Ajker Patrika

রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর রাখাইনে বন্দর-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ছে চীন, ৮৬০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ৩০
Thumbnail image

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাজ্য রাখাইনে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা নিয়ে নেপিদোয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে চীন। এই চুক্তির আওতায় রাখাইনের কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও বন্দরে কাছাকাছি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসএইজেড) গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নেবে। এই প্রকল্প দুটির অনানুষ্ঠানিক কাজ অনেক আগে শুরু হয়ে গেলেও গত মঙ্গলবার এসে এর আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। 
 
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে চীন দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জান্তা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পরিবহনমন্ত্রী মায়া তুন ও এবং মিয়ানমারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ার অং নাইং ও। এ ছাড়া, প্রকল্প দুটিতে কাজ করা চীনা প্রতিষ্ঠান সিআইটিআইসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
 
এই প্রকল্প দুটিতে সিআইটিআইসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে মিয়ানমারের কায়াকপায়ু এসএইজেড ডিপ সি পোর্ট কোম্পানি লিমিটেড। তবে চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা বিনিয়োগ এগিয়ে নিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ব্যাপক ছাড় দিয়েছে। 

ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক এই চুক্তিতে প্রকল্প দুটিতে চীন ও মিয়ানমারের হিস্যার পরিমাণে কোনো কমবেশি করা হয়নি। চুক্তি অনুসারে এই বিনিয়োগে ৭০ শতাংশ মালিকানা থাকবে সিআইটিআইসির এবং বাকি ৩০ শতাংশ মিয়ানমারের। ২০১৮ সালেই এই অংশীদারত্বে সম্মত হয়েছিল। 

এই প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়াও বন্দর থেকে চীনের কুনমিং পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অর্থনৈতিক করিডরও তৈরি করা হবে। চুক্তি অনুসারে, বন্দর নির্মাণে চীন বিনিয়োগ করবে ৭৩০ কোটি ডলার ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা হবে ১৩০ কোটি ডলার। তবে মূলত দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এর মধ্যে একটি হবে মাদায় দ্বীপে যার আয়তন হবে প্রায় ৩৭১ একর এবং অপরটি হবে রামরি দ্বীপে যার আয়তন হবে ২৩৭ একর। 

মূলত ২০১৫ সালে কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও সেটিকে ঘিরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে রাখাইনের অধিবাসীদের ওপর নির্যাত তীব্র হলে সে সময় অশান্ত হয়ে উঠে অঞ্চলটি। সে বছরই প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এরপর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের অপসারণ, কোভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প দুটির কাজ অনেকটা ধীরগতির হয়ে পড়ে। পরে ২০২০ সালের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মিয়ানমার সফর করেন। সে সময় উভয় দেশই এই প্রকল্প দুটি নিয়ে জোরেশোরে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। 

এই চুক্তি এমন একসময়ে স্বাক্ষরিত হলো যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহীদের হাতে বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এমনকি রাখাইন অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) পুরো অঞ্চলটির অধিকাংশই দখলে নেওয়ার দাবি করেছে। পাশাপাশি চীন সীমান্তে অবস্থিত শান রাজ্যেরও বড় একটি অংশ দখলে নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

শান রাজ্যে লড়াইয়ের কারণে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য ও মিয়ানমারে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও চীন সরকার বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে দুবার মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। 

কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চীনের বিআরআই প্রকল্পেরই অংশ। এই প্রকল্প চীনকে মিয়ানমার হয়ে সরাসরি ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার দেবে। মূলত মালাক্কা প্রণালি হয়ে বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে জ্বালানি তেল চীনের পূর্বাংশের বন্দরগুলোতে না নিয়ে মিয়ানমার হয়ে সরাসরি চীনের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছার সুযোগ দেবে এই প্রকল্প। 
 
সিআইটিআইসি ২০১৮ সালে কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের টেন্ডার লাভ করে এবং এরপর ২০১৮ সালে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি সরকারের অধীনে কটি কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে ২০২০ সালে প্রকল্পের অংশীদারত্ব ও অর্থ ছাড় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত