Ajker Patrika

ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১৯: ৪৮
ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ

বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনার মধ্যেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে এই সুযোগ রাখা হচ্ছে। আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা বহাল রাখেন।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না।

এর মানে দাঁড়ায়, যদি অপ্রদর্শিত অর্থ মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক বা সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন ইত্যাদি অপরাধমূলক উৎস থেকে অর্জিত হয় এবং সেটা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে তা এই সুবিধার আওতায় আসবে না।

দ্বিতীয়, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস ‘বৈধ উৎস’ না হলে সেটি সাদা করা যাবে না। অর্থাৎ যেখানে অর্থ উপার্জনের উৎস নিজেই অবৈধ, যেমন—ঘুষ বা চুরি, সেখানে কর দিয়ে বৈধতা মিলবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। কিন্তু এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয় এবং এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অন্তর্বর্তী সরকার এটি বহাল রাখলে সেটি হবে হতাশাজনক ও নিজের জন্য বিব্রতকর।

কোন এলাকায় কত কর

ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা; ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা কর দিতে হবে।

ওপরের উল্লেখিত এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা কর দিতে হবে।

দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তনবিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা কর দিতে হবে।

এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে এই উদ্যোগ কিছুটা কার্যকর উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ‘তবে এটা নীতিগতভাবে অনুচিত। সব ধরনের কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা উচিত। এটি সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দাবির বিরোধী।’

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘাটতি বাণিজ্যে অর্থ পাচারের গন্ধ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশ থেকে হঠাৎ বেশি পরিমাণে ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই বৈদেশিক বাণিজ্যে চাপ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়লেও তার চেয়ে দ্রুত হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, ফলে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে দেশ আবারও ঘাটতি বাণিজ্যের মুখে পড়ছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবাহ ইতিবাচক থাকলেও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও ডলারের অতিরিক্ত বহির্মুখী প্রবাহ আবার বাণিজ্য ঘাটতিকে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলেছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সামনে নতুন এক সতর্কবার্তা। এই প্রবণতার পেছনে অর্থ পাচারের কোনো গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০৭ কোটি ডলার বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রমজানকে ঘিরে বাড়তি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ ও চিকিৎসা ব্যয়; ফলে দীর্ঘ সময় পর চলতি হিসাবও ঋণাত্মক হয়েছে, ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ডলার।

এই সময়ে দেশে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার, বিপরীতে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কোটি ডলারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আমদানি ও রপ্তানিতে কিছুটা স্থিতি ফিরেছিল। তবে বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণ ব্যয় বাড়ায় আবারও ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে খাদ্য, তেল, চিনি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়লেও ব্যয়ের হার তার চেয়ে বেশি হওয়ায় চলতি হিসাব আবারও ঘাটতিতে পড়েছে।

তবে একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আগের বছর জুলাই-সেপ্টেম্বরে যেখানে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ১৪৮ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছরে তা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮৫ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও ডলারের অস্বাভাবিক বহির্মুখী প্রবাহ উদ্বেগজনক। তাঁর ভাষায়, দেশ থেকে এত বেশি ডলার কোথায় যাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে অর্থ পাচারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমদানির কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করায় অনেকে সুযোগ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসীরা ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগও বেড়ে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র উল্টো; গত বছর যেখানে নিট বিনিয়োগ ছিল ৫০ লাখ ডলার, এবার তা ঋণাত্মক ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডলার-সংকট মোকাবিলায় আমরা কিছু নীতি শিথিল করেছি, যাতে আমদানিতে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত থাকে। তবে এর ফলে ব্যয় বেড়ে গেছে, বিশেষ করে রমজানকেন্দ্রিক আমদানিতে। মূলত এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাফিক সার্জেন্টকে গালিগালাজ: কর কর্মকর্তা ফাতেমার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে লঘুদণ্ড

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সহকারী কর কমিশনার মিজ ফাতেমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
সহকারী কর কমিশনার মিজ ফাতেমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলে না দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন কর অঞ্চল—২৫, ঢাকার সহকারী কর কমিশনার মিজ ফাতেমা বেগম। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পলাশী মোড়-নীলক্ষেত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর ওই ঘটনায় ফাতেমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহা জামাল।

মামলার তদন্ত ও বিভাগীয় মামলায় ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বেতন গ্রেডের এক ধাপ অবনমিত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

আদেশে বলা হয়, কর অঞ্চল-২৫ এর সহকারী কর কমিশনার মিজ ফাতেমা বেগম গত ১২ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪৫৯০৬) প্রাইভেটকারে অবস্থানকালে লালবাগ থানাধীন ২৬ নং ওয়ার্ডস্থ পলাশী মোড় পলাশী-নীলক্ষেতগামী পাকা রাস্তার উপর সিয়েরা ট্যাঙ্গো-৩৫ ডিউটি করার সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহা জামাল গাড়ীর কাগজপত্র দেখাতে বলেন। কিন্তু মিজ ফাতেমা বেগম গাড়ীর কাগজপত্র সঠিক আছে বলে গাড়ীর কাগজপত্র দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং গাড়ী থেকে বের হয়ে তিনি ট্রাফিক সার্জেন্টকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ কারণে গত ১৩ এপ্রিল ট্রাফিক সার্জেন্ট তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় পেনাল কোড ১৮৬০-এর ১৮৬ / ৩৫৩ / ৩৩২ / ১৭৯ / ১১৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

একই সঙ্গে এমন কর্মকান্ডের জন্য ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ ’—এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’—এর দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। তিনি কৈফিয়তের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করেন এবং গত ৪ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত শুনানি দেন। বিচারের স্বার্থে বক্তব্যসহ পুরো বিষয় তদন্ত করেন এনবিআরের প্রথম সচিব মো. জাহিদ নেওয়াজ।

এ ছাড়া তাঁর কারণ দর্শানোর জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিভাগীয় মামলা সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ ’—এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচারণ’—এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এ জন্য বিধিমালার ৪ (২) (ঘ) বিধি অনুসারে তাঁকে ‘বেতন গ্রেডের এক ধাপ অবনমিত’ করা হয়। অর্থাৎ বর্তমান মূল বেতন ৫০ হাজার ৩০ টাকার নিম্নধাপ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা মূল বেতনে অবনমিতকরণের লঘুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে কাটা হবে কর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে কাটা হবে কর

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মূল বেতন করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর কেটে নেবে সরকার। সংশ্লিষ্ট হিসাব দপ্তর বেতন বিল প্রস্তুত করার সময় এই কর কেটে নেবে। এ বিষয়ে সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয় গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে এ পদক্ষেপের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী, মাসিক মূল বেতন ২৬ হাজার ৭৮৫ টাকা বা তার বেশি (পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারী) এবং ৩০ হাজার ৩৫৭ টাকা বা তার বেশির (নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী) ক্ষেত্রে বেতন থেকে কর কর্তন বাধ্যতামূলক।

সিজিএর নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিল থেকে আয়করসহ অন্যান্য কর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি রুলস এসআর ১২৫ অনুযায়ী উত্তোলনকারীর ওপর থাকবে। এই নির্দেশনার ভিত্তিতে দেশের সব চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার, বিভাগীয় ও জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রক এবং উপজেলা হিসাব কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৭ অক্টোবর জারি করা চিঠিতে সরকারি বেতনভোগীদের উৎসে কর কর্তনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিল।

এ বিষয়ে আইআরডির সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে অনেক বড় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাঁদের আয় করযোগ্য, অথচ তাঁরা মাসে মাসে বেতন থেকে কর দিচ্ছেন না। এ জন্য ডিও লেটার দিয়েছি। এ প্রক্রিয়ায় কর স্বচ্ছতা বাড়াবে।’

অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, নিয়োগদাতা স্তরে কর কর্তন নিশ্চিত করা করদাতার পরিধি বাড়ানোর সহজ উপায়। সরকারি খাতের এ পদক্ষেপ বেসরকারি খাতেও উৎসে কর বাস্তবায়নে চাপ এবং উৎসাহ সৃষ্টি করবে। তবে শুধু বেতনভিত্তিক কর যথেষ্ট নয়; করদাতার স্বচ্ছ করপত্র, রিটার্ন দাখিল সহজীকরণ এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অটোমেশনেও গুরুত্ব দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীর শেয়ার শূন্য ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৫ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীর শেয়ার শূন্য ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ‘শূন্য’ ঘোষণা করাকে কঠোর ও একতরফা সিদ্ধান্ত বলে মনে করে দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোর্চা বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

বিএমবিএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পাঁচটি একীভূত ইসলামি ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারমূল্য ‘শূন্য’ হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে। ওই ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডাররা গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বিএমবিএ সেক্রেটারি জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা ও কর্তৃত্বকে শ্রদ্ধা জানাই। তবে দীর্ঘদিনের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৈধ ও নিয়মমাফিক বিনিয়োগ করা মূলধনকে একযোগে ‘‘শূন্য’’ হিসেবে ঘোষণা করা একটি কঠোর ও একতরফা সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি।’

বিএমবিএ সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘অনেক শেয়ারহোল্ডার দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা রেখে নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ করেছেন, সব বিধিবিধান মেনে চলেছেন। তাই যথাযথ মূল্যায়ন, স্বতন্ত্র নিরীক্ষা ও কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনুযায়ী সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে। এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী এবং পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা রেখে বিনিয়োগ করেছেন। তাই তাঁদের সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা যুক্তিসংগত নয়।’

সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনটি সুপারিশ তুলে ধরে বিএমবিএ। এগুলো হলো—শেয়ারমূল্য নির্ধারণপ্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের জন্য স্বতন্ত্র ও যুক্তিসংগত মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা; চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে শেয়ারহোল্ডারদের মতামত ও ব্যাখ্যা উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া এবং একীভূতকরণ বা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে একটি ক্ষতিপূরণ বা সমন্বিত সমাধান কাঠামো বিবেচনা করা।

বিএমবিএ সেক্রেটারি নজরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বিষয়টি মানবিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে পুনর্বিবেচনা করবে। দেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য অধিকারও সমানভাবে সংরক্ষণযোগ্য।’

আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

একীভূতকরণের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানাতে ৫ নভেম্বর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর শেয়ারমূল্য শূন্য ঘোষণা করেন।

এ সময় গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম ঋণাত্মক ৩৫০-৪২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারীদের জরিমানা করা উচিত। আমরা তা না করে তাদের মালিকানা শূন্য করে দিয়েছি। ব্যাংকগুলোতে যারা লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দুদকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে মামলা করা হচ্ছে।’

এদিকে গভর্নরের বক্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দেয়। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান।

এরপর ৯ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের শূন্য দাম নিয়ে গভর্নরের ঘোষণাই চূড়ান্ত নয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, এটা আমরা দেখব। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যেটা বলেছেন, সেটাই চূড়ান্ত কথা নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত