নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দিয়েছে। সেই কলঙ্ক কখনো মুছবে না, ঘুচবে না।
হাজার বছরের মধ্যে এমন প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, হন্তারক ও শঠতাপূর্ণ দিবস বাঙালি জাতির জীবনে আর কখনো আসেনি। কিছুটা হয়তো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে অভিনীত বিয়োগান্ত নাটকে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে তুলনীয়। সিরাজউদ্দৌলা যদিও বাঙালি ছিলেন না, তথাপি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সিরাজের প্রতিরোধের মধ্যে জাতীয় বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের উপাদান খোঁজে বাঙালি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্যই প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেও একাধিকবার তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন, তখনো স্বাধীনতা বিপন্মুক্ত হলো না। যে স্বাধীনতা এনেছিল বাঙালি জাতি, তাকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধুকেই জীবন দিয়ে স্বাধীনতার দাম দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? হাজার বছরে কত বড় বড় মনীষী, রাজনীতিক বাঙালির জীবনকে আলোকিত ও আন্দোলিত করেছেন, ইতিহাস ও সভ্যতা নির্মাণ করেছেন নিজ নিজ মেধা, উদ্ভাবন, অনন্যসাধারণ সাধনা ও কর্মকৃতি দিয়ে। কিন্তু তাঁরা কেউ বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেননি। কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেননি। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কালে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একটি স্বাধীন বঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব এই রাজ্যের রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও বাঙালি নন। দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ এই স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ নিয়ে গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন এর প্রথম সার্বভৌম নৃপতি।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত (১২০৪-১৫৭৬) স্বাধীন সুলতানি আমল বাঙালির ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। কিন্তু সুলতানেরা বাঙালি ছিলেন না এবং সেই বাংলাও এই বাংলা নয়।
এসব রাজতন্ত্রের কথা। বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গোটা বাংলার ইতিহাসে এমনকি আরেকটি উদাহরণ পাই, যখন রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শতবর্ষব্যাপী অনৈক্য, আত্মকলহ ও বহিঃশত্রুর পুনঃপুন আক্রমণে বাংলার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। তখন দেশে কোনো রাজা ছিল না, প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাহ্মণ এবং বণিক নিজ নিজ এলাকা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। সংস্কৃতে ওই অরাজক পরিস্থিতিকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।
সেই চরম দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের জন্য বাঙালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিল, ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের প্রবীণ নেতারা স্থির করলেন, পরস্পর বিবাদ-বিসম্বাদ ভুলে একজনকে রাজপদে নির্বাচিত করবেন এবং সবাই স্বেচ্ছায় তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করবেন। দেশের জনসাধারণও সানন্দে এই মত গ্রহণ করল। এর ফলে গোপাল নামের এক ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজপদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাঙালির এই দেড়-দুই হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়, তা হলো ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, আগে কখনো তা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, বাঙালিকে প্রথম জাতি পরিচিতি দিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সাহায্য চাইতে অন্তত তিনবার (১৯৬১, ১৯৬২ সালে দুবার এবং আরেকবার সম্ভবত আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর) আগরতলায় গেছেন বঙ্গবন্ধু। সিলেটের মোয়াজ্জেম চৌধুরীরা নেতাজি সুভাষ বসুর স্টাইলে বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মধ্য দিয়ে লন্ডন নিয়ে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চালাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক এস এস ব্যানার্জির মাধ্যমেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাহায্য চেয়ে।
১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন তথ্য পাওয়া যায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বইয়ে। তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে ওই সংস্থার নামে মুদ্রিত কিছু লিফলেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলি করার জন্য দিয়েছিলেন। তিনি লিফলেটগুলো শেখ ফজলুল হক মনিকে দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বিভিন্ন রুমের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
তারও আগে ১৯৬০ সালে দিল্লির সাউথ ব্লকে পাকিস্তান ডেস্কে কর্মরত একজন গোয়েন্দা চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তিনি পতেঙ্গা সৈকত, হালিশহর ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শন করে নোয়াখালী চলে গিয়েছিলেন। এটিও বঙ্গবন্ধুর একটি স্বাধীনতা প্রচেষ্টার অংশ। ওই গোয়েন্দার নাম রাজ নির্মল নারায়ণ চৌধুরী। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী। তিনি ‘র’-এর প্রধান রামনাথ কাওয়ের সহকারী ছিলেন। তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ এবং পরবর্তীকালে আগরতলা মামলার আসামি মানিক চৌধুরী ওই গোয়েন্দার সঙ্গে ছিলেন।
১৯৬১ সালের শেষার্ধ থেকে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী এ ব্যাপারে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মুজিব ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে মণি সিংহ ও খোকা রায় এসব গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব কর্মসূচিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ওদের সাথে আমাদের আর থাকা চলবে না। তাই এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; আন্দোলনের প্রোগ্রামে ওই দাবি রাখতে হবে।
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সম্মত হননি। তাঁরা বলেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি এখন একটি হঠকারী দাবি।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও সংগ্রামকে দুভাগে ভাগ করা যায়—একটি স্থানিক ও সাময়িক, আরেকটি স্থায়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর রাজনীতির চিরস্থায়ী কথা। পঞ্চাশের দশকে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে যখন রাজনীতি শুরু করছেন, তখন বিরোধী নেতাদের মধ্যে ঢাকায় নিয়ন্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনেক পূর্ববর্তী নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তাঁর সাক্ষাৎ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, কমরেড মণি সিং প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক নেতা ছিলেন অলি আহাদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ।
১৯৭০ সালে এ কে ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দী ছাড়া অন্য সব নেতাই ছিলেন জীবিত। কিন্তু তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও ছিলেন না। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার মহানায়ক।
বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত করেন, জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। বাঙালির অভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ছিল, কিন্তু যে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জাতিসত্তার স্ফুরণ ঘটে, পাকিস্তান হওয়ার পর পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী বাঙালির জাতি হিসেবে সংগঠিত হওয়ার অবকাশ মেলে। ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন ঘটায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণও প্রথম বঙ্গবন্ধুই করেন। ১৯৬৯ সালে তিন নেতার মাজারে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্র কখনো ছিল না। বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেল ইত্যাদি নানা স্বাধীন বিচ্ছিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বাংলা মুলুক নামে পরিচিত ভূখণ্ডটি। ব্রিটিশ শাসনামলে বিচ্ছিন্ন জনপদ বা স্বাধীন রাজ্যসমূহকে একীভূত করে অখণ্ড বাংলার সৃষ্টি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ভেস্তে যায়। ১৯৪৭-এ অখণ্ড বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাতচল্লিশের বাংলা ভাগের মূলে ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের তাড়না। জিন্নাহ সাহেব বাঙালি জাতির প্রধান দুই উপাদান হিন্দু ও মুসলমানকে দুই জাতি হিসেবে বর্ণনা করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ধর্ম কখনো জাতীয়তার ভিত্তি হতে পারে না। তা সত্ত্বেও জিন্নাহ হাজার মাইলের ব্যবধানে বসবাসকারী মানুষ, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এমনকি গাত্রবর্ণও ভিন্ন, শুধু ধর্ম বিশ্বাসে ছিল অভিন্ন, তাদেরকে ধর্মের রজ্জুতে গেঁথে একটি আজব রাষ্ট্র গঠন করলেন।
বঙ্গবন্ধু জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে একজাতিতত্ত্বের ধারণা উপস্থাপন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। তিনি বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো জাতি হতে পারে না। অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জাতি গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত। সাতচল্লিশে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে এই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তার উপাদান দেখতে পেলেন এবং বাংলাদেশের যে ছবি তিনি মনে মনে কল্পনা করতেন, পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে তার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেন। অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জাতীয়তা নির্মাণে সচেষ্ট হলেন। পূর্ববঙ্গকে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের উপনিবেশের মতো শোষণ এবং সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য দেখতে দেখতে অভিমানাহত বাঙালি জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করে। ষাটের দশকে বাঙালি জনমনে ধূমায়মান অসন্তোষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়। ৬ দফার মধ্যে নিহিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ৬ দফা মানতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অস্বীকৃতি থেকে বাঙালি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
অতঃপর সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় মানতে অস্বীকার করে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে পাকিস্তানি হানাদারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়ন করার আহ্বান জানালে জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন।
সব আলোচনা থেকে একথা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।
পঁচাত্তরের খুনিরা ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতাকেই শুধু হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশকে। কেননা বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক, একটি চেতনার নাম। সে আদর্শ বাংলাদেশ, সেই চেতনা বাঙালিত্ব।
তবে খুনিরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর দেহান্ত হলেও তাঁর আদর্শ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে আছে। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যুর ৪৮ বছর পরও আজও বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নিত্য উপস্থিতি, বঙ্গবন্ধু আজও এ দেশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু তত দিন বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মাঝে।
মোশতাক, চাষী, ঠাকুর, রশিদ, ফারুক—যাদের আমরা খুনি বলে চিনি, ব্যক্তি পরিচয়ের আড়ালে আসলে কী ছিল তারা? তারাও একটি আদর্শের প্রতীক, কিংবা তাদের শিখণ্ডী হিসেবে খাড়া করে আড়ালে বসে যিনি অট্টহাসি হাসছিলেন, ১৫ আগস্ট ভোর হতে না হতেই পূর্ণ সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে কিলিং মিশন অ্যাকমপ্লিশ্ড হওয়ার খবরটা শোনার জন্য যে প্রস্তুত হয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পায়চারী করছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমান। ক্ষমতারূঢ় হওয়ার অনেক পরে তিনি নিজেই জানান দিয়েছিলেন, তার আদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, যা আসলে ইসলামি তথা পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদেরই নামান্তর। তার আগে মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রাদর্শ বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’-এ বদলে দেয়। বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধুর পোশাককেও ঘৃণা করত মোশতাক, তাই সে কিম্ভুতকিমাকার নতুন এক জাতীয় পোশাকের প্রচলন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রকে একে একে পাল্টে দেওয়া হলো। এই মূলনীতিগুলো মুক্তিযুদ্ধেরই অর্জন। এরপর যা থাকল, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ নামের খোলসে ‘পাকিস্তান’।
মোশতাক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করল, জিয়া তাকে জায়েজ করলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মোড়কে। আসলে মোশতাক, চাষীরা ছিল একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মা। মোশতাক, চাষী মুক্তিযুদ্ধেই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে কম দেনদরবার করেনি। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সতর্কতা ও দৃঢ়তায় তখন সফল হতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোশতাক ক্ষমতায় আরোহণের তার বহুদিনের সাধ পূরণ করল। পর্দার অন্তরালে থেকে যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মদত জুগিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাপ্রধান করেননি, এই ক্ষোভ থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তে শামিল হন।
মুক্তিযুদ্ধ থেকেই জিয়া এক রহস্যময় চরিত্র। জিয়া দায়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং প্রথম দিকে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে ১ নম্বরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু তার সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে ১ নম্বর সেক্টর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। তিনি ওসমানী সাহেবের প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন এবং তাঁকে প্রধান সেনাপতি পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। খালেদ মোশাররফের বিরোধিতার কারণে পারেননি। কামালপুর যুদ্ধে জিয়ার ভুলের কারণে বাংলাদেশ বাহিনীর অনেক অফিসার ও জওয়ান হতাহত হন। সে জন্য জেনারেল ওসমানী তাকে স্যাক করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়া। তিনি ক্রমান্বয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং শেষে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, আলীম ও মতিনকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে একে একে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন। দালাল আইন বাতিল করে ঘাতক দালাল, রাজাকার, আলবদরদের ছেড়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বর্জন করেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দেন।
মোশতাক ও জিয়া চেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও মানুষ যাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেছে, অত সহজে কি তাঁকে মুছে ফেলা যায়! মানুষের চেতনায় ঠাঁই নিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
ফলে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ভেবেছিল, একাত্তরে পরাজিত ও পরিত্যক্ত পাকিস্তানকে আবার তারা ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশে, তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছিলেন। তাদের যিনি বধ করবেন, তিনি গোকুলে বেড়ে উঠছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা; বিদেশে থাকার কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেট থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্রথমজন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এলেন স্বদেশে। প্রথমে পিতার গড়া দল, স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। হতাশ, মনোবলহারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। পুনর্গঠিত দল নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ শাসনের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে এনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করলেন; তাঁকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনকে জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস ঘোষণা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তির ওপর বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দিয়েছে। সেই কলঙ্ক কখনো মুছবে না, ঘুচবে না।
হাজার বছরের মধ্যে এমন প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, হন্তারক ও শঠতাপূর্ণ দিবস বাঙালি জাতির জীবনে আর কখনো আসেনি। কিছুটা হয়তো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে অভিনীত বিয়োগান্ত নাটকে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে তুলনীয়। সিরাজউদ্দৌলা যদিও বাঙালি ছিলেন না, তথাপি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সিরাজের প্রতিরোধের মধ্যে জাতীয় বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের উপাদান খোঁজে বাঙালি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্যই প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেও একাধিকবার তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন, তখনো স্বাধীনতা বিপন্মুক্ত হলো না। যে স্বাধীনতা এনেছিল বাঙালি জাতি, তাকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধুকেই জীবন দিয়ে স্বাধীনতার দাম দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? হাজার বছরে কত বড় বড় মনীষী, রাজনীতিক বাঙালির জীবনকে আলোকিত ও আন্দোলিত করেছেন, ইতিহাস ও সভ্যতা নির্মাণ করেছেন নিজ নিজ মেধা, উদ্ভাবন, অনন্যসাধারণ সাধনা ও কর্মকৃতি দিয়ে। কিন্তু তাঁরা কেউ বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেননি। কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেননি। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কালে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একটি স্বাধীন বঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব এই রাজ্যের রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও বাঙালি নন। দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ এই স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ নিয়ে গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন এর প্রথম সার্বভৌম নৃপতি।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত (১২০৪-১৫৭৬) স্বাধীন সুলতানি আমল বাঙালির ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। কিন্তু সুলতানেরা বাঙালি ছিলেন না এবং সেই বাংলাও এই বাংলা নয়।
এসব রাজতন্ত্রের কথা। বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গোটা বাংলার ইতিহাসে এমনকি আরেকটি উদাহরণ পাই, যখন রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শতবর্ষব্যাপী অনৈক্য, আত্মকলহ ও বহিঃশত্রুর পুনঃপুন আক্রমণে বাংলার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। তখন দেশে কোনো রাজা ছিল না, প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাহ্মণ এবং বণিক নিজ নিজ এলাকা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। সংস্কৃতে ওই অরাজক পরিস্থিতিকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।
সেই চরম দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের জন্য বাঙালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিল, ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের প্রবীণ নেতারা স্থির করলেন, পরস্পর বিবাদ-বিসম্বাদ ভুলে একজনকে রাজপদে নির্বাচিত করবেন এবং সবাই স্বেচ্ছায় তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করবেন। দেশের জনসাধারণও সানন্দে এই মত গ্রহণ করল। এর ফলে গোপাল নামের এক ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজপদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাঙালির এই দেড়-দুই হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়, তা হলো ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, আগে কখনো তা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, বাঙালিকে প্রথম জাতি পরিচিতি দিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সাহায্য চাইতে অন্তত তিনবার (১৯৬১, ১৯৬২ সালে দুবার এবং আরেকবার সম্ভবত আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর) আগরতলায় গেছেন বঙ্গবন্ধু। সিলেটের মোয়াজ্জেম চৌধুরীরা নেতাজি সুভাষ বসুর স্টাইলে বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মধ্য দিয়ে লন্ডন নিয়ে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চালাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক এস এস ব্যানার্জির মাধ্যমেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাহায্য চেয়ে।
১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন তথ্য পাওয়া যায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বইয়ে। তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে ওই সংস্থার নামে মুদ্রিত কিছু লিফলেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলি করার জন্য দিয়েছিলেন। তিনি লিফলেটগুলো শেখ ফজলুল হক মনিকে দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বিভিন্ন রুমের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
তারও আগে ১৯৬০ সালে দিল্লির সাউথ ব্লকে পাকিস্তান ডেস্কে কর্মরত একজন গোয়েন্দা চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তিনি পতেঙ্গা সৈকত, হালিশহর ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শন করে নোয়াখালী চলে গিয়েছিলেন। এটিও বঙ্গবন্ধুর একটি স্বাধীনতা প্রচেষ্টার অংশ। ওই গোয়েন্দার নাম রাজ নির্মল নারায়ণ চৌধুরী। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী। তিনি ‘র’-এর প্রধান রামনাথ কাওয়ের সহকারী ছিলেন। তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ এবং পরবর্তীকালে আগরতলা মামলার আসামি মানিক চৌধুরী ওই গোয়েন্দার সঙ্গে ছিলেন।
১৯৬১ সালের শেষার্ধ থেকে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী এ ব্যাপারে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মুজিব ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে মণি সিংহ ও খোকা রায় এসব গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব কর্মসূচিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ওদের সাথে আমাদের আর থাকা চলবে না। তাই এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; আন্দোলনের প্রোগ্রামে ওই দাবি রাখতে হবে।
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সম্মত হননি। তাঁরা বলেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি এখন একটি হঠকারী দাবি।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও সংগ্রামকে দুভাগে ভাগ করা যায়—একটি স্থানিক ও সাময়িক, আরেকটি স্থায়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর রাজনীতির চিরস্থায়ী কথা। পঞ্চাশের দশকে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে যখন রাজনীতি শুরু করছেন, তখন বিরোধী নেতাদের মধ্যে ঢাকায় নিয়ন্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনেক পূর্ববর্তী নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তাঁর সাক্ষাৎ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, কমরেড মণি সিং প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক নেতা ছিলেন অলি আহাদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ।
১৯৭০ সালে এ কে ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দী ছাড়া অন্য সব নেতাই ছিলেন জীবিত। কিন্তু তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও ছিলেন না। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার মহানায়ক।
বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত করেন, জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। বাঙালির অভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ছিল, কিন্তু যে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জাতিসত্তার স্ফুরণ ঘটে, পাকিস্তান হওয়ার পর পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী বাঙালির জাতি হিসেবে সংগঠিত হওয়ার অবকাশ মেলে। ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন ঘটায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণও প্রথম বঙ্গবন্ধুই করেন। ১৯৬৯ সালে তিন নেতার মাজারে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্র কখনো ছিল না। বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেল ইত্যাদি নানা স্বাধীন বিচ্ছিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বাংলা মুলুক নামে পরিচিত ভূখণ্ডটি। ব্রিটিশ শাসনামলে বিচ্ছিন্ন জনপদ বা স্বাধীন রাজ্যসমূহকে একীভূত করে অখণ্ড বাংলার সৃষ্টি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ভেস্তে যায়। ১৯৪৭-এ অখণ্ড বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাতচল্লিশের বাংলা ভাগের মূলে ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের তাড়না। জিন্নাহ সাহেব বাঙালি জাতির প্রধান দুই উপাদান হিন্দু ও মুসলমানকে দুই জাতি হিসেবে বর্ণনা করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ধর্ম কখনো জাতীয়তার ভিত্তি হতে পারে না। তা সত্ত্বেও জিন্নাহ হাজার মাইলের ব্যবধানে বসবাসকারী মানুষ, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এমনকি গাত্রবর্ণও ভিন্ন, শুধু ধর্ম বিশ্বাসে ছিল অভিন্ন, তাদেরকে ধর্মের রজ্জুতে গেঁথে একটি আজব রাষ্ট্র গঠন করলেন।
বঙ্গবন্ধু জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে একজাতিতত্ত্বের ধারণা উপস্থাপন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। তিনি বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো জাতি হতে পারে না। অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জাতি গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত। সাতচল্লিশে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে এই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তার উপাদান দেখতে পেলেন এবং বাংলাদেশের যে ছবি তিনি মনে মনে কল্পনা করতেন, পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে তার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেন। অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জাতীয়তা নির্মাণে সচেষ্ট হলেন। পূর্ববঙ্গকে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের উপনিবেশের মতো শোষণ এবং সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য দেখতে দেখতে অভিমানাহত বাঙালি জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করে। ষাটের দশকে বাঙালি জনমনে ধূমায়মান অসন্তোষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়। ৬ দফার মধ্যে নিহিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ৬ দফা মানতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অস্বীকৃতি থেকে বাঙালি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
অতঃপর সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় মানতে অস্বীকার করে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে পাকিস্তানি হানাদারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়ন করার আহ্বান জানালে জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন।
সব আলোচনা থেকে একথা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।
পঁচাত্তরের খুনিরা ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতাকেই শুধু হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশকে। কেননা বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক, একটি চেতনার নাম। সে আদর্শ বাংলাদেশ, সেই চেতনা বাঙালিত্ব।
তবে খুনিরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর দেহান্ত হলেও তাঁর আদর্শ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে আছে। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যুর ৪৮ বছর পরও আজও বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নিত্য উপস্থিতি, বঙ্গবন্ধু আজও এ দেশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু তত দিন বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মাঝে।
মোশতাক, চাষী, ঠাকুর, রশিদ, ফারুক—যাদের আমরা খুনি বলে চিনি, ব্যক্তি পরিচয়ের আড়ালে আসলে কী ছিল তারা? তারাও একটি আদর্শের প্রতীক, কিংবা তাদের শিখণ্ডী হিসেবে খাড়া করে আড়ালে বসে যিনি অট্টহাসি হাসছিলেন, ১৫ আগস্ট ভোর হতে না হতেই পূর্ণ সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে কিলিং মিশন অ্যাকমপ্লিশ্ড হওয়ার খবরটা শোনার জন্য যে প্রস্তুত হয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পায়চারী করছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমান। ক্ষমতারূঢ় হওয়ার অনেক পরে তিনি নিজেই জানান দিয়েছিলেন, তার আদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, যা আসলে ইসলামি তথা পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদেরই নামান্তর। তার আগে মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রাদর্শ বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’-এ বদলে দেয়। বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধুর পোশাককেও ঘৃণা করত মোশতাক, তাই সে কিম্ভুতকিমাকার নতুন এক জাতীয় পোশাকের প্রচলন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রকে একে একে পাল্টে দেওয়া হলো। এই মূলনীতিগুলো মুক্তিযুদ্ধেরই অর্জন। এরপর যা থাকল, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ নামের খোলসে ‘পাকিস্তান’।
মোশতাক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করল, জিয়া তাকে জায়েজ করলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মোড়কে। আসলে মোশতাক, চাষীরা ছিল একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মা। মোশতাক, চাষী মুক্তিযুদ্ধেই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে কম দেনদরবার করেনি। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সতর্কতা ও দৃঢ়তায় তখন সফল হতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোশতাক ক্ষমতায় আরোহণের তার বহুদিনের সাধ পূরণ করল। পর্দার অন্তরালে থেকে যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মদত জুগিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাপ্রধান করেননি, এই ক্ষোভ থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তে শামিল হন।
মুক্তিযুদ্ধ থেকেই জিয়া এক রহস্যময় চরিত্র। জিয়া দায়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং প্রথম দিকে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে ১ নম্বরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু তার সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে ১ নম্বর সেক্টর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। তিনি ওসমানী সাহেবের প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন এবং তাঁকে প্রধান সেনাপতি পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। খালেদ মোশাররফের বিরোধিতার কারণে পারেননি। কামালপুর যুদ্ধে জিয়ার ভুলের কারণে বাংলাদেশ বাহিনীর অনেক অফিসার ও জওয়ান হতাহত হন। সে জন্য জেনারেল ওসমানী তাকে স্যাক করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়া। তিনি ক্রমান্বয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং শেষে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, আলীম ও মতিনকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে একে একে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন। দালাল আইন বাতিল করে ঘাতক দালাল, রাজাকার, আলবদরদের ছেড়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বর্জন করেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দেন।
মোশতাক ও জিয়া চেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও মানুষ যাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেছে, অত সহজে কি তাঁকে মুছে ফেলা যায়! মানুষের চেতনায় ঠাঁই নিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
ফলে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ভেবেছিল, একাত্তরে পরাজিত ও পরিত্যক্ত পাকিস্তানকে আবার তারা ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশে, তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছিলেন। তাদের যিনি বধ করবেন, তিনি গোকুলে বেড়ে উঠছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা; বিদেশে থাকার কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেট থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্রথমজন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এলেন স্বদেশে। প্রথমে পিতার গড়া দল, স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। হতাশ, মনোবলহারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। পুনর্গঠিত দল নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ শাসনের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে এনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করলেন; তাঁকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনকে জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস ঘোষণা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তির ওপর বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দিয়েছে। সেই কলঙ্ক কখনো মুছবে না, ঘুচবে না।
হাজার বছরের মধ্যে এমন প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, হন্তারক ও শঠতাপূর্ণ দিবস বাঙালি জাতির জীবনে আর কখনো আসেনি। কিছুটা হয়তো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে অভিনীত বিয়োগান্ত নাটকে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে তুলনীয়। সিরাজউদ্দৌলা যদিও বাঙালি ছিলেন না, তথাপি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সিরাজের প্রতিরোধের মধ্যে জাতীয় বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের উপাদান খোঁজে বাঙালি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্যই প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেও একাধিকবার তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন, তখনো স্বাধীনতা বিপন্মুক্ত হলো না। যে স্বাধীনতা এনেছিল বাঙালি জাতি, তাকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধুকেই জীবন দিয়ে স্বাধীনতার দাম দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? হাজার বছরে কত বড় বড় মনীষী, রাজনীতিক বাঙালির জীবনকে আলোকিত ও আন্দোলিত করেছেন, ইতিহাস ও সভ্যতা নির্মাণ করেছেন নিজ নিজ মেধা, উদ্ভাবন, অনন্যসাধারণ সাধনা ও কর্মকৃতি দিয়ে। কিন্তু তাঁরা কেউ বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেননি। কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেননি। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কালে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একটি স্বাধীন বঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব এই রাজ্যের রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও বাঙালি নন। দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ এই স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ নিয়ে গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন এর প্রথম সার্বভৌম নৃপতি।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত (১২০৪-১৫৭৬) স্বাধীন সুলতানি আমল বাঙালির ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। কিন্তু সুলতানেরা বাঙালি ছিলেন না এবং সেই বাংলাও এই বাংলা নয়।
এসব রাজতন্ত্রের কথা। বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গোটা বাংলার ইতিহাসে এমনকি আরেকটি উদাহরণ পাই, যখন রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শতবর্ষব্যাপী অনৈক্য, আত্মকলহ ও বহিঃশত্রুর পুনঃপুন আক্রমণে বাংলার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। তখন দেশে কোনো রাজা ছিল না, প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাহ্মণ এবং বণিক নিজ নিজ এলাকা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। সংস্কৃতে ওই অরাজক পরিস্থিতিকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।
সেই চরম দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের জন্য বাঙালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিল, ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের প্রবীণ নেতারা স্থির করলেন, পরস্পর বিবাদ-বিসম্বাদ ভুলে একজনকে রাজপদে নির্বাচিত করবেন এবং সবাই স্বেচ্ছায় তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করবেন। দেশের জনসাধারণও সানন্দে এই মত গ্রহণ করল। এর ফলে গোপাল নামের এক ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজপদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাঙালির এই দেড়-দুই হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়, তা হলো ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, আগে কখনো তা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, বাঙালিকে প্রথম জাতি পরিচিতি দিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সাহায্য চাইতে অন্তত তিনবার (১৯৬১, ১৯৬২ সালে দুবার এবং আরেকবার সম্ভবত আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর) আগরতলায় গেছেন বঙ্গবন্ধু। সিলেটের মোয়াজ্জেম চৌধুরীরা নেতাজি সুভাষ বসুর স্টাইলে বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মধ্য দিয়ে লন্ডন নিয়ে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চালাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক এস এস ব্যানার্জির মাধ্যমেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাহায্য চেয়ে।
১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন তথ্য পাওয়া যায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বইয়ে। তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে ওই সংস্থার নামে মুদ্রিত কিছু লিফলেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলি করার জন্য দিয়েছিলেন। তিনি লিফলেটগুলো শেখ ফজলুল হক মনিকে দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বিভিন্ন রুমের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
তারও আগে ১৯৬০ সালে দিল্লির সাউথ ব্লকে পাকিস্তান ডেস্কে কর্মরত একজন গোয়েন্দা চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তিনি পতেঙ্গা সৈকত, হালিশহর ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শন করে নোয়াখালী চলে গিয়েছিলেন। এটিও বঙ্গবন্ধুর একটি স্বাধীনতা প্রচেষ্টার অংশ। ওই গোয়েন্দার নাম রাজ নির্মল নারায়ণ চৌধুরী। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী। তিনি ‘র’-এর প্রধান রামনাথ কাওয়ের সহকারী ছিলেন। তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ এবং পরবর্তীকালে আগরতলা মামলার আসামি মানিক চৌধুরী ওই গোয়েন্দার সঙ্গে ছিলেন।
১৯৬১ সালের শেষার্ধ থেকে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী এ ব্যাপারে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মুজিব ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে মণি সিংহ ও খোকা রায় এসব গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব কর্মসূচিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ওদের সাথে আমাদের আর থাকা চলবে না। তাই এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; আন্দোলনের প্রোগ্রামে ওই দাবি রাখতে হবে।
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সম্মত হননি। তাঁরা বলেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি এখন একটি হঠকারী দাবি।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও সংগ্রামকে দুভাগে ভাগ করা যায়—একটি স্থানিক ও সাময়িক, আরেকটি স্থায়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর রাজনীতির চিরস্থায়ী কথা। পঞ্চাশের দশকে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে যখন রাজনীতি শুরু করছেন, তখন বিরোধী নেতাদের মধ্যে ঢাকায় নিয়ন্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনেক পূর্ববর্তী নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তাঁর সাক্ষাৎ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, কমরেড মণি সিং প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক নেতা ছিলেন অলি আহাদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ।
১৯৭০ সালে এ কে ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দী ছাড়া অন্য সব নেতাই ছিলেন জীবিত। কিন্তু তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও ছিলেন না। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার মহানায়ক।
বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত করেন, জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। বাঙালির অভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ছিল, কিন্তু যে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জাতিসত্তার স্ফুরণ ঘটে, পাকিস্তান হওয়ার পর পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী বাঙালির জাতি হিসেবে সংগঠিত হওয়ার অবকাশ মেলে। ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন ঘটায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণও প্রথম বঙ্গবন্ধুই করেন। ১৯৬৯ সালে তিন নেতার মাজারে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্র কখনো ছিল না। বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেল ইত্যাদি নানা স্বাধীন বিচ্ছিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বাংলা মুলুক নামে পরিচিত ভূখণ্ডটি। ব্রিটিশ শাসনামলে বিচ্ছিন্ন জনপদ বা স্বাধীন রাজ্যসমূহকে একীভূত করে অখণ্ড বাংলার সৃষ্টি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ভেস্তে যায়। ১৯৪৭-এ অখণ্ড বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাতচল্লিশের বাংলা ভাগের মূলে ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের তাড়না। জিন্নাহ সাহেব বাঙালি জাতির প্রধান দুই উপাদান হিন্দু ও মুসলমানকে দুই জাতি হিসেবে বর্ণনা করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ধর্ম কখনো জাতীয়তার ভিত্তি হতে পারে না। তা সত্ত্বেও জিন্নাহ হাজার মাইলের ব্যবধানে বসবাসকারী মানুষ, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এমনকি গাত্রবর্ণও ভিন্ন, শুধু ধর্ম বিশ্বাসে ছিল অভিন্ন, তাদেরকে ধর্মের রজ্জুতে গেঁথে একটি আজব রাষ্ট্র গঠন করলেন।
বঙ্গবন্ধু জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে একজাতিতত্ত্বের ধারণা উপস্থাপন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। তিনি বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো জাতি হতে পারে না। অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জাতি গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত। সাতচল্লিশে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে এই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তার উপাদান দেখতে পেলেন এবং বাংলাদেশের যে ছবি তিনি মনে মনে কল্পনা করতেন, পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে তার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেন। অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জাতীয়তা নির্মাণে সচেষ্ট হলেন। পূর্ববঙ্গকে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের উপনিবেশের মতো শোষণ এবং সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য দেখতে দেখতে অভিমানাহত বাঙালি জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করে। ষাটের দশকে বাঙালি জনমনে ধূমায়মান অসন্তোষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়। ৬ দফার মধ্যে নিহিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ৬ দফা মানতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অস্বীকৃতি থেকে বাঙালি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
অতঃপর সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় মানতে অস্বীকার করে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে পাকিস্তানি হানাদারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়ন করার আহ্বান জানালে জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন।
সব আলোচনা থেকে একথা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।
পঁচাত্তরের খুনিরা ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতাকেই শুধু হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশকে। কেননা বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক, একটি চেতনার নাম। সে আদর্শ বাংলাদেশ, সেই চেতনা বাঙালিত্ব।
তবে খুনিরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর দেহান্ত হলেও তাঁর আদর্শ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে আছে। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যুর ৪৮ বছর পরও আজও বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নিত্য উপস্থিতি, বঙ্গবন্ধু আজও এ দেশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু তত দিন বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মাঝে।
মোশতাক, চাষী, ঠাকুর, রশিদ, ফারুক—যাদের আমরা খুনি বলে চিনি, ব্যক্তি পরিচয়ের আড়ালে আসলে কী ছিল তারা? তারাও একটি আদর্শের প্রতীক, কিংবা তাদের শিখণ্ডী হিসেবে খাড়া করে আড়ালে বসে যিনি অট্টহাসি হাসছিলেন, ১৫ আগস্ট ভোর হতে না হতেই পূর্ণ সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে কিলিং মিশন অ্যাকমপ্লিশ্ড হওয়ার খবরটা শোনার জন্য যে প্রস্তুত হয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পায়চারী করছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমান। ক্ষমতারূঢ় হওয়ার অনেক পরে তিনি নিজেই জানান দিয়েছিলেন, তার আদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, যা আসলে ইসলামি তথা পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদেরই নামান্তর। তার আগে মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রাদর্শ বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’-এ বদলে দেয়। বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধুর পোশাককেও ঘৃণা করত মোশতাক, তাই সে কিম্ভুতকিমাকার নতুন এক জাতীয় পোশাকের প্রচলন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রকে একে একে পাল্টে দেওয়া হলো। এই মূলনীতিগুলো মুক্তিযুদ্ধেরই অর্জন। এরপর যা থাকল, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ নামের খোলসে ‘পাকিস্তান’।
মোশতাক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করল, জিয়া তাকে জায়েজ করলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মোড়কে। আসলে মোশতাক, চাষীরা ছিল একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মা। মোশতাক, চাষী মুক্তিযুদ্ধেই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে কম দেনদরবার করেনি। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সতর্কতা ও দৃঢ়তায় তখন সফল হতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোশতাক ক্ষমতায় আরোহণের তার বহুদিনের সাধ পূরণ করল। পর্দার অন্তরালে থেকে যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মদত জুগিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাপ্রধান করেননি, এই ক্ষোভ থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তে শামিল হন।
মুক্তিযুদ্ধ থেকেই জিয়া এক রহস্যময় চরিত্র। জিয়া দায়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং প্রথম দিকে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে ১ নম্বরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু তার সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে ১ নম্বর সেক্টর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। তিনি ওসমানী সাহেবের প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন এবং তাঁকে প্রধান সেনাপতি পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। খালেদ মোশাররফের বিরোধিতার কারণে পারেননি। কামালপুর যুদ্ধে জিয়ার ভুলের কারণে বাংলাদেশ বাহিনীর অনেক অফিসার ও জওয়ান হতাহত হন। সে জন্য জেনারেল ওসমানী তাকে স্যাক করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়া। তিনি ক্রমান্বয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং শেষে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, আলীম ও মতিনকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে একে একে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন। দালাল আইন বাতিল করে ঘাতক দালাল, রাজাকার, আলবদরদের ছেড়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বর্জন করেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দেন।
মোশতাক ও জিয়া চেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও মানুষ যাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেছে, অত সহজে কি তাঁকে মুছে ফেলা যায়! মানুষের চেতনায় ঠাঁই নিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
ফলে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ভেবেছিল, একাত্তরে পরাজিত ও পরিত্যক্ত পাকিস্তানকে আবার তারা ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশে, তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছিলেন। তাদের যিনি বধ করবেন, তিনি গোকুলে বেড়ে উঠছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা; বিদেশে থাকার কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেট থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্রথমজন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এলেন স্বদেশে। প্রথমে পিতার গড়া দল, স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। হতাশ, মনোবলহারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। পুনর্গঠিত দল নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ শাসনের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে এনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করলেন; তাঁকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনকে জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস ঘোষণা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তির ওপর বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দিয়েছে। সেই কলঙ্ক কখনো মুছবে না, ঘুচবে না।
হাজার বছরের মধ্যে এমন প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, হন্তারক ও শঠতাপূর্ণ দিবস বাঙালি জাতির জীবনে আর কখনো আসেনি। কিছুটা হয়তো ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে অভিনীত বিয়োগান্ত নাটকে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে তুলনীয়। সিরাজউদ্দৌলা যদিও বাঙালি ছিলেন না, তথাপি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সিরাজের প্রতিরোধের মধ্যে জাতীয় বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের উপাদান খোঁজে বাঙালি।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্যই প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেও একাধিকবার তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন, তখনো স্বাধীনতা বিপন্মুক্ত হলো না। যে স্বাধীনতা এনেছিল বাঙালি জাতি, তাকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে জাতির পিতাকে। বঙ্গবন্ধুকেই জীবন দিয়ে স্বাধীনতার দাম দিতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? হাজার বছরে কত বড় বড় মনীষী, রাজনীতিক বাঙালির জীবনকে আলোকিত ও আন্দোলিত করেছেন, ইতিহাস ও সভ্যতা নির্মাণ করেছেন নিজ নিজ মেধা, উদ্ভাবন, অনন্যসাধারণ সাধনা ও কর্মকৃতি দিয়ে। কিন্তু তাঁরা কেউ বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেননি। কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেননি। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কালে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে একটি স্বাধীন বঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব এই রাজ্যের রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও বাঙালি নন। দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ এই স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের কতকাংশ নিয়ে গৌড়রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা শশাঙ্ক ছিলেন এর প্রথম সার্বভৌম নৃপতি।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত (১২০৪-১৫৭৬) স্বাধীন সুলতানি আমল বাঙালির ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। কিন্তু সুলতানেরা বাঙালি ছিলেন না এবং সেই বাংলাও এই বাংলা নয়।
এসব রাজতন্ত্রের কথা। বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গোটা বাংলার ইতিহাসে এমনকি আরেকটি উদাহরণ পাই, যখন রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর শতবর্ষব্যাপী অনৈক্য, আত্মকলহ ও বহিঃশত্রুর পুনঃপুন আক্রমণে বাংলার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। তখন দেশে কোনো রাজা ছিল না, প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাহ্মণ এবং বণিক নিজ নিজ এলাকা স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। সংস্কৃতে ওই অরাজক পরিস্থিতিকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।
সেই চরম দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভের জন্য বাঙালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিল, ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের প্রবীণ নেতারা স্থির করলেন, পরস্পর বিবাদ-বিসম্বাদ ভুলে একজনকে রাজপদে নির্বাচিত করবেন এবং সবাই স্বেচ্ছায় তাঁর প্রভুত্ব স্বীকার করবেন। দেশের জনসাধারণও সানন্দে এই মত গ্রহণ করল। এর ফলে গোপাল নামের এক ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজপদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাঙালির এই দেড়-দুই হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়, তা হলো ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, আগে কখনো তা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, বাঙালিকে প্রথম জাতি পরিচিতি দিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সাহায্য চাইতে অন্তত তিনবার (১৯৬১, ১৯৬২ সালে দুবার এবং আরেকবার সম্ভবত আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর) আগরতলায় গেছেন বঙ্গবন্ধু। সিলেটের মোয়াজ্জেম চৌধুরীরা নেতাজি সুভাষ বসুর স্টাইলে বঙ্গবন্ধুকে ভারতের মধ্য দিয়ে লন্ডন নিয়ে গিয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চালাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬২ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক এস এস ব্যানার্জির মাধ্যমেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাহায্য চেয়ে।
১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য পূর্ববঙ্গ মুক্তিফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন তথ্য পাওয়া যায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বইয়ে। তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে ওই সংস্থার নামে মুদ্রিত কিছু লিফলেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিলি করার জন্য দিয়েছিলেন। তিনি লিফলেটগুলো শেখ ফজলুল হক মনিকে দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বিভিন্ন রুমের দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।
তারও আগে ১৯৬০ সালে দিল্লির সাউথ ব্লকে পাকিস্তান ডেস্কে কর্মরত একজন গোয়েন্দা চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তিনি পতেঙ্গা সৈকত, হালিশহর ইত্যাদি এলাকা পরিদর্শন করে নোয়াখালী চলে গিয়েছিলেন। এটিও বঙ্গবন্ধুর একটি স্বাধীনতা প্রচেষ্টার অংশ। ওই গোয়েন্দার নাম রাজ নির্মল নারায়ণ চৌধুরী। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী। তিনি ‘র’-এর প্রধান রামনাথ কাওয়ের সহকারী ছিলেন। তাঁর সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ এবং পরবর্তীকালে আগরতলা মামলার আসামি মানিক চৌধুরী ওই গোয়েন্দার সঙ্গে ছিলেন।
১৯৬১ সালের শেষার্ধ থেকে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী এ ব্যাপারে দুই দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মুজিব ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে মণি সিংহ ও খোকা রায় এসব গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব কর্মসূচিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ওদের সাথে আমাদের আর থাকা চলবে না। তাই এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; আন্দোলনের প্রোগ্রামে ওই দাবি রাখতে হবে।
কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সম্মত হননি। তাঁরা বলেছিলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি এখন একটি হঠকারী দাবি।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও সংগ্রামকে দুভাগে ভাগ করা যায়—একটি স্থানিক ও সাময়িক, আরেকটি স্থায়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর রাজনীতির চিরস্থায়ী কথা। পঞ্চাশের দশকে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে যখন রাজনীতি শুরু করছেন, তখন বিরোধী নেতাদের মধ্যে ঢাকায় নিয়ন্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনেক পূর্ববর্তী নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তাঁর সাক্ষাৎ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, কমরেড মণি সিং প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক নেতা ছিলেন অলি আহাদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা প্রমুখ।
১৯৭০ সালে এ কে ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দী ছাড়া অন্য সব নেতাই ছিলেন জীবিত। কিন্তু তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তায় বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও ছিলেন না। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতার মহানায়ক।
বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত করেন, জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। বাঙালির অভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ছিল, কিন্তু যে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জাতিসত্তার স্ফুরণ ঘটে, পাকিস্তান হওয়ার পর পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী বাঙালির জাতি হিসেবে সংগঠিত হওয়ার অবকাশ মেলে। ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন ঘটায়।
পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণও প্রথম বঙ্গবন্ধুই করেন। ১৯৬৯ সালে তিন নেতার মাজারে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্র কখনো ছিল না। বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেল ইত্যাদি নানা স্বাধীন বিচ্ছিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বাংলা মুলুক নামে পরিচিত ভূখণ্ডটি। ব্রিটিশ শাসনামলে বিচ্ছিন্ন জনপদ বা স্বাধীন রাজ্যসমূহকে একীভূত করে অখণ্ড বাংলার সৃষ্টি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ভেস্তে যায়। ১৯৪৭-এ অখণ্ড বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাতচল্লিশের বাংলা ভাগের মূলে ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের তাড়না। জিন্নাহ সাহেব বাঙালি জাতির প্রধান দুই উপাদান হিন্দু ও মুসলমানকে দুই জাতি হিসেবে বর্ণনা করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ধর্ম কখনো জাতীয়তার ভিত্তি হতে পারে না। তা সত্ত্বেও জিন্নাহ হাজার মাইলের ব্যবধানে বসবাসকারী মানুষ, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এমনকি গাত্রবর্ণও ভিন্ন, শুধু ধর্ম বিশ্বাসে ছিল অভিন্ন, তাদেরকে ধর্মের রজ্জুতে গেঁথে একটি আজব রাষ্ট্র গঠন করলেন।
বঙ্গবন্ধু জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে একজাতিতত্ত্বের ধারণা উপস্থাপন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। তিনি বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো জাতি হতে পারে না। অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জাতি গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত। সাতচল্লিশে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে এই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তার উপাদান দেখতে পেলেন এবং বাংলাদেশের যে ছবি তিনি মনে মনে কল্পনা করতেন, পূর্ববঙ্গের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে তার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেন। অতঃপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জাতীয়তা নির্মাণে সচেষ্ট হলেন। পূর্ববঙ্গকে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের উপনিবেশের মতো শোষণ এবং সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য দেখতে দেখতে অভিমানাহত বাঙালি জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে শুরু করে। ষাটের দশকে বাঙালি জনমনে ধূমায়মান অসন্তোষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়। ৬ দফার মধ্যে নিহিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ৬ দফা মানতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অস্বীকৃতি থেকে বাঙালি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
অতঃপর সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় মানতে অস্বীকার করে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতিকে পাকিস্তানি হানাদারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়ন করার আহ্বান জানালে জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন।
সব আলোচনা থেকে একথা নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির পিতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।
পঁচাত্তরের খুনিরা ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতাকেই শুধু হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশকে। কেননা বঙ্গবন্ধু একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক, একটি চেতনার নাম। সে আদর্শ বাংলাদেশ, সেই চেতনা বাঙালিত্ব।
তবে খুনিরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর দেহান্ত হলেও তাঁর আদর্শ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে আছে। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যুর ৪৮ বছর পরও আজও বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নিত্য উপস্থিতি, বঙ্গবন্ধু আজও এ দেশে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু তত দিন বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের মাঝে।
মোশতাক, চাষী, ঠাকুর, রশিদ, ফারুক—যাদের আমরা খুনি বলে চিনি, ব্যক্তি পরিচয়ের আড়ালে আসলে কী ছিল তারা? তারাও একটি আদর্শের প্রতীক, কিংবা তাদের শিখণ্ডী হিসেবে খাড়া করে আড়ালে বসে যিনি অট্টহাসি হাসছিলেন, ১৫ আগস্ট ভোর হতে না হতেই পূর্ণ সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে কিলিং মিশন অ্যাকমপ্লিশ্ড হওয়ার খবরটা শোনার জন্য যে প্রস্তুত হয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় পায়চারী করছিলেন, তিনি জিয়াউর রহমান। ক্ষমতারূঢ় হওয়ার অনেক পরে তিনি নিজেই জানান দিয়েছিলেন, তার আদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, যা আসলে ইসলামি তথা পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদেরই নামান্তর। তার আগে মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রাদর্শ বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’, বাংলাদেশ বেতারকে ‘রেডিও বাংলাদেশ’-এ বদলে দেয়। বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধুর পোশাককেও ঘৃণা করত মোশতাক, তাই সে কিম্ভুতকিমাকার নতুন এক জাতীয় পোশাকের প্রচলন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির মধ্যে তিনটি অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রকে একে একে পাল্টে দেওয়া হলো। এই মূলনীতিগুলো মুক্তিযুদ্ধেরই অর্জন। এরপর যা থাকল, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ নামের খোলসে ‘পাকিস্তান’।
মোশতাক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করল, জিয়া তাকে জায়েজ করলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মোড়কে। আসলে মোশতাক, চাষীরা ছিল একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মা। মোশতাক, চাষী মুক্তিযুদ্ধেই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে কম দেনদরবার করেনি। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সতর্কতা ও দৃঢ়তায় তখন সফল হতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মোশতাক ক্ষমতায় আরোহণের তার বহুদিনের সাধ পূরণ করল। পর্দার অন্তরালে থেকে যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মদত জুগিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাপ্রধান করেননি, এই ক্ষোভ থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তে শামিল হন।
মুক্তিযুদ্ধ থেকেই জিয়া এক রহস্যময় চরিত্র। জিয়া দায়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং প্রথম দিকে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে ১ নম্বরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু তার সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে ১ নম্বর সেক্টর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। তিনি ওসমানী সাহেবের প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন এবং তাঁকে প্রধান সেনাপতি পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। খালেদ মোশাররফের বিরোধিতার কারণে পারেননি। কামালপুর যুদ্ধে জিয়ার ভুলের কারণে বাংলাদেশ বাহিনীর অনেক অফিসার ও জওয়ান হতাহত হন। সে জন্য জেনারেল ওসমানী তাকে স্যাক করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়া। তিনি ক্রমান্বয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং শেষে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, আলীম ও মতিনকে মন্ত্রী করার মাধ্যমে একে একে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন। দালাল আইন বাতিল করে ঘাতক দালাল, রাজাকার, আলবদরদের ছেড়ে দেন। মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বর্জন করেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে দেন।
মোশতাক ও জিয়া চেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে দিতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও মানুষ যাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেছে, অত সহজে কি তাঁকে মুছে ফেলা যায়! মানুষের চেতনায় ঠাঁই নিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
ফলে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ভেবেছিল, একাত্তরে পরাজিত ও পরিত্যক্ত পাকিস্তানকে আবার তারা ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশে, তারা বোকার স্বর্গেই বাস করছিলেন। তাদের যিনি বধ করবেন, তিনি গোকুলে বেড়ে উঠছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা; বিদেশে থাকার কারণে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেট থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার প্রথমজন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এলেন স্বদেশে। প্রথমে পিতার গড়া দল, স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। হতাশ, মনোবলহারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। পুনর্গঠিত দল নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ শাসনের অধিকারী হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে এনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠা করলেন; তাঁকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিনকে জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস ঘোষণা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা; বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তির ওপর বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দি
১৫ আগস্ট ২০২৩
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দি
১৫ আগস্ট ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দি
১৫ আগস্ট ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

আমাদের অপরিমেয় শোক, বেদনাঘন একটি দিন ১৫ আগস্ট। এদিন হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতাসংগ্রামের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিল জাতি। ১৫ আগস্ট বাঙালির ভালে অপরিসীম লজ্জা, গ্লানি ও অনপনেয় কলঙ্ক লেপন করে দি
১৫ আগস্ট ২০২৩
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫