মফিদুল হক

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মফিদুল হক

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ
১৫ আগস্ট ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫