Ajker Patrika

উন্নয়ন ব্যয়ে ফের ধীরগতি

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮: ২৬
উন্নয়ন ব্যয়ে ফের ধীরগতি

চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি আবারও শ্লথ হয়ে পড়েছে। তিন মাসের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির পর ফেব্রুয়ারিতে এডিপি বাস্তবায়নের ব্যয় ২ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা কমেছে, যা চলতি অর্থবছরের শেষ পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, একক মাসের পাশাপাশি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেও এডিপি বাস্তবায়নের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়ন ব্যয় কমেছে ১৮ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নতুন সরকারের নীতি পরিবর্তনের ফলে অনেক প্রকল্প স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়নের আওতায় এসেছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেও যখন মহামারির প্রভাব ছিল সর্বোচ্চ, তখনো বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ এবারের বাস্তবায়নের হার গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সংকট

গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দেশে সরকার পরিবর্তন হয়। নতুন সরকার অতিমূল্যায়িত প্রকল্প এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর পুনর্বিবেচনায় মনোযোগী হয়েছে। ফলে বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল হয়েছে এবং অনেকের অর্থায়ন সংকুচিত হয়েছে। বিশেষ করে যেসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছিল, সেগুলোকে নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধীরগতির অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজস্ব ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থবছরের প্রথম দিকে সাধারণত এডিপি বাস্তবায়ন ধীরগতিতে থাকে। তবে এবারের ধীরগতি ব্যতিক্রম; কারণ, এটি শুধু বছরের শুরুতেই নয়, মধ্যভাগেও অব্যাহত রয়েছে।

পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে এডিপি বাস্তবায়নের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা, যা জানুয়ারির তুলনায় ২ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা কম। একক মাসের হিসাবে এটি গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এডিপির বরাদ্দের অগ্রগতির হার ফেব্রুয়ারিতে ২.৬৭ শতাংশ, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে ৩ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২১.১৩ শতাংশ, যেখানে বৈদেশিক সাহায্য অংশে বাস্তবায়ন ২৭.৪৭ শতাংশ। সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের হার ৩৯.৩১ শতাংশ।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন চিত্র

প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে আট মাসে তারা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মাত্র ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ০.৪১ শতাংশ।

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ও এডিপি বাস্তবায়নে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। ১.২৫ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে আট মাসে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২.১৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগও পিছিয়ে রয়েছে; তারা ৭৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ২৮ কোটি টাকা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, যা বরাদ্দের মাত্র ৩.৭২ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৫.৪৮ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬.৪১ শতাংশ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬.৭৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। এই ধীরগতির ফলে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এডিপির সামগ্রিক চিত্র ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

চলতি অর্থবছরের জন্য এডিপির মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ এক লাখ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থের পুরোটা ব্যবহার করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি ফেরাতে হলে নীতিগত সংস্কার ও অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রগতি মূল্যায়ন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে ব্যয় পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বাজেট বাস্তবায়নের চাপ বাড়বে এবং অনেক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যেতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত