Ajker Patrika

এনবিআর শাটডাউন

আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত ক্ষতি ব্যবসা-বাণিজ্যে

  • চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা
  • আজও চলবে কমপ্লিট শাটডাউন
  • সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনবিআর ভবনের সামনে। আজও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: ওমর ফারুক
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এনবিআর ভবনের সামনে। আজও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: ওমর ফারুক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া সরকারের কোনো কথা শুনবেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারের আহ্বান ও কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারির পরও দাবি আদায়ে গতকাল শনিবার পূর্বনির্ধারিত কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। আজ রোববারও সে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের।

দেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। শুল্কায়ন বন্ধ হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এনবিআরে সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাহত হচ্ছে সরকারের রাজস্ব আহরণ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সংবাদ সম্মেলন করে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

এর আগে গত শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর কর্মীদের কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এনবিআরের পক্ষ থেকে।

তবে এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণার পর গতকাল সরকার ও এনবিআরের পক্ষ থেকে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করা হলে জরুরি বৈঠক আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। আর ফোন ধরেননি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে গত ২৫ মের সরকারের বিজ্ঞপ্তির আলোকে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। স্পষ্টতই তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রতিভূ হিসেবে কাজ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২১ ও ২২ জুন একাধিক আদেশের মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। এই অবৈধ আদেশের মাধ্যমে এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত জিঘাংসা চরিতার্থ করছেন। তাঁর এমন কর্মকাণ্ড দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি নিপীড়নমূলক বদলিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের পরিবেশ নষ্ট করছেন।

কর্মসূচি প্রসঙ্গে হাছান মুহম্মদ তারেক বলেন, ২৯ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে। এ ছাড়া সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে।

কী পরিস্থিতি ছিল

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালনের জন্য সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজস্ব ভবনের সামনে সমবেত হন। বিপরীতে এনবিআরের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে অবস্থান নেন বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব ও কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এনবিআর ভবনের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের জলকামান ও রায়ট কার।

রাজস্ব ভবনের তিনটি গেট বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা এনবিআরে প্রবেশ বা বের হতে পারেননি। এর মধ্যেই সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা মূল ফটকের সামনে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে স্লোগান ও বক্তব্য দেন।

বন্ধ বন্দর-কাস্টমসের কাজ

এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

চট্টগ্রাম শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, এনবিআর কর্মীদের শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে পড়বে। এ কর্মসূচির কারণে বন্দরে কনটেইনারের জট বাড়াবে।

আন্দোলনের কারণ

অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেটি বাতিলের দাবিতে কলমবিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মীরা। আন্দোলনের মধ্যে ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে তাঁর অপসারণের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

গত শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান অচলাবস্থা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয় সভা করেছে। সেখানে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহারের নির্দেশনা, কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনা ও আগামী মঙ্গলবার তিন পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দপ্তরে অবস্থান করে কাজে মনোনিবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

অপারেশন সিঁদুরে নেতৃত্ব দেওয়া অফিসার হচ্ছেন ভারতের র-এর প্রধান

পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁর এমপি, এটি বাংলাদেশের জন্য অনুপযুক্ত: সালাহউদ্দিন

নীলফামারীতে 'আটক' কুমিল্লার দুই সাংবাদিক

ডেঙ্গুতে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তার মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত