Ajker Patrika

ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১৯: ৪৮
ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ

বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনার মধ্যেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে এই সুযোগ রাখা হচ্ছে। আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা বহাল রাখেন।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না।

এর মানে দাঁড়ায়, যদি অপ্রদর্শিত অর্থ মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক বা সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন ইত্যাদি অপরাধমূলক উৎস থেকে অর্জিত হয় এবং সেটা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে তা এই সুবিধার আওতায় আসবে না।

দ্বিতীয়, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস ‘বৈধ উৎস’ না হলে সেটি সাদা করা যাবে না। অর্থাৎ যেখানে অর্থ উপার্জনের উৎস নিজেই অবৈধ, যেমন—ঘুষ বা চুরি, সেখানে কর দিয়ে বৈধতা মিলবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। কিন্তু এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয় এবং এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অন্তর্বর্তী সরকার এটি বহাল রাখলে সেটি হবে হতাশাজনক ও নিজের জন্য বিব্রতকর।

কোন এলাকায় কত কর

ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা; ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা কর দিতে হবে।

ওপরের উল্লেখিত এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা কর দিতে হবে।

দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা কর দিতে হবে।

এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে এই উদ্যোগ কিছুটা কার্যকর উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ‘তবে এটা নীতিগতভাবে অনুচিত। সব ধরনের কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা উচিত। এটি সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দাবির বিরোধী।’

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত