Ajker Patrika

রপ্তানির নতুন দিগন্ত

ইউরোপের পথে কাঠের ঘর

  • বেলজিয়ামের বিখ্যাত চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজারে’ স্থান হচ্ছে বোড টিইনি হাউসের।
  • ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠান এ বাড়ির নির্মাতা ও রপ্তানিকারক
  • একটি বাড়ি তৈরিতে শতাধিক কারিগরের সময় লেগেছে ১৫ দিন, অর্ডার মিলেছে ১২০টির
  • বাড়িতে থাকছে শোয়ার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, ব্যালকনি ও এসির ব্যবস্থা
এস. এস শোহান, বাগেরহাট 
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৬
বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে তৈরি হয় কাঠের দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে তৈরি হয় কাঠের দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় কাঠের কারুকাজ শুধু আসবাব বা গৃহসজ্জায় সীমাবদ্ধ ছিল। সময় বদলেছে। এখন কারুকার্যখচিত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পুরো বাড়ি। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও। বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি এমনই এক গ্রাম। সেখানকার দক্ষ কারিগরেরা গড়ে চলেছেন একের পর এক দৃষ্টিনন্দন কাঠের বাড়ি। নাম ‘বোড টিইনি হাউস’। এটি শুধু একটি বাড়ি নয়; বরং সৃজনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পুরো কাঠের কারুকার্যে তৈরি পরিবেশবান্ধব এ বাড়ি বাংলাদেশের দক্ষতা আর শিল্পনৈপুণ্যের বার্তা দিচ্ছে বিশ্ববাজারে। আর বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও।

ইতিমধ্যে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম দেখিয়েছে কেনার আগ্রহ। শিগগির বাংলাদেশের এই শতাধিক কাঠের বাড়ি স্থান পেতে যাচ্ছে দেশটির বিখ্যাত চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজার’-এ। অর্থাৎ এটি শুধু একটি ব্যবসা নয়; বরং বাংলাদেশের রপ্তানি-বাণিজ্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।

গ্রামেই কারখানা, কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শতাধিক শ্রমিক

বাগেরহাট সদর উপজেলার করোরি গ্রামে গড়ে উঠেছে ন্যাচারাল ফাইবারের কারখানা। কাঠের বাড়ি তৈরির এ কর্মযজ্ঞ দেখতে এলেই বোঝা যায়—এটি শুধু ব্যবসাই নয়; বরং এক নতুন সম্ভাবনার জগৎ। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ দরজা-জানালা বানাচ্ছেন, কেউ আবার নিখুঁত হাতে কাঠ পলিশ করছেন। একেকটি কাঠের ঘর তৈরি হতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ দিন। প্রতিটি ঘরেই থাকছে শোয়ার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, বেলকনি, এমনকি এসির ব্যবস্থাও। ইউরোপীয় ধাঁচে বানানো এ ঘরগুলো সম্পূর্ণ কাঠের।

শ্রমিকদের চোখে স্বপ্ন

এ প্রকল্পে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। তাঁরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। শ্রমিকদেরই একজন শহিদুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের তৈরি ঘর বিদেশে যাবে, এটি ভাবতেই ভালো লাগে। আরও ভালো লাগছে, আমাদের কয়েকজনকে ঘর সংযোজনের জন্য ইউরোপে পাঠানো হতে পারে। এটি আমাদের জীবনের বড় সুযোগ।’

আরেক কাঠমিস্ত্রি মোজাহিদ বললেন, ‘আমি অনেক ঘর বানিয়েছি। কিন্তু কাঠের চাল বা ছাদওয়ালা এমন নিখুঁত ডিজাইনের ঘর আগে কখনো বানাইনি। এখানে সামান্য ভুলেরও জায়গা নেই। সবকিছু মেপে, বুঝে করতে হয়।’

কারখানার নারী শ্রমিক পূজার কণ্ঠেও উচ্ছ্বাস, ‘আমরা সবাই মিলে কাজ করি, খুব ভালো লাগে। শুনেছি, এ ঘর বসানোর জন্য কয়েকজনকে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হবে। এ রকম কাজ আরও থাকলে আমাদের জীবন অনেক উন্নত হতো।’

স্থানীয় কাঠ, আন্তর্জাতিক মান

এই কাঠের ঘর তৈরিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মেহগনি কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ঘরের ছাদ যাতে টেকসই হয়, সে জন্য বিশেষভাবে আমদানি করা আইপিই কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে থাকবে পানিপ্রতিরোধী প্রলেপ। কোনো রং করা হবে না, সম্পূর্ণ কাঠের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় থাকবে। প্রতিটি কাঠামো আলাদা অংশে ভাগ করে পাঠানো হবে বেলজিয়ামে, যেখানে তা সংযোজন করা হবে।

পুরোনো অভিজ্ঞতা, নতুন উদ্যোগ

ন্যাচারাল ফাইবার দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি করছে। তাদের তৈরি কাঠের সাইকেল, সানবেড, হোটেলবেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনা, কোকো ম্যাট, ডিসপোজেবল স্লিপারসহ নানা পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি ১২০টি বোড টিইনি হাউস তৈরির অর্ডার পায়। এরপরই শুরু হয় কাঠের বাড়ি বানানোর এ যাত্রা।

ইউরোপিয়ান পার্টনারদের আস্থা

বেলজিয়ামের ‘নোই বিল্ডার্স’ এবং গ্রিসের ‘কোকো ম্যাট’ এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। সরেজমিনে ঘর তৈরির কারখানায় দেখা হয় কোকো ম্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল এফমরফিডিসের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা চাই বিশ্বকে দেখাতে, পরিবেশবান্ধব উপায়েও কাঠের বাড়ি তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশের মেহগনি কাঠ এ প্রকল্পের জন্য পারফেক্ট। এই উদ্যোগ আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে।’

মোংলা বন্দর ব্যবহারের দাবি

ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালট্যান্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন জানালেন, ‘আমরা সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাই। কিন্তু এ ঘরগুলো যদি মোংলা বন্দর দিয়ে পাঠাতে পারতাম, তাহলে সময় ও খরচ অনেক কমে আসত।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ন্যাচারাল ফাইবারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ আহমেদ বললেন, ‘আমরা এর আগে ব্রিটেন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পেয়েছি। এর অংশ হিসেবে প্রথম নমুনা ঘর বানাতে হয়েছে। এর আগে বেলজিয়ামের সেই পার্কে হাতি চলাচলের করিডর বানানোর কাজও আমরা করেছি। সেই কাজ ভালো হওয়ায় এবার তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে।’

মোস্তাফিজ আহমেদ আরও যোগ করলেন, ‘আমাদের এই কাঠের বাড়ি বিশ্ববাজারে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। সরকার যদি সহায়তা দেয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব হবে। এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, দেশের জন্যও বড় অর্জন হবে।’

বিসিকের প্রতিক্রিয়া

বাগেরহাট বিসিকের কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বললেন, ‘ন্যাচারাল ফাইবার দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবান্ধব পণ্য রপ্তানি করছে। এবার কাঠের বাড়ি পাঠানোর মাধ্যমে দেশের সুনাম আরও বাড়বে। এ ধরনের উদ্যোগ যদি বাড়ে, তাহলে আমরা আরও সহযোগিতা করব।’

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

এই কাঠের বাড়ির রপ্তানি শুধু একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগই নয়, বরং বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। একদিকে স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কাঠের বাড়ির বাজার যদি সম্প্রসারিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ আরও বড় সুযোগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত