Ajker Patrika

বিজেএস পরীক্ষায় ভাইভার প্রস্তুতি

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বা বিজেএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় এমসিকিউ ও রিটেনের জন্য বিভিন্ন গাইডলাইন ও সিলেবাস পাওয়া যায়। কিন্তু ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার কোনো সিলেবাস নেই। কোনো সিলেবাস না থাকলেও কিছু বিষয় মেনে চললে ভাইভা পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। কীভাবে একজন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন, সে পরামর্শ দিয়েছেন ১৫তম বিজেএসে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত তারেক আযম। তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
Thumbnail image

ভীতি দূর করতে হবে

ভাইভায় ভালো করতে হলে ভীতি দূর করা আবশ্যক। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভাইভাভীতির কারণে অনেক সময় নিজের সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে নম্বর কমে যায়। ভাইভাতে খুব কম নম্বর পেলে জজ হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে পারে। ভাইভাভীতি দূর করার জন্য একাধিক মক ভাইভা দেওয়া সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। এতে ভাইভার পরিবেশ নিয়ে সম্যক ধারণা তৈরি হবে। এ ছাড়া বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে অনুশীলন করা যেতে পারে। বন্ধুরা প্রশ্ন করবেন এবং আপনি নিজের মতো করে উত্তর দেবেন।

যেসব বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন

মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ অন্যান্য আলোচিত বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কিছু আলোচিত বিষয় হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, ইরান-ইসরায়েলের মাঝে উত্তেজনা, বাংলাদেশের বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বা এসডিজি অর্জনে দেশের অগ্রগতি, নারী ক্ষমতায়নে দেশের অবস্থান, মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইত্যাদি। এ ছাড়া ভাইভার পূর্বের কিছুদিন এবং ভাইভার দিনের বিভিন্ন পত্রিকার আলোচিত খবরগুলো সম্পর্কে অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নেবেন।

  • পুরুষদের ভাইভা পোশাক: ভাইভায় পোশাক নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই ভালো। পুরুষেরা সাদা, আকাশি, ক্রিম কালারের ফুলহাতা ফরমাল শার্ট, কালো বা নেভি ব্লু ফরমাল প্যান্ট, কালো বেল্ট, কালো জুতা পরতে পারেন। টাই পরতে পারেন। তবে তা খুব কালারফুল না হলেই ভালো। এক কালার কিংবা প্রিন্ট উভয় ধরনের টাই-ই পরা যায়। সাধারণত শার্টের বিপরীত রঙের টাই নির্ধারণ করা ভালো। লাল, হলুদ এ জাতীয় রং অবশ্যই বাদ দেবেন। কালো, নেভি ব্লু রঙের স্যুট পরতে পারেন। তবে গরমে অস্বস্তি হলে স্যুট না পরলেও ক্ষতি নেই।
  • নারীদের ভাইভা পোশাক: নারীরা যে পোশাকে কমফোর্টেবল, সেটিই পরবেন। শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন। মার্জিত ও হালকা রঙের পোশাক পরবেন। শাড়ির সঙ্গে ফুল বা হাফ স্লিভের ব্লাউজ পরতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মানানসই নিকাব ও হিজাব ব্যবহার করতে পারেন। চোখ ধাঁধানো পোশাক, ভারী অলংকার, পেনসিল হিল অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন।

নিজের সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

নিজের নামের অর্থ, পিতা-মাতার পরিচিতি, এলাকার নামকরণের ইতিহাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হলের ইতিহাস, জেলায় বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তিত্ব, এলাকায় আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা, জেলার পর্যটনস্থলসমূহ, শখ, প্রথম পছন্দ দেওয়ার কারণ, প্রথম পছন্দ পাওয়ার জন্য কী কী গুণ রয়েছে, নিজের শক্তি ও দুর্বলতা; এসব সম্পর্কে উত্তর প্রস্তুত করে নেবেন এবং মাঝে মাঝেই চর্চা করবেন।

বিশেষ কিছু পরামর্শ

  • মৌখিক পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাই অবশ্যই পত্রিকার সম্পাদকীয় ও বিশ্লেষণমূলক কলামগুলো নিয়মিত পড়বেন। ভাইভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তৃতা দিতে বলা হয়। তাই নিজের মতো করে একটি মডেল বক্তৃতার ফরম্যাট তৈরি করে নেবেন। ইংরেজিতে কথা বলা চর্চা করবেন। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও বন্ধুদের সহায়তা নিতে পারেন।
  • উত্তর দিতে না পারলেও নার্ভাসনেস দেখাবেন না, বরং নম্রভাবে ক্ষমা চেয়ে বলবেন, এটি আমার জানা উচিত ছিল। বোর্ডের সম্মানিত স্যারদের সঙ্গে কখনই তর্কে জড়াবেন না। ভাইভায় অন্য কোনো দুশ্চিন্তা যেন না আসে, তাই কাগজপত্র ও পোশাক আগেই নির্ধারণ করে রাখবেন। পোশাক পরে কয়েকবার ট্রায়াল দিয়ে নেবেন। মাস্টার্স করলে মাস্টার্সের থিসিস সম্পর্কে জেনে যাবেন।
  • চাকরিরত প্রার্থীদের নিজ পদ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এ-টু জেড জেনে যেতে হবে। কোনো প্রশ্নের বাঁধাধরা উত্তর গাইড থেকে মুখস্থ না বলে নিজের মতো সাজিয়ে দিন। ভাইভার এক দিন আগেই সব কাগজ মূল কপি এবং সত্যায়িত কপি নিয়েছেন কি না, কয়েকবার যাচাই করে নেবেন। ভাইভা সকালে থাকুক বা বিকেলে, সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন। এটা বলার কারণ, কোনো কাগজ সঙ্গে না আনলে যাতে নিয়ে আসতে পারেন।
  • ভাইভার জন্য ডাক পড়লে রুমে প্রবেশের সময় ঠিকমতো সালাম দেবেন (স্যার আসতে পারি/May I come in Sir—এটা বলার আগেই সচরাচর ওনারা ডেকে নেন)। ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন এবং যতক্ষণ বসতে বলবে না, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। বসতে বললে ‘ধন্যবাদ স্যার’ বলে ধীরেসুস্থে বসবেন। কোট যদি টাইট থাকে, তাহলে বসার পর বোতাম খুলে দেবেন, যাতে আরাম করে বসতে পারেন।
  • ভাইভা বোর্ডে যিনি প্রশ্ন করবেন সব সময় ওনার দিকে তাকিয়ে জবাব দেবেন। কোনোভাবেই যাতে চেহারায় ঔদ্ধত্য ভাব প্রকাশ না পায়। আর নিজেকে জাহির করতে যাবেন না, আগ বাড়িয়ে কিছু বলবেন না। মনে রাখবেন, ওখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা অনেক জ্ঞানের অধিকারী। কোনো প্রশ্ন না বুঝলে ‘স্যরি স্যার প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি’ বলবেন, আন্দাজে জবাব দিতে যাবেন না।
  • কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি জানা না থাকে, তাহলে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করবেন; যদি প্রশ্নটা এমন হয় যে সেটার উত্তর আপনার জানা উচিত ছিল (যেমন আইনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়), তাহলে বলবেন ‘স্যরি স্যার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না’। আর যদি আনকমন কিছু হয়, তাহলে সিম্পলি ‘স্যরি স্যার’ বলবেন। ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী হওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। যদি স্যার এমনও বলেন যে ‘আপনি দাঁড়িয়ে ভাইভা দেবেন আজকে’, তাহলে সেটাই মেনে নেবেন। বিনয়ের সঙ্গে বলবেন ‘জি স্যার, আপনি যেটা বলেন’। ওনারা আপনাকে টেস্ট করার জন্য অনেক কিছুই বলতে পারেন।
  • বেশির ভাগ সময়েই স্যারেরা কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে থাকেন। যেমন আপনি মানুষ হিসেবে কেমন? আপনার দোষ-গুণ কী? সৎ থাকতে পারবেন কি না? কেন জজ হতে চান ইত্যাদি। এসব বিষয়ে আগে থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে যাবেন। হুট করে বানিয়ে বলতে গেলে ধরা পড়ে যাবেন। বই পড়েন কি না? গান-কবিতা জানেন কি না? এসব প্রশ্নের কখনো মিথ্যা জবাব দেবেন না। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে বলবেন ‘জি স্যার মাঝেমধ্যে পড়া হয়’। এক্ষেত্রে আপনার পড়া যেকোনো বইয়ের সারাংশ মনে রাখা চাই। আর বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে বলবেন, ‘স্যরি স্যার আসলে তেমন একটা পড়া হয় না’। যেকোনো একটা কবিতা/গান মুখস্থ করে যাবেন, যাতে জিজ্ঞেস করলে কয়েক লাইন বলতে পারেন। এটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট।
  • ভাইভা শেষ করার জন্য বোর্ড আপনাকে ‘আপনি আসুন/আসতে পারেন বললে’ ধন্যবাদ জানিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে ধীরেসুস্থে চলে আসবেন। হেলেদুলে হাঁটবেন না, দরজা সুন্দরভাবে খুলে বেরিয়ে আসবেন।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত