মোহাম্মদ আজম

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। ভাষার অস্তিত্বে তিনি দেখেছেন দুই বিপরীত স্বভাবের বিরোধ আর বিরামহীন লড়াই—একদিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তি, যা একে বৈচিত্র্যে প্রসারিত করতে চায়; অন্যদিকে এক কেন্দ্রমুখী শক্তি, যা উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্যে মেলাতে চায়, একরৈখিকতা তৈরি করতে চায়। এই দ্বন্দ্ব সংস্কৃতিতেও আছে, প্রকৃতিতেও আছে; মানুষের চৈতন্যেরও এটা সহজাত, আর মানুষের উচ্চারণেও তা বিশেষভাবে কাজ করছে। বাখতিনের মতে, মানুষের ভাষা হলো এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং জটিল আবাস; আর উপন্যাস হলো এই ভাষার সর্বোত্তম প্রতিলিপি। ভাষা কেবল এই দ্বন্দ্বের প্রকাশক বা আশ্রয় নয়; বরং সে নিজেই এই দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ নমুনা। কাঠামোবাদী তাত্ত্বিকদের মতো বাখতিন এই দুই দ্বন্দ্বকে বিপরীত শব্দজোড় (binary opposition) হিসেবে দেখেননি। তাঁর কাছে এই দুই বিপরীত শক্তি ঐতিহাসিকভাবে ভাষার হয়ে ওঠা, অর্থের স্থিতি ও লয়ের সঙ্গে যুক্ত। এটা যান্ত্রিক নয়, বরং মানুষের স্বভাবের মতোই অনির্দিষ্ট।
বাখতিন ভাষার এ স্বভাব বিশ্লেষণ করেছেন ‘Discourse In The Novel’ প্রবন্ধে। তাঁর এ আলোচনা গভীরভাবে শ্রেণি প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাছাকাছি সময়ে ইতালীয় তাত্ত্বিক গ্রামসি অধিপতি শ্রেণির মতাদর্শিক আধিপত্য বা হেজিমনির ধারণা প্রচার করেছিলেন। বাখতিন সম্ভবত এ ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু অধিপতি মতাদর্শের গড়ন ও চলন সম্পর্কে তাঁর বয়ান গ্রামসির কথা মনে করিয়ে দেয়। বাখতিন অবশ্য ভাষার ‘শুদ্ধরূপ’ প্রণয়নে অধিপতি শ্রেণির এককাট্টা আধিপত্যের কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি দেখিয়েছেন, এ শ্রেণির সব ধরনের তাত্ত্বিক চর্চা ভাষার একরৈখিক ‘শুদ্ধরূপ’-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এবং তাকেই শক্তিশালী করে। তাঁর মতে, ব্যাপারটা প্রয়োজনীয় এবং কাজের, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই ভাষার স্বভাববিরোধী।
ভাষার দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, শৈলীবিদ্যা—বাখতিন লিখেছেন—এ যাবৎ ব্যক্তির ‘নিজস্ব’ একক ভাষার সঙ্গে সরল সম্পর্ক সাব্যস্ত করে ব্যক্তির ভাষা বিশ্লেষণ করেছে। ব্যক্তির একরৈখিক উচ্চারণে ভাষার সৌন্দর্য খুঁজেছে। বিদ্যার এ শাখাগুলো ভাষার দুটি রূপ সম্পর্কে কেবল ওয়াকিবহাল। এর মধ্যেই তাদের ভাষাগত ও শৈলীগত তাবৎ ধারণাকে তারা গুঁজে দেয়। একটি হলো একরৈখিক ভাষাকাঠামো (unitary language), অন্যটি হলো, এই ভাষা-ব্যবহারকারী ব্যক্তি। যুগে যুগে কাব্যতত্ত্ব বা মতাদর্শিক শৈলীর নানা বিচিত্র রূপ আবির্ভূত হয়েছে। যুগ-সত্যের অধীনে ভাষাদর্শন, ভাষাতত্ত্ব বা শৈলীবিজ্ঞানের নতুন নতুন রূপও আমরা পেয়েছি। ‘ভাষা-কাঠামো’, ‘একরৈখিক উচ্চারণ’, ‘কথক ব্যক্তি’ ইত্যাদি ধারণার নানা সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ তাতে পাওয়া গেছে। কিন্তু এই দুই প্রান্তসীমা সব সময় একই থেকেছে। ইউরোপীয় ইতিহাসের বিশেষ গতিবিধি, আর সে ইতিহাসের পাটাতনে ভাবাদর্শিক ডিসকোর্সগুলো অধিপতি-শ্রেণির যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে চেয়েছে, শৈলীবিদ্যার মূল বর্গগুলো তার নিরিখেই রূপ লাভ করেছে। এ কথা মনে রাখলে বর্গগুলোর জোরের উৎস আর সীমাবদ্ধতা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ সামাজিক বর্গ বা শ্রেণির ভাষিক-মতাদর্শিক আওতার মধ্যেই ইতিহাসের নির্ধারক ‘মূল শক্তিগুলো’ কাজ করে। ভাষাতাত্ত্বিক বা শৈলী-সম্বন্ধীয় বর্গগুলো এর অধীনেই জন্মলাভ করে, বেড়ে ওঠে, এবং চূড়ান্ত রূপ পায়। ভাষার নতুন প্রাণ-সৃষ্টিকারী এই ‘মূলশক্তিগুলো’র তাত্ত্বিক অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয় বর্গগুলোতে: ‘These forces are the forces that serve to unify and centralize the verbal-ideological world.’
একরৈখিক ভাষা (unitary language) বৈচিত্র্যকে একীভূত আর কেন্দ্রীভূত করার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল—ভাষার কেন্দ্রমুখিতার প্রকাশ। একরৈখিক ভাষা কোনো প্রাপ্ত বা বাস্তব বা স্বাভাবিক অবস্থা নয়; বরং সব সময়েই আরোপিত, কৃত্রিমভাবে নির্মিত—জন্মমুহূর্তেই এটি বহুভাষিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেই বহাল হয়। অবশ্য, এটা বৈচিত্র্যের গোলমাল কমিয়ে পারস্পরিক বোধগম্যতা নিশ্চিত করে; ভাষার প্রাত্যহিক ব্যবহারকে সম্ভবপর করে তোলে। প্রাত্যহিক কথ্যভাষা আর সাহিত্যিক ভাষার বাস্তবসম্মত আপাত-ঐক্য সাধন করেই ‘প্রমিত ভাষা’ প্রস্তাবিত হয়। এর কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে ভাষা নতুন জীবন পায়; বাচনিক-মতাদর্শিক চিন্তা একীভূত ও কেন্দ্রীভূত হয়। বিচিত্র গতি-প্রকৃতিসম্পন্ন জাতীয় ভাষার মধ্যেই স্বীকৃত সাহিত্যিক ভাষা, তথা প্রমিত ভাষার একটি অনমনীয় স্থায়ী রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা বলতে বাখতিন কখনোই বিমূর্ত ব্যাকরণিক বর্গের সমষ্টি বোঝাননি; বরং ভাষা যে অর্থে মতাদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়, যে অর্থে বিশ্বদৃষ্টি হিসেবে বর্ণিত হয়—তাকেই বুঝিয়েছেন। এমনকি ভাবাদর্শিক জীবন বিচিত্র দিকের পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাষার মধ্যেই প্রকাশিত হয়। ফলে এ রকম কেন্দ্রীভূত একরৈখিক ভাষা সমাজকাঠামোয় বিদ্যমান অধিপতি শক্তিগুলোর বাচনিক-মতাদর্শিক অবস্থানেরই বাহন হয়ে ওঠে। স্পষ্টতই সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতা-সম্পর্কের চলনের সঙ্গে ভাষার এই কেন্দ্রায়ণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব, অগাস্টিনের কাব্যতত্ত্ব, মধ্যযুগের গির্জাকেন্দ্রিক কাব্যতত্ত্ব, কার্থেজীয় নব্য ধ্রুপদিবাদ, লাইবনিজের বিমূর্ত বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কিংবা হামবোল্টের মূর্ততার প্রতি জোরারোপ—এঁদের মধ্যে সূক্ষ্ম যত ভিন্নতাই থাকুক না কেন, আদতে সামাজিক-ভাষিক এবং মতাদর্শিক জীবনের কেন্দ্রমুখী অভীপ্সাই তাতে প্রকাশ পেয়েছে। ইউরোপীয় ভাষাগুলোর কেন্দ্রমুখী একরৈখিক রূপ প্রণয়নের প্রকল্পেই সবাই সাহায্য করেছে। উপভাষাগুলোর মধ্যে একটির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে অন্যগুলোকে হটিয়ে দেওয়া বা অন্যগুলোকে একটির দাস বানানো; ‘খাঁটি শব্দ’-যোগে এগুলোকে আলোকিত করার প্রক্রিয়া; নিম্ন শ্রেণির মানুষ ও ‘বর্বর’-দের একরৈখিক সংস্কৃতি ও সত্যে শামিল করানো; ভাষাদর্শিক কাঠামোর অধীনে নিয়মকানুন তৈরি করা—এই সবকিছুই ‘একক ভাষা’ বা ‘প্রমিত ভাষা’র শক্তি জুগিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এ প্রক্রিয়ায় আরও আছে মৃতভাষা—যে ভাষাগুলো স্বভাবতই একরৈখিক—পড়ানো-শেখানোর ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া; আছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো পাঠের ক্ষেত্রে কতগুলো বিশেষ রীতিপদ্ধতিতে মনোযোগ, এবং বিশেষত ভাষিক বহুত্বের বদলে একক প্রত্নভাষার সন্ধান। বাখতিন লক্ষ করেছেন, এসব প্রক্রিয়ায় বাহ্যত যত রকম ফারাকই থাক, অন্তর্গত চরিত্রে এগুলোয় ক্ষমতা-সম্পর্কের সুবিধাজনক কোঠায় অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর ভাবাদর্শিক প্রতিফলনই পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়াগুলোই নির্মাণ করেছে অধিকাংশ নন্দনতত্ত্বের রীতি-নির্ধারক বয়ান। কেন্দ্রমুখী বাচনিক-ভাবাদর্শিক জীবনের মতো এই ভাষিক-নন্দনতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও একই খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ভাষা ও নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রভাবশালী ধারাকেই অনুসরণ করেছে।
মুশকিল হলো, ‘একক ভাষা’য় মূর্ত এই কেন্দ্রমুখী ভাষিক বাস্তবতা, যাকে আমরা আজকাল প্রমিত ভাষা নামে চিনি, বহুভাষিক সমাজ-বাস্তবতার মধ্যেই কাজ করে। যেকোনো বিশেষ মুহূর্তে ভাষা কেবল উপভাষায় (প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা মোতাবেক) বিভক্ত থাকে না, বরং—বাখতিনের কাছে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ—বিভক্ত থাকে নানা সামাজিক-মতাদর্শিক বর্গেও। বিভিন্ন সামাজিক বর্গের ভাষা, পেশাগত বা শ্রেণিগত ভাষা, প্রজন্মের ভাষা ইত্যাদি। এই যে ভাষার বিভিন্ন স্তর এবং বহু ভাষা সমন্বিত বাস্তবতা—এটা যদ্দিন ভাষা জীবিত এবং বিকাশমান থাকে, তদ্দিন বাড়তেই থাকে। কেন্দ্রমুখী একরৈখিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রাতিগ বলের উপাদানগুলোও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায়। বাচনিক-মতাদর্শিক কেন্দ্রীভূতকরণ আর একীকরণের পাশেই চলতে থাকে বিকেন্দ্রীকরণ এবং বহু বিচিত্ররূপে বিভক্তকরণ।
এ কারণে প্রত্যেক উচ্চারণ স্বভাবতই কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রাতিগ শক্তির চিহ্ন বহন করে। কোনো বিশেষ উচ্চারণ কেবল ব্যবহার-মুহূর্তে নিজের বিচ্ছিন্ন একক প্রয়োজন মেটায় না, বহু-বাস্তবের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে ভাষা-জগতে তার জন্ম ও অবস্থিতি, তার প্রয়োজনও মেটায়। তার চেয়ে বড় কথা, ভাষাগত অবয়ব আর শৈলীর দিক থেকে উচ্চারণটি একরৈখিক ভাষাকাঠামোর কেন্দ্রমুখী নির্দেশনা দ্বারা যতটা চালিত হয়, তাতে বহুভাষিক বাস্তবের প্রভাব তার চেয়ে মোটেই কম থাকে না। তার মানেই হলো, ভাষিক উচ্চারণ একই সঙ্গে একরৈখিক ভাষা [প্রমিত ভাষা] এবং বহুভাষিক বাস্তবতা—দুইয়ের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়। যে পরিবেশে উচ্চারণটির জন্ম ও পরিণতি, তা পরস্পর-সম্পর্কিত বা সংলাপায়িত (dialogized) বাস্তব; ভাষার মতোই তা সামাজিক আর আকারহীন; অন্যদিকে আবার তা মূর্ত, নির্দিষ্ট বার্তাবাহী এবং ব্যক্তিক উচ্চারণের বিশিষ্টতায় চিহ্নিত।
বাখতিন মানভাষা বা প্রমিত ভাষা ইত্যাদি বর্গ নামত ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবিত ‘একরৈখিক ভাষা’ স্পষ্টতই ভাষার ওই রূপ, যা সচরাচর প্রমিত ভাষা নামে বর্ণিত হয়। হুমায়ুন আজাদ প্রমিত বা মানভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘কোনো ভাষা তার সমগ্র এলাকাজুড়ে একরূপ হয় না;–তার থাকে নানা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন শ্রেণিক চারিত্র্য, তবে ওই সমস্ত বৈচিত্র্য পেরিয়ে থাকে তার এমন একটি রূপ, যা সর্বাঞ্চলিক। ওই রূপকে বলা হয় মান বা প্রমিত ভাষা।’ প্রমিত ভাষা সম্পর্কে এটি একটি প্রতিনিধিত্বশীল ধারণা। ধারণাটির গলদ এই যে, এখানে প্রমিত ভাষারূপকে একটি ‘প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক’ নিরীহ ধারণা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সামগ্রিক বাস্তবতা ও ভাষাবৈচিত্র্য থেকে একে আলগা করে দেখা হয়। বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র বয়ান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এ ভাষা স্বাভাবিকও নয়, নিরীহও নয়। এটি বিচ্ছিন্ন এবং অগণতান্ত্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাষারূপগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ের রক্তাক্ত চিহ্ন ধারণ করেই এটি নিজ ভূমিকা পালন করে। এটি ‘উন্নত’ ভাষাও নয়, ‘শুদ্ধ বা পবিত্র’-ও নয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রভাবশালী এবং দরকারি ও কেজো ভাষারূপ। বিপুল ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যেই এটি কাজ করে, এবং প্রতিনিয়ত ওই ভাষা-বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বাখতিন কাজ করেছেন ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। সেখানকার প্রধান ভাষাগুলোর প্রমিতায়নে নিজ নিজ অঞ্চলের অভিজাত শ্রেণির ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ঔপনিবেশিক পরিস্থিতির কারণে বাংলা ভাষার মানরূপ একই কায়দায় গড়ে ওঠেনি। বিভাষী শাসক-এলিট এবং সংস্কৃতজ্ঞ ধর্মীয় এলিটের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষা বিধিবদ্ধকরণের প্রথম পর্ব। পরবর্তী দুই শতাধিক বছরজুড়ে স্বভাবতই আরও অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু প্রথম যুগের প্রভাবশালী ভাষাদর্শ ও তৎপরতার দায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র সংজ্ঞায়ন প্রমিত ভাষার শ্রেণিভিত্তি আর অগণতান্ত্রিকতার দিকে গভীরভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেকোনো প্রমিত রীতি আবশ্যিকভাবে অগণতান্ত্রিক; কারণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ও উচ্চারণরীতিকে অগ্রাহ্য করেই এ রীতি নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই আধিপত্য প্রাথমিকভাবে শ্রেণি-আধিপত্য, যদিও শ্রেণির বাস্তবতা দিয়ে একে সব সময় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেমন, বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের যে অচ্ছেদ্য যোগ, ইউরোপীয় ভাষা-ইতিহাসের যে পাটাতনে বাখতিন কাজ করেছেন, তার নিরিখে একে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু উপনিবেশিত এলিটের গড়ন, মনস্তত্ত্ব এবং তৎপরতা শেষ পর্যন্ত প্রমিত বাংলার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রমথ চৌধুরীকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ প্রতিষ্ঠার যে দুটি পর্ব চলেছে, তা এই বাস্তবতার নিখুঁত নজির। বাখতিন ইউরোপীয় ইতিহাস থেকে অন্তত আড়াই হাজার বছরের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, অভিজাত শ্রেণির ভাষিক-নান্দনিক তৎপরতা শেষ পর্যন্ত একরৈখিক ভাষাকেই নতুন নতুন রূপে সম্ভবপর করে তোলে। বাংলার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে—বিদেশিদের তৎপরতা আর বাঙালি অভিজাত শ্রেণির ঔপনিবেশিক খাসলতজনিত অতিরিক্ত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমিত বাংলাকে অধিকতর অগণতান্ত্রিক, আর বিশৃঙ্খল করেছে মাত্র।
বাখতিনের পর্যালোচনা আরেকটি গুরুতর ভাষিক বাস্তবতার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে বলে। তা এই যে, প্রমিত ভাষা কোনো আলগা অস্তিত্ব নয়। বহুভাষিক-বহুস্বরিক বাস্তবতার মধ্যেই তাকে কাজ করতে হয়। তার মানেই হলো একদিকে নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ‘টানা’ এবং অন্যদিকে বহুভাষিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রক্ষার ‘পড়েন’ তার ঐতিহাসিক হয়ে ওঠা আর স্থিতির নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এ কারণেই প্রমিতের কোনো চিরন্তন বা স্থির আদর্শ থাকতে পারে না। কালের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে নতুন নতুন অভিযোজনের মধ্য দিয়েই প্রমিত ভাষা নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশে প্রমিত ভাষা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি অতিমাত্রায় সংকীর্ণ। মোটা দাগে তার দুই কারণ। এক. কলকাতায় বিশেষ ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিরূপিত ভাষাটি হুবহু বাংলাদেশের প্রমিত রীতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ অঞ্চলের ভাষিক বাস্তবতা আর উচ্চারণরীতিকে মোটেই আমলে আনা হয়নি। দুই. ওই গৃহীত রীতিটিকে ভাবা হয় ‘বিশুদ্ধ’, ‘পবিত্র’ আর ‘চিরকালীন’। এই দুই কারণে এখানকার ভাষাচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি অধিকতর অগণতান্ত্রিক। সে এতটাই যে, প্রায়ই তা ফ্যাসিবাদী উচ্চারণে রূপ নেয়। বিপরীতে, প্রমিতবিরোধী প্রতিক্রিয়াও এখানে বেশ প্রবল। সে প্রতিক্রিয়া প্রাত্যহিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং লেখালেখি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই প্রতিক্রিয়া সামলানোর জন্য প্রমিত-পক্ষীয়রা দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেমের অন্যায্য দোহাই পেড়েছে এবং আদালতের নির্দেশনাও চেয়েছে।
আদতে প্রমিত-বিরোধিতার সঙ্গে দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমের কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না। আর প্রমিত রূপ নির্ধারিত হয় সমাজের অভিজাত-পক্ষের সম্মতিতে, আদালতের হুকুমে নয়। বাখতিন আমাদের নিশ্চিত করেন, ভাষার প্রমিত রূপ একটি ব্যবহারিক বর্গ মাত্র এবং পরিবর্তনই তার নিয়তি। বাংলা প্রমিতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই রূপ বিধিবদ্ধ হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে; অভিজাত শ্রেণির মুখের ভাষা অবলম্বনে নয়। একমাত্র উদার ও গ্রহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্রমিক বিধিবদ্ধকরণই এই জরুরি ব্যবহারিক বর্গটিকে কার্যকরভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তারপরও অবশ্য প্রমিত-বিরোধিতা থেকেই যাবে। সেটাই ভাষাসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর।
মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। ভাষার অস্তিত্বে তিনি দেখেছেন দুই বিপরীত স্বভাবের বিরোধ আর বিরামহীন লড়াই—একদিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তি, যা একে বৈচিত্র্যে প্রসারিত করতে চায়; অন্যদিকে এক কেন্দ্রমুখী শক্তি, যা উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্যে মেলাতে চায়, একরৈখিকতা তৈরি করতে চায়। এই দ্বন্দ্ব সংস্কৃতিতেও আছে, প্রকৃতিতেও আছে; মানুষের চৈতন্যেরও এটা সহজাত, আর মানুষের উচ্চারণেও তা বিশেষভাবে কাজ করছে। বাখতিনের মতে, মানুষের ভাষা হলো এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং জটিল আবাস; আর উপন্যাস হলো এই ভাষার সর্বোত্তম প্রতিলিপি। ভাষা কেবল এই দ্বন্দ্বের প্রকাশক বা আশ্রয় নয়; বরং সে নিজেই এই দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ নমুনা। কাঠামোবাদী তাত্ত্বিকদের মতো বাখতিন এই দুই দ্বন্দ্বকে বিপরীত শব্দজোড় (binary opposition) হিসেবে দেখেননি। তাঁর কাছে এই দুই বিপরীত শক্তি ঐতিহাসিকভাবে ভাষার হয়ে ওঠা, অর্থের স্থিতি ও লয়ের সঙ্গে যুক্ত। এটা যান্ত্রিক নয়, বরং মানুষের স্বভাবের মতোই অনির্দিষ্ট।
বাখতিন ভাষার এ স্বভাব বিশ্লেষণ করেছেন ‘Discourse In The Novel’ প্রবন্ধে। তাঁর এ আলোচনা গভীরভাবে শ্রেণি প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাছাকাছি সময়ে ইতালীয় তাত্ত্বিক গ্রামসি অধিপতি শ্রেণির মতাদর্শিক আধিপত্য বা হেজিমনির ধারণা প্রচার করেছিলেন। বাখতিন সম্ভবত এ ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু অধিপতি মতাদর্শের গড়ন ও চলন সম্পর্কে তাঁর বয়ান গ্রামসির কথা মনে করিয়ে দেয়। বাখতিন অবশ্য ভাষার ‘শুদ্ধরূপ’ প্রণয়নে অধিপতি শ্রেণির এককাট্টা আধিপত্যের কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি দেখিয়েছেন, এ শ্রেণির সব ধরনের তাত্ত্বিক চর্চা ভাষার একরৈখিক ‘শুদ্ধরূপ’-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এবং তাকেই শক্তিশালী করে। তাঁর মতে, ব্যাপারটা প্রয়োজনীয় এবং কাজের, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই ভাষার স্বভাববিরোধী।
ভাষার দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, শৈলীবিদ্যা—বাখতিন লিখেছেন—এ যাবৎ ব্যক্তির ‘নিজস্ব’ একক ভাষার সঙ্গে সরল সম্পর্ক সাব্যস্ত করে ব্যক্তির ভাষা বিশ্লেষণ করেছে। ব্যক্তির একরৈখিক উচ্চারণে ভাষার সৌন্দর্য খুঁজেছে। বিদ্যার এ শাখাগুলো ভাষার দুটি রূপ সম্পর্কে কেবল ওয়াকিবহাল। এর মধ্যেই তাদের ভাষাগত ও শৈলীগত তাবৎ ধারণাকে তারা গুঁজে দেয়। একটি হলো একরৈখিক ভাষাকাঠামো (unitary language), অন্যটি হলো, এই ভাষা-ব্যবহারকারী ব্যক্তি। যুগে যুগে কাব্যতত্ত্ব বা মতাদর্শিক শৈলীর নানা বিচিত্র রূপ আবির্ভূত হয়েছে। যুগ-সত্যের অধীনে ভাষাদর্শন, ভাষাতত্ত্ব বা শৈলীবিজ্ঞানের নতুন নতুন রূপও আমরা পেয়েছি। ‘ভাষা-কাঠামো’, ‘একরৈখিক উচ্চারণ’, ‘কথক ব্যক্তি’ ইত্যাদি ধারণার নানা সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ তাতে পাওয়া গেছে। কিন্তু এই দুই প্রান্তসীমা সব সময় একই থেকেছে। ইউরোপীয় ইতিহাসের বিশেষ গতিবিধি, আর সে ইতিহাসের পাটাতনে ভাবাদর্শিক ডিসকোর্সগুলো অধিপতি-শ্রেণির যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে চেয়েছে, শৈলীবিদ্যার মূল বর্গগুলো তার নিরিখেই রূপ লাভ করেছে। এ কথা মনে রাখলে বর্গগুলোর জোরের উৎস আর সীমাবদ্ধতা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ সামাজিক বর্গ বা শ্রেণির ভাষিক-মতাদর্শিক আওতার মধ্যেই ইতিহাসের নির্ধারক ‘মূল শক্তিগুলো’ কাজ করে। ভাষাতাত্ত্বিক বা শৈলী-সম্বন্ধীয় বর্গগুলো এর অধীনেই জন্মলাভ করে, বেড়ে ওঠে, এবং চূড়ান্ত রূপ পায়। ভাষার নতুন প্রাণ-সৃষ্টিকারী এই ‘মূলশক্তিগুলো’র তাত্ত্বিক অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয় বর্গগুলোতে: ‘These forces are the forces that serve to unify and centralize the verbal-ideological world.’
একরৈখিক ভাষা (unitary language) বৈচিত্র্যকে একীভূত আর কেন্দ্রীভূত করার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল—ভাষার কেন্দ্রমুখিতার প্রকাশ। একরৈখিক ভাষা কোনো প্রাপ্ত বা বাস্তব বা স্বাভাবিক অবস্থা নয়; বরং সব সময়েই আরোপিত, কৃত্রিমভাবে নির্মিত—জন্মমুহূর্তেই এটি বহুভাষিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেই বহাল হয়। অবশ্য, এটা বৈচিত্র্যের গোলমাল কমিয়ে পারস্পরিক বোধগম্যতা নিশ্চিত করে; ভাষার প্রাত্যহিক ব্যবহারকে সম্ভবপর করে তোলে। প্রাত্যহিক কথ্যভাষা আর সাহিত্যিক ভাষার বাস্তবসম্মত আপাত-ঐক্য সাধন করেই ‘প্রমিত ভাষা’ প্রস্তাবিত হয়। এর কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে ভাষা নতুন জীবন পায়; বাচনিক-মতাদর্শিক চিন্তা একীভূত ও কেন্দ্রীভূত হয়। বিচিত্র গতি-প্রকৃতিসম্পন্ন জাতীয় ভাষার মধ্যেই স্বীকৃত সাহিত্যিক ভাষা, তথা প্রমিত ভাষার একটি অনমনীয় স্থায়ী রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা বলতে বাখতিন কখনোই বিমূর্ত ব্যাকরণিক বর্গের সমষ্টি বোঝাননি; বরং ভাষা যে অর্থে মতাদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়, যে অর্থে বিশ্বদৃষ্টি হিসেবে বর্ণিত হয়—তাকেই বুঝিয়েছেন। এমনকি ভাবাদর্শিক জীবন বিচিত্র দিকের পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাষার মধ্যেই প্রকাশিত হয়। ফলে এ রকম কেন্দ্রীভূত একরৈখিক ভাষা সমাজকাঠামোয় বিদ্যমান অধিপতি শক্তিগুলোর বাচনিক-মতাদর্শিক অবস্থানেরই বাহন হয়ে ওঠে। স্পষ্টতই সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতা-সম্পর্কের চলনের সঙ্গে ভাষার এই কেন্দ্রায়ণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব, অগাস্টিনের কাব্যতত্ত্ব, মধ্যযুগের গির্জাকেন্দ্রিক কাব্যতত্ত্ব, কার্থেজীয় নব্য ধ্রুপদিবাদ, লাইবনিজের বিমূর্ত বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কিংবা হামবোল্টের মূর্ততার প্রতি জোরারোপ—এঁদের মধ্যে সূক্ষ্ম যত ভিন্নতাই থাকুক না কেন, আদতে সামাজিক-ভাষিক এবং মতাদর্শিক জীবনের কেন্দ্রমুখী অভীপ্সাই তাতে প্রকাশ পেয়েছে। ইউরোপীয় ভাষাগুলোর কেন্দ্রমুখী একরৈখিক রূপ প্রণয়নের প্রকল্পেই সবাই সাহায্য করেছে। উপভাষাগুলোর মধ্যে একটির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে অন্যগুলোকে হটিয়ে দেওয়া বা অন্যগুলোকে একটির দাস বানানো; ‘খাঁটি শব্দ’-যোগে এগুলোকে আলোকিত করার প্রক্রিয়া; নিম্ন শ্রেণির মানুষ ও ‘বর্বর’-দের একরৈখিক সংস্কৃতি ও সত্যে শামিল করানো; ভাষাদর্শিক কাঠামোর অধীনে নিয়মকানুন তৈরি করা—এই সবকিছুই ‘একক ভাষা’ বা ‘প্রমিত ভাষা’র শক্তি জুগিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এ প্রক্রিয়ায় আরও আছে মৃতভাষা—যে ভাষাগুলো স্বভাবতই একরৈখিক—পড়ানো-শেখানোর ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া; আছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো পাঠের ক্ষেত্রে কতগুলো বিশেষ রীতিপদ্ধতিতে মনোযোগ, এবং বিশেষত ভাষিক বহুত্বের বদলে একক প্রত্নভাষার সন্ধান। বাখতিন লক্ষ করেছেন, এসব প্রক্রিয়ায় বাহ্যত যত রকম ফারাকই থাক, অন্তর্গত চরিত্রে এগুলোয় ক্ষমতা-সম্পর্কের সুবিধাজনক কোঠায় অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর ভাবাদর্শিক প্রতিফলনই পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়াগুলোই নির্মাণ করেছে অধিকাংশ নন্দনতত্ত্বের রীতি-নির্ধারক বয়ান। কেন্দ্রমুখী বাচনিক-ভাবাদর্শিক জীবনের মতো এই ভাষিক-নন্দনতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও একই খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ভাষা ও নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রভাবশালী ধারাকেই অনুসরণ করেছে।
মুশকিল হলো, ‘একক ভাষা’য় মূর্ত এই কেন্দ্রমুখী ভাষিক বাস্তবতা, যাকে আমরা আজকাল প্রমিত ভাষা নামে চিনি, বহুভাষিক সমাজ-বাস্তবতার মধ্যেই কাজ করে। যেকোনো বিশেষ মুহূর্তে ভাষা কেবল উপভাষায় (প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা মোতাবেক) বিভক্ত থাকে না, বরং—বাখতিনের কাছে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ—বিভক্ত থাকে নানা সামাজিক-মতাদর্শিক বর্গেও। বিভিন্ন সামাজিক বর্গের ভাষা, পেশাগত বা শ্রেণিগত ভাষা, প্রজন্মের ভাষা ইত্যাদি। এই যে ভাষার বিভিন্ন স্তর এবং বহু ভাষা সমন্বিত বাস্তবতা—এটা যদ্দিন ভাষা জীবিত এবং বিকাশমান থাকে, তদ্দিন বাড়তেই থাকে। কেন্দ্রমুখী একরৈখিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রাতিগ বলের উপাদানগুলোও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায়। বাচনিক-মতাদর্শিক কেন্দ্রীভূতকরণ আর একীকরণের পাশেই চলতে থাকে বিকেন্দ্রীকরণ এবং বহু বিচিত্ররূপে বিভক্তকরণ।
এ কারণে প্রত্যেক উচ্চারণ স্বভাবতই কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রাতিগ শক্তির চিহ্ন বহন করে। কোনো বিশেষ উচ্চারণ কেবল ব্যবহার-মুহূর্তে নিজের বিচ্ছিন্ন একক প্রয়োজন মেটায় না, বহু-বাস্তবের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে ভাষা-জগতে তার জন্ম ও অবস্থিতি, তার প্রয়োজনও মেটায়। তার চেয়ে বড় কথা, ভাষাগত অবয়ব আর শৈলীর দিক থেকে উচ্চারণটি একরৈখিক ভাষাকাঠামোর কেন্দ্রমুখী নির্দেশনা দ্বারা যতটা চালিত হয়, তাতে বহুভাষিক বাস্তবের প্রভাব তার চেয়ে মোটেই কম থাকে না। তার মানেই হলো, ভাষিক উচ্চারণ একই সঙ্গে একরৈখিক ভাষা [প্রমিত ভাষা] এবং বহুভাষিক বাস্তবতা—দুইয়ের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়। যে পরিবেশে উচ্চারণটির জন্ম ও পরিণতি, তা পরস্পর-সম্পর্কিত বা সংলাপায়িত (dialogized) বাস্তব; ভাষার মতোই তা সামাজিক আর আকারহীন; অন্যদিকে আবার তা মূর্ত, নির্দিষ্ট বার্তাবাহী এবং ব্যক্তিক উচ্চারণের বিশিষ্টতায় চিহ্নিত।
বাখতিন মানভাষা বা প্রমিত ভাষা ইত্যাদি বর্গ নামত ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবিত ‘একরৈখিক ভাষা’ স্পষ্টতই ভাষার ওই রূপ, যা সচরাচর প্রমিত ভাষা নামে বর্ণিত হয়। হুমায়ুন আজাদ প্রমিত বা মানভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘কোনো ভাষা তার সমগ্র এলাকাজুড়ে একরূপ হয় না;–তার থাকে নানা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন শ্রেণিক চারিত্র্য, তবে ওই সমস্ত বৈচিত্র্য পেরিয়ে থাকে তার এমন একটি রূপ, যা সর্বাঞ্চলিক। ওই রূপকে বলা হয় মান বা প্রমিত ভাষা।’ প্রমিত ভাষা সম্পর্কে এটি একটি প্রতিনিধিত্বশীল ধারণা। ধারণাটির গলদ এই যে, এখানে প্রমিত ভাষারূপকে একটি ‘প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক’ নিরীহ ধারণা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সামগ্রিক বাস্তবতা ও ভাষাবৈচিত্র্য থেকে একে আলগা করে দেখা হয়। বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র বয়ান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এ ভাষা স্বাভাবিকও নয়, নিরীহও নয়। এটি বিচ্ছিন্ন এবং অগণতান্ত্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাষারূপগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ের রক্তাক্ত চিহ্ন ধারণ করেই এটি নিজ ভূমিকা পালন করে। এটি ‘উন্নত’ ভাষাও নয়, ‘শুদ্ধ বা পবিত্র’-ও নয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রভাবশালী এবং দরকারি ও কেজো ভাষারূপ। বিপুল ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যেই এটি কাজ করে, এবং প্রতিনিয়ত ওই ভাষা-বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বাখতিন কাজ করেছেন ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। সেখানকার প্রধান ভাষাগুলোর প্রমিতায়নে নিজ নিজ অঞ্চলের অভিজাত শ্রেণির ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ঔপনিবেশিক পরিস্থিতির কারণে বাংলা ভাষার মানরূপ একই কায়দায় গড়ে ওঠেনি। বিভাষী শাসক-এলিট এবং সংস্কৃতজ্ঞ ধর্মীয় এলিটের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষা বিধিবদ্ধকরণের প্রথম পর্ব। পরবর্তী দুই শতাধিক বছরজুড়ে স্বভাবতই আরও অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু প্রথম যুগের প্রভাবশালী ভাষাদর্শ ও তৎপরতার দায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র সংজ্ঞায়ন প্রমিত ভাষার শ্রেণিভিত্তি আর অগণতান্ত্রিকতার দিকে গভীরভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেকোনো প্রমিত রীতি আবশ্যিকভাবে অগণতান্ত্রিক; কারণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ও উচ্চারণরীতিকে অগ্রাহ্য করেই এ রীতি নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই আধিপত্য প্রাথমিকভাবে শ্রেণি-আধিপত্য, যদিও শ্রেণির বাস্তবতা দিয়ে একে সব সময় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেমন, বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের যে অচ্ছেদ্য যোগ, ইউরোপীয় ভাষা-ইতিহাসের যে পাটাতনে বাখতিন কাজ করেছেন, তার নিরিখে একে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু উপনিবেশিত এলিটের গড়ন, মনস্তত্ত্ব এবং তৎপরতা শেষ পর্যন্ত প্রমিত বাংলার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রমথ চৌধুরীকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ প্রতিষ্ঠার যে দুটি পর্ব চলেছে, তা এই বাস্তবতার নিখুঁত নজির। বাখতিন ইউরোপীয় ইতিহাস থেকে অন্তত আড়াই হাজার বছরের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, অভিজাত শ্রেণির ভাষিক-নান্দনিক তৎপরতা শেষ পর্যন্ত একরৈখিক ভাষাকেই নতুন নতুন রূপে সম্ভবপর করে তোলে। বাংলার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে—বিদেশিদের তৎপরতা আর বাঙালি অভিজাত শ্রেণির ঔপনিবেশিক খাসলতজনিত অতিরিক্ত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমিত বাংলাকে অধিকতর অগণতান্ত্রিক, আর বিশৃঙ্খল করেছে মাত্র।
বাখতিনের পর্যালোচনা আরেকটি গুরুতর ভাষিক বাস্তবতার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে বলে। তা এই যে, প্রমিত ভাষা কোনো আলগা অস্তিত্ব নয়। বহুভাষিক-বহুস্বরিক বাস্তবতার মধ্যেই তাকে কাজ করতে হয়। তার মানেই হলো একদিকে নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ‘টানা’ এবং অন্যদিকে বহুভাষিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রক্ষার ‘পড়েন’ তার ঐতিহাসিক হয়ে ওঠা আর স্থিতির নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এ কারণেই প্রমিতের কোনো চিরন্তন বা স্থির আদর্শ থাকতে পারে না। কালের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে নতুন নতুন অভিযোজনের মধ্য দিয়েই প্রমিত ভাষা নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশে প্রমিত ভাষা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি অতিমাত্রায় সংকীর্ণ। মোটা দাগে তার দুই কারণ। এক. কলকাতায় বিশেষ ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিরূপিত ভাষাটি হুবহু বাংলাদেশের প্রমিত রীতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ অঞ্চলের ভাষিক বাস্তবতা আর উচ্চারণরীতিকে মোটেই আমলে আনা হয়নি। দুই. ওই গৃহীত রীতিটিকে ভাবা হয় ‘বিশুদ্ধ’, ‘পবিত্র’ আর ‘চিরকালীন’। এই দুই কারণে এখানকার ভাষাচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি অধিকতর অগণতান্ত্রিক। সে এতটাই যে, প্রায়ই তা ফ্যাসিবাদী উচ্চারণে রূপ নেয়। বিপরীতে, প্রমিতবিরোধী প্রতিক্রিয়াও এখানে বেশ প্রবল। সে প্রতিক্রিয়া প্রাত্যহিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং লেখালেখি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই প্রতিক্রিয়া সামলানোর জন্য প্রমিত-পক্ষীয়রা দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেমের অন্যায্য দোহাই পেড়েছে এবং আদালতের নির্দেশনাও চেয়েছে।
আদতে প্রমিত-বিরোধিতার সঙ্গে দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমের কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না। আর প্রমিত রূপ নির্ধারিত হয় সমাজের অভিজাত-পক্ষের সম্মতিতে, আদালতের হুকুমে নয়। বাখতিন আমাদের নিশ্চিত করেন, ভাষার প্রমিত রূপ একটি ব্যবহারিক বর্গ মাত্র এবং পরিবর্তনই তার নিয়তি। বাংলা প্রমিতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই রূপ বিধিবদ্ধ হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে; অভিজাত শ্রেণির মুখের ভাষা অবলম্বনে নয়। একমাত্র উদার ও গ্রহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্রমিক বিধিবদ্ধকরণই এই জরুরি ব্যবহারিক বর্গটিকে কার্যকরভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তারপরও অবশ্য প্রমিত-বিরোধিতা থেকেই যাবে। সেটাই ভাষাসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর।
মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ আজম

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। ভাষার অস্তিত্বে তিনি দেখেছেন দুই বিপরীত স্বভাবের বিরোধ আর বিরামহীন লড়াই—একদিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তি, যা একে বৈচিত্র্যে প্রসারিত করতে চায়; অন্যদিকে এক কেন্দ্রমুখী শক্তি, যা উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্যে মেলাতে চায়, একরৈখিকতা তৈরি করতে চায়। এই দ্বন্দ্ব সংস্কৃতিতেও আছে, প্রকৃতিতেও আছে; মানুষের চৈতন্যেরও এটা সহজাত, আর মানুষের উচ্চারণেও তা বিশেষভাবে কাজ করছে। বাখতিনের মতে, মানুষের ভাষা হলো এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং জটিল আবাস; আর উপন্যাস হলো এই ভাষার সর্বোত্তম প্রতিলিপি। ভাষা কেবল এই দ্বন্দ্বের প্রকাশক বা আশ্রয় নয়; বরং সে নিজেই এই দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ নমুনা। কাঠামোবাদী তাত্ত্বিকদের মতো বাখতিন এই দুই দ্বন্দ্বকে বিপরীত শব্দজোড় (binary opposition) হিসেবে দেখেননি। তাঁর কাছে এই দুই বিপরীত শক্তি ঐতিহাসিকভাবে ভাষার হয়ে ওঠা, অর্থের স্থিতি ও লয়ের সঙ্গে যুক্ত। এটা যান্ত্রিক নয়, বরং মানুষের স্বভাবের মতোই অনির্দিষ্ট।
বাখতিন ভাষার এ স্বভাব বিশ্লেষণ করেছেন ‘Discourse In The Novel’ প্রবন্ধে। তাঁর এ আলোচনা গভীরভাবে শ্রেণি প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাছাকাছি সময়ে ইতালীয় তাত্ত্বিক গ্রামসি অধিপতি শ্রেণির মতাদর্শিক আধিপত্য বা হেজিমনির ধারণা প্রচার করেছিলেন। বাখতিন সম্ভবত এ ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু অধিপতি মতাদর্শের গড়ন ও চলন সম্পর্কে তাঁর বয়ান গ্রামসির কথা মনে করিয়ে দেয়। বাখতিন অবশ্য ভাষার ‘শুদ্ধরূপ’ প্রণয়নে অধিপতি শ্রেণির এককাট্টা আধিপত্যের কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি দেখিয়েছেন, এ শ্রেণির সব ধরনের তাত্ত্বিক চর্চা ভাষার একরৈখিক ‘শুদ্ধরূপ’-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এবং তাকেই শক্তিশালী করে। তাঁর মতে, ব্যাপারটা প্রয়োজনীয় এবং কাজের, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই ভাষার স্বভাববিরোধী।
ভাষার দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, শৈলীবিদ্যা—বাখতিন লিখেছেন—এ যাবৎ ব্যক্তির ‘নিজস্ব’ একক ভাষার সঙ্গে সরল সম্পর্ক সাব্যস্ত করে ব্যক্তির ভাষা বিশ্লেষণ করেছে। ব্যক্তির একরৈখিক উচ্চারণে ভাষার সৌন্দর্য খুঁজেছে। বিদ্যার এ শাখাগুলো ভাষার দুটি রূপ সম্পর্কে কেবল ওয়াকিবহাল। এর মধ্যেই তাদের ভাষাগত ও শৈলীগত তাবৎ ধারণাকে তারা গুঁজে দেয়। একটি হলো একরৈখিক ভাষাকাঠামো (unitary language), অন্যটি হলো, এই ভাষা-ব্যবহারকারী ব্যক্তি। যুগে যুগে কাব্যতত্ত্ব বা মতাদর্শিক শৈলীর নানা বিচিত্র রূপ আবির্ভূত হয়েছে। যুগ-সত্যের অধীনে ভাষাদর্শন, ভাষাতত্ত্ব বা শৈলীবিজ্ঞানের নতুন নতুন রূপও আমরা পেয়েছি। ‘ভাষা-কাঠামো’, ‘একরৈখিক উচ্চারণ’, ‘কথক ব্যক্তি’ ইত্যাদি ধারণার নানা সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ তাতে পাওয়া গেছে। কিন্তু এই দুই প্রান্তসীমা সব সময় একই থেকেছে। ইউরোপীয় ইতিহাসের বিশেষ গতিবিধি, আর সে ইতিহাসের পাটাতনে ভাবাদর্শিক ডিসকোর্সগুলো অধিপতি-শ্রেণির যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে চেয়েছে, শৈলীবিদ্যার মূল বর্গগুলো তার নিরিখেই রূপ লাভ করেছে। এ কথা মনে রাখলে বর্গগুলোর জোরের উৎস আর সীমাবদ্ধতা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ সামাজিক বর্গ বা শ্রেণির ভাষিক-মতাদর্শিক আওতার মধ্যেই ইতিহাসের নির্ধারক ‘মূল শক্তিগুলো’ কাজ করে। ভাষাতাত্ত্বিক বা শৈলী-সম্বন্ধীয় বর্গগুলো এর অধীনেই জন্মলাভ করে, বেড়ে ওঠে, এবং চূড়ান্ত রূপ পায়। ভাষার নতুন প্রাণ-সৃষ্টিকারী এই ‘মূলশক্তিগুলো’র তাত্ত্বিক অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয় বর্গগুলোতে: ‘These forces are the forces that serve to unify and centralize the verbal-ideological world.’
একরৈখিক ভাষা (unitary language) বৈচিত্র্যকে একীভূত আর কেন্দ্রীভূত করার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল—ভাষার কেন্দ্রমুখিতার প্রকাশ। একরৈখিক ভাষা কোনো প্রাপ্ত বা বাস্তব বা স্বাভাবিক অবস্থা নয়; বরং সব সময়েই আরোপিত, কৃত্রিমভাবে নির্মিত—জন্মমুহূর্তেই এটি বহুভাষিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেই বহাল হয়। অবশ্য, এটা বৈচিত্র্যের গোলমাল কমিয়ে পারস্পরিক বোধগম্যতা নিশ্চিত করে; ভাষার প্রাত্যহিক ব্যবহারকে সম্ভবপর করে তোলে। প্রাত্যহিক কথ্যভাষা আর সাহিত্যিক ভাষার বাস্তবসম্মত আপাত-ঐক্য সাধন করেই ‘প্রমিত ভাষা’ প্রস্তাবিত হয়। এর কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে ভাষা নতুন জীবন পায়; বাচনিক-মতাদর্শিক চিন্তা একীভূত ও কেন্দ্রীভূত হয়। বিচিত্র গতি-প্রকৃতিসম্পন্ন জাতীয় ভাষার মধ্যেই স্বীকৃত সাহিত্যিক ভাষা, তথা প্রমিত ভাষার একটি অনমনীয় স্থায়ী রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা বলতে বাখতিন কখনোই বিমূর্ত ব্যাকরণিক বর্গের সমষ্টি বোঝাননি; বরং ভাষা যে অর্থে মতাদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়, যে অর্থে বিশ্বদৃষ্টি হিসেবে বর্ণিত হয়—তাকেই বুঝিয়েছেন। এমনকি ভাবাদর্শিক জীবন বিচিত্র দিকের পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাষার মধ্যেই প্রকাশিত হয়। ফলে এ রকম কেন্দ্রীভূত একরৈখিক ভাষা সমাজকাঠামোয় বিদ্যমান অধিপতি শক্তিগুলোর বাচনিক-মতাদর্শিক অবস্থানেরই বাহন হয়ে ওঠে। স্পষ্টতই সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতা-সম্পর্কের চলনের সঙ্গে ভাষার এই কেন্দ্রায়ণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব, অগাস্টিনের কাব্যতত্ত্ব, মধ্যযুগের গির্জাকেন্দ্রিক কাব্যতত্ত্ব, কার্থেজীয় নব্য ধ্রুপদিবাদ, লাইবনিজের বিমূর্ত বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কিংবা হামবোল্টের মূর্ততার প্রতি জোরারোপ—এঁদের মধ্যে সূক্ষ্ম যত ভিন্নতাই থাকুক না কেন, আদতে সামাজিক-ভাষিক এবং মতাদর্শিক জীবনের কেন্দ্রমুখী অভীপ্সাই তাতে প্রকাশ পেয়েছে। ইউরোপীয় ভাষাগুলোর কেন্দ্রমুখী একরৈখিক রূপ প্রণয়নের প্রকল্পেই সবাই সাহায্য করেছে। উপভাষাগুলোর মধ্যে একটির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে অন্যগুলোকে হটিয়ে দেওয়া বা অন্যগুলোকে একটির দাস বানানো; ‘খাঁটি শব্দ’-যোগে এগুলোকে আলোকিত করার প্রক্রিয়া; নিম্ন শ্রেণির মানুষ ও ‘বর্বর’-দের একরৈখিক সংস্কৃতি ও সত্যে শামিল করানো; ভাষাদর্শিক কাঠামোর অধীনে নিয়মকানুন তৈরি করা—এই সবকিছুই ‘একক ভাষা’ বা ‘প্রমিত ভাষা’র শক্তি জুগিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এ প্রক্রিয়ায় আরও আছে মৃতভাষা—যে ভাষাগুলো স্বভাবতই একরৈখিক—পড়ানো-শেখানোর ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া; আছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো পাঠের ক্ষেত্রে কতগুলো বিশেষ রীতিপদ্ধতিতে মনোযোগ, এবং বিশেষত ভাষিক বহুত্বের বদলে একক প্রত্নভাষার সন্ধান। বাখতিন লক্ষ করেছেন, এসব প্রক্রিয়ায় বাহ্যত যত রকম ফারাকই থাক, অন্তর্গত চরিত্রে এগুলোয় ক্ষমতা-সম্পর্কের সুবিধাজনক কোঠায় অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর ভাবাদর্শিক প্রতিফলনই পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়াগুলোই নির্মাণ করেছে অধিকাংশ নন্দনতত্ত্বের রীতি-নির্ধারক বয়ান। কেন্দ্রমুখী বাচনিক-ভাবাদর্শিক জীবনের মতো এই ভাষিক-নন্দনতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও একই খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ভাষা ও নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রভাবশালী ধারাকেই অনুসরণ করেছে।
মুশকিল হলো, ‘একক ভাষা’য় মূর্ত এই কেন্দ্রমুখী ভাষিক বাস্তবতা, যাকে আমরা আজকাল প্রমিত ভাষা নামে চিনি, বহুভাষিক সমাজ-বাস্তবতার মধ্যেই কাজ করে। যেকোনো বিশেষ মুহূর্তে ভাষা কেবল উপভাষায় (প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা মোতাবেক) বিভক্ত থাকে না, বরং—বাখতিনের কাছে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ—বিভক্ত থাকে নানা সামাজিক-মতাদর্শিক বর্গেও। বিভিন্ন সামাজিক বর্গের ভাষা, পেশাগত বা শ্রেণিগত ভাষা, প্রজন্মের ভাষা ইত্যাদি। এই যে ভাষার বিভিন্ন স্তর এবং বহু ভাষা সমন্বিত বাস্তবতা—এটা যদ্দিন ভাষা জীবিত এবং বিকাশমান থাকে, তদ্দিন বাড়তেই থাকে। কেন্দ্রমুখী একরৈখিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রাতিগ বলের উপাদানগুলোও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায়। বাচনিক-মতাদর্শিক কেন্দ্রীভূতকরণ আর একীকরণের পাশেই চলতে থাকে বিকেন্দ্রীকরণ এবং বহু বিচিত্ররূপে বিভক্তকরণ।
এ কারণে প্রত্যেক উচ্চারণ স্বভাবতই কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রাতিগ শক্তির চিহ্ন বহন করে। কোনো বিশেষ উচ্চারণ কেবল ব্যবহার-মুহূর্তে নিজের বিচ্ছিন্ন একক প্রয়োজন মেটায় না, বহু-বাস্তবের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে ভাষা-জগতে তার জন্ম ও অবস্থিতি, তার প্রয়োজনও মেটায়। তার চেয়ে বড় কথা, ভাষাগত অবয়ব আর শৈলীর দিক থেকে উচ্চারণটি একরৈখিক ভাষাকাঠামোর কেন্দ্রমুখী নির্দেশনা দ্বারা যতটা চালিত হয়, তাতে বহুভাষিক বাস্তবের প্রভাব তার চেয়ে মোটেই কম থাকে না। তার মানেই হলো, ভাষিক উচ্চারণ একই সঙ্গে একরৈখিক ভাষা [প্রমিত ভাষা] এবং বহুভাষিক বাস্তবতা—দুইয়ের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়। যে পরিবেশে উচ্চারণটির জন্ম ও পরিণতি, তা পরস্পর-সম্পর্কিত বা সংলাপায়িত (dialogized) বাস্তব; ভাষার মতোই তা সামাজিক আর আকারহীন; অন্যদিকে আবার তা মূর্ত, নির্দিষ্ট বার্তাবাহী এবং ব্যক্তিক উচ্চারণের বিশিষ্টতায় চিহ্নিত।
বাখতিন মানভাষা বা প্রমিত ভাষা ইত্যাদি বর্গ নামত ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবিত ‘একরৈখিক ভাষা’ স্পষ্টতই ভাষার ওই রূপ, যা সচরাচর প্রমিত ভাষা নামে বর্ণিত হয়। হুমায়ুন আজাদ প্রমিত বা মানভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘কোনো ভাষা তার সমগ্র এলাকাজুড়ে একরূপ হয় না;–তার থাকে নানা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন শ্রেণিক চারিত্র্য, তবে ওই সমস্ত বৈচিত্র্য পেরিয়ে থাকে তার এমন একটি রূপ, যা সর্বাঞ্চলিক। ওই রূপকে বলা হয় মান বা প্রমিত ভাষা।’ প্রমিত ভাষা সম্পর্কে এটি একটি প্রতিনিধিত্বশীল ধারণা। ধারণাটির গলদ এই যে, এখানে প্রমিত ভাষারূপকে একটি ‘প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক’ নিরীহ ধারণা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সামগ্রিক বাস্তবতা ও ভাষাবৈচিত্র্য থেকে একে আলগা করে দেখা হয়। বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র বয়ান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এ ভাষা স্বাভাবিকও নয়, নিরীহও নয়। এটি বিচ্ছিন্ন এবং অগণতান্ত্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাষারূপগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ের রক্তাক্ত চিহ্ন ধারণ করেই এটি নিজ ভূমিকা পালন করে। এটি ‘উন্নত’ ভাষাও নয়, ‘শুদ্ধ বা পবিত্র’-ও নয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রভাবশালী এবং দরকারি ও কেজো ভাষারূপ। বিপুল ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যেই এটি কাজ করে, এবং প্রতিনিয়ত ওই ভাষা-বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বাখতিন কাজ করেছেন ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। সেখানকার প্রধান ভাষাগুলোর প্রমিতায়নে নিজ নিজ অঞ্চলের অভিজাত শ্রেণির ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ঔপনিবেশিক পরিস্থিতির কারণে বাংলা ভাষার মানরূপ একই কায়দায় গড়ে ওঠেনি। বিভাষী শাসক-এলিট এবং সংস্কৃতজ্ঞ ধর্মীয় এলিটের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষা বিধিবদ্ধকরণের প্রথম পর্ব। পরবর্তী দুই শতাধিক বছরজুড়ে স্বভাবতই আরও অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু প্রথম যুগের প্রভাবশালী ভাষাদর্শ ও তৎপরতার দায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র সংজ্ঞায়ন প্রমিত ভাষার শ্রেণিভিত্তি আর অগণতান্ত্রিকতার দিকে গভীরভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেকোনো প্রমিত রীতি আবশ্যিকভাবে অগণতান্ত্রিক; কারণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ও উচ্চারণরীতিকে অগ্রাহ্য করেই এ রীতি নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই আধিপত্য প্রাথমিকভাবে শ্রেণি-আধিপত্য, যদিও শ্রেণির বাস্তবতা দিয়ে একে সব সময় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেমন, বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের যে অচ্ছেদ্য যোগ, ইউরোপীয় ভাষা-ইতিহাসের যে পাটাতনে বাখতিন কাজ করেছেন, তার নিরিখে একে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু উপনিবেশিত এলিটের গড়ন, মনস্তত্ত্ব এবং তৎপরতা শেষ পর্যন্ত প্রমিত বাংলার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রমথ চৌধুরীকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ প্রতিষ্ঠার যে দুটি পর্ব চলেছে, তা এই বাস্তবতার নিখুঁত নজির। বাখতিন ইউরোপীয় ইতিহাস থেকে অন্তত আড়াই হাজার বছরের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, অভিজাত শ্রেণির ভাষিক-নান্দনিক তৎপরতা শেষ পর্যন্ত একরৈখিক ভাষাকেই নতুন নতুন রূপে সম্ভবপর করে তোলে। বাংলার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে—বিদেশিদের তৎপরতা আর বাঙালি অভিজাত শ্রেণির ঔপনিবেশিক খাসলতজনিত অতিরিক্ত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমিত বাংলাকে অধিকতর অগণতান্ত্রিক, আর বিশৃঙ্খল করেছে মাত্র।
বাখতিনের পর্যালোচনা আরেকটি গুরুতর ভাষিক বাস্তবতার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে বলে। তা এই যে, প্রমিত ভাষা কোনো আলগা অস্তিত্ব নয়। বহুভাষিক-বহুস্বরিক বাস্তবতার মধ্যেই তাকে কাজ করতে হয়। তার মানেই হলো একদিকে নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ‘টানা’ এবং অন্যদিকে বহুভাষিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রক্ষার ‘পড়েন’ তার ঐতিহাসিক হয়ে ওঠা আর স্থিতির নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এ কারণেই প্রমিতের কোনো চিরন্তন বা স্থির আদর্শ থাকতে পারে না। কালের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে নতুন নতুন অভিযোজনের মধ্য দিয়েই প্রমিত ভাষা নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশে প্রমিত ভাষা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি অতিমাত্রায় সংকীর্ণ। মোটা দাগে তার দুই কারণ। এক. কলকাতায় বিশেষ ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিরূপিত ভাষাটি হুবহু বাংলাদেশের প্রমিত রীতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ অঞ্চলের ভাষিক বাস্তবতা আর উচ্চারণরীতিকে মোটেই আমলে আনা হয়নি। দুই. ওই গৃহীত রীতিটিকে ভাবা হয় ‘বিশুদ্ধ’, ‘পবিত্র’ আর ‘চিরকালীন’। এই দুই কারণে এখানকার ভাষাচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি অধিকতর অগণতান্ত্রিক। সে এতটাই যে, প্রায়ই তা ফ্যাসিবাদী উচ্চারণে রূপ নেয়। বিপরীতে, প্রমিতবিরোধী প্রতিক্রিয়াও এখানে বেশ প্রবল। সে প্রতিক্রিয়া প্রাত্যহিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং লেখালেখি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই প্রতিক্রিয়া সামলানোর জন্য প্রমিত-পক্ষীয়রা দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেমের অন্যায্য দোহাই পেড়েছে এবং আদালতের নির্দেশনাও চেয়েছে।
আদতে প্রমিত-বিরোধিতার সঙ্গে দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমের কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না। আর প্রমিত রূপ নির্ধারিত হয় সমাজের অভিজাত-পক্ষের সম্মতিতে, আদালতের হুকুমে নয়। বাখতিন আমাদের নিশ্চিত করেন, ভাষার প্রমিত রূপ একটি ব্যবহারিক বর্গ মাত্র এবং পরিবর্তনই তার নিয়তি। বাংলা প্রমিতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই রূপ বিধিবদ্ধ হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে; অভিজাত শ্রেণির মুখের ভাষা অবলম্বনে নয়। একমাত্র উদার ও গ্রহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্রমিক বিধিবদ্ধকরণই এই জরুরি ব্যবহারিক বর্গটিকে কার্যকরভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তারপরও অবশ্য প্রমিত-বিরোধিতা থেকেই যাবে। সেটাই ভাষাসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর।
মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। ভাষার অস্তিত্বে তিনি দেখেছেন দুই বিপরীত স্বভাবের বিরোধ আর বিরামহীন লড়াই—একদিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তি, যা একে বৈচিত্র্যে প্রসারিত করতে চায়; অন্যদিকে এক কেন্দ্রমুখী শক্তি, যা উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্যে মেলাতে চায়, একরৈখিকতা তৈরি করতে চায়। এই দ্বন্দ্ব সংস্কৃতিতেও আছে, প্রকৃতিতেও আছে; মানুষের চৈতন্যেরও এটা সহজাত, আর মানুষের উচ্চারণেও তা বিশেষভাবে কাজ করছে। বাখতিনের মতে, মানুষের ভাষা হলো এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং জটিল আবাস; আর উপন্যাস হলো এই ভাষার সর্বোত্তম প্রতিলিপি। ভাষা কেবল এই দ্বন্দ্বের প্রকাশক বা আশ্রয় নয়; বরং সে নিজেই এই দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ নমুনা। কাঠামোবাদী তাত্ত্বিকদের মতো বাখতিন এই দুই দ্বন্দ্বকে বিপরীত শব্দজোড় (binary opposition) হিসেবে দেখেননি। তাঁর কাছে এই দুই বিপরীত শক্তি ঐতিহাসিকভাবে ভাষার হয়ে ওঠা, অর্থের স্থিতি ও লয়ের সঙ্গে যুক্ত। এটা যান্ত্রিক নয়, বরং মানুষের স্বভাবের মতোই অনির্দিষ্ট।
বাখতিন ভাষার এ স্বভাব বিশ্লেষণ করেছেন ‘Discourse In The Novel’ প্রবন্ধে। তাঁর এ আলোচনা গভীরভাবে শ্রেণি প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাছাকাছি সময়ে ইতালীয় তাত্ত্বিক গ্রামসি অধিপতি শ্রেণির মতাদর্শিক আধিপত্য বা হেজিমনির ধারণা প্রচার করেছিলেন। বাখতিন সম্ভবত এ ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু অধিপতি মতাদর্শের গড়ন ও চলন সম্পর্কে তাঁর বয়ান গ্রামসির কথা মনে করিয়ে দেয়। বাখতিন অবশ্য ভাষার ‘শুদ্ধরূপ’ প্রণয়নে অধিপতি শ্রেণির এককাট্টা আধিপত্যের কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি দেখিয়েছেন, এ শ্রেণির সব ধরনের তাত্ত্বিক চর্চা ভাষার একরৈখিক ‘শুদ্ধরূপ’-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এবং তাকেই শক্তিশালী করে। তাঁর মতে, ব্যাপারটা প্রয়োজনীয় এবং কাজের, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই ভাষার স্বভাববিরোধী।
ভাষার দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, শৈলীবিদ্যা—বাখতিন লিখেছেন—এ যাবৎ ব্যক্তির ‘নিজস্ব’ একক ভাষার সঙ্গে সরল সম্পর্ক সাব্যস্ত করে ব্যক্তির ভাষা বিশ্লেষণ করেছে। ব্যক্তির একরৈখিক উচ্চারণে ভাষার সৌন্দর্য খুঁজেছে। বিদ্যার এ শাখাগুলো ভাষার দুটি রূপ সম্পর্কে কেবল ওয়াকিবহাল। এর মধ্যেই তাদের ভাষাগত ও শৈলীগত তাবৎ ধারণাকে তারা গুঁজে দেয়। একটি হলো একরৈখিক ভাষাকাঠামো (unitary language), অন্যটি হলো, এই ভাষা-ব্যবহারকারী ব্যক্তি। যুগে যুগে কাব্যতত্ত্ব বা মতাদর্শিক শৈলীর নানা বিচিত্র রূপ আবির্ভূত হয়েছে। যুগ-সত্যের অধীনে ভাষাদর্শন, ভাষাতত্ত্ব বা শৈলীবিজ্ঞানের নতুন নতুন রূপও আমরা পেয়েছি। ‘ভাষা-কাঠামো’, ‘একরৈখিক উচ্চারণ’, ‘কথক ব্যক্তি’ ইত্যাদি ধারণার নানা সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ তাতে পাওয়া গেছে। কিন্তু এই দুই প্রান্তসীমা সব সময় একই থেকেছে। ইউরোপীয় ইতিহাসের বিশেষ গতিবিধি, আর সে ইতিহাসের পাটাতনে ভাবাদর্শিক ডিসকোর্সগুলো অধিপতি-শ্রেণির যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে চেয়েছে, শৈলীবিদ্যার মূল বর্গগুলো তার নিরিখেই রূপ লাভ করেছে। এ কথা মনে রাখলে বর্গগুলোর জোরের উৎস আর সীমাবদ্ধতা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষ সামাজিক বর্গ বা শ্রেণির ভাষিক-মতাদর্শিক আওতার মধ্যেই ইতিহাসের নির্ধারক ‘মূল শক্তিগুলো’ কাজ করে। ভাষাতাত্ত্বিক বা শৈলী-সম্বন্ধীয় বর্গগুলো এর অধীনেই জন্মলাভ করে, বেড়ে ওঠে, এবং চূড়ান্ত রূপ পায়। ভাষার নতুন প্রাণ-সৃষ্টিকারী এই ‘মূলশক্তিগুলো’র তাত্ত্বিক অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয় বর্গগুলোতে: ‘These forces are the forces that serve to unify and centralize the verbal-ideological world.’
একরৈখিক ভাষা (unitary language) বৈচিত্র্যকে একীভূত আর কেন্দ্রীভূত করার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল—ভাষার কেন্দ্রমুখিতার প্রকাশ। একরৈখিক ভাষা কোনো প্রাপ্ত বা বাস্তব বা স্বাভাবিক অবস্থা নয়; বরং সব সময়েই আরোপিত, কৃত্রিমভাবে নির্মিত—জন্মমুহূর্তেই এটি বহুভাষিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেই বহাল হয়। অবশ্য, এটা বৈচিত্র্যের গোলমাল কমিয়ে পারস্পরিক বোধগম্যতা নিশ্চিত করে; ভাষার প্রাত্যহিক ব্যবহারকে সম্ভবপর করে তোলে। প্রাত্যহিক কথ্যভাষা আর সাহিত্যিক ভাষার বাস্তবসম্মত আপাত-ঐক্য সাধন করেই ‘প্রমিত ভাষা’ প্রস্তাবিত হয়। এর কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে ভাষা নতুন জীবন পায়; বাচনিক-মতাদর্শিক চিন্তা একীভূত ও কেন্দ্রীভূত হয়। বিচিত্র গতি-প্রকৃতিসম্পন্ন জাতীয় ভাষার মধ্যেই স্বীকৃত সাহিত্যিক ভাষা, তথা প্রমিত ভাষার একটি অনমনীয় স্থায়ী রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা বলতে বাখতিন কখনোই বিমূর্ত ব্যাকরণিক বর্গের সমষ্টি বোঝাননি; বরং ভাষা যে অর্থে মতাদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়, যে অর্থে বিশ্বদৃষ্টি হিসেবে বর্ণিত হয়—তাকেই বুঝিয়েছেন। এমনকি ভাবাদর্শিক জীবন বিচিত্র দিকের পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভাষার মধ্যেই প্রকাশিত হয়। ফলে এ রকম কেন্দ্রীভূত একরৈখিক ভাষা সমাজকাঠামোয় বিদ্যমান অধিপতি শক্তিগুলোর বাচনিক-মতাদর্শিক অবস্থানেরই বাহন হয়ে ওঠে। স্পষ্টতই সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতা-সম্পর্কের চলনের সঙ্গে ভাষার এই কেন্দ্রায়ণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব, অগাস্টিনের কাব্যতত্ত্ব, মধ্যযুগের গির্জাকেন্দ্রিক কাব্যতত্ত্ব, কার্থেজীয় নব্য ধ্রুপদিবাদ, লাইবনিজের বিমূর্ত বিশ্বজনীন ব্যাকরণ কিংবা হামবোল্টের মূর্ততার প্রতি জোরারোপ—এঁদের মধ্যে সূক্ষ্ম যত ভিন্নতাই থাকুক না কেন, আদতে সামাজিক-ভাষিক এবং মতাদর্শিক জীবনের কেন্দ্রমুখী অভীপ্সাই তাতে প্রকাশ পেয়েছে। ইউরোপীয় ভাষাগুলোর কেন্দ্রমুখী একরৈখিক রূপ প্রণয়নের প্রকল্পেই সবাই সাহায্য করেছে। উপভাষাগুলোর মধ্যে একটির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে অন্যগুলোকে হটিয়ে দেওয়া বা অন্যগুলোকে একটির দাস বানানো; ‘খাঁটি শব্দ’-যোগে এগুলোকে আলোকিত করার প্রক্রিয়া; নিম্ন শ্রেণির মানুষ ও ‘বর্বর’-দের একরৈখিক সংস্কৃতি ও সত্যে শামিল করানো; ভাষাদর্শিক কাঠামোর অধীনে নিয়মকানুন তৈরি করা—এই সবকিছুই ‘একক ভাষা’ বা ‘প্রমিত ভাষা’র শক্তি জুগিয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এ প্রক্রিয়ায় আরও আছে মৃতভাষা—যে ভাষাগুলো স্বভাবতই একরৈখিক—পড়ানো-শেখানোর ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া; আছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো পাঠের ক্ষেত্রে কতগুলো বিশেষ রীতিপদ্ধতিতে মনোযোগ, এবং বিশেষত ভাষিক বহুত্বের বদলে একক প্রত্নভাষার সন্ধান। বাখতিন লক্ষ করেছেন, এসব প্রক্রিয়ায় বাহ্যত যত রকম ফারাকই থাক, অন্তর্গত চরিত্রে এগুলোয় ক্ষমতা-সম্পর্কের সুবিধাজনক কোঠায় অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর ভাবাদর্শিক প্রতিফলনই পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়াগুলোই নির্মাণ করেছে অধিকাংশ নন্দনতত্ত্বের রীতি-নির্ধারক বয়ান। কেন্দ্রমুখী বাচনিক-ভাবাদর্শিক জীবনের মতো এই ভাষিক-নন্দনতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও একই খাতে প্রবাহিত হয়েছে। ভাষা ও নন্দনতত্ত্ব জীবনের প্রভাবশালী ধারাকেই অনুসরণ করেছে।
মুশকিল হলো, ‘একক ভাষা’য় মূর্ত এই কেন্দ্রমুখী ভাষিক বাস্তবতা, যাকে আমরা আজকাল প্রমিত ভাষা নামে চিনি, বহুভাষিক সমাজ-বাস্তবতার মধ্যেই কাজ করে। যেকোনো বিশেষ মুহূর্তে ভাষা কেবল উপভাষায় (প্রচলিত ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা মোতাবেক) বিভক্ত থাকে না, বরং—বাখতিনের কাছে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ—বিভক্ত থাকে নানা সামাজিক-মতাদর্শিক বর্গেও। বিভিন্ন সামাজিক বর্গের ভাষা, পেশাগত বা শ্রেণিগত ভাষা, প্রজন্মের ভাষা ইত্যাদি। এই যে ভাষার বিভিন্ন স্তর এবং বহু ভাষা সমন্বিত বাস্তবতা—এটা যদ্দিন ভাষা জীবিত এবং বিকাশমান থাকে, তদ্দিন বাড়তেই থাকে। কেন্দ্রমুখী একরৈখিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রাতিগ বলের উপাদানগুলোও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যায়। বাচনিক-মতাদর্শিক কেন্দ্রীভূতকরণ আর একীকরণের পাশেই চলতে থাকে বিকেন্দ্রীকরণ এবং বহু বিচিত্ররূপে বিভক্তকরণ।
এ কারণে প্রত্যেক উচ্চারণ স্বভাবতই কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রাতিগ শক্তির চিহ্ন বহন করে। কোনো বিশেষ উচ্চারণ কেবল ব্যবহার-মুহূর্তে নিজের বিচ্ছিন্ন একক প্রয়োজন মেটায় না, বহু-বাস্তবের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে ভাষা-জগতে তার জন্ম ও অবস্থিতি, তার প্রয়োজনও মেটায়। তার চেয়ে বড় কথা, ভাষাগত অবয়ব আর শৈলীর দিক থেকে উচ্চারণটি একরৈখিক ভাষাকাঠামোর কেন্দ্রমুখী নির্দেশনা দ্বারা যতটা চালিত হয়, তাতে বহুভাষিক বাস্তবের প্রভাব তার চেয়ে মোটেই কম থাকে না। তার মানেই হলো, ভাষিক উচ্চারণ একই সঙ্গে একরৈখিক ভাষা [প্রমিত ভাষা] এবং বহুভাষিক বাস্তবতা—দুইয়ের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়। যে পরিবেশে উচ্চারণটির জন্ম ও পরিণতি, তা পরস্পর-সম্পর্কিত বা সংলাপায়িত (dialogized) বাস্তব; ভাষার মতোই তা সামাজিক আর আকারহীন; অন্যদিকে আবার তা মূর্ত, নির্দিষ্ট বার্তাবাহী এবং ব্যক্তিক উচ্চারণের বিশিষ্টতায় চিহ্নিত।
বাখতিন মানভাষা বা প্রমিত ভাষা ইত্যাদি বর্গ নামত ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবিত ‘একরৈখিক ভাষা’ স্পষ্টতই ভাষার ওই রূপ, যা সচরাচর প্রমিত ভাষা নামে বর্ণিত হয়। হুমায়ুন আজাদ প্রমিত বা মানভাষাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘কোনো ভাষা তার সমগ্র এলাকাজুড়ে একরূপ হয় না;–তার থাকে নানা আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন শ্রেণিক চারিত্র্য, তবে ওই সমস্ত বৈচিত্র্য পেরিয়ে থাকে তার এমন একটি রূপ, যা সর্বাঞ্চলিক। ওই রূপকে বলা হয় মান বা প্রমিত ভাষা।’ প্রমিত ভাষা সম্পর্কে এটি একটি প্রতিনিধিত্বশীল ধারণা। ধারণাটির গলদ এই যে, এখানে প্রমিত ভাষারূপকে একটি ‘প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক’ নিরীহ ধারণা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সামগ্রিক বাস্তবতা ও ভাষাবৈচিত্র্য থেকে একে আলগা করে দেখা হয়। বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র বয়ান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এ ভাষা স্বাভাবিকও নয়, নিরীহও নয়। এটি বিচ্ছিন্ন এবং অগণতান্ত্রিক। প্রতিদ্বন্দ্বী ভাষারূপগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ের রক্তাক্ত চিহ্ন ধারণ করেই এটি নিজ ভূমিকা পালন করে। এটি ‘উন্নত’ ভাষাও নয়, ‘শুদ্ধ বা পবিত্র’-ও নয়, তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রভাবশালী এবং দরকারি ও কেজো ভাষারূপ। বিপুল ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যেই এটি কাজ করে, এবং প্রতিনিয়ত ওই ভাষা-বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
বাখতিন কাজ করেছেন ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। সেখানকার প্রধান ভাষাগুলোর প্রমিতায়নে নিজ নিজ অঞ্চলের অভিজাত শ্রেণির ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ঔপনিবেশিক পরিস্থিতির কারণে বাংলা ভাষার মানরূপ একই কায়দায় গড়ে ওঠেনি। বিভাষী শাসক-এলিট এবং সংস্কৃতজ্ঞ ধর্মীয় এলিটের যৌথতায় নিষ্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষা বিধিবদ্ধকরণের প্রথম পর্ব। পরবর্তী দুই শতাধিক বছরজুড়ে স্বভাবতই আরও অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু প্রথম যুগের প্রভাবশালী ভাষাদর্শ ও তৎপরতার দায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
বাখতিনের ‘একরৈখিক ভাষা’র সংজ্ঞায়ন প্রমিত ভাষার শ্রেণিভিত্তি আর অগণতান্ত্রিকতার দিকে গভীরভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেকোনো প্রমিত রীতি আবশ্যিকভাবে অগণতান্ত্রিক; কারণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ও উচ্চারণরীতিকে অগ্রাহ্য করেই এ রীতি নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই আধিপত্য প্রাথমিকভাবে শ্রেণি-আধিপত্য, যদিও শ্রেণির বাস্তবতা দিয়ে একে সব সময় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। যেমন, বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের যে অচ্ছেদ্য যোগ, ইউরোপীয় ভাষা-ইতিহাসের যে পাটাতনে বাখতিন কাজ করেছেন, তার নিরিখে একে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিন্তু উপনিবেশিত এলিটের গড়ন, মনস্তত্ত্ব এবং তৎপরতা শেষ পর্যন্ত প্রমিত বাংলার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রমথ চৌধুরীকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ প্রতিষ্ঠার যে দুটি পর্ব চলেছে, তা এই বাস্তবতার নিখুঁত নজির। বাখতিন ইউরোপীয় ইতিহাস থেকে অন্তত আড়াই হাজার বছরের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, অভিজাত শ্রেণির ভাষিক-নান্দনিক তৎপরতা শেষ পর্যন্ত একরৈখিক ভাষাকেই নতুন নতুন রূপে সম্ভবপর করে তোলে। বাংলার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে—বিদেশিদের তৎপরতা আর বাঙালি অভিজাত শ্রেণির ঔপনিবেশিক খাসলতজনিত অতিরিক্ত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমিত বাংলাকে অধিকতর অগণতান্ত্রিক, আর বিশৃঙ্খল করেছে মাত্র।
বাখতিনের পর্যালোচনা আরেকটি গুরুতর ভাষিক বাস্তবতার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে বলে। তা এই যে, প্রমিত ভাষা কোনো আলগা অস্তিত্ব নয়। বহুভাষিক-বহুস্বরিক বাস্তবতার মধ্যেই তাকে কাজ করতে হয়। তার মানেই হলো একদিকে নিজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ‘টানা’ এবং অন্যদিকে বহুভাষিক বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রক্ষার ‘পড়েন’ তার ঐতিহাসিক হয়ে ওঠা আর স্থিতির নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এ কারণেই প্রমিতের কোনো চিরন্তন বা স্থির আদর্শ থাকতে পারে না। কালের সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে নতুন নতুন অভিযোজনের মধ্য দিয়েই প্রমিত ভাষা নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশে প্রমিত ভাষা-সম্পর্কিত প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি অতিমাত্রায় সংকীর্ণ। মোটা দাগে তার দুই কারণ। এক. কলকাতায় বিশেষ ঐতিহাসিক বাস্তবতায় নিরূপিত ভাষাটি হুবহু বাংলাদেশের প্রমিত রীতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ অঞ্চলের ভাষিক বাস্তবতা আর উচ্চারণরীতিকে মোটেই আমলে আনা হয়নি। দুই. ওই গৃহীত রীতিটিকে ভাবা হয় ‘বিশুদ্ধ’, ‘পবিত্র’ আর ‘চিরকালীন’। এই দুই কারণে এখানকার ভাষাচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি অধিকতর অগণতান্ত্রিক। সে এতটাই যে, প্রায়ই তা ফ্যাসিবাদী উচ্চারণে রূপ নেয়। বিপরীতে, প্রমিতবিরোধী প্রতিক্রিয়াও এখানে বেশ প্রবল। সে প্রতিক্রিয়া প্রাত্যহিক উচ্চারণ থেকে শুরু করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান এবং লেখালেখি পর্যন্ত বিস্তৃত। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই প্রতিক্রিয়া সামলানোর জন্য প্রমিত-পক্ষীয়রা দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেমের অন্যায্য দোহাই পেড়েছে এবং আদালতের নির্দেশনাও চেয়েছে।
আদতে প্রমিত-বিরোধিতার সঙ্গে দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমের কোনো সম্পর্ক থাকতেই পারে না। আর প্রমিত রূপ নির্ধারিত হয় সমাজের অভিজাত-পক্ষের সম্মতিতে, আদালতের হুকুমে নয়। বাখতিন আমাদের নিশ্চিত করেন, ভাষার প্রমিত রূপ একটি ব্যবহারিক বর্গ মাত্র এবং পরিবর্তনই তার নিয়তি। বাংলা প্রমিতের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই রূপ বিধিবদ্ধ হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে; অভিজাত শ্রেণির মুখের ভাষা অবলম্বনে নয়। একমাত্র উদার ও গ্রহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্রমিক বিধিবদ্ধকরণই এই জরুরি ব্যবহারিক বর্গটিকে কার্যকরভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তারপরও অবশ্য প্রমিত-বিরোধিতা থেকেই যাবে। সেটাই ভাষাসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর।
মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বি
৩০ জুন ২০২২
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বি
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বি
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

রুশ উপন্যাসতাত্ত্বিক মিখাইল বাখতিন The Dialogic Imagination: Four Essays গ্রন্থে ভাষার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন জীবনের বৈচিত্র্য ও সমগ্রতার আধার হিসেবে। গ্রন্থটি সাহিত্যতত্ত্ব-সম্পর্কিত। কিন্তু বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাখতিন ব্যতিক্রমহীনভাবে একটা কাজ করে গেছেন —খুব স্বতন্ত্র ধরনে ভাষার ব্যাখ্যা-বি
৩০ জুন ২০২২
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫