Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানিতে ভারতের রেকর্ড, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার তেল আমদানি করায় ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার তেল আমদানি করায় ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্যগত টানাপোড়েন কমাতে কৌশলী কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কেট ইন্টেলিজেন্স সংস্থা কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি দৈনিক ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের পর এটি সর্বোচ্চ।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভারত একদিকে রাশিয়ার বাইরে নতুন তেল সরবরাহের উৎস বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

কেপলারের লিড রিসার্চ অ্যানালিস্ট (রিফাইনিং, সাপ্লাই ও মডেলিং) সুমিত রিতোলিয়ার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অর্থনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের তেল ভারতের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড ব্রেন্ট ও মার্কিন অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দামের ব্যবধান বাড়া, চীনের তেল ক্রয় কমা এবং বাজারে আর্বিট্রেজ বা দামের পার্থক্যজনিত সুযোগ তৈরি হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট মিডল্যান্ড ধরনের তেল ভারতীয় রিফাইনারিগুলোর জন্য লাভজনক বিকল্পে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাস শেষে দৈনিক প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ব্যারেল আমদানি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নভেম্বরে তা কমে দৈনিক ৪ লাখ থেকে ৪.৫ লাখ ব্যারেলের মধ্যে থাকতে পারে। এ বছর গড়ে দৈনিক আমদানি ছিল প্রায় ৩ লাখ ব্যারেল, অর্থাৎ নতুন প্রবণতা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।

সরকারি ও বাণিজ্যিক সূত্রে বলা হয়েছে, ভারতীয় রিফাইনারিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তেলের প্রকার—যেমন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট মিডল্যান্ড ও মার্স—বেশি পরিমাণে কিনছে, যাতে তেল সরবরাহের উৎস বৈচিত্র্য আনা যায় এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক বার্তা দেওয়া যায়।

এই পরিবর্তন এমন সময় ঘটছে, যখন রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা ভারতীয় রিফাইনারিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পিটিআই জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানির এই বৃদ্ধি মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এভাবে ভারত তার জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রেখে, রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করতে এবং রাশিয়া-সম্পর্কিত মার্কিন উদ্বেগ মোকাবিলার চেষ্টা করছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়লেও রাশিয়াই ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী রয়ে গেছে—মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া থেকে আসে। ইরাক দ্বিতীয় এবং সৌদি আরব তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

সুমিত রিতোলিয়া জানান, এই প্রবণতা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই নয়। তাঁর মতে, ‘বর্তমান বৃদ্ধির কারণ মূলত আর্বিট্রেজ সুযোগ, এটি কাঠামোগত পরিবর্তন নয়। দীর্ঘতর সমুদ্রপথ, বেশি ফ্রেইট খরচ এবং ডব্লিউটিআই তেলের হালকা, ন্যাফথা-সমৃদ্ধ গঠন ভারতের ক্রয়ের সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।’

তবে রিতোলিয়া আরও বলেন, ‘এই উত্থান যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জ্বালানি সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গভীরতার নির্দেশক এবং ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বৈচিত্র্যকরণ কৌশলকে এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে সরবরাহ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক যুক্তি ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য একসঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে।’

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার দুটি বৃহৎ তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা ভারত ও চীনের জন্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এতে উভয় দেশকেই রাশিয়ান তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে বা বন্ধ করতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন বা বাতিল করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। ফলে কোম্পানিগুলোর হাতে প্রায় এক মাস সময় আছে এই রাশিয়ান তেল জায়ান্টদের সঙ্গে চুক্তি নিষ্পত্তির জন্য।

ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় রিফাইনারি বর্তমানে ওএফএসি বা অফিস অব ফরেইন এসেটস কন্ট্রোল নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করছে, যাতে তারা অর্থ প্রদানের পদ্ধতি ও কমপ্লায়েন্স বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একই সঙ্গে রাশিয়ান তেল ছাড়াই কার্যক্রম চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। উল্লেখ্য, রসনেফট ও লুকঅয়েল মিলে বর্তমানে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে থাকে।

চলতি বছরে রাশিয়া ভারতের মোট অপরিশোধিত তেলের ৩৪ শতাংশ সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে রসনেফট ও লুকঅয়েলের অংশ প্রায় ৬০ শতাংশ।

অপরদিকে, ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে। তবে ভারত সরকার এমন কোনো চুক্তি স্বীকার করেনি; বরং জানিয়েছে, তারা জ্বালানির উৎস বৈচিত্র্য আনার পথে এগোচ্ছে এবং নতুন সরবরাহ চ্যানেল সম্প্রসারণে আগ্রহী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...