পাভেল পার্থ

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায় তার চাষ আর সংগ্রহের জীবন। ধীরে ধীরে সব বদলে যাওয়ার দুনিয়ায় আজ জীবনের নানান রূপ বৈচিত্র্যও বিপন্ন। পৃথিবীব্যাপী তথাকথিত উন্নত আর ধনী দেশের যুদ্ধ তাণ্ডব আর প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ডে জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে খসে পড়ছে আমাদের প্রিয় ঋতুবৈচিত্র্যের রংবেরঙের ডানা। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবন আর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ব্যবহার দুনিয়ার জলবায়ুকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে।
ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত হয়ে ভেঙে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশের ছয়-ছয়টি বর্ণময় ঋতুর ডানা। নানান রঙের ডানায়, নানান প্রাণের পালক গুঁজে দিয়ে সুখী জীবনের আকাশে ওড়ার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলছি। এত সব হাহাকারের ভেতরও কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা, কি শরৎ , কি হেমন্ত, কি শীত, কি বসন্তে সমতল গ্রাম বা পাহাড়-জঙ্গলে যখন দেখি জীবনের জয়গানে নেচে ওঠে কৃষক জুমিয়া জেলে কামার কুমার তাঁতি মাঝি কবিরাজ বৈদ্য মৌয়াল বাওয়ালি বাউল পটুয়া চুনারি পাটনি পালাকার বাউল মন; তখন আবারও মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তিত দুনিয়ার বুকে দলিতমথিত ডানা নিয়ে সাত আসমান পাড়ি দেওয়ার সাহস কেবলমাত্র এই জনপদের নিম্নবর্গের জীবনেই আছে। আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে দুনিয়ার তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১০-২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলের বরফ স্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সালের ভেতর পৃথিবীর উষ্ণতা প্রায় ১ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণতা বাড়ার কারণে পৃথিবীর ২১ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে, ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ পানিঘাটতিতে পড়বে, ৫ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধায় তাড়িত হবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রাণবৈচিত্র্যের বিস্তৃতি হ্রাস পাবে, বিলুপ্তির হার বৃদ্ধি পাবে, প্রজনন বা বংশবিস্তারের সময়ের পরিবর্তন ঘটবে, প্রজাতির বৃদ্ধি ও প্রতিবেশগত পরিসরের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত এই বিপন্ন সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার সাধারণ কৃষি ও জুমনির্ভর জনগণ নিজেদের এলাকায় চারপাশে কেবলমাত্র দুটি কি তিনটি ঋতুর বদল বুঝতে পারেন এবং টের পান। ষড়্ঋতুর এই করুণ পরিণতি সব দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বিপদবার্তা তৈরি করছে। একদিকে যেমন বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শস্য ফসলের হাজার জাত, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অগণিত প্রাণবৈচিত্র্য। আরেকদিকে আমাদের ঋতুভিত্তিক অভ্যাস ও আচার-আচরণ কী নিদারুণভাবে বদলে যেতেও বাধ্য হচ্ছে। অথচ এই ষড়্ঋতুর অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই জনজীবন সাজিয়েছিল এককালে তার ঋতু বরণ কি বিদায়ের সব উৎসব ও উদ্দীপনা। ষড়্ঋতুর ডানা ঠিক রাখতে না পারলে বাংলাদেশের জনগণের অনন্য পারস্পরিক সম্পর্ক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সব ধারাবাহিকতা অচিরেই ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে যা আমাদের সবার জন্যই তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপন্নতা। জলবায়ুজনিত এই পরিবর্তিত সময়েও বাংলাদেশের নানান প্রান্ত থেকে এখনো বর্ণময় ষড়্ঋতুর যে ডানা ভাঙা ঝাপটানি টের পাওয়া যায়, তা নিয়েই এই ছোট্ট ফিরিস্তি।
গ্রীষ্মকাল
কোল পাতলা ডাগর গুছি
লক্ষ্মী বলে ঐখানে আছি
খনার বচন
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দিয়ে শুরু হয় বাঙালির বাংলা বছর, জমে ওঠে গ্রীষ্মের তাপ ও ঝড়ের আলোড়ন। বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এখনো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের হিসাবনিকাশ হয়। কেবলমাত্র শহর এলাকায়, সরকারি কাগজপত্র কি মুদ্রিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ভিন্ন বাংলা সনের হিসাব। যার সঙ্গে গ্রাম জনপদের মানুষের বছর গোনাগুনতি ও পালনের কোনো মিল নেই। বৈশাখ থেকেই শুরু হয় আউশ ধান বোনার মৌসুম আর পাহাড়ে পাহাড়ে আদিবাসী এলাকায় জুম ধান বোনায় ব্যস্ত থাকেন জুমিয়ারা। অনেক এলাকায় পাট লাগানো হয়, তিল-তিসি তোলা হয়, বর্তমানে এ সময়ে কাটা হয় উফশীজাতের ধান (যদিও বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এই ধান ইরি ধান নামেই প্রচলিত)। এ সময়ে ঝড়-তুফান বেশি হয় বলে গ্রামের মানুষেরা ঘরদুয়ার-গোয়ালঘর-গোলাঘর আবারও মজবুত করে বাঁধেন, বেদেরা নদীর তীরে তীরে নৌকা বহরখানি নিরাপদে নিয়ে যান। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালিরা আয়োজন করে শুভ নববর্ষ; চাকমারা বিজু; রাখাইনরা সংগ্রেং; মারমারা সাংগ্রাই; ত্রিপুরারা বৈসুক; বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা বিষু উৎসব। নতুন বছরের হিসাবনিকাশ, দেনা-পাওনা মিটিয়ে ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের শুভ হালখাতায় লাগে সিঁদুর আর কাঁচা হলুদের দাগ। গ্রামে গ্রামে যেমন নাইল্যা-গিমা-কলমি নানান জাতের তিতা শাক খাওয়ার ভেতর দিয়ে শুরু হয় পয়লা বৈশাখ, তেমনি শহরে জমে ওঠে পান্তা আর ইলিশ খাওয়ার ধুম। ইদানীং পিৎজা হাট কি কেএফসির মতো করপোরেট খাদ্য দোকানদারেরাও পয়লা বৈশাখের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালের গরমের তীব্রতা গ্রীষ্মকালে আর থাকছে না, কালবৈশাখী গ্রীষ্মকাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে স্থানীয় জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।
বর্ষাকাল
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপয়ে যে ধান
সুখে থাকে কৃষি বল বাড়য়ে সম্মান
খনার বচন
ঢপ ঢপ ছলছল বর্ষাকাল আর ঋতুভিত্তিক বর্ষা মৌসুমের বন্যা এখন আর বাংলাদেশে হয় না। এখন হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে মেঘালয় পাহাড় থেকে নামে পাহাড়ি ঢল, হয় অকাল বন্যা আর নদ-নদী সব দখল ও নিশ্চিহ্ন বলে বাড়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ সময়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়, মাঠে মাঠে আমনের রোয়া লাগাতে লাগাতে আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে যায়। বর্ষার দিনে হাওর থেকে শিশুরা কুড়িয়ে আনে শালুক-পানিফল-ঢ্যাপ আর নারীরা নানান জাতের শাক। পয়লা বর্ষার দিনে পাহাড়-জঙ্গল থেকে খাসিয়ারা খুঁজে আনেন তেতস্লাং, মান্দিরা দামবং, চাকমারা হকেংমূল মানে নানান জাতের ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম), যা আমাদের খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আনে, একই সঙ্গে তা পুষ্টিও জোগায়। বর্ষা হাওর ও বিল অঞ্চলের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ঋতু যে বর্ষাকালেই হাওরাঞ্চলে নৌকা যাতায়াতের সুবিধার কারণে বিয়েশাদি বেশি হয়। হাওরের অধিকাংশ ধামাইল, কীর্তন, ঢপযাত্রা, গীত রচিত ও চর্চিত হয় এখনো এই বর্ষার দিনেই। বর্ষার দিনে গ্রামে গ্রামে বয়স্ক ব্যক্তিরা জমিয়ে তোলেন গল্পের আসর, সেই সব আসর আরও উৎসাহী করে তোলে চাল ভাজা-বাদাম ভাজা-শিম বিচি ভাজা-কাঁঠাল বিচি ভাজা। বাংলার লোকদেবী মনসা পূজার এই তো সময়, বেহুলা-লখিন্দরের ভেলা ভাসানোর স্মৃতি নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করতে করতে ভাটি এলাকার নারীরা সুর তোলেন ধামাইল গীতের।
শরৎকাল
ভাদ্রের চারি আশ্বিনের চারি
কলাই রোবে যত পারি
খনার বচন
ভাদ্র-আশ্বিন মাস নিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোপ লাগিয়ে, নদীর তীরে কাশঝাড়ের নাচন বলে দেয় এসেছে শরৎ। কিন্তু গ্রামবাংলায় এই ঋতু সম্পূর্ণ উধাও হয়েছে। এখন গ্রামে কাশঝাড় পাওয়া গেলেও শরৎকাল খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। ভাদ্র মাসে তার বাদেও তাল পাকে। তালের পিঠা এবং তাল নবমী এই ঋতুর এক অনন্য গ্রামীণ আয়োজন। ভাদ্র মাস থেকে আউশ ধান কাটা হয়, অনেক এলাকায় সরিষা বুনতে শুরু করেন কৃষকেরা। বাঙালি হিন্দুর শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য কারিগরেরা জোগাড় করতে থাকেন নানান জাতের মাটি, আমন-আউশের খড়, বাঁশ আরও কত-কী!
হেমন্তকাল
আশ্বিনের উনিশ কার্তিকের উনিশ
বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কলাই বুনিস
খনার বচন
কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তকাল। শুরু হয় আমন ধান কাটার পর্ব, ধান ঘরে তোলার পর গ্রামে গ্রামে নয়া ফসল খাওয়ার উৎসব নবান্ন। মান্দিরা এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বড় আয়োজনের সামাজিক উৎসব ওয়ান্না পালন করে আর কোচদের হয় গিদেলচাওয়া। আবছা শীতের আমেজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুলা, পালংশাক, খেসারি, কলাই বোনা শুরু হয়। কার্তিক মাসেই ধান কাটার আগেভাগে গ্রামে গ্রামে অভাব ছড়িয়ে পড়ে। কুড়িয়ে পাওয়া নানান শাকসবজি উত্তর জনপদের মানুষের এই কঠিন মঙ্গার কাল পাড়ি দিতে সহভাগী হয়। ধান কাটার পর পরই জমিনগুলো শিশুদের বউচি-কুতকুত-দাঁড়িয়াবান্ধা-গোল্লাছুট-হা-ডু-ডু-পাতাপলান্তি খেলার মাঠ হয়ে ওঠে, গরু-ছাগলগুলোও পায় এক বিস্তৃত চারণভূমি। হাওর এলাকায় শুরু হতে থাকে আড়ঙ্গ, মানে ষাঁড়ের লড়াই। এ সময়ই দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে, সুন্দরবনের দুবলারচরে, কমলগঞ্জে মণিপুরি এলাকায় জমে ওঠে রাসমেলা। অধিকাংশ মাজার শরিফ ও মোকামমে এই সময়টাতেই ওরস ও মেলার আয়োজন হয়। হাওর এলাকায় বর্ষা বাদে হেমন্ত এক প্রধান ঋতু। এ সময়ে হাওর এলাকায় হাঁটা ছাড়া তেমন কোনো গতি নেই সর্বত্র, যদিও এখন মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
শীতকাল
ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল
ক’র বাপু চাষার ছাওয়াল
খনার বচন
শীতের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে লালসালু কাপড় মুড়িয়ে শিমুল-কার্পাস তুলার লেপ বানানোর জন্য ধুনকরদের আনাগোনা বেড়ে যায় এখনো এই সিনথেটিক কম্বল আর প্লাস্টিক কাপড়ের যুগে। বর্তমান এই সময়েই মাঠে মাঠে ইরি-বিরি (উফশী) ধান ফলাতে ব্যস্ত থাকতে হয় কৃষকদের। এই সময়ে উফশী চাষে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হওয়ায় ধীরে ধীরে নেমে যায় পানির স্তর। ধানের জমিনে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক সার-বিষ-আগাছানাশক ব্যবহৃত হয়। পৌষসংক্রান্তিতে দেশীয় ধানের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়, জমে ওঠে পৌষমেলা। খেজুরের রস থেকে গুড় বানানোর জন্য গ্রামের নারীরা তৈরি করেন নানান আকৃতির মাটির চুলা। এ সময়েই লালবুবা-প্যারিহাঁস-বালিহাঁস-ল্যাঞ্জা-সরালিসহ অগণিত অতিথি পাখিতে ভরে যায় জলাভূমি অঞ্চল। শীতের কই মাছ, হাওরের মাখনা ফল, পাহাড়ি এলাকায় কাঁকড়া-কুইচ্চ্যা-শামুক খাবারে আনে পুষ্টি ও ভিন্ন মাত্রা। আদিবাসী এলাকাগুলোয় জুম ধানের ভাত থেকে তৈরি চু-দোচুয়ানি-হাঁড়িয়া-খর এই সব ঐতিহ্যগত পানীয় আয়োজন জমে ওঠে। হাওর এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে মানুষেরা দেখতে আসে ষাঁড়ের লড়াই, নানান পসরা নিয়ে বসে আড়ঙ্গ। সিলেটের লালেং আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক আয়োজন ত্তিল সাংরাইন, জৈন্তিয়া আদিবাসীদের বার্ষিক হকতই, কোচদের পুষরা, বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি উৎসব আর মেলার যা-ও কিছু ছিটেফোঁটা এখনো আছে, তা এই শীতকালকে ঘিরেই। তবে দিনে দিনে শীতকালে শীতের তীব্রতা অনেক কমে যাচ্ছে, শহর এলাকায় বলতে গেলে একদম নেই।
বসন্তকাল
ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট
সেই তিল দায়ে কাট
খনার বচন
ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে শুরু হয় আড়ম্বরপূর্ণ বসন্তকাল। শাল-মহুয়া-মান্দার-পলাশসহ নানান গাছে গাছে গজায় নতুন পাতা, শাখায় শাখায় রংবেরঙের ফুল। এ সময়ে খোসপাঁচড়াসহ নানান চুলকানি রোগ হয় বলে নিমপাতা-হলুদ-দাদমর্দন পাতা বাটা চলে ঘরে ঘরে। আলু তোলা শেষ হয়, পটোল ঢ্যাঁড়স-ঝিঙে-মরিচ-বেগুন-মিষ্টিকুমড়া-পুঁইশাক লাগানো হয়। বোরো ধান লাগানো শুরু হয়। ফাল্গুনে বাঙালি গ্রামে নানান জাতের শাক দিয়ে পালিত হয় আটআনাজ বর্ত। বসন্তে কোকিল যেমন গান গায়, গানের আসর বসে বাউলের আখড়ায়ও। চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়কের মেলায় পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। চা-বাগানগুলোতে বাগানি ও চা-শ্রমিকেরা মিলে আয়োজন করেন দণ্ড বর্ত। টাঙ্গাইল অঞ্চলে এ সময় গ্রামের পুরুষেরা মিলে সংযাত্রা পালার ভেতর দিয়ে স্থানীয় সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা বিষয়ে বাংলা রচনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের ষড়্ঋত’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই রচনাটি ভুলভাবে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পাঠ করানো হচ্ছে। অধিকাংশ বাংলা রচনা বইয়ে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর যে বিবরণ ও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সব দিক থেকেই চলতি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খুব একপক্ষীয় কায়দায় বাংলাদেশের এককালীন ঋতুর বৈচিত্র্যকে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতায় নিজেদের অঞ্চলে বাংলাদেশের ঋতুর বৈচিত্র্য দেখছে, তারাই পারে তা নিজেদের মতো করে তুলে ধরতে। আর সেটিই হবে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নতুন রচনা। দেশের সবার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নয়া পাঠ আজ তৈরি করা জরুরি। তা না হলে ডানা ভাঙা এই ষড়্ঋতুর দেশে আমরা হয়তো শেষমেশ আর কাউকেই খুঁজে পাব না যে ঋতুর অদলবদলগুলো ভেতর থেকে টের পাবে। নিজেকে গড়ে তুলবে ষড়্ঋতুর মতো বর্ণ ও বৈভবে অনর্গল।
লেখক: গবেষক

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায় তার চাষ আর সংগ্রহের জীবন। ধীরে ধীরে সব বদলে যাওয়ার দুনিয়ায় আজ জীবনের নানান রূপ বৈচিত্র্যও বিপন্ন। পৃথিবীব্যাপী তথাকথিত উন্নত আর ধনী দেশের যুদ্ধ তাণ্ডব আর প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ডে জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে খসে পড়ছে আমাদের প্রিয় ঋতুবৈচিত্র্যের রংবেরঙের ডানা। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবন আর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ব্যবহার দুনিয়ার জলবায়ুকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে।
ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত হয়ে ভেঙে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশের ছয়-ছয়টি বর্ণময় ঋতুর ডানা। নানান রঙের ডানায়, নানান প্রাণের পালক গুঁজে দিয়ে সুখী জীবনের আকাশে ওড়ার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলছি। এত সব হাহাকারের ভেতরও কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা, কি শরৎ , কি হেমন্ত, কি শীত, কি বসন্তে সমতল গ্রাম বা পাহাড়-জঙ্গলে যখন দেখি জীবনের জয়গানে নেচে ওঠে কৃষক জুমিয়া জেলে কামার কুমার তাঁতি মাঝি কবিরাজ বৈদ্য মৌয়াল বাওয়ালি বাউল পটুয়া চুনারি পাটনি পালাকার বাউল মন; তখন আবারও মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তিত দুনিয়ার বুকে দলিতমথিত ডানা নিয়ে সাত আসমান পাড়ি দেওয়ার সাহস কেবলমাত্র এই জনপদের নিম্নবর্গের জীবনেই আছে। আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে দুনিয়ার তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১০-২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলের বরফ স্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সালের ভেতর পৃথিবীর উষ্ণতা প্রায় ১ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণতা বাড়ার কারণে পৃথিবীর ২১ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে, ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ পানিঘাটতিতে পড়বে, ৫ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধায় তাড়িত হবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রাণবৈচিত্র্যের বিস্তৃতি হ্রাস পাবে, বিলুপ্তির হার বৃদ্ধি পাবে, প্রজনন বা বংশবিস্তারের সময়ের পরিবর্তন ঘটবে, প্রজাতির বৃদ্ধি ও প্রতিবেশগত পরিসরের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত এই বিপন্ন সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার সাধারণ কৃষি ও জুমনির্ভর জনগণ নিজেদের এলাকায় চারপাশে কেবলমাত্র দুটি কি তিনটি ঋতুর বদল বুঝতে পারেন এবং টের পান। ষড়্ঋতুর এই করুণ পরিণতি সব দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বিপদবার্তা তৈরি করছে। একদিকে যেমন বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শস্য ফসলের হাজার জাত, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অগণিত প্রাণবৈচিত্র্য। আরেকদিকে আমাদের ঋতুভিত্তিক অভ্যাস ও আচার-আচরণ কী নিদারুণভাবে বদলে যেতেও বাধ্য হচ্ছে। অথচ এই ষড়্ঋতুর অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই জনজীবন সাজিয়েছিল এককালে তার ঋতু বরণ কি বিদায়ের সব উৎসব ও উদ্দীপনা। ষড়্ঋতুর ডানা ঠিক রাখতে না পারলে বাংলাদেশের জনগণের অনন্য পারস্পরিক সম্পর্ক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সব ধারাবাহিকতা অচিরেই ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে যা আমাদের সবার জন্যই তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপন্নতা। জলবায়ুজনিত এই পরিবর্তিত সময়েও বাংলাদেশের নানান প্রান্ত থেকে এখনো বর্ণময় ষড়্ঋতুর যে ডানা ভাঙা ঝাপটানি টের পাওয়া যায়, তা নিয়েই এই ছোট্ট ফিরিস্তি।
গ্রীষ্মকাল
কোল পাতলা ডাগর গুছি
লক্ষ্মী বলে ঐখানে আছি
খনার বচন
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দিয়ে শুরু হয় বাঙালির বাংলা বছর, জমে ওঠে গ্রীষ্মের তাপ ও ঝড়ের আলোড়ন। বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এখনো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের হিসাবনিকাশ হয়। কেবলমাত্র শহর এলাকায়, সরকারি কাগজপত্র কি মুদ্রিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ভিন্ন বাংলা সনের হিসাব। যার সঙ্গে গ্রাম জনপদের মানুষের বছর গোনাগুনতি ও পালনের কোনো মিল নেই। বৈশাখ থেকেই শুরু হয় আউশ ধান বোনার মৌসুম আর পাহাড়ে পাহাড়ে আদিবাসী এলাকায় জুম ধান বোনায় ব্যস্ত থাকেন জুমিয়ারা। অনেক এলাকায় পাট লাগানো হয়, তিল-তিসি তোলা হয়, বর্তমানে এ সময়ে কাটা হয় উফশীজাতের ধান (যদিও বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এই ধান ইরি ধান নামেই প্রচলিত)। এ সময়ে ঝড়-তুফান বেশি হয় বলে গ্রামের মানুষেরা ঘরদুয়ার-গোয়ালঘর-গোলাঘর আবারও মজবুত করে বাঁধেন, বেদেরা নদীর তীরে তীরে নৌকা বহরখানি নিরাপদে নিয়ে যান। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালিরা আয়োজন করে শুভ নববর্ষ; চাকমারা বিজু; রাখাইনরা সংগ্রেং; মারমারা সাংগ্রাই; ত্রিপুরারা বৈসুক; বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা বিষু উৎসব। নতুন বছরের হিসাবনিকাশ, দেনা-পাওনা মিটিয়ে ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের শুভ হালখাতায় লাগে সিঁদুর আর কাঁচা হলুদের দাগ। গ্রামে গ্রামে যেমন নাইল্যা-গিমা-কলমি নানান জাতের তিতা শাক খাওয়ার ভেতর দিয়ে শুরু হয় পয়লা বৈশাখ, তেমনি শহরে জমে ওঠে পান্তা আর ইলিশ খাওয়ার ধুম। ইদানীং পিৎজা হাট কি কেএফসির মতো করপোরেট খাদ্য দোকানদারেরাও পয়লা বৈশাখের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালের গরমের তীব্রতা গ্রীষ্মকালে আর থাকছে না, কালবৈশাখী গ্রীষ্মকাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে স্থানীয় জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।
বর্ষাকাল
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপয়ে যে ধান
সুখে থাকে কৃষি বল বাড়য়ে সম্মান
খনার বচন
ঢপ ঢপ ছলছল বর্ষাকাল আর ঋতুভিত্তিক বর্ষা মৌসুমের বন্যা এখন আর বাংলাদেশে হয় না। এখন হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে মেঘালয় পাহাড় থেকে নামে পাহাড়ি ঢল, হয় অকাল বন্যা আর নদ-নদী সব দখল ও নিশ্চিহ্ন বলে বাড়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ সময়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়, মাঠে মাঠে আমনের রোয়া লাগাতে লাগাতে আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে যায়। বর্ষার দিনে হাওর থেকে শিশুরা কুড়িয়ে আনে শালুক-পানিফল-ঢ্যাপ আর নারীরা নানান জাতের শাক। পয়লা বর্ষার দিনে পাহাড়-জঙ্গল থেকে খাসিয়ারা খুঁজে আনেন তেতস্লাং, মান্দিরা দামবং, চাকমারা হকেংমূল মানে নানান জাতের ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম), যা আমাদের খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আনে, একই সঙ্গে তা পুষ্টিও জোগায়। বর্ষা হাওর ও বিল অঞ্চলের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ঋতু যে বর্ষাকালেই হাওরাঞ্চলে নৌকা যাতায়াতের সুবিধার কারণে বিয়েশাদি বেশি হয়। হাওরের অধিকাংশ ধামাইল, কীর্তন, ঢপযাত্রা, গীত রচিত ও চর্চিত হয় এখনো এই বর্ষার দিনেই। বর্ষার দিনে গ্রামে গ্রামে বয়স্ক ব্যক্তিরা জমিয়ে তোলেন গল্পের আসর, সেই সব আসর আরও উৎসাহী করে তোলে চাল ভাজা-বাদাম ভাজা-শিম বিচি ভাজা-কাঁঠাল বিচি ভাজা। বাংলার লোকদেবী মনসা পূজার এই তো সময়, বেহুলা-লখিন্দরের ভেলা ভাসানোর স্মৃতি নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করতে করতে ভাটি এলাকার নারীরা সুর তোলেন ধামাইল গীতের।
শরৎকাল
ভাদ্রের চারি আশ্বিনের চারি
কলাই রোবে যত পারি
খনার বচন
ভাদ্র-আশ্বিন মাস নিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোপ লাগিয়ে, নদীর তীরে কাশঝাড়ের নাচন বলে দেয় এসেছে শরৎ। কিন্তু গ্রামবাংলায় এই ঋতু সম্পূর্ণ উধাও হয়েছে। এখন গ্রামে কাশঝাড় পাওয়া গেলেও শরৎকাল খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। ভাদ্র মাসে তার বাদেও তাল পাকে। তালের পিঠা এবং তাল নবমী এই ঋতুর এক অনন্য গ্রামীণ আয়োজন। ভাদ্র মাস থেকে আউশ ধান কাটা হয়, অনেক এলাকায় সরিষা বুনতে শুরু করেন কৃষকেরা। বাঙালি হিন্দুর শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য কারিগরেরা জোগাড় করতে থাকেন নানান জাতের মাটি, আমন-আউশের খড়, বাঁশ আরও কত-কী!
হেমন্তকাল
আশ্বিনের উনিশ কার্তিকের উনিশ
বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কলাই বুনিস
খনার বচন
কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তকাল। শুরু হয় আমন ধান কাটার পর্ব, ধান ঘরে তোলার পর গ্রামে গ্রামে নয়া ফসল খাওয়ার উৎসব নবান্ন। মান্দিরা এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বড় আয়োজনের সামাজিক উৎসব ওয়ান্না পালন করে আর কোচদের হয় গিদেলচাওয়া। আবছা শীতের আমেজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুলা, পালংশাক, খেসারি, কলাই বোনা শুরু হয়। কার্তিক মাসেই ধান কাটার আগেভাগে গ্রামে গ্রামে অভাব ছড়িয়ে পড়ে। কুড়িয়ে পাওয়া নানান শাকসবজি উত্তর জনপদের মানুষের এই কঠিন মঙ্গার কাল পাড়ি দিতে সহভাগী হয়। ধান কাটার পর পরই জমিনগুলো শিশুদের বউচি-কুতকুত-দাঁড়িয়াবান্ধা-গোল্লাছুট-হা-ডু-ডু-পাতাপলান্তি খেলার মাঠ হয়ে ওঠে, গরু-ছাগলগুলোও পায় এক বিস্তৃত চারণভূমি। হাওর এলাকায় শুরু হতে থাকে আড়ঙ্গ, মানে ষাঁড়ের লড়াই। এ সময়ই দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে, সুন্দরবনের দুবলারচরে, কমলগঞ্জে মণিপুরি এলাকায় জমে ওঠে রাসমেলা। অধিকাংশ মাজার শরিফ ও মোকামমে এই সময়টাতেই ওরস ও মেলার আয়োজন হয়। হাওর এলাকায় বর্ষা বাদে হেমন্ত এক প্রধান ঋতু। এ সময়ে হাওর এলাকায় হাঁটা ছাড়া তেমন কোনো গতি নেই সর্বত্র, যদিও এখন মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
শীতকাল
ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল
ক’র বাপু চাষার ছাওয়াল
খনার বচন
শীতের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে লালসালু কাপড় মুড়িয়ে শিমুল-কার্পাস তুলার লেপ বানানোর জন্য ধুনকরদের আনাগোনা বেড়ে যায় এখনো এই সিনথেটিক কম্বল আর প্লাস্টিক কাপড়ের যুগে। বর্তমান এই সময়েই মাঠে মাঠে ইরি-বিরি (উফশী) ধান ফলাতে ব্যস্ত থাকতে হয় কৃষকদের। এই সময়ে উফশী চাষে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হওয়ায় ধীরে ধীরে নেমে যায় পানির স্তর। ধানের জমিনে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক সার-বিষ-আগাছানাশক ব্যবহৃত হয়। পৌষসংক্রান্তিতে দেশীয় ধানের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়, জমে ওঠে পৌষমেলা। খেজুরের রস থেকে গুড় বানানোর জন্য গ্রামের নারীরা তৈরি করেন নানান আকৃতির মাটির চুলা। এ সময়েই লালবুবা-প্যারিহাঁস-বালিহাঁস-ল্যাঞ্জা-সরালিসহ অগণিত অতিথি পাখিতে ভরে যায় জলাভূমি অঞ্চল। শীতের কই মাছ, হাওরের মাখনা ফল, পাহাড়ি এলাকায় কাঁকড়া-কুইচ্চ্যা-শামুক খাবারে আনে পুষ্টি ও ভিন্ন মাত্রা। আদিবাসী এলাকাগুলোয় জুম ধানের ভাত থেকে তৈরি চু-দোচুয়ানি-হাঁড়িয়া-খর এই সব ঐতিহ্যগত পানীয় আয়োজন জমে ওঠে। হাওর এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে মানুষেরা দেখতে আসে ষাঁড়ের লড়াই, নানান পসরা নিয়ে বসে আড়ঙ্গ। সিলেটের লালেং আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক আয়োজন ত্তিল সাংরাইন, জৈন্তিয়া আদিবাসীদের বার্ষিক হকতই, কোচদের পুষরা, বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি উৎসব আর মেলার যা-ও কিছু ছিটেফোঁটা এখনো আছে, তা এই শীতকালকে ঘিরেই। তবে দিনে দিনে শীতকালে শীতের তীব্রতা অনেক কমে যাচ্ছে, শহর এলাকায় বলতে গেলে একদম নেই।
বসন্তকাল
ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট
সেই তিল দায়ে কাট
খনার বচন
ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে শুরু হয় আড়ম্বরপূর্ণ বসন্তকাল। শাল-মহুয়া-মান্দার-পলাশসহ নানান গাছে গাছে গজায় নতুন পাতা, শাখায় শাখায় রংবেরঙের ফুল। এ সময়ে খোসপাঁচড়াসহ নানান চুলকানি রোগ হয় বলে নিমপাতা-হলুদ-দাদমর্দন পাতা বাটা চলে ঘরে ঘরে। আলু তোলা শেষ হয়, পটোল ঢ্যাঁড়স-ঝিঙে-মরিচ-বেগুন-মিষ্টিকুমড়া-পুঁইশাক লাগানো হয়। বোরো ধান লাগানো শুরু হয়। ফাল্গুনে বাঙালি গ্রামে নানান জাতের শাক দিয়ে পালিত হয় আটআনাজ বর্ত। বসন্তে কোকিল যেমন গান গায়, গানের আসর বসে বাউলের আখড়ায়ও। চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়কের মেলায় পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। চা-বাগানগুলোতে বাগানি ও চা-শ্রমিকেরা মিলে আয়োজন করেন দণ্ড বর্ত। টাঙ্গাইল অঞ্চলে এ সময় গ্রামের পুরুষেরা মিলে সংযাত্রা পালার ভেতর দিয়ে স্থানীয় সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা বিষয়ে বাংলা রচনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের ষড়্ঋত’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই রচনাটি ভুলভাবে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পাঠ করানো হচ্ছে। অধিকাংশ বাংলা রচনা বইয়ে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর যে বিবরণ ও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সব দিক থেকেই চলতি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খুব একপক্ষীয় কায়দায় বাংলাদেশের এককালীন ঋতুর বৈচিত্র্যকে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতায় নিজেদের অঞ্চলে বাংলাদেশের ঋতুর বৈচিত্র্য দেখছে, তারাই পারে তা নিজেদের মতো করে তুলে ধরতে। আর সেটিই হবে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নতুন রচনা। দেশের সবার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নয়া পাঠ আজ তৈরি করা জরুরি। তা না হলে ডানা ভাঙা এই ষড়্ঋতুর দেশে আমরা হয়তো শেষমেশ আর কাউকেই খুঁজে পাব না যে ঋতুর অদলবদলগুলো ভেতর থেকে টের পাবে। নিজেকে গড়ে তুলবে ষড়্ঋতুর মতো বর্ণ ও বৈভবে অনর্গল।
লেখক: গবেষক
পাভেল পার্থ

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায় তার চাষ আর সংগ্রহের জীবন। ধীরে ধীরে সব বদলে যাওয়ার দুনিয়ায় আজ জীবনের নানান রূপ বৈচিত্র্যও বিপন্ন। পৃথিবীব্যাপী তথাকথিত উন্নত আর ধনী দেশের যুদ্ধ তাণ্ডব আর প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ডে জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে খসে পড়ছে আমাদের প্রিয় ঋতুবৈচিত্র্যের রংবেরঙের ডানা। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবন আর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ব্যবহার দুনিয়ার জলবায়ুকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে।
ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত হয়ে ভেঙে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশের ছয়-ছয়টি বর্ণময় ঋতুর ডানা। নানান রঙের ডানায়, নানান প্রাণের পালক গুঁজে দিয়ে সুখী জীবনের আকাশে ওড়ার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলছি। এত সব হাহাকারের ভেতরও কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা, কি শরৎ , কি হেমন্ত, কি শীত, কি বসন্তে সমতল গ্রাম বা পাহাড়-জঙ্গলে যখন দেখি জীবনের জয়গানে নেচে ওঠে কৃষক জুমিয়া জেলে কামার কুমার তাঁতি মাঝি কবিরাজ বৈদ্য মৌয়াল বাওয়ালি বাউল পটুয়া চুনারি পাটনি পালাকার বাউল মন; তখন আবারও মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তিত দুনিয়ার বুকে দলিতমথিত ডানা নিয়ে সাত আসমান পাড়ি দেওয়ার সাহস কেবলমাত্র এই জনপদের নিম্নবর্গের জীবনেই আছে। আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে দুনিয়ার তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১০-২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলের বরফ স্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সালের ভেতর পৃথিবীর উষ্ণতা প্রায় ১ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণতা বাড়ার কারণে পৃথিবীর ২১ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে, ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ পানিঘাটতিতে পড়বে, ৫ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধায় তাড়িত হবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রাণবৈচিত্র্যের বিস্তৃতি হ্রাস পাবে, বিলুপ্তির হার বৃদ্ধি পাবে, প্রজনন বা বংশবিস্তারের সময়ের পরিবর্তন ঘটবে, প্রজাতির বৃদ্ধি ও প্রতিবেশগত পরিসরের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত এই বিপন্ন সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার সাধারণ কৃষি ও জুমনির্ভর জনগণ নিজেদের এলাকায় চারপাশে কেবলমাত্র দুটি কি তিনটি ঋতুর বদল বুঝতে পারেন এবং টের পান। ষড়্ঋতুর এই করুণ পরিণতি সব দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বিপদবার্তা তৈরি করছে। একদিকে যেমন বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শস্য ফসলের হাজার জাত, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অগণিত প্রাণবৈচিত্র্য। আরেকদিকে আমাদের ঋতুভিত্তিক অভ্যাস ও আচার-আচরণ কী নিদারুণভাবে বদলে যেতেও বাধ্য হচ্ছে। অথচ এই ষড়্ঋতুর অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই জনজীবন সাজিয়েছিল এককালে তার ঋতু বরণ কি বিদায়ের সব উৎসব ও উদ্দীপনা। ষড়্ঋতুর ডানা ঠিক রাখতে না পারলে বাংলাদেশের জনগণের অনন্য পারস্পরিক সম্পর্ক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সব ধারাবাহিকতা অচিরেই ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে যা আমাদের সবার জন্যই তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপন্নতা। জলবায়ুজনিত এই পরিবর্তিত সময়েও বাংলাদেশের নানান প্রান্ত থেকে এখনো বর্ণময় ষড়্ঋতুর যে ডানা ভাঙা ঝাপটানি টের পাওয়া যায়, তা নিয়েই এই ছোট্ট ফিরিস্তি।
গ্রীষ্মকাল
কোল পাতলা ডাগর গুছি
লক্ষ্মী বলে ঐখানে আছি
খনার বচন
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দিয়ে শুরু হয় বাঙালির বাংলা বছর, জমে ওঠে গ্রীষ্মের তাপ ও ঝড়ের আলোড়ন। বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এখনো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের হিসাবনিকাশ হয়। কেবলমাত্র শহর এলাকায়, সরকারি কাগজপত্র কি মুদ্রিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ভিন্ন বাংলা সনের হিসাব। যার সঙ্গে গ্রাম জনপদের মানুষের বছর গোনাগুনতি ও পালনের কোনো মিল নেই। বৈশাখ থেকেই শুরু হয় আউশ ধান বোনার মৌসুম আর পাহাড়ে পাহাড়ে আদিবাসী এলাকায় জুম ধান বোনায় ব্যস্ত থাকেন জুমিয়ারা। অনেক এলাকায় পাট লাগানো হয়, তিল-তিসি তোলা হয়, বর্তমানে এ সময়ে কাটা হয় উফশীজাতের ধান (যদিও বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এই ধান ইরি ধান নামেই প্রচলিত)। এ সময়ে ঝড়-তুফান বেশি হয় বলে গ্রামের মানুষেরা ঘরদুয়ার-গোয়ালঘর-গোলাঘর আবারও মজবুত করে বাঁধেন, বেদেরা নদীর তীরে তীরে নৌকা বহরখানি নিরাপদে নিয়ে যান। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালিরা আয়োজন করে শুভ নববর্ষ; চাকমারা বিজু; রাখাইনরা সংগ্রেং; মারমারা সাংগ্রাই; ত্রিপুরারা বৈসুক; বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা বিষু উৎসব। নতুন বছরের হিসাবনিকাশ, দেনা-পাওনা মিটিয়ে ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের শুভ হালখাতায় লাগে সিঁদুর আর কাঁচা হলুদের দাগ। গ্রামে গ্রামে যেমন নাইল্যা-গিমা-কলমি নানান জাতের তিতা শাক খাওয়ার ভেতর দিয়ে শুরু হয় পয়লা বৈশাখ, তেমনি শহরে জমে ওঠে পান্তা আর ইলিশ খাওয়ার ধুম। ইদানীং পিৎজা হাট কি কেএফসির মতো করপোরেট খাদ্য দোকানদারেরাও পয়লা বৈশাখের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালের গরমের তীব্রতা গ্রীষ্মকালে আর থাকছে না, কালবৈশাখী গ্রীষ্মকাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে স্থানীয় জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।
বর্ষাকাল
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপয়ে যে ধান
সুখে থাকে কৃষি বল বাড়য়ে সম্মান
খনার বচন
ঢপ ঢপ ছলছল বর্ষাকাল আর ঋতুভিত্তিক বর্ষা মৌসুমের বন্যা এখন আর বাংলাদেশে হয় না। এখন হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে মেঘালয় পাহাড় থেকে নামে পাহাড়ি ঢল, হয় অকাল বন্যা আর নদ-নদী সব দখল ও নিশ্চিহ্ন বলে বাড়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ সময়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়, মাঠে মাঠে আমনের রোয়া লাগাতে লাগাতে আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে যায়। বর্ষার দিনে হাওর থেকে শিশুরা কুড়িয়ে আনে শালুক-পানিফল-ঢ্যাপ আর নারীরা নানান জাতের শাক। পয়লা বর্ষার দিনে পাহাড়-জঙ্গল থেকে খাসিয়ারা খুঁজে আনেন তেতস্লাং, মান্দিরা দামবং, চাকমারা হকেংমূল মানে নানান জাতের ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম), যা আমাদের খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আনে, একই সঙ্গে তা পুষ্টিও জোগায়। বর্ষা হাওর ও বিল অঞ্চলের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ঋতু যে বর্ষাকালেই হাওরাঞ্চলে নৌকা যাতায়াতের সুবিধার কারণে বিয়েশাদি বেশি হয়। হাওরের অধিকাংশ ধামাইল, কীর্তন, ঢপযাত্রা, গীত রচিত ও চর্চিত হয় এখনো এই বর্ষার দিনেই। বর্ষার দিনে গ্রামে গ্রামে বয়স্ক ব্যক্তিরা জমিয়ে তোলেন গল্পের আসর, সেই সব আসর আরও উৎসাহী করে তোলে চাল ভাজা-বাদাম ভাজা-শিম বিচি ভাজা-কাঁঠাল বিচি ভাজা। বাংলার লোকদেবী মনসা পূজার এই তো সময়, বেহুলা-লখিন্দরের ভেলা ভাসানোর স্মৃতি নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করতে করতে ভাটি এলাকার নারীরা সুর তোলেন ধামাইল গীতের।
শরৎকাল
ভাদ্রের চারি আশ্বিনের চারি
কলাই রোবে যত পারি
খনার বচন
ভাদ্র-আশ্বিন মাস নিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোপ লাগিয়ে, নদীর তীরে কাশঝাড়ের নাচন বলে দেয় এসেছে শরৎ। কিন্তু গ্রামবাংলায় এই ঋতু সম্পূর্ণ উধাও হয়েছে। এখন গ্রামে কাশঝাড় পাওয়া গেলেও শরৎকাল খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। ভাদ্র মাসে তার বাদেও তাল পাকে। তালের পিঠা এবং তাল নবমী এই ঋতুর এক অনন্য গ্রামীণ আয়োজন। ভাদ্র মাস থেকে আউশ ধান কাটা হয়, অনেক এলাকায় সরিষা বুনতে শুরু করেন কৃষকেরা। বাঙালি হিন্দুর শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য কারিগরেরা জোগাড় করতে থাকেন নানান জাতের মাটি, আমন-আউশের খড়, বাঁশ আরও কত-কী!
হেমন্তকাল
আশ্বিনের উনিশ কার্তিকের উনিশ
বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কলাই বুনিস
খনার বচন
কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তকাল। শুরু হয় আমন ধান কাটার পর্ব, ধান ঘরে তোলার পর গ্রামে গ্রামে নয়া ফসল খাওয়ার উৎসব নবান্ন। মান্দিরা এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বড় আয়োজনের সামাজিক উৎসব ওয়ান্না পালন করে আর কোচদের হয় গিদেলচাওয়া। আবছা শীতের আমেজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুলা, পালংশাক, খেসারি, কলাই বোনা শুরু হয়। কার্তিক মাসেই ধান কাটার আগেভাগে গ্রামে গ্রামে অভাব ছড়িয়ে পড়ে। কুড়িয়ে পাওয়া নানান শাকসবজি উত্তর জনপদের মানুষের এই কঠিন মঙ্গার কাল পাড়ি দিতে সহভাগী হয়। ধান কাটার পর পরই জমিনগুলো শিশুদের বউচি-কুতকুত-দাঁড়িয়াবান্ধা-গোল্লাছুট-হা-ডু-ডু-পাতাপলান্তি খেলার মাঠ হয়ে ওঠে, গরু-ছাগলগুলোও পায় এক বিস্তৃত চারণভূমি। হাওর এলাকায় শুরু হতে থাকে আড়ঙ্গ, মানে ষাঁড়ের লড়াই। এ সময়ই দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে, সুন্দরবনের দুবলারচরে, কমলগঞ্জে মণিপুরি এলাকায় জমে ওঠে রাসমেলা। অধিকাংশ মাজার শরিফ ও মোকামমে এই সময়টাতেই ওরস ও মেলার আয়োজন হয়। হাওর এলাকায় বর্ষা বাদে হেমন্ত এক প্রধান ঋতু। এ সময়ে হাওর এলাকায় হাঁটা ছাড়া তেমন কোনো গতি নেই সর্বত্র, যদিও এখন মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
শীতকাল
ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল
ক’র বাপু চাষার ছাওয়াল
খনার বচন
শীতের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে লালসালু কাপড় মুড়িয়ে শিমুল-কার্পাস তুলার লেপ বানানোর জন্য ধুনকরদের আনাগোনা বেড়ে যায় এখনো এই সিনথেটিক কম্বল আর প্লাস্টিক কাপড়ের যুগে। বর্তমান এই সময়েই মাঠে মাঠে ইরি-বিরি (উফশী) ধান ফলাতে ব্যস্ত থাকতে হয় কৃষকদের। এই সময়ে উফশী চাষে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হওয়ায় ধীরে ধীরে নেমে যায় পানির স্তর। ধানের জমিনে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক সার-বিষ-আগাছানাশক ব্যবহৃত হয়। পৌষসংক্রান্তিতে দেশীয় ধানের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়, জমে ওঠে পৌষমেলা। খেজুরের রস থেকে গুড় বানানোর জন্য গ্রামের নারীরা তৈরি করেন নানান আকৃতির মাটির চুলা। এ সময়েই লালবুবা-প্যারিহাঁস-বালিহাঁস-ল্যাঞ্জা-সরালিসহ অগণিত অতিথি পাখিতে ভরে যায় জলাভূমি অঞ্চল। শীতের কই মাছ, হাওরের মাখনা ফল, পাহাড়ি এলাকায় কাঁকড়া-কুইচ্চ্যা-শামুক খাবারে আনে পুষ্টি ও ভিন্ন মাত্রা। আদিবাসী এলাকাগুলোয় জুম ধানের ভাত থেকে তৈরি চু-দোচুয়ানি-হাঁড়িয়া-খর এই সব ঐতিহ্যগত পানীয় আয়োজন জমে ওঠে। হাওর এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে মানুষেরা দেখতে আসে ষাঁড়ের লড়াই, নানান পসরা নিয়ে বসে আড়ঙ্গ। সিলেটের লালেং আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক আয়োজন ত্তিল সাংরাইন, জৈন্তিয়া আদিবাসীদের বার্ষিক হকতই, কোচদের পুষরা, বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি উৎসব আর মেলার যা-ও কিছু ছিটেফোঁটা এখনো আছে, তা এই শীতকালকে ঘিরেই। তবে দিনে দিনে শীতকালে শীতের তীব্রতা অনেক কমে যাচ্ছে, শহর এলাকায় বলতে গেলে একদম নেই।
বসন্তকাল
ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট
সেই তিল দায়ে কাট
খনার বচন
ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে শুরু হয় আড়ম্বরপূর্ণ বসন্তকাল। শাল-মহুয়া-মান্দার-পলাশসহ নানান গাছে গাছে গজায় নতুন পাতা, শাখায় শাখায় রংবেরঙের ফুল। এ সময়ে খোসপাঁচড়াসহ নানান চুলকানি রোগ হয় বলে নিমপাতা-হলুদ-দাদমর্দন পাতা বাটা চলে ঘরে ঘরে। আলু তোলা শেষ হয়, পটোল ঢ্যাঁড়স-ঝিঙে-মরিচ-বেগুন-মিষ্টিকুমড়া-পুঁইশাক লাগানো হয়। বোরো ধান লাগানো শুরু হয়। ফাল্গুনে বাঙালি গ্রামে নানান জাতের শাক দিয়ে পালিত হয় আটআনাজ বর্ত। বসন্তে কোকিল যেমন গান গায়, গানের আসর বসে বাউলের আখড়ায়ও। চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়কের মেলায় পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। চা-বাগানগুলোতে বাগানি ও চা-শ্রমিকেরা মিলে আয়োজন করেন দণ্ড বর্ত। টাঙ্গাইল অঞ্চলে এ সময় গ্রামের পুরুষেরা মিলে সংযাত্রা পালার ভেতর দিয়ে স্থানীয় সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা বিষয়ে বাংলা রচনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের ষড়্ঋত’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই রচনাটি ভুলভাবে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পাঠ করানো হচ্ছে। অধিকাংশ বাংলা রচনা বইয়ে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর যে বিবরণ ও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সব দিক থেকেই চলতি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খুব একপক্ষীয় কায়দায় বাংলাদেশের এককালীন ঋতুর বৈচিত্র্যকে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতায় নিজেদের অঞ্চলে বাংলাদেশের ঋতুর বৈচিত্র্য দেখছে, তারাই পারে তা নিজেদের মতো করে তুলে ধরতে। আর সেটিই হবে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নতুন রচনা। দেশের সবার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নয়া পাঠ আজ তৈরি করা জরুরি। তা না হলে ডানা ভাঙা এই ষড়্ঋতুর দেশে আমরা হয়তো শেষমেশ আর কাউকেই খুঁজে পাব না যে ঋতুর অদলবদলগুলো ভেতর থেকে টের পাবে। নিজেকে গড়ে তুলবে ষড়্ঋতুর মতো বর্ণ ও বৈভবে অনর্গল।
লেখক: গবেষক

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায় তার চাষ আর সংগ্রহের জীবন। ধীরে ধীরে সব বদলে যাওয়ার দুনিয়ায় আজ জীবনের নানান রূপ বৈচিত্র্যও বিপন্ন। পৃথিবীব্যাপী তথাকথিত উন্নত আর ধনী দেশের যুদ্ধ তাণ্ডব আর প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ডে জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে খসে পড়ছে আমাদের প্রিয় ঋতুবৈচিত্র্যের রংবেরঙের ডানা। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের ভোগবিলাসী জীবন আর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ব্যবহার দুনিয়ার জলবায়ুকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে।
ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত হয়ে ভেঙে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশের ছয়-ছয়টি বর্ণময় ঋতুর ডানা। নানান রঙের ডানায়, নানান প্রাণের পালক গুঁজে দিয়ে সুখী জীবনের আকাশে ওড়ার অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলছি। এত সব হাহাকারের ভেতরও কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা, কি শরৎ , কি হেমন্ত, কি শীত, কি বসন্তে সমতল গ্রাম বা পাহাড়-জঙ্গলে যখন দেখি জীবনের জয়গানে নেচে ওঠে কৃষক জুমিয়া জেলে কামার কুমার তাঁতি মাঝি কবিরাজ বৈদ্য মৌয়াল বাওয়ালি বাউল পটুয়া চুনারি পাটনি পালাকার বাউল মন; তখন আবারও মনে হয় জলবায়ু পরিবর্তিত দুনিয়ার বুকে দলিতমথিত ডানা নিয়ে সাত আসমান পাড়ি দেওয়ার সাহস কেবলমাত্র এই জনপদের নিম্নবর্গের জীবনেই আছে। আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে দুনিয়ার তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১০-২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলের বরফ স্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সালের ভেতর পৃথিবীর উষ্ণতা প্রায় ১ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পাবে। উষ্ণতা বাড়ার কারণে পৃথিবীর ২১ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে, ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ পানিঘাটতিতে পড়বে, ৫ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধায় তাড়িত হবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রাণবৈচিত্র্যের বিস্তৃতি হ্রাস পাবে, বিলুপ্তির হার বৃদ্ধি পাবে, প্রজনন বা বংশবিস্তারের সময়ের পরিবর্তন ঘটবে, প্রজাতির বৃদ্ধি ও প্রতিবেশগত পরিসরের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তিত এই বিপন্ন সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার সাধারণ কৃষি ও জুমনির্ভর জনগণ নিজেদের এলাকায় চারপাশে কেবলমাত্র দুটি কি তিনটি ঋতুর বদল বুঝতে পারেন এবং টের পান। ষড়্ঋতুর এই করুণ পরিণতি সব দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বিপদবার্তা তৈরি করছে। একদিকে যেমন বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শস্য ফসলের হাজার জাত, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অগণিত প্রাণবৈচিত্র্য। আরেকদিকে আমাদের ঋতুভিত্তিক অভ্যাস ও আচার-আচরণ কী নিদারুণভাবে বদলে যেতেও বাধ্য হচ্ছে। অথচ এই ষড়্ঋতুর অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই জনজীবন সাজিয়েছিল এককালে তার ঋতু বরণ কি বিদায়ের সব উৎসব ও উদ্দীপনা। ষড়্ঋতুর ডানা ঠিক রাখতে না পারলে বাংলাদেশের জনগণের অনন্য পারস্পরিক সম্পর্ক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সব ধারাবাহিকতা অচিরেই ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে যা আমাদের সবার জন্যই তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপন্নতা। জলবায়ুজনিত এই পরিবর্তিত সময়েও বাংলাদেশের নানান প্রান্ত থেকে এখনো বর্ণময় ষড়্ঋতুর যে ডানা ভাঙা ঝাপটানি টের পাওয়া যায়, তা নিয়েই এই ছোট্ট ফিরিস্তি।
গ্রীষ্মকাল
কোল পাতলা ডাগর গুছি
লক্ষ্মী বলে ঐখানে আছি
খনার বচন
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দিয়ে শুরু হয় বাঙালির বাংলা বছর, জমে ওঠে গ্রীষ্মের তাপ ও ঝড়ের আলোড়ন। বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এখনো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বছরের হিসাবনিকাশ হয়। কেবলমাত্র শহর এলাকায়, সরকারি কাগজপত্র কি মুদ্রিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ভিন্ন বাংলা সনের হিসাব। যার সঙ্গে গ্রাম জনপদের মানুষের বছর গোনাগুনতি ও পালনের কোনো মিল নেই। বৈশাখ থেকেই শুরু হয় আউশ ধান বোনার মৌসুম আর পাহাড়ে পাহাড়ে আদিবাসী এলাকায় জুম ধান বোনায় ব্যস্ত থাকেন জুমিয়ারা। অনেক এলাকায় পাট লাগানো হয়, তিল-তিসি তোলা হয়, বর্তমানে এ সময়ে কাটা হয় উফশীজাতের ধান (যদিও বাংলাদেশের গ্রাম জনপদে এই ধান ইরি ধান নামেই প্রচলিত)। এ সময়ে ঝড়-তুফান বেশি হয় বলে গ্রামের মানুষেরা ঘরদুয়ার-গোয়ালঘর-গোলাঘর আবারও মজবুত করে বাঁধেন, বেদেরা নদীর তীরে তীরে নৌকা বহরখানি নিরাপদে নিয়ে যান। নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালিরা আয়োজন করে শুভ নববর্ষ; চাকমারা বিজু; রাখাইনরা সংগ্রেং; মারমারা সাংগ্রাই; ত্রিপুরারা বৈসুক; বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা বিষু উৎসব। নতুন বছরের হিসাবনিকাশ, দেনা-পাওনা মিটিয়ে ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের শুভ হালখাতায় লাগে সিঁদুর আর কাঁচা হলুদের দাগ। গ্রামে গ্রামে যেমন নাইল্যা-গিমা-কলমি নানান জাতের তিতা শাক খাওয়ার ভেতর দিয়ে শুরু হয় পয়লা বৈশাখ, তেমনি শহরে জমে ওঠে পান্তা আর ইলিশ খাওয়ার ধুম। ইদানীং পিৎজা হাট কি কেএফসির মতো করপোরেট খাদ্য দোকানদারেরাও পয়লা বৈশাখের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালের গরমের তীব্রতা গ্রীষ্মকালে আর থাকছে না, কালবৈশাখী গ্রীষ্মকাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে স্থানীয় জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।
বর্ষাকাল
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপয়ে যে ধান
সুখে থাকে কৃষি বল বাড়য়ে সম্মান
খনার বচন
ঢপ ঢপ ছলছল বর্ষাকাল আর ঋতুভিত্তিক বর্ষা মৌসুমের বন্যা এখন আর বাংলাদেশে হয় না। এখন হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে মেঘালয় পাহাড় থেকে নামে পাহাড়ি ঢল, হয় অকাল বন্যা আর নদ-নদী সব দখল ও নিশ্চিহ্ন বলে বাড়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ সময়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়, মাঠে মাঠে আমনের রোয়া লাগাতে লাগাতে আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে যায়। বর্ষার দিনে হাওর থেকে শিশুরা কুড়িয়ে আনে শালুক-পানিফল-ঢ্যাপ আর নারীরা নানান জাতের শাক। পয়লা বর্ষার দিনে পাহাড়-জঙ্গল থেকে খাসিয়ারা খুঁজে আনেন তেতস্লাং, মান্দিরা দামবং, চাকমারা হকেংমূল মানে নানান জাতের ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম), যা আমাদের খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আনে, একই সঙ্গে তা পুষ্টিও জোগায়। বর্ষা হাওর ও বিল অঞ্চলের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ঋতু যে বর্ষাকালেই হাওরাঞ্চলে নৌকা যাতায়াতের সুবিধার কারণে বিয়েশাদি বেশি হয়। হাওরের অধিকাংশ ধামাইল, কীর্তন, ঢপযাত্রা, গীত রচিত ও চর্চিত হয় এখনো এই বর্ষার দিনেই। বর্ষার দিনে গ্রামে গ্রামে বয়স্ক ব্যক্তিরা জমিয়ে তোলেন গল্পের আসর, সেই সব আসর আরও উৎসাহী করে তোলে চাল ভাজা-বাদাম ভাজা-শিম বিচি ভাজা-কাঁঠাল বিচি ভাজা। বাংলার লোকদেবী মনসা পূজার এই তো সময়, বেহুলা-লখিন্দরের ভেলা ভাসানোর স্মৃতি নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই করতে করতে ভাটি এলাকার নারীরা সুর তোলেন ধামাইল গীতের।
শরৎকাল
ভাদ্রের চারি আশ্বিনের চারি
কলাই রোবে যত পারি
খনার বচন
ভাদ্র-আশ্বিন মাস নিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোপ লাগিয়ে, নদীর তীরে কাশঝাড়ের নাচন বলে দেয় এসেছে শরৎ। কিন্তু গ্রামবাংলায় এই ঋতু সম্পূর্ণ উধাও হয়েছে। এখন গ্রামে কাশঝাড় পাওয়া গেলেও শরৎকাল খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। ভাদ্র মাসে তার বাদেও তাল পাকে। তালের পিঠা এবং তাল নবমী এই ঋতুর এক অনন্য গ্রামীণ আয়োজন। ভাদ্র মাস থেকে আউশ ধান কাটা হয়, অনেক এলাকায় সরিষা বুনতে শুরু করেন কৃষকেরা। বাঙালি হিন্দুর শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য কারিগরেরা জোগাড় করতে থাকেন নানান জাতের মাটি, আমন-আউশের খড়, বাঁশ আরও কত-কী!
হেমন্তকাল
আশ্বিনের উনিশ কার্তিকের উনিশ
বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কলাই বুনিস
খনার বচন
কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তকাল। শুরু হয় আমন ধান কাটার পর্ব, ধান ঘরে তোলার পর গ্রামে গ্রামে নয়া ফসল খাওয়ার উৎসব নবান্ন। মান্দিরা এ সময়ে তাদের সবচেয়ে বড় আয়োজনের সামাজিক উৎসব ওয়ান্না পালন করে আর কোচদের হয় গিদেলচাওয়া। আবছা শীতের আমেজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুলা, পালংশাক, খেসারি, কলাই বোনা শুরু হয়। কার্তিক মাসেই ধান কাটার আগেভাগে গ্রামে গ্রামে অভাব ছড়িয়ে পড়ে। কুড়িয়ে পাওয়া নানান শাকসবজি উত্তর জনপদের মানুষের এই কঠিন মঙ্গার কাল পাড়ি দিতে সহভাগী হয়। ধান কাটার পর পরই জমিনগুলো শিশুদের বউচি-কুতকুত-দাঁড়িয়াবান্ধা-গোল্লাছুট-হা-ডু-ডু-পাতাপলান্তি খেলার মাঠ হয়ে ওঠে, গরু-ছাগলগুলোও পায় এক বিস্তৃত চারণভূমি। হাওর এলাকায় শুরু হতে থাকে আড়ঙ্গ, মানে ষাঁড়ের লড়াই। এ সময়ই দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে, সুন্দরবনের দুবলারচরে, কমলগঞ্জে মণিপুরি এলাকায় জমে ওঠে রাসমেলা। অধিকাংশ মাজার শরিফ ও মোকামমে এই সময়টাতেই ওরস ও মেলার আয়োজন হয়। হাওর এলাকায় বর্ষা বাদে হেমন্ত এক প্রধান ঋতু। এ সময়ে হাওর এলাকায় হাঁটা ছাড়া তেমন কোনো গতি নেই সর্বত্র, যদিও এখন মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
শীতকাল
ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল
ক’র বাপু চাষার ছাওয়াল
খনার বচন
শীতের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে লালসালু কাপড় মুড়িয়ে শিমুল-কার্পাস তুলার লেপ বানানোর জন্য ধুনকরদের আনাগোনা বেড়ে যায় এখনো এই সিনথেটিক কম্বল আর প্লাস্টিক কাপড়ের যুগে। বর্তমান এই সময়েই মাঠে মাঠে ইরি-বিরি (উফশী) ধান ফলাতে ব্যস্ত থাকতে হয় কৃষকদের। এই সময়ে উফশী চাষে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হওয়ায় ধীরে ধীরে নেমে যায় পানির স্তর। ধানের জমিনে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক সার-বিষ-আগাছানাশক ব্যবহৃত হয়। পৌষসংক্রান্তিতে দেশীয় ধানের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়, জমে ওঠে পৌষমেলা। খেজুরের রস থেকে গুড় বানানোর জন্য গ্রামের নারীরা তৈরি করেন নানান আকৃতির মাটির চুলা। এ সময়েই লালবুবা-প্যারিহাঁস-বালিহাঁস-ল্যাঞ্জা-সরালিসহ অগণিত অতিথি পাখিতে ভরে যায় জলাভূমি অঞ্চল। শীতের কই মাছ, হাওরের মাখনা ফল, পাহাড়ি এলাকায় কাঁকড়া-কুইচ্চ্যা-শামুক খাবারে আনে পুষ্টি ও ভিন্ন মাত্রা। আদিবাসী এলাকাগুলোয় জুম ধানের ভাত থেকে তৈরি চু-দোচুয়ানি-হাঁড়িয়া-খর এই সব ঐতিহ্যগত পানীয় আয়োজন জমে ওঠে। হাওর এলাকায় দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে মানুষেরা দেখতে আসে ষাঁড়ের লড়াই, নানান পসরা নিয়ে বসে আড়ঙ্গ। সিলেটের লালেং আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক আয়োজন ত্তিল সাংরাইন, জৈন্তিয়া আদিবাসীদের বার্ষিক হকতই, কোচদের পুষরা, বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি উৎসব আর মেলার যা-ও কিছু ছিটেফোঁটা এখনো আছে, তা এই শীতকালকে ঘিরেই। তবে দিনে দিনে শীতকালে শীতের তীব্রতা অনেক কমে যাচ্ছে, শহর এলাকায় বলতে গেলে একদম নেই।
বসন্তকাল
ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট
সেই তিল দায়ে কাট
খনার বচন
ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে শুরু হয় আড়ম্বরপূর্ণ বসন্তকাল। শাল-মহুয়া-মান্দার-পলাশসহ নানান গাছে গাছে গজায় নতুন পাতা, শাখায় শাখায় রংবেরঙের ফুল। এ সময়ে খোসপাঁচড়াসহ নানান চুলকানি রোগ হয় বলে নিমপাতা-হলুদ-দাদমর্দন পাতা বাটা চলে ঘরে ঘরে। আলু তোলা শেষ হয়, পটোল ঢ্যাঁড়স-ঝিঙে-মরিচ-বেগুন-মিষ্টিকুমড়া-পুঁইশাক লাগানো হয়। বোরো ধান লাগানো শুরু হয়। ফাল্গুনে বাঙালি গ্রামে নানান জাতের শাক দিয়ে পালিত হয় আটআনাজ বর্ত। বসন্তে কোকিল যেমন গান গায়, গানের আসর বসে বাউলের আখড়ায়ও। চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়কের মেলায় পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে মানুষের ভিড় জমে ওঠে। চা-বাগানগুলোতে বাগানি ও চা-শ্রমিকেরা মিলে আয়োজন করেন দণ্ড বর্ত। টাঙ্গাইল অঞ্চলে এ সময় গ্রামের পুরুষেরা মিলে সংযাত্রা পালার ভেতর দিয়ে স্থানীয় সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা বিষয়ে বাংলা রচনা হিসেবে ‘বাংলাদেশের ষড়্ঋত’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই রচনাটি ভুলভাবে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পাঠ করানো হচ্ছে। অধিকাংশ বাংলা রচনা বইয়ে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর যে বিবরণ ও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সব দিক থেকেই চলতি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খুব একপক্ষীয় কায়দায় বাংলাদেশের এককালীন ঋতুর বৈচিত্র্যকে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতায় নিজেদের অঞ্চলে বাংলাদেশের ঋতুর বৈচিত্র্য দেখছে, তারাই পারে তা নিজেদের মতো করে তুলে ধরতে। আর সেটিই হবে বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নতুন রচনা। দেশের সবার অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশের ষড়্ঋতুর নয়া পাঠ আজ তৈরি করা জরুরি। তা না হলে ডানা ভাঙা এই ষড়্ঋতুর দেশে আমরা হয়তো শেষমেশ আর কাউকেই খুঁজে পাব না যে ঋতুর অদলবদলগুলো ভেতর থেকে টের পাবে। নিজেকে গড়ে তুলবে ষড়্ঋতুর মতো বর্ণ ও বৈভবে অনর্গল।
লেখক: গবেষক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায়
২০ এপ্রিল ২০২৩
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায়
২০ এপ্রিল ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায়
২০ এপ্রিল ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

কি ধান, কি মাছ, কি ঋতু, কি গাছ, কি মানুষ, কি ভাষা, কি উৎসব এমন বৈচিত্র্য বাংলাদেশের মতো দুনিয়ায় আর কোথাও আছে! নানান রঙের জীবন আর নানান রঙের ঋতু। প্রতিটি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন সাজে মানুষও সাজায়
২০ এপ্রিল ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫