Ajker Patrika

ঋণ শোধ করতে ঋণ নিচ্ছে সরকার: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ০৩
ঋণ শোধ করতে ঋণ নিচ্ছে সরকার: সিপিডি

বাংলাদেশের ঋণ ও পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাড়ছে, যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। 

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেল ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। সিপিডি এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। 

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা পাকলিক ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য ঋণ নিচ্ছি। তাই দ্রুত অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’ 

সিপিডি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর বলেন, বর্তমানে বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৬ শতাংশ তুলনামূলকভাবে বেশি নয়। তবে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সিপিডি বলছে, ঋণ পোর্টফোলিওর গঠন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। রেয়াতি ঋণের অনুপাত কমছে, অন্যদিকে রেয়াতি ও বাজারভিত্তিক ঋণের অংশ বাড়ছে। ঋণের শর্তাবলিও আরও কঠোর হচ্ছে। 

বিশেষ করে জিডিপি, রাজস্ব আয়, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। 

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। এর সঙ্গে ঋণ বহনের সক্ষমতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা উদ্বেগ তৈরি করেছে। দিন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ, যা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয় ঋণ পরিশোধের জন্য বিবেচনা করতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ দেশি ও বিদেশি ঋণের মূল ও সুদ পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, তিন বছর আগে মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত দেড় দশকে ঋণ করে অনেক মেগা প্রকল্প করা হলেও তা মানুষের উন্নতিতে কাজে আসেনি। বরং মা ও শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। বেকার বেড়েছে। ঋণ বাড়লেও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হয়নি। 

সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে। ফলে খাতভিত্তিক উন্নয়ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রকল্প থেকে একটি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে। 

মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এ অর্থনীতিবিদ। মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। 

ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতির বিষয়ে আলোচনা ছিল। এক্সচেঞ্জ রেটটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সব দেশেই হয়েছে। সাপ্লাই চেইনের ডিসরাপশনের কারণে হয়েছে। সাম্যবস্থায় যে এক্সচেঞ্জ রেট থাকা উচিত, সেখানে টাকাকে না রেখে আমরা অতিমূল্যায়িত করেছি। এটার সময় যখনই চাপ এসেছে, তা সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারিনি। এ জন্য আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘১০ টাকা বিনিয়োগ করে যদি এখন ১১ টাকার উৎপাদন করতে পারি, তাহলে সেটাকে এখন সাড়ে ১১ টাকায়, ১২ টাকায় ওঠানোর চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য বিনিয়োগও দরকার। শুধু ডেপ্রিসিয়েশন (টাকার অবমূল্যায়ন) দিয়ে রপ্তানি বাড়ানো যাবে না। ডেপ্রিসিয়েশনের সঙ্গে উৎপাদন সক্ষমতা ও বিনিয়োগও বাড়াতে হবে। যত দিন পর্যন্ত আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ না বাড়ে, তত দিন পর্যন্ত বিদেশি ঋণ, সহায়তা প্রয়োজন পড়বে। এগুলোর কোনোটিই খারাপ নয়। তবে, সবাই যেটা বলেছেন, এগুলো কোথায় যাচ্ছে, কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কোন প্রকল্প করা হচ্ছে, সেই প্রকল্পের মান কী, সেগুলো অনেক বিবেচনা করতে হবে।’ 

সিপিডির চেয়ারম্যান ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, দেশের মেগা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বিদেশি ঋণে করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে প্রয়োজনের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ব্যয় হচ্ছে। 

রেহমান সোবহান বলেন, শ্রীলঙ্কা স্বল্পকালীন ঋণের ফাঁদে পড়েছিল। রপ্তানি কমে আসায় এসব ঋণ যথাযথভাবে পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। আফ্রিকার কিছু দেশেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ তেমন অবস্থানে নেই। কিন্তু দেশে স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তাই রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত