Ajker Patrika

এক বছরে ঘাটতি ছয় গুণ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
এক বছরে ঘাটতি ছয় গুণ
প্রতীকী ছবি

এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ গুণে। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে যেখানে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৫৮৫ কোটি, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন।

ব্যাংকঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য ক্ষতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলোকে যে অর্থ সংরক্ষণ করতে হয় (প্রভিশন), তা পূরণে ব্যর্থ হলে যে ঘাটতি দেখা দেয়, সেটিই প্রভিশন ঘাটতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগেও এ ঘাটতি ছিল ৫৭ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থাও উদ্বেগজনক—তাদের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মাত্র তিন মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

এদিকে বিশেষায়িত ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর হিসাবে সামান্য প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকলেও সামগ্রিক ঘাটতি পূরণে তা কার্যকর নয়।

নিয়ম অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে শতভাগ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। অথচ গত কয়েক বছরে বিশেষ সুবিধায় একাধিক বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী—বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমানসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে, যার বড় অংশই অনাদায়ি থেকে গিয়েছিল। আগের প্রশাসনের সময়ে এসব ঋণ ‘খেলাপি’ দেখানো হয়নি, ফলে প্রভিশন সংরক্ষণের দায়ও ছিল না। কিন্তু গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই গোপন খেলাপিগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে, ফলে প্রভিশন ঘাটতির চাপ হঠাৎ বেড়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তার জন্যই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে যে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও তুলতে পারছে না। এটি আমানতকারীর জন্য বড় ঝুঁকি। সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ০.২৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং অনিয়মিত ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। অথচ মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন কাভারেজ রেশিও দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (৭০ শতাংশের বেশি) থেকে অনেক নিচে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা—যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি, অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি বাড়ার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তীব্র হবে, ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে আমানতকারীদের আস্থায় ভাঙন ধরতে পারে। অনেকের মতে, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্গঠন, খেলাপি আদায়ে জোর এবং ঋণ অনুমোদনে কড়াকড়ি জরুরি হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত