Ajker Patrika

সম্ভাবনার নতুন ভূখণ্ড

শফিকুল ইসলাম
আপডেট : ২৭ জুন ২০২১, ১৫: ৫৯
সম্ভাবনার নতুন ভূখণ্ড

দেশের সম্ভাবনাময় জেলাগুলোর অন্যতম হিসেবে সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার নাম বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। হিমালয়ের পাদদেশীয় সীমান্তবর্তী এই জেলার অনন্য অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এর উল্লেখযোগ্য কারণ। এ ছাড়া সমতলকেন্দ্রিক ক্রমবর্ধিঞ্চু চা–শিল্প, পাথরশিল্প ও ব্যবসা, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন, কৃষিভিত্তিক নতুন ধারার পণ্য উৎপাদনে সাফল্য এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগে লক্ষণীয় অগ্রগতিও বড় কারণ।

পঞ্চগড়ের ভিন্নধর্মী ভূপ্রকৃতি, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবহিত। হিমালয়ের পাদদেশীয় তরাই বনভূমি সন্নিহিত এই জনপদে যেমন রয়েছে রাজবংশী ও ভাওয়াইয়া সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ প্রভাব, তেমনি আছে উত্তরের পার্বত্য জনগোষ্ঠী ও পশ্চিমের বিহার অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতির নানা লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। ভারতের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন পর্যটন এলাকাসহ নেপাল, ভুটান ও পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই জেলার বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এক আদর্শ প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে। পর্যটন বাণিজ্য ও শিক্ষা–সংস্কৃতি বিষয়ে আন্তর্দেশীয় যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি এক বহুমাত্রিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পঞ্চগড় ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনিক কেন্দ্রের আওতাভুক্ত। কোচবিহার, রংপুর, জলপাইগুড়ি এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালের দেশভাগজনিত প্রেক্ষাপটে পঞ্চগড় পুনর্গঠিত দিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে দিনাজপুর ছিল দেশের অন্যতম বড় খাদ্যভান্ডার। এখানকার কাটারিভোগ চাল ব্যাপক সমাদৃত। মৌসুমি ফল লিচু, আম—এসবের জন্যও এর রয়েছে ভিন্ন এক পরিচিতি। কিন্তু দেশভাগ–পরবর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলার আওতাধীন পঞ্চগড়ের দৃশ্যপট ছিল অতীতের মতোই পশ্চাৎপদ। মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরের যে চিত্র, পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনচিত্রও ছিল অনেকটা সে রকমই। পাকিস্তানি শাসনামলের দীর্ঘ সময়েও পঞ্চগড়ের এই জরাজীর্ণ আর্থসামাজিক চেহারাই পরিদৃষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ে পঞ্চগড়ে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ এবং পঞ্চগড় চিনিকল স্থাপনের মতো ইতিবাচক ঘটনা থাকলেও বৃহত্তর জনজীবনে এগুলো দৃশ্যত বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পঞ্চগড় ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। সর্ব উত্তরের মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া হয়ে উঠেছিল তৎকালীন প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশেও পঞ্চগড়ের মানুষের আর্থসামাজিক দৃশ্যপট বলতে গেলে আগের মতোই অনুজ্জ্বল থেকে যায়।

ঐতিহাসিকভাবে পঞ্চগড় ও সন্নিহিত জনপদের মানুষের বেশ কিছু সংগ্রামী ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তেভাগা সংগ্রাম এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষের রাজনীতি ও অধিকারচেতনা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে মর্মে ধারণা করা যায়।

১৯৪৭–পরবর্তী সময়েও এলাকার মানুষ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সঠিক পথটিই বেছে নিয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনসহ পরবর্তী প্রতিটি ঘটনায় সেটি খুবই স্পষ্ট।

স্বাধীন বাংলাদেশে পঞ্চগড়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি জোরালো হতে থাকে। তারই একটি অংশ ছিল মহকুমা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এলাকার সুধীজন, তথা বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিত্বশীল মানুষের এই দাবি বাস্তবায়িত হয় ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি। পরে উপজেলা পদ্ধতি চালু এবং তৎকালীন মহকুমাগুলো জেলায় উন্নীত করা হয়। এই সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

জেলায় উন্নীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড়ে অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন বা নতুন নতুন কিছু স্থাপনা দৃশ্যমান হতে শুরু করলেও এখানকার অর্থনীতিতে বাণিজ্য ও পর্যটন গুরুত্ব পেতে শুরু করে আরও পরে। ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হলে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি সর্ব উত্তরের পঞ্চগড়েও এর ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যোগাযোগ ও বাণিজ্যে স্বাভাবিকভাবেই নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এর আগের বছর ১৯৯৭ সালে পঞ্চগড়ের উত্তর সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়ায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু হয়। এই বন্দরের কার্যক্রম প্রথমে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি–রপ্তানি সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে ভারত–বাংলাদেশের মধ্যেও পণ্য পরিবহন শুরু হয়। বিপুল পরিমাণ পাথরসহ আরও বেশ কিছু পণ্য বর্তমানে নিয়মিতভাবেই আমদানি–রপ্তানি হচ্ছে। পঞ্চগড় থেকে নীলফামারী, সৈয়দপুরসহ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে যোগাযোগ সহজতর করার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ চীন মৈত্রী সেতু জেলার দেবীগঞ্জে করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়। এই সেতুও ১৯৯৮ সালে উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চা-শিল্পের দুই প্রধান এলাকা সিলেটকেন্দ্রিক সুরমা ভ্যালি ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হালদা ভ্যালির পাশাপাশি এখন পঞ্চগড়কেন্দ্রিক করতোয়া ভ্যালির নামও সামনে
চলে এসেছে।

একসময় রাজধানী ঢাকা থেকে যাত্রা করে ফেরিযোগে যমুনা পার হয়ে পঞ্চগড় পৌঁছাতে প্রায় দুই দিন সময় লাগত। দৈনিক পত্রিকা পৌঁছাতেও একই সময় লাগত। আজ সেখানে পঞ্চগড়-ঢাকা সরাসরি কোচ সার্ভিসের সংখ্যা শতাধিক। সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চগড়-ঢাকা, পঞ্চগড়-রাজশাহী চলাচলকারী মোট চারটি আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস এই জেলার যোগাযোগচিত্রকে আমূল বদলে দিয়েছে।

পঞ্চগড়ের নদী থেকে উত্তোলিত পাথরসহ ভূ-অভ্যন্তর থেকে উত্তোলন করা পাথর এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন উন্নত পাথরকে কেন্দ্র করে এক বিরাট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছে। নির্মাণকাজে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মান ও আকারের ভাঙা পাথর সরবরাহের ক্ষেত্রে পঞ্চগড় এখন অতিপরিচিত নাম। পঞ্চগড়ের সিলিকা বালুর চাহিদাও সারা দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিদ্যুতের লাইনে ব্যবহৃত কংক্রিট পোল নির্মাণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে পঞ্চগড় একটি বড় জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের চা–শিল্পের দুই প্রধান এলাকা সিলেটকেন্দ্রিক সুরমা ভ্যালি ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হালদা ভ্যালির পাশাপাশি এখন পঞ্চগড়কেন্দ্রিক করতোয়া ভ্যালির নামও সামনে চলে এসেছে। গত শতকের আশির দশকে পঞ্চগড়ের সমতলভূমিতে চা চাষের কিছু বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকেই চা একটি কৃষিপণ্যরূপে সুসংহত আকার নিতে শুরু করে। সেই সময়ের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড়ে চা চাষের বিষয়টিকে উৎসাহিত করেন। ফলে এলাকায় সমভূমিতে চা চাষের সম্প্রসারণ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার সব উপজেলার বিস্তীর্ণ সমতল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলায়ও বহু চা–বাগান গড়ে উঠেছে।

 চা-শিল্পের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড় জেলা। ছবি: আজকের পত্রিকাসাম্প্রতিক তথ্যমতে, জেলায় গড়ে ওঠা চা-বাগানের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর। বেশ কয়েকটি বৃহদায়তন টি এস্টেট ছাড়াও জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে চা-বাগানের সংখ্যা এরই মধ্যে হাজার ছুঁয়েছে। ২০১৯ সালে জেলার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি কেজি। সেটি যথারীতি পূর্ণ হয়েছে। পঞ্চগড়ে ২০০১ সালে চা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি উপকেন্দ্র স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেটি আঞ্চলিক টি বোর্ড হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে কুড়িটির বেশি চা-কারখানায় পূর্ণোদ্যমে চা-পাতা ক্রয় ও চা উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। 

চা ও পাথরের জন্য পঞ্চগড়ের পরিচিতি গড়ে উঠলেও সাম্প্রতিক কালে এই জেলায় আরও কিছু কৃষিপণ্য দেশের বাজারে সমাদৃত হয়েছে। এখানে সুপারি, পান, মরিচ, আলু, বাদাম ইত্যাদি আগে থেকেই উৎপাদিত হয়। এর পাশাপাশি ভুট্টা, পোলট্রি খাদ্য ইত্যাদি উৎপাদনেও এই জেলা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জেলার কিছু এলাকায় কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফল ও সবজি উৎপাদন ও বিপণনে উদ্যোক্তা চাষিদের সাফল্য এখন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ফলের মধ্যে আম্রপালি জাতের আম, কুল, পেয়ারা, তরমুজ, লিচু ইত্যাদির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এ ছাড়া কমলা, মাল্টা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি—এসব ফলেরও কমবেশি উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইদানীং এই এলাকায় বিভিন্ন সবজিও রেকর্ড পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হাইব্রিড জাতের টমেটো, শসা, শিম, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, বরবটি, করলাসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজি। সারা দেশের বাজারে এ খাত এরই মধ্যে বড় জায়গা দখল করতে পেরেছে। করোনায় লকডাউন চলাকালে রাজশাহীর আম পরিবহনের জন্য যে ধরনের বিশেষ ট্রেন–সুবিধা চালু করা হয়, পঞ্চগড়ের সবজিচাষিদের জন্যও অনুরূপ সুবিধা চালু করা হয়। এ থেকেই পঞ্চগড়ে সবজি চাষের বিস্তৃতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।

একসময় যে অঞ্চলের মানুষ বিস্তীর্ণ অনাবাদি জমির বোঝা নিয়ে এবং ব্যবসায় সুবিধাবঞ্চিত থেকে ধুঁকে ধুঁকে পথ চলাকেই প্রায় নিয়তি ভাবতে বসেছিল, সেই অঞ্চলের বর্তমান দৃশ্যপট ও মানুষের জীবনমান নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ।

জেলার শিক্ষা–সংস্কৃতি ও চিকিৎসাব্যবস্থার গুণগত প্রসার এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পর্যটন সম্ভাবনাকে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হলে পঞ্চগড় যে অতি অল্প সময়ে দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শফিকুল ইসলাম
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত