালো করে একটা রিপোর্ট করি, যাতে বাবা ফিরে আসেন।
হিলি গোমেজের সেই রিপোর্ট জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছিল ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি, বুধবার। এরপর অনেক দিন আর থ্যালমা বা করুণার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ভিক্টরও অন্য চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। বছর তিনেক পরে করুণাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ধানমন্ডির প্রোব ম্যাগাজিনে যাচ্ছিলাম। কী মনে হলো, করুণাদের ফ্ল্যাটে কলবেল বাজালাম। দরজা খুললেন অন্য এক নারী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, করুণারা নেই, তাঁরা এ বাসার নতুন ভাড়াটে। করুণার মায়ের কথা শুনে বললেন, পাশের ভাড়াটেরা তাঁকে বলেছেন, নিখোঁজ স্বামীর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় করুণার মা সারাক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতেন, রাতেও। সহজে বিছানায় যেতেন না। একদিন ভোরবেলা তাঁকে বারান্দায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই নারীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসে এসে পুরোনো রিপোর্টটা আবার বের করলাম। রিপোর্টে আছে, হিলির জাহাজটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল ১৯৫৬ সালে, থ্যালমা আমাকে সেটাই বলেছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানি নামে ব্রিটিশ একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেই কোম্পানির একটি জাহাজের নামও ছিল আমটাটা (Umtata)। টর্পেডোর আঘাতে সেটা ডুবে যায় ১৯৪২ সালে, ১৯৫৬ সালে নয়। ৪২ থেকে ৫৬-তে তো অনেক ফারাক। মনে একটু খটকা লাগল।
লেখাটা শেষ করার আগে মার্কিন গল্পকার মারজরি কিনান রাউলিংসের ‘আ মাদার ইন ম্যানভিল’ গল্পটা মনে পড়ে গেল। অনাথ আশ্রমের বেড়ে ওঠা বালক জেরি সারাক্ষণ তার মায়ের কথা বলত। পাহাড়ের ওপারে মা থাকে, জন্মদিনে মা তাকে উপহার পাঠাত। কিন্তু এতিমখানায় বড় হওয়া জেরির আসলে কেউই ছিল না। মায়ের সঙ্গে তার বসবাস ছিল শুধু কল্পনাতে।
আমার মনেও ধন্দ। থ্যালমার চিঠির গল্প জেরির মতো নয় তো? সত্যিই কি এত বছর পরে হিলি সেই চিঠি লিখেছিলেন? নাকি অন্য কিছু?
আসলে মানুষের জীবনের গল্প বড় অদ্ভুত, সে গল্প হয়তো কখনো মেলে, কখনো মেলে না।
আরও পড়ুন:

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে বিচ্ছিরি ফরমায়েশি কাজে আটকে গেলাম সেদিন। গেলাম পরের দিন। বাড়ির নিচতলার এক ফ্ল্যাটে গিয়ে কলবেল বাজাতেই মাঝবয়সী এক নারী এসে দরজা খুলে দিলেন। ভিক্টরের সঙ্গে আমাকে দেখে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। মনে হলো, আমার আসার কথা বাড়ির লোকেরা আগে থেকেই জানতেন।
একটু পর ড্রয়িংরুমে এলেন এক বয়স্ক নারী। ভিক্টর পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘উনি থ্যালমা গোমেজ’। তাঁর বাম হাতে ধরা নীল রঙের একটি চিঠির খাম। খামটি আমার হাতে দিতে দিতে বললেন, ‘এই চিঠি আমার জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছে। সাত দিন ধরে খেতে ও ঘুমাতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে, তারাও অস্থির।’
চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি বিদেশ থেকে আসা। খামের ওপরে প্রেরকের ঠিকানা বলতে লেখা, হিলি গোমেজ, লন্ডন। প্রাপকের নামের জায়গায় ‘থ্যালমা গোমেজ, হাসনাবাদ, নবাবগঞ্জ, খালপাড়, ঢাকা’ লেখা। খামের ওপরে ডান দিকে বাহরাইনের ডাকটিকিট লাগানো। ভেতরে হ্যাট পরা এক বৃদ্ধের পোস্টকার্ড সাইজের রঙিন ছবি, ছবির উল্টো দিকে ‘হিলি গোমেজ’ নাম সই করা। তার পাশে থ্যালমা গোমেজের নাম। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা, ‘আমি তোমাকে ভুলিনি, আমি ফিরে এসেছি, আজ জীবিত থাকলেও নেই।’ আরেক পাশে ছোট করে চারটি নাম লেখা—শান্তি, দিলীপ, বাদল ও করুণা।
ছবিটা হাতে নিয়ে বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলাম, উনি কে। আমার মুখের কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধা বললেন, আমার স্বামী। ৪৩ বছর আগে এক ব্রিটিশ জাহাজসমেত নিখোঁজ হন জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে। এত বছরেও তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক দিন আগে এই চিঠি এসেছে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, এই ছবি দেখে চিনতে পারলেন? জবাব তৈরিই ছিল। বললেন, ঠোঁট ও কানের লতি দেখে চিনেছি। পাশে অন্য চারটি নাম কার? ‘এগুলো আমার ছেলেমেয়ের নাম।’ আমার সামনে সোফায় বসা ভিক্টর এসব শুনতে শুনতে বললেন, চিঠিটা আসার পর পুরো পরিবার আনন্দ-বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না।
থ্যালমা বললেন, চিঠিটা ২২ জানুয়ারি (২০০০ সাল) নবাবগঞ্জের ঠিকানায় এসেছে। এরপর তিনি চিঠিটি নিয়ে গ্রিন রোডে মেয়ের বাসায় আসেন। এটা তাঁর ছোট মেয়ে করুণার বাসা। থ্যালমা বললেন, চিঠি পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এত দিন নিখোঁজ লোকটি বেঁচে আছেন, হয়তো তাঁর কোনো বন্ধু বাহরাইন থেকে চিঠিটা ডাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এটুকু বলতেই তাঁর গলা ধরে আসে।
আমি থ্যালমার মুখের দিকে তাকাই। তাঁর চোখে দুকূল ভাসানো ভালোবাসা। বয়সের ভারে চামড়া ভেতরে আশ্রয় নেওয়া চোখের নিচে বিন্দু বিন্দু পানি। এই অবস্থায় কাউকে প্রশ্ন করা সহজ নয়। তবু কীভাবে শুরু করব, ভাবতে ভাবতে বললাম, গোমেজ সাহেব কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন? প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই মনে হলো, মাটিতে ঠিক কোপটি পড়েছে। রোদ পেয়ে অমনি দলে দলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো সব স্মৃতি।
থ্যালমা বলতে শুরু করলেন। নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ খালপাড়ের যে গ্রামে তাঁরা থাকতেন, ৪৪ বছর আগে সে গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলেন দুরন্ত যুবক হিলি গোমেজ। পেশায় জাহাজের নাবিক। ঘুরে বেড়াতেন বন্দর থেকে বন্দরে। সাগরে বেড়ানোর নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল কৈশোর থেকেই। সে কারণে শখ করে জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন।
স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। বড় মেয়ে শান্তির বয়স তখন ১০। দ্বিতীয় ছেলে দিলীপ ৬, আর বাদল ৪ বছর। ছোট মেয়ে করুণার জন্ম ১৯৫৬ সালের মে মাসে।
হিলি গোমেজ তখন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানির একটি জাহাজে চাকরি করতেন। আমটাটা, আমটালি, আমব্রেলা ও আমবার্ড নামে চারটি জাহাজ ছিল এই কোম্পানির। হিলি গোমেজ জাহাজে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন করুণার জন্মের খবর। খবর শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাবা। কোম্পানির জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এলে ক্যাপ্টেনকে না বলেই সোজা হাসনাবাদের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ১৬ জুন রাতে স্টিমারযোগে মইনট ঘাট (বর্তমানে বিলুপ্ত) হয়ে বাড়িতে আসেন হিলি গোমেজ। বাড়িতে এসে মেয়েকে একনজর দেখে সে রাতেই আবার চলে যান। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাঁদের জাহাজ যায় করাচি বন্দরে, সেখান থেকে জাপানে। জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে জাহাজটি ছাড়ার ৮ দিন পর সেটি নিখোঁজ হয়।
থ্যালমা সেই ঘটনা জানতে পারেন দেড় মাস পর। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর বাসায় চিঠি দিয়ে জানায়, বন্দর থেকে ছাড়ার পর জাহাজটি নিখোঁজ হয়। ক্রুসহ জাহাজে লোক ছিলেন ২৮৪ জন। দুর্ঘটনায় পড়ার আগে জাহাজ থেকে ‘এসওএস’ বার্তা পাওয়ার পর কাছের বন্দর থেকে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
চিঠিতে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিল, বিশাল আয়তনের এই জাহাজ ডুবতে কমপক্ষে ১২ দিন লাগার কথা। কিন্তু তারা জাহাজটির কাউকেই খুঁজে পায়নি। এই জাহাজে কাজ করতেন তাঁদের গ্রামের আরেক যুবক সনাতন। শেষ মুহূর্তে ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাঁকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এসে জানান, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল দেখে অসম্মতি জানান। তিনি বলেন, এ জাহাজের মালামাল না কমালে গভীর সাগরে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথা না শুনে নতুন ক্যাপ্টেন নিয়োগ করেন। জাহাজের প্রথম ক্যাপ্টেন সে সময় হিলিকে এ জাহাজে যেতে নিষেধ করেন, কিন্তু হিলি তাঁর কথা শোনেননি।
থ্যালমা বললেন, এ ঘটনা ১৯৫৬ সালের। এরপর দীর্ঘ সময় জাহাজ ও নাবিকদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। সর্বশেষ করাচি বন্দর থেকে হিলি তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন। জাহাজে চাকরি করার সময় কোম্পানি প্রতি মাসে ৭০ টাকা করে তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় পাঠাত। হিলি নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস পর তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
থ্যালমা বলেন, হিলি নিখোঁজ হওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে পানিতে পড়েন তিনি। অভাব-অনটন তখন নিত্যসঙ্গী। খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তান শান্তি ও দিলীপকে অনাথ আশ্রমে পাঠান। একজন মিশনারি ফাদার তাঁদের দেখাশোনা করেন। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, কিন্তু কোম্পানি তাঁকে জানিয়ে দেয়, যুদ্ধে জাহাজ বিধ্বস্ত না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান নেই। এভাবে দিন চলে যায়।
থ্যালমার অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে হতে চার সন্তান বড় হয়। বড় ছেলে দিলীপ আমেরিকায় ভালো চাকরি করেন। বাদল চাকরি করেন ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে। বড় মেয়ে শান্তি স্বামীর সঙ্গে মুম্বাইবাসী। সেদিনের এক মাসের কন্যা করুণাও মাঝবয়সী নারী। থ্যালমার বয়সও কম হয়নি, তিনি তখন ৭২-এ। চোখে ভালো দেখতে না পেলেও ছবিতে একপলক দেখেই স্বামীকে চিনতে পারেন।
থ্যালমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। সেদিন করুণা আমাকে বলেছিলেন, বাবাকে নিজের চোখে না দেখলেও তাঁর সব গল্প মুখস্থ। শুনেছেন, বাবা তাঁর বড় মেয়ে শান্তির জন্য বিভিন্ন বন্দর থেকে ডাকে কেক পাঠাতেন। সেই কেকের মধ্যে লুকানো থাকত কানের দুল বা নাকফুলের মতো উপহার। কেকটা মুখে দিলেই বেরিয়ে আসত উপহার। সেই উপহার পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলতেন শান্তিদি। করুণা বারবার বললেন, আমি যেন ভালো করে একটা রিপোর্ট করি, যাতে বাবা ফিরে আসেন।
হিলি গোমেজের সেই রিপোর্ট জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছিল ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি, বুধবার। এরপর অনেক দিন আর থ্যালমা বা করুণার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ভিক্টরও অন্য চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। বছর তিনেক পরে করুণাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ধানমন্ডির প্রোব ম্যাগাজিনে যাচ্ছিলাম। কী মনে হলো, করুণাদের ফ্ল্যাটে কলবেল বাজালাম। দরজা খুললেন অন্য এক নারী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, করুণারা নেই, তাঁরা এ বাসার নতুন ভাড়াটে। করুণার মায়ের কথা শুনে বললেন, পাশের ভাড়াটেরা তাঁকে বলেছেন, নিখোঁজ স্বামীর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় করুণার মা সারাক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতেন, রাতেও। সহজে বিছানায় যেতেন না। একদিন ভোরবেলা তাঁকে বারান্দায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই নারীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসে এসে পুরোনো রিপোর্টটা আবার বের করলাম। রিপোর্টে আছে, হিলির জাহাজটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল ১৯৫৬ সালে, থ্যালমা আমাকে সেটাই বলেছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানি নামে ব্রিটিশ একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেই কোম্পানির একটি জাহাজের নামও ছিল আমটাটা (Umtata)। টর্পেডোর আঘাতে সেটা ডুবে যায় ১৯৪২ সালে, ১৯৫৬ সালে নয়। ৪২ থেকে ৫৬-তে তো অনেক ফারাক। মনে একটু খটকা লাগল।
লেখাটা শেষ করার আগে মার্কিন গল্পকার মারজরি কিনান রাউলিংসের ‘আ মাদার ইন ম্যানভিল’ গল্পটা মনে পড়ে গেল। অনাথ আশ্রমের বেড়ে ওঠা বালক জেরি সারাক্ষণ তার মায়ের কথা বলত। পাহাড়ের ওপারে মা থাকে, জন্মদিনে মা তাকে উপহার পাঠাত। কিন্তু এতিমখানায় বড় হওয়া জেরির আসলে কেউই ছিল না। মায়ের সঙ্গে তার বসবাস ছিল শুধু কল্পনাতে।
আমার মনেও ধন্দ। থ্যালমার চিঠির গল্প জেরির মতো নয় তো? সত্যিই কি এত বছর পরে হিলি সেই চিঠি লিখেছিলেন? নাকি অন্য কিছু?
আসলে মানুষের জীবনের গল্প বড় অদ্ভুত, সে গল্প হয়তো কখনো মেলে, কখনো মেলে না।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে বিচ্ছিরি ফরমায়েশি কাজে আটকে গেলাম সেদিন। গেলাম পরের দিন। বাড়ির নিচতলার এক ফ্ল্যাটে গিয়ে কলবেল বাজাতেই মাঝবয়সী এক নারী এসে দরজা খুলে দিলেন। ভিক্টরের সঙ্গে আমাকে দেখে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। মনে হলো, আমার আসার কথা বাড়ির লোকেরা আগে থেকেই জানতেন।
একটু পর ড্রয়িংরুমে এলেন এক বয়স্ক নারী। ভিক্টর পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘উনি থ্যালমা গোমেজ’। তাঁর বাম হাতে ধরা নীল রঙের একটি চিঠির খাম। খামটি আমার হাতে দিতে দিতে বললেন, ‘এই চিঠি আমার জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছে। সাত দিন ধরে খেতে ও ঘুমাতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে, তারাও অস্থির।’
চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি বিদেশ থেকে আসা। খামের ওপরে প্রেরকের ঠিকানা বলতে লেখা, হিলি গোমেজ, লন্ডন। প্রাপকের নামের জায়গায় ‘থ্যালমা গোমেজ, হাসনাবাদ, নবাবগঞ্জ, খালপাড়, ঢাকা’ লেখা। খামের ওপরে ডান দিকে বাহরাইনের ডাকটিকিট লাগানো। ভেতরে হ্যাট পরা এক বৃদ্ধের পোস্টকার্ড সাইজের রঙিন ছবি, ছবির উল্টো দিকে ‘হিলি গোমেজ’ নাম সই করা। তার পাশে থ্যালমা গোমেজের নাম। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা, ‘আমি তোমাকে ভুলিনি, আমি ফিরে এসেছি, আজ জীবিত থাকলেও নেই।’ আরেক পাশে ছোট করে চারটি নাম লেখা—শান্তি, দিলীপ, বাদল ও করুণা।
ছবিটা হাতে নিয়ে বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলাম, উনি কে। আমার মুখের কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধা বললেন, আমার স্বামী। ৪৩ বছর আগে এক ব্রিটিশ জাহাজসমেত নিখোঁজ হন জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে। এত বছরেও তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক দিন আগে এই চিঠি এসেছে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, এই ছবি দেখে চিনতে পারলেন? জবাব তৈরিই ছিল। বললেন, ঠোঁট ও কানের লতি দেখে চিনেছি। পাশে অন্য চারটি নাম কার? ‘এগুলো আমার ছেলেমেয়ের নাম।’ আমার সামনে সোফায় বসা ভিক্টর এসব শুনতে শুনতে বললেন, চিঠিটা আসার পর পুরো পরিবার আনন্দ-বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না।
থ্যালমা বললেন, চিঠিটা ২২ জানুয়ারি (২০০০ সাল) নবাবগঞ্জের ঠিকানায় এসেছে। এরপর তিনি চিঠিটি নিয়ে গ্রিন রোডে মেয়ের বাসায় আসেন। এটা তাঁর ছোট মেয়ে করুণার বাসা। থ্যালমা বললেন, চিঠি পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এত দিন নিখোঁজ লোকটি বেঁচে আছেন, হয়তো তাঁর কোনো বন্ধু বাহরাইন থেকে চিঠিটা ডাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এটুকু বলতেই তাঁর গলা ধরে আসে।
আমি থ্যালমার মুখের দিকে তাকাই। তাঁর চোখে দুকূল ভাসানো ভালোবাসা। বয়সের ভারে চামড়া ভেতরে আশ্রয় নেওয়া চোখের নিচে বিন্দু বিন্দু পানি। এই অবস্থায় কাউকে প্রশ্ন করা সহজ নয়। তবু কীভাবে শুরু করব, ভাবতে ভাবতে বললাম, গোমেজ সাহেব কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন? প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই মনে হলো, মাটিতে ঠিক কোপটি পড়েছে। রোদ পেয়ে অমনি দলে দলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো সব স্মৃতি।
থ্যালমা বলতে শুরু করলেন। নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ খালপাড়ের যে গ্রামে তাঁরা থাকতেন, ৪৪ বছর আগে সে গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলেন দুরন্ত যুবক হিলি গোমেজ। পেশায় জাহাজের নাবিক। ঘুরে বেড়াতেন বন্দর থেকে বন্দরে। সাগরে বেড়ানোর নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল কৈশোর থেকেই। সে কারণে শখ করে জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন।
স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। বড় মেয়ে শান্তির বয়স তখন ১০। দ্বিতীয় ছেলে দিলীপ ৬, আর বাদল ৪ বছর। ছোট মেয়ে করুণার জন্ম ১৯৫৬ সালের মে মাসে।
হিলি গোমেজ তখন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানির একটি জাহাজে চাকরি করতেন। আমটাটা, আমটালি, আমব্রেলা ও আমবার্ড নামে চারটি জাহাজ ছিল এই কোম্পানির। হিলি গোমেজ জাহাজে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন করুণার জন্মের খবর। খবর শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাবা। কোম্পানির জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এলে ক্যাপ্টেনকে না বলেই সোজা হাসনাবাদের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ১৬ জুন রাতে স্টিমারযোগে মইনট ঘাট (বর্তমানে বিলুপ্ত) হয়ে বাড়িতে আসেন হিলি গোমেজ। বাড়িতে এসে মেয়েকে একনজর দেখে সে রাতেই আবার চলে যান। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাঁদের জাহাজ যায় করাচি বন্দরে, সেখান থেকে জাপানে। জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে জাহাজটি ছাড়ার ৮ দিন পর সেটি নিখোঁজ হয়।
থ্যালমা সেই ঘটনা জানতে পারেন দেড় মাস পর। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর বাসায় চিঠি দিয়ে জানায়, বন্দর থেকে ছাড়ার পর জাহাজটি নিখোঁজ হয়। ক্রুসহ জাহাজে লোক ছিলেন ২৮৪ জন। দুর্ঘটনায় পড়ার আগে জাহাজ থেকে ‘এসওএস’ বার্তা পাওয়ার পর কাছের বন্দর থেকে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
চিঠিতে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিল, বিশাল আয়তনের এই জাহাজ ডুবতে কমপক্ষে ১২ দিন লাগার কথা। কিন্তু তারা জাহাজটির কাউকেই খুঁজে পায়নি। এই জাহাজে কাজ করতেন তাঁদের গ্রামের আরেক যুবক সনাতন। শেষ মুহূর্তে ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাঁকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এসে জানান, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল দেখে অসম্মতি জানান। তিনি বলেন, এ জাহাজের মালামাল না কমালে গভীর সাগরে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথা না শুনে নতুন ক্যাপ্টেন নিয়োগ করেন। জাহাজের প্রথম ক্যাপ্টেন সে সময় হিলিকে এ জাহাজে যেতে নিষেধ করেন, কিন্তু হিলি তাঁর কথা শোনেননি।
থ্যালমা বললেন, এ ঘটনা ১৯৫৬ সালের। এরপর দীর্ঘ সময় জাহাজ ও নাবিকদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। সর্বশেষ করাচি বন্দর থেকে হিলি তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন। জাহাজে চাকরি করার সময় কোম্পানি প্রতি মাসে ৭০ টাকা করে তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় পাঠাত। হিলি নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস পর তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
থ্যালমা বলেন, হিলি নিখোঁজ হওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে পানিতে পড়েন তিনি। অভাব-অনটন তখন নিত্যসঙ্গী। খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তান শান্তি ও দিলীপকে অনাথ আশ্রমে পাঠান। একজন মিশনারি ফাদার তাঁদের দেখাশোনা করেন। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, কিন্তু কোম্পানি তাঁকে জানিয়ে দেয়, যুদ্ধে জাহাজ বিধ্বস্ত না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান নেই। এভাবে দিন চলে যায়।
থ্যালমার অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে হতে চার সন্তান বড় হয়। বড় ছেলে দিলীপ আমেরিকায় ভালো চাকরি করেন। বাদল চাকরি করেন ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে। বড় মেয়ে শান্তি স্বামীর সঙ্গে মুম্বাইবাসী। সেদিনের এক মাসের কন্যা করুণাও মাঝবয়সী নারী। থ্যালমার বয়সও কম হয়নি, তিনি তখন ৭২-এ। চোখে ভালো দেখতে না পেলেও ছবিতে একপলক দেখেই স্বামীকে চিনতে পারেন।
থ্যালমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। সেদিন করুণা আমাকে বলেছিলেন, বাবাকে নিজের চোখে না দেখলেও তাঁর সব গল্প মুখস্থ। শুনেছেন, বাবা তাঁর বড় মেয়ে শান্তির জন্য বিভিন্ন বন্দর থেকে ডাকে কেক পাঠাতেন। সেই কেকের মধ্যে লুকানো থাকত কানের দুল বা নাকফুলের মতো উপহার। কেকটা মুখে দিলেই বেরিয়ে আসত উপহার। সেই উপহার পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলতেন শান্তিদি। করুণা বারবার বললেন, আমি যেন ভালো করে একটা রিপোর্ট করি, যাতে বাবা ফিরে আসেন।
হিলি গোমেজের সেই রিপোর্ট জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছিল ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি, বুধবার। এরপর অনেক দিন আর থ্যালমা বা করুণার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ভিক্টরও অন্য চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। বছর তিনেক পরে করুণাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ধানমন্ডির প্রোব ম্যাগাজিনে যাচ্ছিলাম। কী মনে হলো, করুণাদের ফ্ল্যাটে কলবেল বাজালাম। দরজা খুললেন অন্য এক নারী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, করুণারা নেই, তাঁরা এ বাসার নতুন ভাড়াটে। করুণার মায়ের কথা শুনে বললেন, পাশের ভাড়াটেরা তাঁকে বলেছেন, নিখোঁজ স্বামীর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় করুণার মা সারাক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতেন, রাতেও। সহজে বিছানায় যেতেন না। একদিন ভোরবেলা তাঁকে বারান্দায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই নারীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসে এসে পুরোনো রিপোর্টটা আবার বের করলাম। রিপোর্টে আছে, হিলির জাহাজটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল ১৯৫৬ সালে, থ্যালমা আমাকে সেটাই বলেছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানি নামে ব্রিটিশ একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেই কোম্পানির একটি জাহাজের নামও ছিল আমটাটা (Umtata)। টর্পেডোর আঘাতে সেটা ডুবে যায় ১৯৪২ সালে, ১৯৫৬ সালে নয়। ৪২ থেকে ৫৬-তে তো অনেক ফারাক। মনে একটু খটকা লাগল।
লেখাটা শেষ করার আগে মার্কিন গল্পকার মারজরি কিনান রাউলিংসের ‘আ মাদার ইন ম্যানভিল’ গল্পটা মনে পড়ে গেল। অনাথ আশ্রমের বেড়ে ওঠা বালক জেরি সারাক্ষণ তার মায়ের কথা বলত। পাহাড়ের ওপারে মা থাকে, জন্মদিনে মা তাকে উপহার পাঠাত। কিন্তু এতিমখানায় বড় হওয়া জেরির আসলে কেউই ছিল না। মায়ের সঙ্গে তার বসবাস ছিল শুধু কল্পনাতে।
আমার মনেও ধন্দ। থ্যালমার চিঠির গল্প জেরির মতো নয় তো? সত্যিই কি এত বছর পরে হিলি সেই চিঠি লিখেছিলেন? নাকি অন্য কিছু?
আসলে মানুষের জীবনের গল্প বড় অদ্ভুত, সে গল্প হয়তো কখনো মেলে, কখনো মেলে না।
আরও পড়ুন:

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে বিচ্ছিরি ফরমায়েশি কাজে আটকে গেলাম সেদিন। গেলাম পরের দিন। বাড়ির নিচতলার এক ফ্ল্যাটে গিয়ে কলবেল বাজাতেই মাঝবয়সী এক নারী এসে দরজা খুলে দিলেন। ভিক্টরের সঙ্গে আমাকে দেখে ড্রয়িংরুমে বসতে বললেন। মনে হলো, আমার আসার কথা বাড়ির লোকেরা আগে থেকেই জানতেন।
একটু পর ড্রয়িংরুমে এলেন এক বয়স্ক নারী। ভিক্টর পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘উনি থ্যালমা গোমেজ’। তাঁর বাম হাতে ধরা নীল রঙের একটি চিঠির খাম। খামটি আমার হাতে দিতে দিতে বললেন, ‘এই চিঠি আমার জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছে। সাত দিন ধরে খেতে ও ঘুমাতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়েরা বিদেশে, তারাও অস্থির।’
চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি বিদেশ থেকে আসা। খামের ওপরে প্রেরকের ঠিকানা বলতে লেখা, হিলি গোমেজ, লন্ডন। প্রাপকের নামের জায়গায় ‘থ্যালমা গোমেজ, হাসনাবাদ, নবাবগঞ্জ, খালপাড়, ঢাকা’ লেখা। খামের ওপরে ডান দিকে বাহরাইনের ডাকটিকিট লাগানো। ভেতরে হ্যাট পরা এক বৃদ্ধের পোস্টকার্ড সাইজের রঙিন ছবি, ছবির উল্টো দিকে ‘হিলি গোমেজ’ নাম সই করা। তার পাশে থ্যালমা গোমেজের নাম। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা, ‘আমি তোমাকে ভুলিনি, আমি ফিরে এসেছি, আজ জীবিত থাকলেও নেই।’ আরেক পাশে ছোট করে চারটি নাম লেখা—শান্তি, দিলীপ, বাদল ও করুণা।
ছবিটা হাতে নিয়ে বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলাম, উনি কে। আমার মুখের কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধা বললেন, আমার স্বামী। ৪৩ বছর আগে এক ব্রিটিশ জাহাজসমেত নিখোঁজ হন জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে। এত বছরেও তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক দিন আগে এই চিঠি এসেছে। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, এই ছবি দেখে চিনতে পারলেন? জবাব তৈরিই ছিল। বললেন, ঠোঁট ও কানের লতি দেখে চিনেছি। পাশে অন্য চারটি নাম কার? ‘এগুলো আমার ছেলেমেয়ের নাম।’ আমার সামনে সোফায় বসা ভিক্টর এসব শুনতে শুনতে বললেন, চিঠিটা আসার পর পুরো পরিবার আনন্দ-বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না।
থ্যালমা বললেন, চিঠিটা ২২ জানুয়ারি (২০০০ সাল) নবাবগঞ্জের ঠিকানায় এসেছে। এরপর তিনি চিঠিটি নিয়ে গ্রিন রোডে মেয়ের বাসায় আসেন। এটা তাঁর ছোট মেয়ে করুণার বাসা। থ্যালমা বললেন, চিঠি পাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এত দিন নিখোঁজ লোকটি বেঁচে আছেন, হয়তো তাঁর কোনো বন্ধু বাহরাইন থেকে চিঠিটা ডাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এটুকু বলতেই তাঁর গলা ধরে আসে।
আমি থ্যালমার মুখের দিকে তাকাই। তাঁর চোখে দুকূল ভাসানো ভালোবাসা। বয়সের ভারে চামড়া ভেতরে আশ্রয় নেওয়া চোখের নিচে বিন্দু বিন্দু পানি। এই অবস্থায় কাউকে প্রশ্ন করা সহজ নয়। তবু কীভাবে শুরু করব, ভাবতে ভাবতে বললাম, গোমেজ সাহেব কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন? প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই মনে হলো, মাটিতে ঠিক কোপটি পড়েছে। রোদ পেয়ে অমনি দলে দলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো সব স্মৃতি।
থ্যালমা বলতে শুরু করলেন। নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ খালপাড়ের যে গ্রামে তাঁরা থাকতেন, ৪৪ বছর আগে সে গ্রাম থেকে বেরিয়েছিলেন দুরন্ত যুবক হিলি গোমেজ। পেশায় জাহাজের নাবিক। ঘুরে বেড়াতেন বন্দর থেকে বন্দরে। সাগরে বেড়ানোর নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছিল কৈশোর থেকেই। সে কারণে শখ করে জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন।
স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার। বড় মেয়ে শান্তির বয়স তখন ১০। দ্বিতীয় ছেলে দিলীপ ৬, আর বাদল ৪ বছর। ছোট মেয়ে করুণার জন্ম ১৯৫৬ সালের মে মাসে।
হিলি গোমেজ তখন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানির একটি জাহাজে চাকরি করতেন। আমটাটা, আমটালি, আমব্রেলা ও আমবার্ড নামে চারটি জাহাজ ছিল এই কোম্পানির। হিলি গোমেজ জাহাজে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন করুণার জন্মের খবর। খবর শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাবা। কোম্পানির জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এলে ক্যাপ্টেনকে না বলেই সোজা হাসনাবাদের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ১৬ জুন রাতে স্টিমারযোগে মইনট ঘাট (বর্তমানে বিলুপ্ত) হয়ে বাড়িতে আসেন হিলি গোমেজ। বাড়িতে এসে মেয়েকে একনজর দেখে সে রাতেই আবার চলে যান। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাঁদের জাহাজ যায় করাচি বন্দরে, সেখান থেকে জাপানে। জাপানের কোনো এক বন্দর থেকে জাহাজটি ছাড়ার ৮ দিন পর সেটি নিখোঁজ হয়।
থ্যালমা সেই ঘটনা জানতে পারেন দেড় মাস পর। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর বাসায় চিঠি দিয়ে জানায়, বন্দর থেকে ছাড়ার পর জাহাজটি নিখোঁজ হয়। ক্রুসহ জাহাজে লোক ছিলেন ২৮৪ জন। দুর্ঘটনায় পড়ার আগে জাহাজ থেকে ‘এসওএস’ বার্তা পাওয়ার পর কাছের বন্দর থেকে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
চিঠিতে কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিল, বিশাল আয়তনের এই জাহাজ ডুবতে কমপক্ষে ১২ দিন লাগার কথা। কিন্তু তারা জাহাজটির কাউকেই খুঁজে পায়নি। এই জাহাজে কাজ করতেন তাঁদের গ্রামের আরেক যুবক সনাতন। শেষ মুহূর্তে ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তাঁকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ফিরে এসে জানান, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে ক্যাপ্টেন জাহাজ পরিদর্শনে এসে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল দেখে অসম্মতি জানান। তিনি বলেন, এ জাহাজের মালামাল না কমালে গভীর সাগরে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথা না শুনে নতুন ক্যাপ্টেন নিয়োগ করেন। জাহাজের প্রথম ক্যাপ্টেন সে সময় হিলিকে এ জাহাজে যেতে নিষেধ করেন, কিন্তু হিলি তাঁর কথা শোনেননি।
থ্যালমা বললেন, এ ঘটনা ১৯৫৬ সালের। এরপর দীর্ঘ সময় জাহাজ ও নাবিকদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। সর্বশেষ করাচি বন্দর থেকে হিলি তাঁকে চিঠি লিখেছিলেন। জাহাজে চাকরি করার সময় কোম্পানি প্রতি মাসে ৭০ টাকা করে তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় পাঠাত। হিলি নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস পর তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
থ্যালমা বলেন, হিলি নিখোঁজ হওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে পানিতে পড়েন তিনি। অভাব-অনটন তখন নিত্যসঙ্গী। খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তান শান্তি ও দিলীপকে অনাথ আশ্রমে পাঠান। একজন মিশনারি ফাদার তাঁদের দেখাশোনা করেন। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর ক্ষতিপূরণ চেয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, কিন্তু কোম্পানি তাঁকে জানিয়ে দেয়, যুদ্ধে জাহাজ বিধ্বস্ত না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান নেই। এভাবে দিন চলে যায়।
থ্যালমার অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হতে হতে চার সন্তান বড় হয়। বড় ছেলে দিলীপ আমেরিকায় ভালো চাকরি করেন। বাদল চাকরি করেন ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে। বড় মেয়ে শান্তি স্বামীর সঙ্গে মুম্বাইবাসী। সেদিনের এক মাসের কন্যা করুণাও মাঝবয়সী নারী। থ্যালমার বয়সও কম হয়নি, তিনি তখন ৭২-এ। চোখে ভালো দেখতে না পেলেও ছবিতে একপলক দেখেই স্বামীকে চিনতে পারেন।
থ্যালমার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। সেদিন করুণা আমাকে বলেছিলেন, বাবাকে নিজের চোখে না দেখলেও তাঁর সব গল্প মুখস্থ। শুনেছেন, বাবা তাঁর বড় মেয়ে শান্তির জন্য বিভিন্ন বন্দর থেকে ডাকে কেক পাঠাতেন। সেই কেকের মধ্যে লুকানো থাকত কানের দুল বা নাকফুলের মতো উপহার। কেকটা মুখে দিলেই বেরিয়ে আসত উপহার। সেই উপহার পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলতেন শান্তিদি। করুণা বারবার বললেন, আমি যেন ভালো করে একটা রিপোর্ট করি, যাতে বাবা ফিরে আসেন।
হিলি গোমেজের সেই রিপোর্ট জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছিল ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি, বুধবার। এরপর অনেক দিন আর থ্যালমা বা করুণার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ভিক্টরও অন্য চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যান। বছর তিনেক পরে করুণাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ধানমন্ডির প্রোব ম্যাগাজিনে যাচ্ছিলাম। কী মনে হলো, করুণাদের ফ্ল্যাটে কলবেল বাজালাম। দরজা খুললেন অন্য এক নারী। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, করুণারা নেই, তাঁরা এ বাসার নতুন ভাড়াটে। করুণার মায়ের কথা শুনে বললেন, পাশের ভাড়াটেরা তাঁকে বলেছেন, নিখোঁজ স্বামীর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় করুণার মা সারাক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতেন, রাতেও। সহজে বিছানায় যেতেন না। একদিন ভোরবেলা তাঁকে বারান্দায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই নারীর কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অফিসে এসে পুরোনো রিপোর্টটা আবার বের করলাম। রিপোর্টে আছে, হিলির জাহাজটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল ১৯৫৬ সালে, থ্যালমা আমাকে সেটাই বলেছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, বুলার্ড কিং অ্যান্ড কোম্পানি নামে ব্রিটিশ একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেই কোম্পানির একটি জাহাজের নামও ছিল আমটাটা (Umtata)। টর্পেডোর আঘাতে সেটা ডুবে যায় ১৯৪২ সালে, ১৯৫৬ সালে নয়। ৪২ থেকে ৫৬-তে তো অনেক ফারাক। মনে একটু খটকা লাগল।
লেখাটা শেষ করার আগে মার্কিন গল্পকার মারজরি কিনান রাউলিংসের ‘আ মাদার ইন ম্যানভিল’ গল্পটা মনে পড়ে গেল। অনাথ আশ্রমের বেড়ে ওঠা বালক জেরি সারাক্ষণ তার মায়ের কথা বলত। পাহাড়ের ওপারে মা থাকে, জন্মদিনে মা তাকে উপহার পাঠাত। কিন্তু এতিমখানায় বড় হওয়া জেরির আসলে কেউই ছিল না। মায়ের সঙ্গে তার বসবাস ছিল শুধু কল্পনাতে।
আমার মনেও ধন্দ। থ্যালমার চিঠির গল্প জেরির মতো নয় তো? সত্যিই কি এত বছর পরে হিলি সেই চিঠি লিখেছিলেন? নাকি অন্য কিছু?
আসলে মানুষের জীবনের গল্প বড় অদ্ভুত, সে গল্প হয়তো কখনো মেলে, কখনো মেলে না।
আরও পড়ুন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে
১৪ মে ২০২২
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে
১৪ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে
১৪ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
৯ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ভিক্টর গোমেজের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। তিনি কাজ করতেন ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ বা সিসিডিবি নামের একটি এনজিওতে। ভিক্টর একদিন অফিসে এসে আমাকে গ্রিন রোডের একটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেন। যাব যাব করে
১৪ মে ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৮ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৮ দিন আগে