গুঞ্জন রহমান

বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক

বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক
গুঞ্জন রহমান

বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক

বিশেষ দিনগুলো এলেই সুদূর শৈশব থেকে হাতছানি দেয় স্মৃতি। আমাদের তিনটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস উদ্যাপনের অলিখিত প্রটোকলই হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে দেশাত্মবোধক গান বাজানো। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’—এমনি আরও কয়েক শ গান রয়েছে আমাদের বাংলা গানের সমৃদ্ধ সংগ্রহে। সেসব গানের আলাদা একটা আবহ আছে বিশেষ দিন উদ্যাপনে। বহুবার শুনেও শ্রুতিমাধুর্য হারানো লক্কড়-ঝক্কর মাইক থেকে ভেসে আসা এই গানগুলো না শোনা পর্যন্ত মনেই হয় না, দেশে স্বাধীনতা দিবস এসেছে, বিজয় দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে। গানের একটা আলাদা শক্তি আছে বৈকি। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
অজস্র দেশাত্মবোধক গানের মধ্য থেকে, বিশেষ করে বিজয়ের গান আলাদা করা একটু কঠিন। যে গানে সুনির্দিষ্ট করে বিজয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু যা গাওয়া হয়েছে বিজয় অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়, সেই গানও তো বিজয়েরই গান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্য যেকোনো জনযুদ্ধের চেয়ে অনেক দিক থেকেই স্বতন্ত্র, যার চুলচেরা বিশ্লেষণ সমরবিদ বা ঐতিহাসিকগণ করতে পারবেন। আমি গানের মানুষ হিসেবে একটা দারুণ স্বাতন্ত্র্য দেখতে পাই। তা হচ্ছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় এই বেতার কেন্দ্র চালু ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী অনেক চেষ্টার পরও এটি বন্ধ করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শোনা থেকে বিরত করতে। এই সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রায় সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলেও তাঁদের অধিকাংশই নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা মুক্তির গান শুনে, যুদ্ধের গান শুনে, বিজয়ের গান শুনে একইভাবে উদ্দীপ্ত হতেন, যেভাবে উদ্দীপ্ত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্যই সুনির্দিষ্ট করে তৈরি হয়েছে আমাদের অনেকগুলো দেশাত্মবোধক গান।
বেতারের কথায় অপর একটি পর্যবেক্ষণ এখানে যুক্ত করা উচিত বলে মনে করছি। যেকোনো ভাষার গান সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখে যে দুই মাধ্যম, তার একটি হলো চলচ্চিত্র, অন্যটি বেতার। রেকর্ড কোম্পানিরও একটা বড় অবদান থাকে। তবে রেকর্ড কোম্পানির চেয়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের ভূমিকা অনেক বেশি এই কারণে যে, এই দুটো মাধ্যমই গানকে সরাসরি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে। সিনেমা মুক্তি পেলে তার গান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো এটি ঘটে সিনেমা মুক্তির আগেই। আর বেতার তাৎক্ষণিক সম্প্রচার যন্ত্র। তাই এই মাধ্যমগুলো গানের পেছনে বিনিয়োগও করতে পারে অনেক নিশ্চিন্তে, যেখানে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে রেকর্ড কোম্পানি। কারণ, তাদের আগেই বিনিয়োগ করে ন্যূনতমসংখ্যক রেকর্ড বিক্রি করে সেই বিনিয়োগ বাজার থেকে তুলে আনার একটা বাধ্যবাধকতা থাকে। যা হোক, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য গান যেমন সিনেমা ও বেতারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে, তেমনি অধিকাংশ দেশাত্মবোধক গানও তৈরি হয়েছে এই দুটো মাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বাধীনতার পরে এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে টেলিভিশন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান বা বিজয়ের গানের একটি বড় অংশ তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, পরে ছয় দফা আন্দোলন, তারও পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এগারো দফা আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এই প্রতিটি সংগ্রামের উপজাত হিসেবে আমরা পেয়েছি মণি-কাঞ্চনের মতো অগণিত কবিতা ও গান—গণজাগরণের গান। সে সময় রেডিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তাই রেডিও থেকে সেভাবে আমরা দেশের গান পাইনি। কিন্তু আমাদের সিনেমা কথা রেখেছে।
একাত্তরের আগে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটির কথাই ধরুন। ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ এবং ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এই তিন অসামান্য গানকে দারুণ মুনশিয়ানায় সে ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক জহির রায়হান এবং ছবির সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান। খান আতা এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর নিজের সৃষ্টি আরও একটি অসামান্য গণচেতনার গান। সেটি হলো ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।
খান আতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের গান রচনা করেছেন, বিজয়ের গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে একটি অসামান্য গান হলো ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/বাংলার আকাশে মুক্তির সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।’ আরও অনেক গানের মধ্যে এ গানটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আছে। এ গান দিয়ে তিনি আমাদের জাতিগত আচরণ ও অসুস্থ চর্চার নমুনা আগাম প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ গানের পরের চরণগুলো স্মরণ করলেই বুঝতে পারবেন, যুদ্ধ শেষের মাত্র কিছুদিন পরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এক নির্মম বাস্তবতার কথা।
আমাদের দেশে যেভাবে সবকিছুকে নিয়ে দলাদলি হয়, তার থেকে পার পায়নি আমাদের গানগুলোও! ভাবতে পারেন, এ দেশে ‘বাংলা’ নিয়ে গান গাইতে গেলেও তা দলাদলির শিকার হয়? ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’—দুটি গানেরই গীতিকবি এক ব্যক্তি হলে গান দুটি দুই দলের বলে বিবেচিত। গীতিকার পরে দলীয় মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও গান দুটি কিন্তু আলাদা করে কারও দলীয় সংগীত হিসেবে তিনি লেখেননি। সে যাই হোক, গানের কারণে শিল্পীকেও দলাদলির শিকার হতে হয়েছে বা হয়–এমন নজিরও আছে আমাদের সামনে। সেসব প্রসঙ্গে আপাতত যেতে চাই না।
কবীর সুমনের একটি বই পড়েছিলাম, যেটির নাম এ মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। সে বইয়ে তিনি সম্ভবত পাঁচ দশকের বাংলা গানের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছিলেন। সুমন ভারতীয় নাগরিক ও পশ্চিম বাংলার মানুষ বিধায় তাঁর রচনায় ওপার বাংলার গানই বেশি উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেনও সে দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু একটা জায়গায় তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন তাঁর দেশের সংগীত রচয়িতাদের। আর তা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের গান রচনা না করা। তিনি বিস্তর গবেষণা করে দেখেছেন, মাত্র দুটি গান তাঁরা করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে, যার একটি আবার আধখানা! অর্থাৎ, শচীন দেব বর্মণ তাঁর ইতিপূর্বে সৃষ্ট ‘তাকডুম তাকডুম বাজে/বাজে ভাঙ্গা ঢোল’ গানটিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করে তৈরি করেন ‘আমি তাকডুম তাকডুম বাজাই/বাংলাদেশের ঢোল’। সুমনের ভাষায় এ হলো ‘ভাঙ্গা’ গান।
গা ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়ানো একটি জাতি, সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী, পরম বন্ধু দেশের মুক্তিসংগ্রামের এমন উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচনা হতে দেখেও তাঁরা তা নিয়ে গান রচনা করতে আগ্রহী হলেন না। শচীন তো এই বাংলারই সন্তান। তাও একটা গোটা নতুন গান নয়, পুরোনো গানকে ‘মডিফাই’ করলেন তিনি। বাকিরা তাও করলেন না! অথচ ওই কলকাতায় দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী আপেল মাহমুদ এক পান দোকানির কাছে শুনছেন তাঁরই সৃষ্টি অমর গান ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’-এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা—‘কী গান গেয়েছে সালা, দেখেছেন দাদা? মনে হয় যেন, সব ছেড়ে ছুড়ে আমিই যুদ্ধে চলে যাই!’ অন্য সবকিছু ভুলে যান, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সুবিচার করতেও তো কিছু গান তাঁরা সৃষ্টি করতে পারতেন!
আমাদের সময়ে বিজয়ের গান রচনার কথা কিছু বলি। বাংলাদেশের ‘আধুনিক গান’ সৃষ্টিতে অনেকটা অবদান আছে এ দেশের ব্যান্ডগুলোর। বেতার টিভি বা চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় না থেকে অডিও ক্যাসেট কোম্পানির জোরে তারা অনেক অনেক গান সৃষ্টি করেছে সে সময়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, চলচ্চিত্রে বা রেডিও-টিভিতে গান গাইতে গেলে অডিশনের একটা ব্যাপার ছিল তখন। বড় বড় সংগীত পরিচালকেরা অডিশন নিতেন। খুঁজে বের করতেন প্রকৃত গীতিকবিদের, সুরকারদের, শিল্পীদের। গান তৈরি ও প্রকাশের ব্যাপারটা যখনই এই ‘অথোরাইজেশন’ ও ‘নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে চলে গেল, তখন থেকে গানের মান নেমে যেতে শুরু করল। বাংলা ব্যান্ডনির্ভর ক্যাসেট কোম্পানি ‘ডমিনেটেড’ বাজার ব্যবস্থা একদিকে অনেক ভালো গান প্রকাশ করেছে ও গানের শিল্পী-সুরকার-গীতিকার উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে সংগীতের মানের অবনতির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। যা হোক, সে অন্য প্রসঙ্গ। আপাতত সে কথায় যাচ্ছি না।
বলছিলাম, বিজয়ের গান রচনায় আধুনিক সময়ের অবদান, আরও নির্দিষ্ট করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অবদান নিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে গান করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে রেনেসাঁকে। তারা একটি পুরো অ্যালবামই তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার ও মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তীর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে প্রকাশিত ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ নামক সেই অ্যালবামে দুটি ইংরেজি গানও ছিল, ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে। গান দুটির রচয়িতা ও মূল শিল্পী কনসার্ট ফর বাংলাদেশখ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও জোয়ান বায়েজ। পাশাপাশি, রেনেসাঁই প্রথম নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান গাওয়ার সাহস করেছিল।
‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরও তিনটি গান তিনজন প্রধান ব্যান্ড তারকা উপহার দেন, প্রথমে আইয়ুব বাচ্চু, এর পর মাকসুদুল হক এবং তারপর জেমস। বাচ্চুর গানটি এক কথায় অসাধারণ, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার পুরোটাই তুলে ধরতে পারে। মাকসুদের গানটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ৯৫ ’, যা দুই যুগের বাংলাদেশকে তুলে ধরে। মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ পরের প্রজন্ম কীভাবে দেশকে দেখতে পায়, তার অভিনব এক চিত্রকল্প আঁকতে সক্ষম হন তিনি। তাঁর গানটিতে ব্যবহৃত কোরাস ‘কত উল্লাস কত আশা/শত মানুষের শত ভালোবাসা’ শিহরিত করে তোলে তরুণ শ্রোতাদের। তুলনামূলকভাবে, খানিকটা বিতর্কিত জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি।
ডিসেম্বর মাস চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি আমরা। এত দিনে এ দেশের গানের প্রবাহ ভীষণ গতিশীল হয়েছে। এত অল্প কথায় সে প্রবাহ ধরা যায় না। ৫০ বছরের বিজয়ের গান নিয়েও নয়। তার ওপর এ লেখা গান নিয়ে কোনো ‘গবেষণামূলক’ প্রবন্ধ নয়। আমি কেবল বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণের অব্যবহিত পূর্বের খানিকটা স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছি আমার গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে। তবে আমাদের গান নিয়ে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গান, স্বাধীনতা ও বিজয়ের গান নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা হওয়া যেমন উচিত, তেমনি বিশদ গবেষণার বাইরে সাধারণ মানুষের আলোচনা ও চর্চাতেও সে বিষয়গুলো আরও বেশি করে উঠে আসা উচিত।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
লেখক: কবি, গীতিকবি, কথাসাহিত্যিক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

গানের একটা আলাদা শক্তি আছে। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
১৬ ডিসেম্বর ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

গানের একটা আলাদা শক্তি আছে। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
১৬ ডিসেম্বর ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

গানের একটা আলাদা শক্তি আছে। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
১৬ ডিসেম্বর ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

গানের একটা আলাদা শক্তি আছে। এত বড় শক্তি যে, গান এমনকি অসম যুদ্ধ জিতে যাওয়ারও শক্তি জোগাতে পারে!
১৬ ডিসেম্বর ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫