শাওন আকন্দ

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে শিল্পের সঙ্গেই। কিন্তু এই বসবাস কিংবা চর্চা— খুব সচেতন নয়, খুব সোচ্চার নয়। কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, পশ্চিমা দৃষ্টিতে চারুকলা বা শিল্পের যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ার কারণে এগুলোকে আমরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিংবা ‘শিল্প’ হিসেবে বিবেচনা করি নাই। কেন করি নাই, তার লম্বা ইতিহাস আছে। আলোচনার প্রয়োজনে আপাতত ছোট করে প্রেক্ষাপটটা বলে নেওয়া দরকার।
বাংলা ভাষায় ‘চারুকলা’ শব্দটি দিয়ে যা বোঝানো হয়, তা এখন পর্যন্ত মূলত আধুনিকতাবাদী চেতনায় আচ্ছন্ন। সে কারণে এটা মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, নগরভিত্তিক, ক্ষমতাকাঠামোর পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত এবং সমাজের উচ্চবর্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে সচেষ্ট। আধুনিকতাবাদের সূত্র অনুসারে এটা অনেক বেশি ফর্মাল, নিয়মকানুনে আগ্রহী এবং শিল্পকলার গুণ বা মান বিচারে নিশ্চিতভাবেই বিভাজনে বিশ্বাসী। সবাই জানে, আধুনিকতাবাদের বিচারে প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিল্প হলো লোকশিল্প, কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী শিল্প, আদিবাসী শিল্প ইত্যাদি। এগুলো হলো আধুনিক চারুকলার ‘অপর’, যা উপস্থাপিত/ বিবেচিত হয় কিছুটা নিচু মানের শিল্প হিসেবে। এই বিচারপদ্ধতি আমাদের ছিল না। এটা আমরা শিখেছি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে।
উনিশ শতকে একাধিক প্রকাশনায় বিভিন্ন ইউরোপীয় লেখক বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতবর্ষে আসলে আর্ট বা ফাইন আর্ট বলে কিছু নেই। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে, এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে এই ‘অসভ্য’, ‘অশিক্ষিত’ ও ‘শিল্পহীন’ জাতিকে শিল্পজ্ঞান দিতে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা আর্ট স্কুল। সেখানে তারা পশ্চিম থেকে আমদানি করা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতির প্রচলন করেছিল, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের কোনো ঐতিহ্যগত সংযোগ ছিল না। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতিষ্ঠান, প্রদর্শনী, প্রকাশনা ইত্যাদি নানান কর্মকাণ্ডের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের যে নিজস্ব কোনো শিল্প নেই, তা প্রচারিত হয়েছে এবং আধুনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা যাত্রা শুরু করেছে ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ১৮৫১ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে প্রিন্স আলবার্টের উদ্যোগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বিস্তৃত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে নানান ধরনের অসাধারণ আবিষ্কার ও শিল্প-উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে বিশ্বখ্যাত হীরকখণ্ড ‘কোহিনুর’ থেকে শুরু করে বাংলার (ঢাকার) কিংবদন্তির মিহি মসলিন পর্যন্ত স্থান পেয়েছিল। সেখানে ভারতবর্ষের প্যাভিলিয়ন দেখে তৎকালীন ইউরোপবাসী অত্যন্ত মোহিত ও বিস্মিত হয়েছিল। ভারতের শিল্পীদের দক্ষতা ও শিল্পনৈপুণ্য দেখে তাদের মুগ্ধ ভাষ্য ছিল ‘ইউরোপ হ্যাজ নাথিং টু টিচ, বাট এ গ্রেট ডিল টু লার্ন।’ অর্থাৎ ভারতের শিল্পকে ইউরোপের শেখানোর কিছু নেই, বরং তা থেকে তারা (ইউরোপবাসী) মহৎ শিল্প সম্পর্কে শিখতে পারে। তারপরও কেন ইউরোপের সাদৃশ্যধর্মী চারুকলাকে এখানে আর্ট স্কুলে প্রধান রীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায় বটে!
২.
বিশ শতকের গোড়ায় কিছু ভিন্ন কথা শোনা গেল। পশ্চিমা শিল্পতাত্ত্বিকেরা জাপান কিংবা পারস্যের শিল্পের মতো ভারতীয় শিল্পকে কিছু মাত্রায় স্বীকৃতি দিতে শুরু করল। যেমন, ১৯১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ইউরোপের কিছু শিল্পী, শিল্পসমালোচক ও ছাত্র জানান, তাঁরা বুদ্ধের মতো পবিত্র মূর্তিকে বিশ্বের অন্যতম মহান শৈল্পিক অনুপ্রেরণা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন! (স্মিথ, পৃ. ৩)
লক্ষ কবার বিষয়, ভারতের শিল্পকলা কতটা আর্ট কিংবা আর্ট নয়, তা নিয়ে ইউরোপের শিল্পী ও শিল্পসমালোচকেরা তো বটেই, এমনকি সেখানকার ছাত্রদেরও অধিকার আছে মন্তব্য করার! ঔপনিবেশিক বাস্তবতা এমন নির্মম, মর্মান্তিক ও হাস্যকর হতে পারে, কখনো কখনো।
কাছাকাছি সময়ে, বঙ্গদেশে ই বি হ্যাভেল এবং তাঁর শিষ্য অবন ঠাকুরের নেতৃত্বে নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি বা নিউ বেঙ্গল স্কুলের সূত্রপাত হয়েছিল। হ্যাভেল ছিলেন নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতির একনিষ্ঠ সমর্থক ও প্রচারক। তিনি অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরবর্তী সময়ে এ নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি নাকি পশ্চিমা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতি, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কেটেছে বিশ শতকের প্রথমার্ধের অনেক বছর। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে এবং নন্দলালের নেতৃত্বে কলাভবন (১৯১৯) গড়ে উঠলে সেখানে আবার কিছু নতুন আলাপ শোনা গিয়েছিল, নতুন ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘কনটেক্সচুয়াল মর্ডানিজম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এটাকে। এ ছাড়া গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন এবং তাঁর লোকশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু এত কিছুর পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনায় আমরা আধুনিকতাবাদী চেতনা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং তাঁর সতীর্থদের কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসা এবং এখানে একটি নতুন শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়, এখান থেকে শুরু বাংলাদেশের আধুনিক চারুকলার ইতিহাস।
পরবর্তীকালে পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে বিমূর্ত, আধা-বিমূর্ত ধারার উদ্ভব ও বিকাশ আধুনিকতার জয়গান এ দেশে আরও উচ্চকিত এবং প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও আমাদের পথিকৃৎ শিল্পীরা জয়নুল, কামরুল কিংবা সুলতান লোকশিল্প কিংবা লোকজীবনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন তাঁদের নিজস্ব শিল্পকর্ম এবং বিবিধ উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিকতার প্রবল প্রভাব থেকে বিশ শতকের বাংলাদেশের চারুকলাকে আলাদা করা মুশকিল। সন্দেহ নেই, কোনো কোনো শিল্পী এই পশ্চিমা রীতি রপ্ত করে দেশজ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে উন্নত মানের শিল্পকর্ম নির্মাণ করে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু আধুনিক চারুকলার সঙ্গে জনগণের দূরত্ব ঘোচেনি।
এর পাশাপাশি, স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশজ শিল্প, বিশেষত যেগুলোকে আমরা লোকশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি বলে থাকি, সেগুলো গ্রামীণ প্রেক্ষাপট কিংবা সনাতনী বিপণনব্যবস্থার বাইরে নগরে নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে। কারিকা থেকে শুরু করে আড়ং, কুমুদিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্যের কদর আছে। কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, প্রকৃতি, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বেশ অগ্রগামী। কিন্তু লোকশিল্পী বা কারুশিল্পীরা চারুকলার জগতে ‘অপর’ হিসেবে রয়ে গেছেন।
৩.
এখন প্রশ্ন হলো, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারু ও কারুকলার হাল-হকিকত ও গতি-প্রকৃতিতে কোনো বিশেষ পরিবর্তন কি লক্ষ করা যাচ্ছে? কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ কী?
মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে, গত দুই দশকে, বাংলাদেশের চারুকলায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়। এগুলো হলো—
নতুন মাধ্যমের স্বীকৃতি: একুশ শতকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের গতানুগতিক মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে ইনস্টলেশন, পারফরম্যান্স, ভিডিও আর্ট ইত্যাদি নতুন নতুন মাধ্যম ব্যাপক মাত্রায় চর্চিত হতে শুরু করেছে এবং কিছু মাত্রায় স্বীকৃতিও পেয়েছে। বিশ শতকের বাস্তবতায় বাংলাদেশে এটা অভাবনীয় ছিল। ভালোমন্দ বিচার না করেও বলা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
নতুন প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজন: একুশ শতকে বেশ কয়েকটি নতুন প্ল্যাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চারুকলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং নতুন মাধ্যমকে জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা আছে। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট, সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন, দৃক, ক্র্যাক ট্রাস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন শিল্পভাবনা এবং নতুন মাধ্যম প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এক সময় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশীয় দ্বিবার্ষিক ছিল দেশের একমাত্র বড় মাপের আন্তর্জাতিক আয়োজন। কিন্তু একুশ শতকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চারুকলাবিষয়ক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা আর্ট সামিট ও ছবি মেলা—ঢাকায় এ দুই আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ক্র্যাকের আয়োজনে নিয়মিত আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, চট্টগ্রামে সন্তরণের আন্তর্জাতিক ফোক ট্রিয়েনাল ইত্যাদি উদ্যোগ নতুন শিল্পভাবনা ও চর্চাকে গতিশীল করেছে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ: ভেনিস বিয়েনালে কিংবা ডকুমেন্টার মতো পৃথিবী বিখ্যাত আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঘটেছে একুশ শতকেই। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এ দুই বিষয়ে অনেকটা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বৃত্ত ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময়ে ভেনিস বিয়েনালে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া পশ্চিমা পোস্টমডার্ন হাওয়ার প্রভাবে বাংলাদেশের চারুকলায় বাধ্যবাধকতা বা নিয়মের বেড়াজাল কিছুটা কমেছে। বিদ্যায়তনিক পরিসরকে হিসাব থেকে বাদ দিলে, সমকালীন শিল্পচর্চায় মাধ্যমগত সীমাবদ্ধতা আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। সমকালীন শিল্পকর্ম নির্মাণে লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান কিংবা স্থানীয় পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বেড়েছে। বাঁশ-বেত, খড়, মাটি থেকে শুরু করে জামদানি, গামছা, রিকশাচিত্র কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং নিজ গুণে সমকালীন চারুকলায় মাধ্যম বা শৈলী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। রিকশাচিত্রী কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টাররা ঢাকা আর্ট সামিট কিংবা ডকুমেন্টার মতো বড় শিল্প আয়োজনে শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন, এ রকমটা বিশ শতকে দেখা যায়নি। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব শিল্পীর মূল্যায়ন এখনো তেমন একটা হয় না বললেই চলে। শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগ এখনো ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত।
ঔপনিবেশিক পরম্পরার অংশ হিসেবে ঐতিহ্যকে বাতিল করে তৈরি হয়েছিল কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল (১৮৬৪)। সেখানে শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মাধ্যমে ঢাকায় প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষকেরা পরবর্তীকালে আধুনিক শিল্পচর্চার পাশাপাশি নিজেরাও ঐতিহ্য নির্মাণে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতিমধ্যে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেসকো থেকে। যদিও কালের বিচারে এই ঐতিহ্য অর্বাচীন।
৪.
সরল বিচারে, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারুকলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে ধাবমান হবে কিংবা বিকশিত হবে, তা নির্ভর করছে মূলত এ দেশের তরুণ শিল্পীদের ওপর। তাদের আগ্রহ ও ভালোবাসায় যেসব শিল্পকর্ম ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে, সেসব নিয়েই তৈরি হবে বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ।
সূক্ষ্ম বিচারে, গত দেড় শ বছরের চারুকলার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে, আমরা অবশ্য অন্য লক্ষণ বা প্রবণতা দেখতে পাই। এটাকে আমরা বলতে পারি ‘কোম্পানীর ভুত’ কিংবা ঔপনিবেশিক প্রভাব। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রমের পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনা ও চর্চায় ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে আমরা খুব বেশি মুক্ত হতে পেরেছি কি? যেসব নতুন নতুন মাধ্যম আমাদের দেশে প্রচলিত হয়েছে সাম্প্রতিক চারুকলার রীতি বা মাধ্যম হিসেবে, তা কি আমরা নির্ধারণ কিংবা নির্মাণ করেছি? নাকি পশ্চিমা দেশে প্রচলিত রীতি ও ভাষা অনুসরণ, অনুকরণ কিংবা আত্মস্থ করেছি মাত্র? এসব বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে আশঙ্কা থাকে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চারুকলাও হয়তো পশ্চিমা রীতি ও শৈলীর অনুগামী হবে। এ পুঁজিবাদী দুনিয়ায় আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
লেখক: চারুশিল্পী ও গবেষক

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে শিল্পের সঙ্গেই। কিন্তু এই বসবাস কিংবা চর্চা— খুব সচেতন নয়, খুব সোচ্চার নয়। কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, পশ্চিমা দৃষ্টিতে চারুকলা বা শিল্পের যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ার কারণে এগুলোকে আমরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিংবা ‘শিল্প’ হিসেবে বিবেচনা করি নাই। কেন করি নাই, তার লম্বা ইতিহাস আছে। আলোচনার প্রয়োজনে আপাতত ছোট করে প্রেক্ষাপটটা বলে নেওয়া দরকার।
বাংলা ভাষায় ‘চারুকলা’ শব্দটি দিয়ে যা বোঝানো হয়, তা এখন পর্যন্ত মূলত আধুনিকতাবাদী চেতনায় আচ্ছন্ন। সে কারণে এটা মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, নগরভিত্তিক, ক্ষমতাকাঠামোর পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত এবং সমাজের উচ্চবর্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে সচেষ্ট। আধুনিকতাবাদের সূত্র অনুসারে এটা অনেক বেশি ফর্মাল, নিয়মকানুনে আগ্রহী এবং শিল্পকলার গুণ বা মান বিচারে নিশ্চিতভাবেই বিভাজনে বিশ্বাসী। সবাই জানে, আধুনিকতাবাদের বিচারে প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিল্প হলো লোকশিল্প, কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী শিল্প, আদিবাসী শিল্প ইত্যাদি। এগুলো হলো আধুনিক চারুকলার ‘অপর’, যা উপস্থাপিত/ বিবেচিত হয় কিছুটা নিচু মানের শিল্প হিসেবে। এই বিচারপদ্ধতি আমাদের ছিল না। এটা আমরা শিখেছি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে।
উনিশ শতকে একাধিক প্রকাশনায় বিভিন্ন ইউরোপীয় লেখক বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতবর্ষে আসলে আর্ট বা ফাইন আর্ট বলে কিছু নেই। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে, এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে এই ‘অসভ্য’, ‘অশিক্ষিত’ ও ‘শিল্পহীন’ জাতিকে শিল্পজ্ঞান দিতে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা আর্ট স্কুল। সেখানে তারা পশ্চিম থেকে আমদানি করা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতির প্রচলন করেছিল, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের কোনো ঐতিহ্যগত সংযোগ ছিল না। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতিষ্ঠান, প্রদর্শনী, প্রকাশনা ইত্যাদি নানান কর্মকাণ্ডের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের যে নিজস্ব কোনো শিল্প নেই, তা প্রচারিত হয়েছে এবং আধুনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা যাত্রা শুরু করেছে ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ১৮৫১ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে প্রিন্স আলবার্টের উদ্যোগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বিস্তৃত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে নানান ধরনের অসাধারণ আবিষ্কার ও শিল্প-উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে বিশ্বখ্যাত হীরকখণ্ড ‘কোহিনুর’ থেকে শুরু করে বাংলার (ঢাকার) কিংবদন্তির মিহি মসলিন পর্যন্ত স্থান পেয়েছিল। সেখানে ভারতবর্ষের প্যাভিলিয়ন দেখে তৎকালীন ইউরোপবাসী অত্যন্ত মোহিত ও বিস্মিত হয়েছিল। ভারতের শিল্পীদের দক্ষতা ও শিল্পনৈপুণ্য দেখে তাদের মুগ্ধ ভাষ্য ছিল ‘ইউরোপ হ্যাজ নাথিং টু টিচ, বাট এ গ্রেট ডিল টু লার্ন।’ অর্থাৎ ভারতের শিল্পকে ইউরোপের শেখানোর কিছু নেই, বরং তা থেকে তারা (ইউরোপবাসী) মহৎ শিল্প সম্পর্কে শিখতে পারে। তারপরও কেন ইউরোপের সাদৃশ্যধর্মী চারুকলাকে এখানে আর্ট স্কুলে প্রধান রীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায় বটে!
২.
বিশ শতকের গোড়ায় কিছু ভিন্ন কথা শোনা গেল। পশ্চিমা শিল্পতাত্ত্বিকেরা জাপান কিংবা পারস্যের শিল্পের মতো ভারতীয় শিল্পকে কিছু মাত্রায় স্বীকৃতি দিতে শুরু করল। যেমন, ১৯১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ইউরোপের কিছু শিল্পী, শিল্পসমালোচক ও ছাত্র জানান, তাঁরা বুদ্ধের মতো পবিত্র মূর্তিকে বিশ্বের অন্যতম মহান শৈল্পিক অনুপ্রেরণা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন! (স্মিথ, পৃ. ৩)
লক্ষ কবার বিষয়, ভারতের শিল্পকলা কতটা আর্ট কিংবা আর্ট নয়, তা নিয়ে ইউরোপের শিল্পী ও শিল্পসমালোচকেরা তো বটেই, এমনকি সেখানকার ছাত্রদেরও অধিকার আছে মন্তব্য করার! ঔপনিবেশিক বাস্তবতা এমন নির্মম, মর্মান্তিক ও হাস্যকর হতে পারে, কখনো কখনো।
কাছাকাছি সময়ে, বঙ্গদেশে ই বি হ্যাভেল এবং তাঁর শিষ্য অবন ঠাকুরের নেতৃত্বে নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি বা নিউ বেঙ্গল স্কুলের সূত্রপাত হয়েছিল। হ্যাভেল ছিলেন নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতির একনিষ্ঠ সমর্থক ও প্রচারক। তিনি অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরবর্তী সময়ে এ নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি নাকি পশ্চিমা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতি, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কেটেছে বিশ শতকের প্রথমার্ধের অনেক বছর। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে এবং নন্দলালের নেতৃত্বে কলাভবন (১৯১৯) গড়ে উঠলে সেখানে আবার কিছু নতুন আলাপ শোনা গিয়েছিল, নতুন ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘কনটেক্সচুয়াল মর্ডানিজম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এটাকে। এ ছাড়া গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন এবং তাঁর লোকশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু এত কিছুর পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনায় আমরা আধুনিকতাবাদী চেতনা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং তাঁর সতীর্থদের কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসা এবং এখানে একটি নতুন শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়, এখান থেকে শুরু বাংলাদেশের আধুনিক চারুকলার ইতিহাস।
পরবর্তীকালে পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে বিমূর্ত, আধা-বিমূর্ত ধারার উদ্ভব ও বিকাশ আধুনিকতার জয়গান এ দেশে আরও উচ্চকিত এবং প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও আমাদের পথিকৃৎ শিল্পীরা জয়নুল, কামরুল কিংবা সুলতান লোকশিল্প কিংবা লোকজীবনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন তাঁদের নিজস্ব শিল্পকর্ম এবং বিবিধ উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিকতার প্রবল প্রভাব থেকে বিশ শতকের বাংলাদেশের চারুকলাকে আলাদা করা মুশকিল। সন্দেহ নেই, কোনো কোনো শিল্পী এই পশ্চিমা রীতি রপ্ত করে দেশজ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে উন্নত মানের শিল্পকর্ম নির্মাণ করে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু আধুনিক চারুকলার সঙ্গে জনগণের দূরত্ব ঘোচেনি।
এর পাশাপাশি, স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশজ শিল্প, বিশেষত যেগুলোকে আমরা লোকশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি বলে থাকি, সেগুলো গ্রামীণ প্রেক্ষাপট কিংবা সনাতনী বিপণনব্যবস্থার বাইরে নগরে নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে। কারিকা থেকে শুরু করে আড়ং, কুমুদিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্যের কদর আছে। কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, প্রকৃতি, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বেশ অগ্রগামী। কিন্তু লোকশিল্পী বা কারুশিল্পীরা চারুকলার জগতে ‘অপর’ হিসেবে রয়ে গেছেন।
৩.
এখন প্রশ্ন হলো, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারু ও কারুকলার হাল-হকিকত ও গতি-প্রকৃতিতে কোনো বিশেষ পরিবর্তন কি লক্ষ করা যাচ্ছে? কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ কী?
মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে, গত দুই দশকে, বাংলাদেশের চারুকলায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়। এগুলো হলো—
নতুন মাধ্যমের স্বীকৃতি: একুশ শতকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের গতানুগতিক মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে ইনস্টলেশন, পারফরম্যান্স, ভিডিও আর্ট ইত্যাদি নতুন নতুন মাধ্যম ব্যাপক মাত্রায় চর্চিত হতে শুরু করেছে এবং কিছু মাত্রায় স্বীকৃতিও পেয়েছে। বিশ শতকের বাস্তবতায় বাংলাদেশে এটা অভাবনীয় ছিল। ভালোমন্দ বিচার না করেও বলা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
নতুন প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজন: একুশ শতকে বেশ কয়েকটি নতুন প্ল্যাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চারুকলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং নতুন মাধ্যমকে জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা আছে। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট, সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন, দৃক, ক্র্যাক ট্রাস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন শিল্পভাবনা এবং নতুন মাধ্যম প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এক সময় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশীয় দ্বিবার্ষিক ছিল দেশের একমাত্র বড় মাপের আন্তর্জাতিক আয়োজন। কিন্তু একুশ শতকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চারুকলাবিষয়ক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা আর্ট সামিট ও ছবি মেলা—ঢাকায় এ দুই আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ক্র্যাকের আয়োজনে নিয়মিত আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, চট্টগ্রামে সন্তরণের আন্তর্জাতিক ফোক ট্রিয়েনাল ইত্যাদি উদ্যোগ নতুন শিল্পভাবনা ও চর্চাকে গতিশীল করেছে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ: ভেনিস বিয়েনালে কিংবা ডকুমেন্টার মতো পৃথিবী বিখ্যাত আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঘটেছে একুশ শতকেই। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এ দুই বিষয়ে অনেকটা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বৃত্ত ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময়ে ভেনিস বিয়েনালে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া পশ্চিমা পোস্টমডার্ন হাওয়ার প্রভাবে বাংলাদেশের চারুকলায় বাধ্যবাধকতা বা নিয়মের বেড়াজাল কিছুটা কমেছে। বিদ্যায়তনিক পরিসরকে হিসাব থেকে বাদ দিলে, সমকালীন শিল্পচর্চায় মাধ্যমগত সীমাবদ্ধতা আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। সমকালীন শিল্পকর্ম নির্মাণে লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান কিংবা স্থানীয় পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বেড়েছে। বাঁশ-বেত, খড়, মাটি থেকে শুরু করে জামদানি, গামছা, রিকশাচিত্র কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং নিজ গুণে সমকালীন চারুকলায় মাধ্যম বা শৈলী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। রিকশাচিত্রী কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টাররা ঢাকা আর্ট সামিট কিংবা ডকুমেন্টার মতো বড় শিল্প আয়োজনে শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন, এ রকমটা বিশ শতকে দেখা যায়নি। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব শিল্পীর মূল্যায়ন এখনো তেমন একটা হয় না বললেই চলে। শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগ এখনো ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত।
ঔপনিবেশিক পরম্পরার অংশ হিসেবে ঐতিহ্যকে বাতিল করে তৈরি হয়েছিল কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল (১৮৬৪)। সেখানে শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মাধ্যমে ঢাকায় প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষকেরা পরবর্তীকালে আধুনিক শিল্পচর্চার পাশাপাশি নিজেরাও ঐতিহ্য নির্মাণে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতিমধ্যে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেসকো থেকে। যদিও কালের বিচারে এই ঐতিহ্য অর্বাচীন।
৪.
সরল বিচারে, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারুকলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে ধাবমান হবে কিংবা বিকশিত হবে, তা নির্ভর করছে মূলত এ দেশের তরুণ শিল্পীদের ওপর। তাদের আগ্রহ ও ভালোবাসায় যেসব শিল্পকর্ম ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে, সেসব নিয়েই তৈরি হবে বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ।
সূক্ষ্ম বিচারে, গত দেড় শ বছরের চারুকলার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে, আমরা অবশ্য অন্য লক্ষণ বা প্রবণতা দেখতে পাই। এটাকে আমরা বলতে পারি ‘কোম্পানীর ভুত’ কিংবা ঔপনিবেশিক প্রভাব। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রমের পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনা ও চর্চায় ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে আমরা খুব বেশি মুক্ত হতে পেরেছি কি? যেসব নতুন নতুন মাধ্যম আমাদের দেশে প্রচলিত হয়েছে সাম্প্রতিক চারুকলার রীতি বা মাধ্যম হিসেবে, তা কি আমরা নির্ধারণ কিংবা নির্মাণ করেছি? নাকি পশ্চিমা দেশে প্রচলিত রীতি ও ভাষা অনুসরণ, অনুকরণ কিংবা আত্মস্থ করেছি মাত্র? এসব বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে আশঙ্কা থাকে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চারুকলাও হয়তো পশ্চিমা রীতি ও শৈলীর অনুগামী হবে। এ পুঁজিবাদী দুনিয়ায় আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
লেখক: চারুশিল্পী ও গবেষক
শাওন আকন্দ

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে শিল্পের সঙ্গেই। কিন্তু এই বসবাস কিংবা চর্চা— খুব সচেতন নয়, খুব সোচ্চার নয়। কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, পশ্চিমা দৃষ্টিতে চারুকলা বা শিল্পের যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ার কারণে এগুলোকে আমরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিংবা ‘শিল্প’ হিসেবে বিবেচনা করি নাই। কেন করি নাই, তার লম্বা ইতিহাস আছে। আলোচনার প্রয়োজনে আপাতত ছোট করে প্রেক্ষাপটটা বলে নেওয়া দরকার।
বাংলা ভাষায় ‘চারুকলা’ শব্দটি দিয়ে যা বোঝানো হয়, তা এখন পর্যন্ত মূলত আধুনিকতাবাদী চেতনায় আচ্ছন্ন। সে কারণে এটা মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, নগরভিত্তিক, ক্ষমতাকাঠামোর পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত এবং সমাজের উচ্চবর্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে সচেষ্ট। আধুনিকতাবাদের সূত্র অনুসারে এটা অনেক বেশি ফর্মাল, নিয়মকানুনে আগ্রহী এবং শিল্পকলার গুণ বা মান বিচারে নিশ্চিতভাবেই বিভাজনে বিশ্বাসী। সবাই জানে, আধুনিকতাবাদের বিচারে প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিল্প হলো লোকশিল্প, কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী শিল্প, আদিবাসী শিল্প ইত্যাদি। এগুলো হলো আধুনিক চারুকলার ‘অপর’, যা উপস্থাপিত/ বিবেচিত হয় কিছুটা নিচু মানের শিল্প হিসেবে। এই বিচারপদ্ধতি আমাদের ছিল না। এটা আমরা শিখেছি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে।
উনিশ শতকে একাধিক প্রকাশনায় বিভিন্ন ইউরোপীয় লেখক বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতবর্ষে আসলে আর্ট বা ফাইন আর্ট বলে কিছু নেই। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে, এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে এই ‘অসভ্য’, ‘অশিক্ষিত’ ও ‘শিল্পহীন’ জাতিকে শিল্পজ্ঞান দিতে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা আর্ট স্কুল। সেখানে তারা পশ্চিম থেকে আমদানি করা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতির প্রচলন করেছিল, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের কোনো ঐতিহ্যগত সংযোগ ছিল না। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতিষ্ঠান, প্রদর্শনী, প্রকাশনা ইত্যাদি নানান কর্মকাণ্ডের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের যে নিজস্ব কোনো শিল্প নেই, তা প্রচারিত হয়েছে এবং আধুনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা যাত্রা শুরু করেছে ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ১৮৫১ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে প্রিন্স আলবার্টের উদ্যোগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বিস্তৃত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে নানান ধরনের অসাধারণ আবিষ্কার ও শিল্প-উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে বিশ্বখ্যাত হীরকখণ্ড ‘কোহিনুর’ থেকে শুরু করে বাংলার (ঢাকার) কিংবদন্তির মিহি মসলিন পর্যন্ত স্থান পেয়েছিল। সেখানে ভারতবর্ষের প্যাভিলিয়ন দেখে তৎকালীন ইউরোপবাসী অত্যন্ত মোহিত ও বিস্মিত হয়েছিল। ভারতের শিল্পীদের দক্ষতা ও শিল্পনৈপুণ্য দেখে তাদের মুগ্ধ ভাষ্য ছিল ‘ইউরোপ হ্যাজ নাথিং টু টিচ, বাট এ গ্রেট ডিল টু লার্ন।’ অর্থাৎ ভারতের শিল্পকে ইউরোপের শেখানোর কিছু নেই, বরং তা থেকে তারা (ইউরোপবাসী) মহৎ শিল্প সম্পর্কে শিখতে পারে। তারপরও কেন ইউরোপের সাদৃশ্যধর্মী চারুকলাকে এখানে আর্ট স্কুলে প্রধান রীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায় বটে!
২.
বিশ শতকের গোড়ায় কিছু ভিন্ন কথা শোনা গেল। পশ্চিমা শিল্পতাত্ত্বিকেরা জাপান কিংবা পারস্যের শিল্পের মতো ভারতীয় শিল্পকে কিছু মাত্রায় স্বীকৃতি দিতে শুরু করল। যেমন, ১৯১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ইউরোপের কিছু শিল্পী, শিল্পসমালোচক ও ছাত্র জানান, তাঁরা বুদ্ধের মতো পবিত্র মূর্তিকে বিশ্বের অন্যতম মহান শৈল্পিক অনুপ্রেরণা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন! (স্মিথ, পৃ. ৩)
লক্ষ কবার বিষয়, ভারতের শিল্পকলা কতটা আর্ট কিংবা আর্ট নয়, তা নিয়ে ইউরোপের শিল্পী ও শিল্পসমালোচকেরা তো বটেই, এমনকি সেখানকার ছাত্রদেরও অধিকার আছে মন্তব্য করার! ঔপনিবেশিক বাস্তবতা এমন নির্মম, মর্মান্তিক ও হাস্যকর হতে পারে, কখনো কখনো।
কাছাকাছি সময়ে, বঙ্গদেশে ই বি হ্যাভেল এবং তাঁর শিষ্য অবন ঠাকুরের নেতৃত্বে নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি বা নিউ বেঙ্গল স্কুলের সূত্রপাত হয়েছিল। হ্যাভেল ছিলেন নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতির একনিষ্ঠ সমর্থক ও প্রচারক। তিনি অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরবর্তী সময়ে এ নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি নাকি পশ্চিমা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতি, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কেটেছে বিশ শতকের প্রথমার্ধের অনেক বছর। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে এবং নন্দলালের নেতৃত্বে কলাভবন (১৯১৯) গড়ে উঠলে সেখানে আবার কিছু নতুন আলাপ শোনা গিয়েছিল, নতুন ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘কনটেক্সচুয়াল মর্ডানিজম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এটাকে। এ ছাড়া গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন এবং তাঁর লোকশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু এত কিছুর পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনায় আমরা আধুনিকতাবাদী চেতনা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং তাঁর সতীর্থদের কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসা এবং এখানে একটি নতুন শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়, এখান থেকে শুরু বাংলাদেশের আধুনিক চারুকলার ইতিহাস।
পরবর্তীকালে পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে বিমূর্ত, আধা-বিমূর্ত ধারার উদ্ভব ও বিকাশ আধুনিকতার জয়গান এ দেশে আরও উচ্চকিত এবং প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও আমাদের পথিকৃৎ শিল্পীরা জয়নুল, কামরুল কিংবা সুলতান লোকশিল্প কিংবা লোকজীবনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন তাঁদের নিজস্ব শিল্পকর্ম এবং বিবিধ উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিকতার প্রবল প্রভাব থেকে বিশ শতকের বাংলাদেশের চারুকলাকে আলাদা করা মুশকিল। সন্দেহ নেই, কোনো কোনো শিল্পী এই পশ্চিমা রীতি রপ্ত করে দেশজ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে উন্নত মানের শিল্পকর্ম নির্মাণ করে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু আধুনিক চারুকলার সঙ্গে জনগণের দূরত্ব ঘোচেনি।
এর পাশাপাশি, স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশজ শিল্প, বিশেষত যেগুলোকে আমরা লোকশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি বলে থাকি, সেগুলো গ্রামীণ প্রেক্ষাপট কিংবা সনাতনী বিপণনব্যবস্থার বাইরে নগরে নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে। কারিকা থেকে শুরু করে আড়ং, কুমুদিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্যের কদর আছে। কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, প্রকৃতি, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বেশ অগ্রগামী। কিন্তু লোকশিল্পী বা কারুশিল্পীরা চারুকলার জগতে ‘অপর’ হিসেবে রয়ে গেছেন।
৩.
এখন প্রশ্ন হলো, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারু ও কারুকলার হাল-হকিকত ও গতি-প্রকৃতিতে কোনো বিশেষ পরিবর্তন কি লক্ষ করা যাচ্ছে? কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ কী?
মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে, গত দুই দশকে, বাংলাদেশের চারুকলায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়। এগুলো হলো—
নতুন মাধ্যমের স্বীকৃতি: একুশ শতকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের গতানুগতিক মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে ইনস্টলেশন, পারফরম্যান্স, ভিডিও আর্ট ইত্যাদি নতুন নতুন মাধ্যম ব্যাপক মাত্রায় চর্চিত হতে শুরু করেছে এবং কিছু মাত্রায় স্বীকৃতিও পেয়েছে। বিশ শতকের বাস্তবতায় বাংলাদেশে এটা অভাবনীয় ছিল। ভালোমন্দ বিচার না করেও বলা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
নতুন প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজন: একুশ শতকে বেশ কয়েকটি নতুন প্ল্যাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চারুকলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং নতুন মাধ্যমকে জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা আছে। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট, সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন, দৃক, ক্র্যাক ট্রাস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন শিল্পভাবনা এবং নতুন মাধ্যম প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এক সময় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশীয় দ্বিবার্ষিক ছিল দেশের একমাত্র বড় মাপের আন্তর্জাতিক আয়োজন। কিন্তু একুশ শতকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চারুকলাবিষয়ক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা আর্ট সামিট ও ছবি মেলা—ঢাকায় এ দুই আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ক্র্যাকের আয়োজনে নিয়মিত আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, চট্টগ্রামে সন্তরণের আন্তর্জাতিক ফোক ট্রিয়েনাল ইত্যাদি উদ্যোগ নতুন শিল্পভাবনা ও চর্চাকে গতিশীল করেছে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ: ভেনিস বিয়েনালে কিংবা ডকুমেন্টার মতো পৃথিবী বিখ্যাত আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঘটেছে একুশ শতকেই। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এ দুই বিষয়ে অনেকটা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বৃত্ত ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময়ে ভেনিস বিয়েনালে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া পশ্চিমা পোস্টমডার্ন হাওয়ার প্রভাবে বাংলাদেশের চারুকলায় বাধ্যবাধকতা বা নিয়মের বেড়াজাল কিছুটা কমেছে। বিদ্যায়তনিক পরিসরকে হিসাব থেকে বাদ দিলে, সমকালীন শিল্পচর্চায় মাধ্যমগত সীমাবদ্ধতা আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। সমকালীন শিল্পকর্ম নির্মাণে লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান কিংবা স্থানীয় পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বেড়েছে। বাঁশ-বেত, খড়, মাটি থেকে শুরু করে জামদানি, গামছা, রিকশাচিত্র কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং নিজ গুণে সমকালীন চারুকলায় মাধ্যম বা শৈলী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। রিকশাচিত্রী কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টাররা ঢাকা আর্ট সামিট কিংবা ডকুমেন্টার মতো বড় শিল্প আয়োজনে শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন, এ রকমটা বিশ শতকে দেখা যায়নি। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব শিল্পীর মূল্যায়ন এখনো তেমন একটা হয় না বললেই চলে। শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগ এখনো ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত।
ঔপনিবেশিক পরম্পরার অংশ হিসেবে ঐতিহ্যকে বাতিল করে তৈরি হয়েছিল কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল (১৮৬৪)। সেখানে শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মাধ্যমে ঢাকায় প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষকেরা পরবর্তীকালে আধুনিক শিল্পচর্চার পাশাপাশি নিজেরাও ঐতিহ্য নির্মাণে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতিমধ্যে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেসকো থেকে। যদিও কালের বিচারে এই ঐতিহ্য অর্বাচীন।
৪.
সরল বিচারে, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারুকলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে ধাবমান হবে কিংবা বিকশিত হবে, তা নির্ভর করছে মূলত এ দেশের তরুণ শিল্পীদের ওপর। তাদের আগ্রহ ও ভালোবাসায় যেসব শিল্পকর্ম ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে, সেসব নিয়েই তৈরি হবে বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ।
সূক্ষ্ম বিচারে, গত দেড় শ বছরের চারুকলার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে, আমরা অবশ্য অন্য লক্ষণ বা প্রবণতা দেখতে পাই। এটাকে আমরা বলতে পারি ‘কোম্পানীর ভুত’ কিংবা ঔপনিবেশিক প্রভাব। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রমের পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনা ও চর্চায় ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে আমরা খুব বেশি মুক্ত হতে পেরেছি কি? যেসব নতুন নতুন মাধ্যম আমাদের দেশে প্রচলিত হয়েছে সাম্প্রতিক চারুকলার রীতি বা মাধ্যম হিসেবে, তা কি আমরা নির্ধারণ কিংবা নির্মাণ করেছি? নাকি পশ্চিমা দেশে প্রচলিত রীতি ও ভাষা অনুসরণ, অনুকরণ কিংবা আত্মস্থ করেছি মাত্র? এসব বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে আশঙ্কা থাকে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চারুকলাও হয়তো পশ্চিমা রীতি ও শৈলীর অনুগামী হবে। এ পুঁজিবাদী দুনিয়ায় আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
লেখক: চারুশিল্পী ও গবেষক

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে শিল্পের সঙ্গেই। কিন্তু এই বসবাস কিংবা চর্চা— খুব সচেতন নয়, খুব সোচ্চার নয়। কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, পশ্চিমা দৃষ্টিতে চারুকলা বা শিল্পের যে ধারণা তৈরি হয়েছিল তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ার কারণে এগুলোকে আমরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিংবা ‘শিল্প’ হিসেবে বিবেচনা করি নাই। কেন করি নাই, তার লম্বা ইতিহাস আছে। আলোচনার প্রয়োজনে আপাতত ছোট করে প্রেক্ষাপটটা বলে নেওয়া দরকার।
বাংলা ভাষায় ‘চারুকলা’ শব্দটি দিয়ে যা বোঝানো হয়, তা এখন পর্যন্ত মূলত আধুনিকতাবাদী চেতনায় আচ্ছন্ন। সে কারণে এটা মূলত প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, নগরভিত্তিক, ক্ষমতাকাঠামোর পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত এবং সমাজের উচ্চবর্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে সচেষ্ট। আধুনিকতাবাদের সূত্র অনুসারে এটা অনেক বেশি ফর্মাল, নিয়মকানুনে আগ্রহী এবং শিল্পকলার গুণ বা মান বিচারে নিশ্চিতভাবেই বিভাজনে বিশ্বাসী। সবাই জানে, আধুনিকতাবাদের বিচারে প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিল্প হলো লোকশিল্প, কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী শিল্প, আদিবাসী শিল্প ইত্যাদি। এগুলো হলো আধুনিক চারুকলার ‘অপর’, যা উপস্থাপিত/ বিবেচিত হয় কিছুটা নিচু মানের শিল্প হিসেবে। এই বিচারপদ্ধতি আমাদের ছিল না। এটা আমরা শিখেছি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে।
উনিশ শতকে একাধিক প্রকাশনায় বিভিন্ন ইউরোপীয় লেখক বিভিন্ন ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতবর্ষে আসলে আর্ট বা ফাইন আর্ট বলে কিছু নেই। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে, এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে এই ‘অসভ্য’, ‘অশিক্ষিত’ ও ‘শিল্পহীন’ জাতিকে শিল্পজ্ঞান দিতে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা আর্ট স্কুল। সেখানে তারা পশ্চিম থেকে আমদানি করা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতির প্রচলন করেছিল, যার সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের কোনো ঐতিহ্যগত সংযোগ ছিল না। এভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতিষ্ঠান, প্রদর্শনী, প্রকাশনা ইত্যাদি নানান কর্মকাণ্ডের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের যে নিজস্ব কোনো শিল্প নেই, তা প্রচারিত হয়েছে এবং আধুনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা যাত্রা শুরু করেছে ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ১৮৫১ সালে লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে প্রিন্স আলবার্টের উদ্যোগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এবং বিস্তৃত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে নানান ধরনের অসাধারণ আবিষ্কার ও শিল্প-উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে বিশ্বখ্যাত হীরকখণ্ড ‘কোহিনুর’ থেকে শুরু করে বাংলার (ঢাকার) কিংবদন্তির মিহি মসলিন পর্যন্ত স্থান পেয়েছিল। সেখানে ভারতবর্ষের প্যাভিলিয়ন দেখে তৎকালীন ইউরোপবাসী অত্যন্ত মোহিত ও বিস্মিত হয়েছিল। ভারতের শিল্পীদের দক্ষতা ও শিল্পনৈপুণ্য দেখে তাদের মুগ্ধ ভাষ্য ছিল ‘ইউরোপ হ্যাজ নাথিং টু টিচ, বাট এ গ্রেট ডিল টু লার্ন।’ অর্থাৎ ভারতের শিল্পকে ইউরোপের শেখানোর কিছু নেই, বরং তা থেকে তারা (ইউরোপবাসী) মহৎ শিল্প সম্পর্কে শিখতে পারে। তারপরও কেন ইউরোপের সাদৃশ্যধর্মী চারুকলাকে এখানে আর্ট স্কুলে প্রধান রীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায় বটে!
২.
বিশ শতকের গোড়ায় কিছু ভিন্ন কথা শোনা গেল। পশ্চিমা শিল্পতাত্ত্বিকেরা জাপান কিংবা পারস্যের শিল্পের মতো ভারতীয় শিল্পকে কিছু মাত্রায় স্বীকৃতি দিতে শুরু করল। যেমন, ১৯১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ইউরোপের কিছু শিল্পী, শিল্পসমালোচক ও ছাত্র জানান, তাঁরা বুদ্ধের মতো পবিত্র মূর্তিকে বিশ্বের অন্যতম মহান শৈল্পিক অনুপ্রেরণা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন! (স্মিথ, পৃ. ৩)
লক্ষ কবার বিষয়, ভারতের শিল্পকলা কতটা আর্ট কিংবা আর্ট নয়, তা নিয়ে ইউরোপের শিল্পী ও শিল্পসমালোচকেরা তো বটেই, এমনকি সেখানকার ছাত্রদেরও অধিকার আছে মন্তব্য করার! ঔপনিবেশিক বাস্তবতা এমন নির্মম, মর্মান্তিক ও হাস্যকর হতে পারে, কখনো কখনো।
কাছাকাছি সময়ে, বঙ্গদেশে ই বি হ্যাভেল এবং তাঁর শিষ্য অবন ঠাকুরের নেতৃত্বে নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি বা নিউ বেঙ্গল স্কুলের সূত্রপাত হয়েছিল। হ্যাভেল ছিলেন নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতির একনিষ্ঠ সমর্থক ও প্রচারক। তিনি অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরবর্তী সময়ে এ নব্য বঙ্গীয় শিল্পরীতি নাকি পশ্চিমা সাদৃশ্যধর্মী শিল্পরীতি, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কেটেছে বিশ শতকের প্রথমার্ধের অনেক বছর। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে এবং নন্দলালের নেতৃত্বে কলাভবন (১৯১৯) গড়ে উঠলে সেখানে আবার কিছু নতুন আলাপ শোনা গিয়েছিল, নতুন ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘কনটেক্সচুয়াল মর্ডানিজম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এটাকে। এ ছাড়া গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন এবং তাঁর লোকশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু এত কিছুর পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনায় আমরা আধুনিকতাবাদী চেতনা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং তাঁর সতীর্থদের কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসা এবং এখানে একটি নতুন শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মনে করা হয়, এখান থেকে শুরু বাংলাদেশের আধুনিক চারুকলার ইতিহাস।
পরবর্তীকালে পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে বিমূর্ত, আধা-বিমূর্ত ধারার উদ্ভব ও বিকাশ আধুনিকতার জয়গান এ দেশে আরও উচ্চকিত এবং প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও আমাদের পথিকৃৎ শিল্পীরা জয়নুল, কামরুল কিংবা সুলতান লোকশিল্প কিংবা লোকজীবনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন তাঁদের নিজস্ব শিল্পকর্ম এবং বিবিধ উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডে। কিন্তু পশ্চিমা আধুনিকতার প্রবল প্রভাব থেকে বিশ শতকের বাংলাদেশের চারুকলাকে আলাদা করা মুশকিল। সন্দেহ নেই, কোনো কোনো শিল্পী এই পশ্চিমা রীতি রপ্ত করে দেশজ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে উন্নত মানের শিল্পকর্ম নির্মাণ করে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু আধুনিক চারুকলার সঙ্গে জনগণের দূরত্ব ঘোচেনি।
এর পাশাপাশি, স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশজ শিল্প, বিশেষত যেগুলোকে আমরা লোকশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি বলে থাকি, সেগুলো গ্রামীণ প্রেক্ষাপট কিংবা সনাতনী বিপণনব্যবস্থার বাইরে নগরে নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছে। কারিকা থেকে শুরু করে আড়ং, কুমুদিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্যের কদর আছে। কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, প্রকৃতি, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বেশ অগ্রগামী। কিন্তু লোকশিল্পী বা কারুশিল্পীরা চারুকলার জগতে ‘অপর’ হিসেবে রয়ে গেছেন।
৩.
এখন প্রশ্ন হলো, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারু ও কারুকলার হাল-হকিকত ও গতি-প্রকৃতিতে কোনো বিশেষ পরিবর্তন কি লক্ষ করা যাচ্ছে? কিংবা বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায়, বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ কী?
মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে, গত দুই দশকে, বাংলাদেশের চারুকলায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়। এগুলো হলো—
নতুন মাধ্যমের স্বীকৃতি: একুশ শতকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের গতানুগতিক মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে ইনস্টলেশন, পারফরম্যান্স, ভিডিও আর্ট ইত্যাদি নতুন নতুন মাধ্যম ব্যাপক মাত্রায় চর্চিত হতে শুরু করেছে এবং কিছু মাত্রায় স্বীকৃতিও পেয়েছে। বিশ শতকের বাস্তবতায় বাংলাদেশে এটা অভাবনীয় ছিল। ভালোমন্দ বিচার না করেও বলা যায়, এটা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
নতুন প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজন: একুশ শতকে বেশ কয়েকটি নতুন প্ল্যাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চারুকলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং নতুন মাধ্যমকে জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা আছে। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট, সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন, দৃক, ক্র্যাক ট্রাস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন শিল্পভাবনা এবং নতুন মাধ্যম প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এক সময় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশীয় দ্বিবার্ষিক ছিল দেশের একমাত্র বড় মাপের আন্তর্জাতিক আয়োজন। কিন্তু একুশ শতকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চারুকলাবিষয়ক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ঢাকা আর্ট সামিট ও ছবি মেলা—ঢাকায় এ দুই আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ক্র্যাকের আয়োজনে নিয়মিত আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, চট্টগ্রামে সন্তরণের আন্তর্জাতিক ফোক ট্রিয়েনাল ইত্যাদি উদ্যোগ নতুন শিল্পভাবনা ও চর্চাকে গতিশীল করেছে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ: ভেনিস বিয়েনালে কিংবা ডকুমেন্টার মতো পৃথিবী বিখ্যাত আর্ট ইভেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঘটেছে একুশ শতকেই। বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এ দুই বিষয়ে অনেকটা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বৃত্ত ছাড়াও বাংলাদেশের একাধিক শিল্পী বিভিন্ন সময়ে ভেনিস বিয়েনালে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া পশ্চিমা পোস্টমডার্ন হাওয়ার প্রভাবে বাংলাদেশের চারুকলায় বাধ্যবাধকতা বা নিয়মের বেড়াজাল কিছুটা কমেছে। বিদ্যায়তনিক পরিসরকে হিসাব থেকে বাদ দিলে, সমকালীন শিল্পচর্চায় মাধ্যমগত সীমাবদ্ধতা আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। সমকালীন শিল্পকর্ম নির্মাণে লোকশিল্পের বিভিন্ন উপাদান কিংবা স্থানীয় পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বেড়েছে। বাঁশ-বেত, খড়, মাটি থেকে শুরু করে জামদানি, গামছা, রিকশাচিত্র কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং নিজ গুণে সমকালীন চারুকলায় মাধ্যম বা শৈলী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। রিকশাচিত্রী কিংবা সিনেমা ব্যানার পেইন্টাররা ঢাকা আর্ট সামিট কিংবা ডকুমেন্টার মতো বড় শিল্প আয়োজনে শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছেন, এ রকমটা বিশ শতকে দেখা যায়নি। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব শিল্পীর মূল্যায়ন এখনো তেমন একটা হয় না বললেই চলে। শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগ এখনো ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত।
ঔপনিবেশিক পরম্পরার অংশ হিসেবে ঐতিহ্যকে বাতিল করে তৈরি হয়েছিল কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল (১৮৬৪)। সেখানে শিক্ষাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মাধ্যমে ঢাকায় প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষকেরা পরবর্তীকালে আধুনিক শিল্পচর্চার পাশাপাশি নিজেরাও ঐতিহ্য নির্মাণে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতিমধ্যে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেসকো থেকে। যদিও কালের বিচারে এই ঐতিহ্য অর্বাচীন।
৪.
সরল বিচারে, একুশ শতকে বাংলাদেশের চারুকলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে ধাবমান হবে কিংবা বিকশিত হবে, তা নির্ভর করছে মূলত এ দেশের তরুণ শিল্পীদের ওপর। তাদের আগ্রহ ও ভালোবাসায় যেসব শিল্পকর্ম ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে, সেসব নিয়েই তৈরি হবে বাংলাদেশের চারুকলার ভবিষ্যৎ।
সূক্ষ্ম বিচারে, গত দেড় শ বছরের চারুকলার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে, আমরা অবশ্য অন্য লক্ষণ বা প্রবণতা দেখতে পাই। এটাকে আমরা বলতে পারি ‘কোম্পানীর ভুত’ কিংবা ঔপনিবেশিক প্রভাব। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রমের পরেও চারুকলাবিষয়ক ভাবনা ও চর্চায় ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে আমরা খুব বেশি মুক্ত হতে পেরেছি কি? যেসব নতুন নতুন মাধ্যম আমাদের দেশে প্রচলিত হয়েছে সাম্প্রতিক চারুকলার রীতি বা মাধ্যম হিসেবে, তা কি আমরা নির্ধারণ কিংবা নির্মাণ করেছি? নাকি পশ্চিমা দেশে প্রচলিত রীতি ও ভাষা অনুসরণ, অনুকরণ কিংবা আত্মস্থ করেছি মাত্র? এসব বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে আশঙ্কা থাকে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চারুকলাও হয়তো পশ্চিমা রীতি ও শৈলীর অনুগামী হবে। এ পুঁজিবাদী দুনিয়ায় আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
লেখক: চারুশিল্পী ও গবেষক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে
২৬ জুলাই ২০২৩
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

যত দিন যাচ্ছে, এই ভাবনা আমার ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশে কিংবা বঙ্গদেশের মানুষেরা আসলে বাস করত চারুকলার জগতে, শিল্পের জগতে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শিল্প এমনভাবে মিলেমিশে ছিল যে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবি নাই বা ভাবনার প্রয়োজন বোধ করি নাই। এখনো হয়তো এ দেশের মানুষ কিছু মাত্রায় বাস করে
২৬ জুলাই ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫