ড. মো. গোলাম রহমান

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবকে নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতিরোমন্থনের পালা। এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কন্দরে। কতিপয় কুচক্রী এই অবিসংবাদিত নেতাকে বাঙালির মনের গভীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু সময়ের বিবর্তনে অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে আমরা সময়ে সময়ে পেয়েছি, আবার হারিয়েছিও। এই পেয়ে হারানোর বেদনা বাঙালির জীবনে গভীর। ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে পথচ্যুত হয়ে সাম্প্রদায়িক ধারায় প্রবাহিত হতে থাকা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাবের কারণে সৃষ্ট পাকিস্তানি রাজনৈতিক চিন্তা তিনি স্বস্তির সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর চিন্তা ও চেতনার যে বৈশিষ্ট্য, তা সব সময় বাঙালির গর্ব হয়ে একটি পৃথক স্বরগ্রাম তৈরি করেছে। যেখানে বাংলার মাঠ-ঘাট, কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের সত্যিকার বাঁচার স্বপ্নই চিরন্তন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিকে তাই দেখা যায় ১৯৪৯ সাল থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় এক নির্মাণকুশলী, রাজনীতির ফুল দিয়ে মালা গাঁথছেন একটি আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্নে এবং চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে বছরের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ছাত্রলীগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তখন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতি যখন আইন পরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করার গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছেন; অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সংঘবদ্ধ করছেন। চলতে থাকে প্রতিবাদের ঝড়। ১১ মার্চ তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন বাঙালির দৃষ্টির আড়াল হলেও বেরিয়ে আসেন গরাদের আড়াল থেকে। আবার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই কারাগার যেন তাঁর জীবনের একটি অপরিহার্য পরিণতি হয়ে দেখা দেয়। সংগ্রাম-আন্দোলনের জন্য যে পুরুষের জন্ম, তাঁকে কি কোনো জেল-হাজতের মধ্যে পুরে রাখলেই নিঃশেষ করে ফেলা যায়? তিনি ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান এবং মুক্তি পেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবিদাওয়া সমর্থন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এ বছর কয়েকবার তিনি কারাবরণ করেন এবং ১ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার বন্দী হন। ভাষার দাবিতে তিনি কারাগারে অনশন করেন। দৃষ্টির আড়াল হয়ে কারাগারে অন্তরীণ হয়ে থাকেন প্রায় দুই বছর। বাঙালির এই নেতা মাঝে মাঝে এমনই হারিয়ে গেছেন সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু বাঙালি নেতৃত্ব কখনো তাঁকে হারিয়ে ফেলেনি একেবারে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কারাগার থেকে।
মুজিব ব্যস্ত হয়ে পড়েন যুক্তফ্রন্ট গঠনে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৬-তে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে উজ্জীবিত করে তোলার একটি বড় মাপের পদক্ষেপ। যার ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে এক নম্বর আসামি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছিল শাসকগোষ্ঠীর পাঁয়তারায়। কুচক্রীদের মাথায় তখন থেকেই শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র ছিল। অপরদিকে জনগণের আন্দোলন হচ্ছিল বেগবান। সেদিনের জনজোয়ারের ফলে শেখ মুজিবকে আটকে রাখা যায়নি।
Cyril Dunn-এর ভাষায়, ‘Released again, he dedicated himself more vehemently than ever to the liberation of Bengal. …On these occasions he was always immensely cheerful and was plainly supported by the belief that the mass of the Bengalis were behind him.’ [“How Mujib Turned into Bengal’s Hero,” The Observer, 28 March 1971, London.] মুজিবকে আমরা হারিয়েছি তখন কিছুটা সময়ের জন্য। পেয়েছিও। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুথানে ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফিরে পাওয়া যেন এক নতুন মুজিবকে ফিরে পাওয়া। ৬ দফা তথা ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফলে মুজিব কারা-অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলেন; বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হলো তাঁকে। যখন বাংলার মাটির একান্ত গন্ধে ভরা; শিশুর মতো কোমল হৃদয়ের মানুষটি যখন তর্জনী নেড়ে ‘মুক্তিসংগ্রামে’র ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তখন তিনি অনেক কঠোর মনোবল আর জনগণের মুক্তির উন্মাদনায় অনেক বেশি কৌশলী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
বাঁচার জন্য যুদ্ধ, অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ। তখন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরই আমাদের চেতনার আগুনে সঞ্চিত শক্তি। প্রতিটি বাঙালিই যেন একেকটি যোদ্ধা। আর যাঁরা রণাঙ্গনে, তাঁরা তো প্রতি নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বঙ্গবন্ধুকে ভর করে আছেন। তখন আরেকবার আমরা হারিয়েছি এই বিরাট ব্যক্তিত্বকে। স্বাধীন মাটি, স্বাধীন জলবায়ু আর ভৌগোলিক রেখা ও স্বাধীন পতাকার জন্য নয়টি মাস অধিকার আদায়ের যুদ্ধ চলল। চলল ইতিহাসের সব উদাহরণ ছাড়িয়ে। তখন সবার একই প্রত্যাশা, শেখ মুজিবকে মুক্ত মানব হিসেবে দেশের মাটিতে ফিরে পাওয়া; পাকিস্তানের শাসকেরা তখন তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে, কনডেমড সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হয়েছে শেখ মুজিবের জন্য, কিন্তু বিশ্ববিবেক তখন সোচ্চার। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলনে সারা দুনিয়ায় তখন কী এক জাগরণ!
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বিবিসিকে চিনেছিল আপন করে। যে খবর বিশ্বাস করা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলিকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়, সেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবিসিতে লুকিয়ে লুকিয়ে কান রাখা–যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। সেই বিবিসির খবরের প্রতি কান পেতে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে পুরো জাতিকে, স্বাধীনতা-উত্তরকালেও। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে নানা রকমের গুজব আর আশঙ্কার কথাকে মিথ্যে করে দিয়ে বিবিসি খবর দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ফিরছেন।
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে ফিরেছেন নিউ দিল্লি, তারপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান—এই তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জনস্রোতের ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করে পৌঁছাতে তাঁর সময়ই লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা যেন আকাশ বিদীর্ণ করে কোনো দেবদূতের ফিরে আসা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪—এই তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য ছিল বিরাট পরীক্ষার সময়। দেশের সব অবকাঠামোই ধ্বংসপ্রাপ্ত, পোড়া মাটির ওপর গড়ে উঠেছে মানুষের নতুন বসতি। ধীরে ধীরে মানুষ নতুন উদ্দীপনায় বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা ধীরে ধীরে বাস্তবতার নিরিখে সহনীয় হয়ে উঠছে। আর সেই সময়ে দেশি-বিদেশি রাজনীতি ও অর্থনীতির কূটচাল চলছে বাংলাদেশের ওপর। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি তিন বছর কিছুই দিতে পারব না, প্রত্যাশাপিয়াসী মানুষ তখন বুঝতে পেরেছিল যে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হবে। অভাব-অনটনের মধ্যে সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। দেশকে গড়ে তুলতে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা—সবাই তৎপর হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে অশান্তির সূত্রপাত হতে থাকে। দেশের মানুষ খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা করে, উপর্যুপরি বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই খাদ্যঘাটতি এবং নিরন্ন মানুষের কষ্ট বঙ্গবন্ধুকে গভীর পীড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা চালু হয়। রুটি-খিচুড়ি রান্না করে ক্ষুধার্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় বেশ অনেক দিন।
দেশের মানুষের যুদ্ধজয়ের ফসল ঘরে তোলার যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। অধনতান্ত্রিক বিকাশের পথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র চর্চার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে থাকে, কিন্তু অপরদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালি জাতির কণ্ঠরোধ করে নিস্তব্ধ করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। কুচক্রীরা জনমতের তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। দেশের তৎকালীন শাসকদের সমালোচনা করতে তাদের কোনো কুণ্ঠা নেই, সংকোচ নেই, লজ্জা নেই। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে রক্তবন্যায় যে জাতি সিক্ত হলো, সে জাতির জন্য নতুন পরীক্ষার সময় এলো। পরাজিত শত্রুর ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। কতিপয় উচ্চাভিলাষী উর্দি পরা লোক কাপুরুষের বেশে রাতের আধাঁরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল ক্ষণজন্মা এই পুরুষের। তাদের সহায়তা করল খোন্দকার মুশতাক গং। বিশাল-বিস্তৃত মানবিক উদারতার অখণ্ড উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল খুনিরা। বাঙালি জাতি যাঁকে পেয়ে হারালাম, আবার পেলাম তাঁকে, ১৯৭৫-এর আগস্টে যে মহামানবকে হারালাম, তাঁকে কি সত্যিকার অর্থে আমরা হারিয়েছি? পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি বাকহীন...স্তব্ধ হয়ে গেছে... চোখ দিয়ে তাদের অশ্রু গড়িয়েছে ... কিন্তু উচ্চারণে বিদীর্ণ হয়নি পরিবেশ। জাতি যেন গুমরে মরেছে এক নিঃশব্দ চিৎকারে।
কালের অমোঘ নিয়মে আমরা পেরিয়েছি প্রায় ৫০ বছর। ১৯৯৬-তে যখন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলো, তখন দেখা গেল টেলিভিশনের পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে তর্জনী উঁচিয়ে সেই ৭ মার্চের ভাষণ দিতে। জনতা জাগল নতুন জোয়ারে; যা নাকি টিভির পর্দায় নিষিদ্ধ ছিল গত ২১ বছর। বাঙালির হৃদয়ের গভীর উৎসমূল থেকে বেরিয়ে এলেন স্মরণের পথরেখা বেয়ে বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি তো বঙ্গবন্ধুকে তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছে, তা কি বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে! যুগ যুগ যে জাতি নীরবে স্মরণের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে, বঙ্গোপসাগরের বালুকাবেলায় যে মানুষ নগ্ন পায়ে হেঁটে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাগরূক রাখতে আজীবন পণ করেছে, আজ তো সেই জাতির নতুন শপথের দিন।
ভ্রান্তিবিলাসে কেটেছে এ জাতির অনেকটা সময়। আজ যারা তরুণ, নব প্রজন্মের, নব পথরেখায় যাদের যাত্রা, তারা আত্ম-উন্মোচন করছে উত্তরাধিকারের। তারা অনেক দিন দেখেনি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার-টিভিতে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে। ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অস্তিত্বে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একটি উজ্জ্বলতম নাম, তা এই প্রজন্মকে জানতে দেওয়া হয়নি। সত্যকে চেপে রাখা হয়েছে গভীরভাবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করেই ক্ষান্ত হয়নি, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; নতুন প্রজন্মকে বিপথে চলতে শিখিয়েছে তাদের মিথ্যাচারের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে শাস্তি দেওয়া হবে না?
শুধু বাঙালি নয়, শোষিত-বঞ্চিত জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক বিশ্বনেতা হয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে ফিরে আসেন। তাঁর চেতনা বাঙালির জীবন পাঁচালীর প্রতিটি গর্বের অফুরন্ত শক্তির আধার হোক। আত্মজিজ্ঞাসায় নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হোক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় পথছায়ায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রচিত হোক। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে, প্রজ্বলিত হয়ে, চির অম্লান হয়ে ফিরে ফিরে আসুক নিরন্তর সময়ের ধারায়।

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবকে নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতিরোমন্থনের পালা। এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কন্দরে। কতিপয় কুচক্রী এই অবিসংবাদিত নেতাকে বাঙালির মনের গভীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু সময়ের বিবর্তনে অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে আমরা সময়ে সময়ে পেয়েছি, আবার হারিয়েছিও। এই পেয়ে হারানোর বেদনা বাঙালির জীবনে গভীর। ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে পথচ্যুত হয়ে সাম্প্রদায়িক ধারায় প্রবাহিত হতে থাকা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাবের কারণে সৃষ্ট পাকিস্তানি রাজনৈতিক চিন্তা তিনি স্বস্তির সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর চিন্তা ও চেতনার যে বৈশিষ্ট্য, তা সব সময় বাঙালির গর্ব হয়ে একটি পৃথক স্বরগ্রাম তৈরি করেছে। যেখানে বাংলার মাঠ-ঘাট, কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের সত্যিকার বাঁচার স্বপ্নই চিরন্তন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিকে তাই দেখা যায় ১৯৪৯ সাল থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় এক নির্মাণকুশলী, রাজনীতির ফুল দিয়ে মালা গাঁথছেন একটি আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্নে এবং চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে বছরের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ছাত্রলীগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তখন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতি যখন আইন পরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করার গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছেন; অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সংঘবদ্ধ করছেন। চলতে থাকে প্রতিবাদের ঝড়। ১১ মার্চ তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন বাঙালির দৃষ্টির আড়াল হলেও বেরিয়ে আসেন গরাদের আড়াল থেকে। আবার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই কারাগার যেন তাঁর জীবনের একটি অপরিহার্য পরিণতি হয়ে দেখা দেয়। সংগ্রাম-আন্দোলনের জন্য যে পুরুষের জন্ম, তাঁকে কি কোনো জেল-হাজতের মধ্যে পুরে রাখলেই নিঃশেষ করে ফেলা যায়? তিনি ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান এবং মুক্তি পেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবিদাওয়া সমর্থন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এ বছর কয়েকবার তিনি কারাবরণ করেন এবং ১ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার বন্দী হন। ভাষার দাবিতে তিনি কারাগারে অনশন করেন। দৃষ্টির আড়াল হয়ে কারাগারে অন্তরীণ হয়ে থাকেন প্রায় দুই বছর। বাঙালির এই নেতা মাঝে মাঝে এমনই হারিয়ে গেছেন সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু বাঙালি নেতৃত্ব কখনো তাঁকে হারিয়ে ফেলেনি একেবারে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কারাগার থেকে।
মুজিব ব্যস্ত হয়ে পড়েন যুক্তফ্রন্ট গঠনে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৬-তে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে উজ্জীবিত করে তোলার একটি বড় মাপের পদক্ষেপ। যার ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে এক নম্বর আসামি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছিল শাসকগোষ্ঠীর পাঁয়তারায়। কুচক্রীদের মাথায় তখন থেকেই শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র ছিল। অপরদিকে জনগণের আন্দোলন হচ্ছিল বেগবান। সেদিনের জনজোয়ারের ফলে শেখ মুজিবকে আটকে রাখা যায়নি।
Cyril Dunn-এর ভাষায়, ‘Released again, he dedicated himself more vehemently than ever to the liberation of Bengal. …On these occasions he was always immensely cheerful and was plainly supported by the belief that the mass of the Bengalis were behind him.’ [“How Mujib Turned into Bengal’s Hero,” The Observer, 28 March 1971, London.] মুজিবকে আমরা হারিয়েছি তখন কিছুটা সময়ের জন্য। পেয়েছিও। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুথানে ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফিরে পাওয়া যেন এক নতুন মুজিবকে ফিরে পাওয়া। ৬ দফা তথা ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফলে মুজিব কারা-অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলেন; বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হলো তাঁকে। যখন বাংলার মাটির একান্ত গন্ধে ভরা; শিশুর মতো কোমল হৃদয়ের মানুষটি যখন তর্জনী নেড়ে ‘মুক্তিসংগ্রামে’র ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তখন তিনি অনেক কঠোর মনোবল আর জনগণের মুক্তির উন্মাদনায় অনেক বেশি কৌশলী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
বাঁচার জন্য যুদ্ধ, অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ। তখন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরই আমাদের চেতনার আগুনে সঞ্চিত শক্তি। প্রতিটি বাঙালিই যেন একেকটি যোদ্ধা। আর যাঁরা রণাঙ্গনে, তাঁরা তো প্রতি নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বঙ্গবন্ধুকে ভর করে আছেন। তখন আরেকবার আমরা হারিয়েছি এই বিরাট ব্যক্তিত্বকে। স্বাধীন মাটি, স্বাধীন জলবায়ু আর ভৌগোলিক রেখা ও স্বাধীন পতাকার জন্য নয়টি মাস অধিকার আদায়ের যুদ্ধ চলল। চলল ইতিহাসের সব উদাহরণ ছাড়িয়ে। তখন সবার একই প্রত্যাশা, শেখ মুজিবকে মুক্ত মানব হিসেবে দেশের মাটিতে ফিরে পাওয়া; পাকিস্তানের শাসকেরা তখন তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে, কনডেমড সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হয়েছে শেখ মুজিবের জন্য, কিন্তু বিশ্ববিবেক তখন সোচ্চার। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলনে সারা দুনিয়ায় তখন কী এক জাগরণ!
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বিবিসিকে চিনেছিল আপন করে। যে খবর বিশ্বাস করা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলিকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়, সেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবিসিতে লুকিয়ে লুকিয়ে কান রাখা–যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। সেই বিবিসির খবরের প্রতি কান পেতে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে পুরো জাতিকে, স্বাধীনতা-উত্তরকালেও। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে নানা রকমের গুজব আর আশঙ্কার কথাকে মিথ্যে করে দিয়ে বিবিসি খবর দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ফিরছেন।
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে ফিরেছেন নিউ দিল্লি, তারপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান—এই তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জনস্রোতের ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করে পৌঁছাতে তাঁর সময়ই লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা যেন আকাশ বিদীর্ণ করে কোনো দেবদূতের ফিরে আসা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪—এই তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য ছিল বিরাট পরীক্ষার সময়। দেশের সব অবকাঠামোই ধ্বংসপ্রাপ্ত, পোড়া মাটির ওপর গড়ে উঠেছে মানুষের নতুন বসতি। ধীরে ধীরে মানুষ নতুন উদ্দীপনায় বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা ধীরে ধীরে বাস্তবতার নিরিখে সহনীয় হয়ে উঠছে। আর সেই সময়ে দেশি-বিদেশি রাজনীতি ও অর্থনীতির কূটচাল চলছে বাংলাদেশের ওপর। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি তিন বছর কিছুই দিতে পারব না, প্রত্যাশাপিয়াসী মানুষ তখন বুঝতে পেরেছিল যে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হবে। অভাব-অনটনের মধ্যে সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। দেশকে গড়ে তুলতে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা—সবাই তৎপর হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে অশান্তির সূত্রপাত হতে থাকে। দেশের মানুষ খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা করে, উপর্যুপরি বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই খাদ্যঘাটতি এবং নিরন্ন মানুষের কষ্ট বঙ্গবন্ধুকে গভীর পীড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা চালু হয়। রুটি-খিচুড়ি রান্না করে ক্ষুধার্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় বেশ অনেক দিন।
দেশের মানুষের যুদ্ধজয়ের ফসল ঘরে তোলার যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। অধনতান্ত্রিক বিকাশের পথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র চর্চার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে থাকে, কিন্তু অপরদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালি জাতির কণ্ঠরোধ করে নিস্তব্ধ করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। কুচক্রীরা জনমতের তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। দেশের তৎকালীন শাসকদের সমালোচনা করতে তাদের কোনো কুণ্ঠা নেই, সংকোচ নেই, লজ্জা নেই। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে রক্তবন্যায় যে জাতি সিক্ত হলো, সে জাতির জন্য নতুন পরীক্ষার সময় এলো। পরাজিত শত্রুর ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। কতিপয় উচ্চাভিলাষী উর্দি পরা লোক কাপুরুষের বেশে রাতের আধাঁরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল ক্ষণজন্মা এই পুরুষের। তাদের সহায়তা করল খোন্দকার মুশতাক গং। বিশাল-বিস্তৃত মানবিক উদারতার অখণ্ড উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল খুনিরা। বাঙালি জাতি যাঁকে পেয়ে হারালাম, আবার পেলাম তাঁকে, ১৯৭৫-এর আগস্টে যে মহামানবকে হারালাম, তাঁকে কি সত্যিকার অর্থে আমরা হারিয়েছি? পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি বাকহীন...স্তব্ধ হয়ে গেছে... চোখ দিয়ে তাদের অশ্রু গড়িয়েছে ... কিন্তু উচ্চারণে বিদীর্ণ হয়নি পরিবেশ। জাতি যেন গুমরে মরেছে এক নিঃশব্দ চিৎকারে।
কালের অমোঘ নিয়মে আমরা পেরিয়েছি প্রায় ৫০ বছর। ১৯৯৬-তে যখন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলো, তখন দেখা গেল টেলিভিশনের পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে তর্জনী উঁচিয়ে সেই ৭ মার্চের ভাষণ দিতে। জনতা জাগল নতুন জোয়ারে; যা নাকি টিভির পর্দায় নিষিদ্ধ ছিল গত ২১ বছর। বাঙালির হৃদয়ের গভীর উৎসমূল থেকে বেরিয়ে এলেন স্মরণের পথরেখা বেয়ে বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি তো বঙ্গবন্ধুকে তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছে, তা কি বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে! যুগ যুগ যে জাতি নীরবে স্মরণের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে, বঙ্গোপসাগরের বালুকাবেলায় যে মানুষ নগ্ন পায়ে হেঁটে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাগরূক রাখতে আজীবন পণ করেছে, আজ তো সেই জাতির নতুন শপথের দিন।
ভ্রান্তিবিলাসে কেটেছে এ জাতির অনেকটা সময়। আজ যারা তরুণ, নব প্রজন্মের, নব পথরেখায় যাদের যাত্রা, তারা আত্ম-উন্মোচন করছে উত্তরাধিকারের। তারা অনেক দিন দেখেনি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার-টিভিতে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে। ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অস্তিত্বে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একটি উজ্জ্বলতম নাম, তা এই প্রজন্মকে জানতে দেওয়া হয়নি। সত্যকে চেপে রাখা হয়েছে গভীরভাবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করেই ক্ষান্ত হয়নি, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; নতুন প্রজন্মকে বিপথে চলতে শিখিয়েছে তাদের মিথ্যাচারের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে শাস্তি দেওয়া হবে না?
শুধু বাঙালি নয়, শোষিত-বঞ্চিত জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক বিশ্বনেতা হয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে ফিরে আসেন। তাঁর চেতনা বাঙালির জীবন পাঁচালীর প্রতিটি গর্বের অফুরন্ত শক্তির আধার হোক। আত্মজিজ্ঞাসায় নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হোক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় পথছায়ায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রচিত হোক। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে, প্রজ্বলিত হয়ে, চির অম্লান হয়ে ফিরে ফিরে আসুক নিরন্তর সময়ের ধারায়।
ড. মো. গোলাম রহমান

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবকে নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতিরোমন্থনের পালা। এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কন্দরে। কতিপয় কুচক্রী এই অবিসংবাদিত নেতাকে বাঙালির মনের গভীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু সময়ের বিবর্তনে অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে আমরা সময়ে সময়ে পেয়েছি, আবার হারিয়েছিও। এই পেয়ে হারানোর বেদনা বাঙালির জীবনে গভীর। ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে পথচ্যুত হয়ে সাম্প্রদায়িক ধারায় প্রবাহিত হতে থাকা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাবের কারণে সৃষ্ট পাকিস্তানি রাজনৈতিক চিন্তা তিনি স্বস্তির সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর চিন্তা ও চেতনার যে বৈশিষ্ট্য, তা সব সময় বাঙালির গর্ব হয়ে একটি পৃথক স্বরগ্রাম তৈরি করেছে। যেখানে বাংলার মাঠ-ঘাট, কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের সত্যিকার বাঁচার স্বপ্নই চিরন্তন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিকে তাই দেখা যায় ১৯৪৯ সাল থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় এক নির্মাণকুশলী, রাজনীতির ফুল দিয়ে মালা গাঁথছেন একটি আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্নে এবং চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে বছরের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ছাত্রলীগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তখন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতি যখন আইন পরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করার গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছেন; অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সংঘবদ্ধ করছেন। চলতে থাকে প্রতিবাদের ঝড়। ১১ মার্চ তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন বাঙালির দৃষ্টির আড়াল হলেও বেরিয়ে আসেন গরাদের আড়াল থেকে। আবার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই কারাগার যেন তাঁর জীবনের একটি অপরিহার্য পরিণতি হয়ে দেখা দেয়। সংগ্রাম-আন্দোলনের জন্য যে পুরুষের জন্ম, তাঁকে কি কোনো জেল-হাজতের মধ্যে পুরে রাখলেই নিঃশেষ করে ফেলা যায়? তিনি ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান এবং মুক্তি পেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবিদাওয়া সমর্থন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এ বছর কয়েকবার তিনি কারাবরণ করেন এবং ১ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার বন্দী হন। ভাষার দাবিতে তিনি কারাগারে অনশন করেন। দৃষ্টির আড়াল হয়ে কারাগারে অন্তরীণ হয়ে থাকেন প্রায় দুই বছর। বাঙালির এই নেতা মাঝে মাঝে এমনই হারিয়ে গেছেন সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু বাঙালি নেতৃত্ব কখনো তাঁকে হারিয়ে ফেলেনি একেবারে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কারাগার থেকে।
মুজিব ব্যস্ত হয়ে পড়েন যুক্তফ্রন্ট গঠনে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৬-তে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে উজ্জীবিত করে তোলার একটি বড় মাপের পদক্ষেপ। যার ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে এক নম্বর আসামি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছিল শাসকগোষ্ঠীর পাঁয়তারায়। কুচক্রীদের মাথায় তখন থেকেই শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র ছিল। অপরদিকে জনগণের আন্দোলন হচ্ছিল বেগবান। সেদিনের জনজোয়ারের ফলে শেখ মুজিবকে আটকে রাখা যায়নি।
Cyril Dunn-এর ভাষায়, ‘Released again, he dedicated himself more vehemently than ever to the liberation of Bengal. …On these occasions he was always immensely cheerful and was plainly supported by the belief that the mass of the Bengalis were behind him.’ [“How Mujib Turned into Bengal’s Hero,” The Observer, 28 March 1971, London.] মুজিবকে আমরা হারিয়েছি তখন কিছুটা সময়ের জন্য। পেয়েছিও। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুথানে ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফিরে পাওয়া যেন এক নতুন মুজিবকে ফিরে পাওয়া। ৬ দফা তথা ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফলে মুজিব কারা-অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলেন; বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হলো তাঁকে। যখন বাংলার মাটির একান্ত গন্ধে ভরা; শিশুর মতো কোমল হৃদয়ের মানুষটি যখন তর্জনী নেড়ে ‘মুক্তিসংগ্রামে’র ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তখন তিনি অনেক কঠোর মনোবল আর জনগণের মুক্তির উন্মাদনায় অনেক বেশি কৌশলী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
বাঁচার জন্য যুদ্ধ, অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ। তখন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরই আমাদের চেতনার আগুনে সঞ্চিত শক্তি। প্রতিটি বাঙালিই যেন একেকটি যোদ্ধা। আর যাঁরা রণাঙ্গনে, তাঁরা তো প্রতি নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বঙ্গবন্ধুকে ভর করে আছেন। তখন আরেকবার আমরা হারিয়েছি এই বিরাট ব্যক্তিত্বকে। স্বাধীন মাটি, স্বাধীন জলবায়ু আর ভৌগোলিক রেখা ও স্বাধীন পতাকার জন্য নয়টি মাস অধিকার আদায়ের যুদ্ধ চলল। চলল ইতিহাসের সব উদাহরণ ছাড়িয়ে। তখন সবার একই প্রত্যাশা, শেখ মুজিবকে মুক্ত মানব হিসেবে দেশের মাটিতে ফিরে পাওয়া; পাকিস্তানের শাসকেরা তখন তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে, কনডেমড সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হয়েছে শেখ মুজিবের জন্য, কিন্তু বিশ্ববিবেক তখন সোচ্চার। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলনে সারা দুনিয়ায় তখন কী এক জাগরণ!
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বিবিসিকে চিনেছিল আপন করে। যে খবর বিশ্বাস করা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলিকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়, সেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবিসিতে লুকিয়ে লুকিয়ে কান রাখা–যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। সেই বিবিসির খবরের প্রতি কান পেতে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে পুরো জাতিকে, স্বাধীনতা-উত্তরকালেও। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে নানা রকমের গুজব আর আশঙ্কার কথাকে মিথ্যে করে দিয়ে বিবিসি খবর দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ফিরছেন।
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে ফিরেছেন নিউ দিল্লি, তারপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান—এই তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জনস্রোতের ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করে পৌঁছাতে তাঁর সময়ই লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা যেন আকাশ বিদীর্ণ করে কোনো দেবদূতের ফিরে আসা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪—এই তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য ছিল বিরাট পরীক্ষার সময়। দেশের সব অবকাঠামোই ধ্বংসপ্রাপ্ত, পোড়া মাটির ওপর গড়ে উঠেছে মানুষের নতুন বসতি। ধীরে ধীরে মানুষ নতুন উদ্দীপনায় বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা ধীরে ধীরে বাস্তবতার নিরিখে সহনীয় হয়ে উঠছে। আর সেই সময়ে দেশি-বিদেশি রাজনীতি ও অর্থনীতির কূটচাল চলছে বাংলাদেশের ওপর। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি তিন বছর কিছুই দিতে পারব না, প্রত্যাশাপিয়াসী মানুষ তখন বুঝতে পেরেছিল যে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হবে। অভাব-অনটনের মধ্যে সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। দেশকে গড়ে তুলতে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা—সবাই তৎপর হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে অশান্তির সূত্রপাত হতে থাকে। দেশের মানুষ খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা করে, উপর্যুপরি বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই খাদ্যঘাটতি এবং নিরন্ন মানুষের কষ্ট বঙ্গবন্ধুকে গভীর পীড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা চালু হয়। রুটি-খিচুড়ি রান্না করে ক্ষুধার্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় বেশ অনেক দিন।
দেশের মানুষের যুদ্ধজয়ের ফসল ঘরে তোলার যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। অধনতান্ত্রিক বিকাশের পথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র চর্চার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে থাকে, কিন্তু অপরদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালি জাতির কণ্ঠরোধ করে নিস্তব্ধ করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। কুচক্রীরা জনমতের তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। দেশের তৎকালীন শাসকদের সমালোচনা করতে তাদের কোনো কুণ্ঠা নেই, সংকোচ নেই, লজ্জা নেই। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে রক্তবন্যায় যে জাতি সিক্ত হলো, সে জাতির জন্য নতুন পরীক্ষার সময় এলো। পরাজিত শত্রুর ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। কতিপয় উচ্চাভিলাষী উর্দি পরা লোক কাপুরুষের বেশে রাতের আধাঁরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল ক্ষণজন্মা এই পুরুষের। তাদের সহায়তা করল খোন্দকার মুশতাক গং। বিশাল-বিস্তৃত মানবিক উদারতার অখণ্ড উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল খুনিরা। বাঙালি জাতি যাঁকে পেয়ে হারালাম, আবার পেলাম তাঁকে, ১৯৭৫-এর আগস্টে যে মহামানবকে হারালাম, তাঁকে কি সত্যিকার অর্থে আমরা হারিয়েছি? পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি বাকহীন...স্তব্ধ হয়ে গেছে... চোখ দিয়ে তাদের অশ্রু গড়িয়েছে ... কিন্তু উচ্চারণে বিদীর্ণ হয়নি পরিবেশ। জাতি যেন গুমরে মরেছে এক নিঃশব্দ চিৎকারে।
কালের অমোঘ নিয়মে আমরা পেরিয়েছি প্রায় ৫০ বছর। ১৯৯৬-তে যখন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলো, তখন দেখা গেল টেলিভিশনের পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে তর্জনী উঁচিয়ে সেই ৭ মার্চের ভাষণ দিতে। জনতা জাগল নতুন জোয়ারে; যা নাকি টিভির পর্দায় নিষিদ্ধ ছিল গত ২১ বছর। বাঙালির হৃদয়ের গভীর উৎসমূল থেকে বেরিয়ে এলেন স্মরণের পথরেখা বেয়ে বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি তো বঙ্গবন্ধুকে তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছে, তা কি বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে! যুগ যুগ যে জাতি নীরবে স্মরণের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে, বঙ্গোপসাগরের বালুকাবেলায় যে মানুষ নগ্ন পায়ে হেঁটে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাগরূক রাখতে আজীবন পণ করেছে, আজ তো সেই জাতির নতুন শপথের দিন।
ভ্রান্তিবিলাসে কেটেছে এ জাতির অনেকটা সময়। আজ যারা তরুণ, নব প্রজন্মের, নব পথরেখায় যাদের যাত্রা, তারা আত্ম-উন্মোচন করছে উত্তরাধিকারের। তারা অনেক দিন দেখেনি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার-টিভিতে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে। ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অস্তিত্বে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একটি উজ্জ্বলতম নাম, তা এই প্রজন্মকে জানতে দেওয়া হয়নি। সত্যকে চেপে রাখা হয়েছে গভীরভাবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করেই ক্ষান্ত হয়নি, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; নতুন প্রজন্মকে বিপথে চলতে শিখিয়েছে তাদের মিথ্যাচারের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে শাস্তি দেওয়া হবে না?
শুধু বাঙালি নয়, শোষিত-বঞ্চিত জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক বিশ্বনেতা হয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে ফিরে আসেন। তাঁর চেতনা বাঙালির জীবন পাঁচালীর প্রতিটি গর্বের অফুরন্ত শক্তির আধার হোক। আত্মজিজ্ঞাসায় নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হোক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় পথছায়ায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রচিত হোক। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে, প্রজ্বলিত হয়ে, চির অম্লান হয়ে ফিরে ফিরে আসুক নিরন্তর সময়ের ধারায়।

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবকে নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতিরোমন্থনের পালা। এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কন্দরে। কতিপয় কুচক্রী এই অবিসংবাদিত নেতাকে বাঙালির মনের গভীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু সময়ের বিবর্তনে অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে আমরা সময়ে সময়ে পেয়েছি, আবার হারিয়েছিও। এই পেয়ে হারানোর বেদনা বাঙালির জীবনে গভীর। ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে পথচ্যুত হয়ে সাম্প্রদায়িক ধারায় প্রবাহিত হতে থাকা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাবের কারণে সৃষ্ট পাকিস্তানি রাজনৈতিক চিন্তা তিনি স্বস্তির সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর চিন্তা ও চেতনার যে বৈশিষ্ট্য, তা সব সময় বাঙালির গর্ব হয়ে একটি পৃথক স্বরগ্রাম তৈরি করেছে। যেখানে বাংলার মাঠ-ঘাট, কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের সত্যিকার বাঁচার স্বপ্নই চিরন্তন। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিকে তাই দেখা যায় ১৯৪৯ সাল থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় এক নির্মাণকুশলী, রাজনীতির ফুল দিয়ে মালা গাঁথছেন একটি আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্নে এবং চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে বছরের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম ছাত্রলীগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তখন দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ উপস্থিতি যখন আইন পরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করার গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছেন; অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সংঘবদ্ধ করছেন। চলতে থাকে প্রতিবাদের ঝড়। ১১ মার্চ তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন বাঙালির দৃষ্টির আড়াল হলেও বেরিয়ে আসেন গরাদের আড়াল থেকে। আবার ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই কারাগার যেন তাঁর জীবনের একটি অপরিহার্য পরিণতি হয়ে দেখা দেয়। সংগ্রাম-আন্দোলনের জন্য যে পুরুষের জন্ম, তাঁকে কি কোনো জেল-হাজতের মধ্যে পুরে রাখলেই নিঃশেষ করে ফেলা যায়? তিনি ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি পান এবং মুক্তি পেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবিদাওয়া সমর্থন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এ বছর কয়েকবার তিনি কারাবরণ করেন এবং ১ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আবার বন্দী হন। ভাষার দাবিতে তিনি কারাগারে অনশন করেন। দৃষ্টির আড়াল হয়ে কারাগারে অন্তরীণ হয়ে থাকেন প্রায় দুই বছর। বাঙালির এই নেতা মাঝে মাঝে এমনই হারিয়ে গেছেন সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু বাঙালি নেতৃত্ব কখনো তাঁকে হারিয়ে ফেলেনি একেবারে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কারাগার থেকে।
মুজিব ব্যস্ত হয়ে পড়েন যুক্তফ্রন্ট গঠনে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬০-এর দশকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৬-তে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে উজ্জীবিত করে তোলার একটি বড় মাপের পদক্ষেপ। যার ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে এক নম্বর আসামি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছিল শাসকগোষ্ঠীর পাঁয়তারায়। কুচক্রীদের মাথায় তখন থেকেই শেখ মুজিবকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র ছিল। অপরদিকে জনগণের আন্দোলন হচ্ছিল বেগবান। সেদিনের জনজোয়ারের ফলে শেখ মুজিবকে আটকে রাখা যায়নি।
Cyril Dunn-এর ভাষায়, ‘Released again, he dedicated himself more vehemently than ever to the liberation of Bengal. …On these occasions he was always immensely cheerful and was plainly supported by the belief that the mass of the Bengalis were behind him.’ [“How Mujib Turned into Bengal’s Hero,” The Observer, 28 March 1971, London.] মুজিবকে আমরা হারিয়েছি তখন কিছুটা সময়ের জন্য। পেয়েছিও। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুথানে ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফিরে পাওয়া যেন এক নতুন মুজিবকে ফিরে পাওয়া। ৬ দফা তথা ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের ফলে মুজিব কারা-অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলেন; বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হলো তাঁকে। যখন বাংলার মাটির একান্ত গন্ধে ভরা; শিশুর মতো কোমল হৃদয়ের মানুষটি যখন তর্জনী নেড়ে ‘মুক্তিসংগ্রামে’র ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তখন তিনি অনেক কঠোর মনোবল আর জনগণের মুক্তির উন্মাদনায় অনেক বেশি কৌশলী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
বাঁচার জন্য যুদ্ধ, অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ। তখন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরই আমাদের চেতনার আগুনে সঞ্চিত শক্তি। প্রতিটি বাঙালিই যেন একেকটি যোদ্ধা। আর যাঁরা রণাঙ্গনে, তাঁরা তো প্রতি নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বঙ্গবন্ধুকে ভর করে আছেন। তখন আরেকবার আমরা হারিয়েছি এই বিরাট ব্যক্তিত্বকে। স্বাধীন মাটি, স্বাধীন জলবায়ু আর ভৌগোলিক রেখা ও স্বাধীন পতাকার জন্য নয়টি মাস অধিকার আদায়ের যুদ্ধ চলল। চলল ইতিহাসের সব উদাহরণ ছাড়িয়ে। তখন সবার একই প্রত্যাশা, শেখ মুজিবকে মুক্ত মানব হিসেবে দেশের মাটিতে ফিরে পাওয়া; পাকিস্তানের শাসকেরা তখন তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে, কনডেমড সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হয়েছে শেখ মুজিবের জন্য, কিন্তু বিশ্ববিবেক তখন সোচ্চার। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলনে সারা দুনিয়ায় তখন কী এক জাগরণ!
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ বিবিসিকে চিনেছিল আপন করে। যে খবর বিশ্বাস করা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলিকে নিশ্চিত করে বোঝা যায়, সেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবিসিতে লুকিয়ে লুকিয়ে কান রাখা–যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। সেই বিবিসির খবরের প্রতি কান পেতে প্রতীক্ষা করতে হয়েছে পুরো জাতিকে, স্বাধীনতা-উত্তরকালেও। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে নানা রকমের গুজব আর আশঙ্কার কথাকে মিথ্যে করে দিয়ে বিবিসি খবর দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু ফিরছেন।
বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে ফিরেছেন নিউ দিল্লি, তারপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান—এই তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জনস্রোতের ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করে পৌঁছাতে তাঁর সময়ই লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা যেন আকাশ বিদীর্ণ করে কোনো দেবদূতের ফিরে আসা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪—এই তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য ছিল বিরাট পরীক্ষার সময়। দেশের সব অবকাঠামোই ধ্বংসপ্রাপ্ত, পোড়া মাটির ওপর গড়ে উঠেছে মানুষের নতুন বসতি। ধীরে ধীরে মানুষ নতুন উদ্দীপনায় বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা ধীরে ধীরে বাস্তবতার নিরিখে সহনীয় হয়ে উঠছে। আর সেই সময়ে দেশি-বিদেশি রাজনীতি ও অর্থনীতির কূটচাল চলছে বাংলাদেশের ওপর। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি তিন বছর কিছুই দিতে পারব না, প্রত্যাশাপিয়াসী মানুষ তখন বুঝতে পেরেছিল যে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হবে। অভাব-অনটনের মধ্যে সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। দেশকে গড়ে তুলতে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা—সবাই তৎপর হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে অশান্তির সূত্রপাত হতে থাকে। দেশের মানুষ খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা করে, উপর্যুপরি বন্যায় ফসল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই খাদ্যঘাটতি এবং নিরন্ন মানুষের কষ্ট বঙ্গবন্ধুকে গভীর পীড়া দেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা চালু হয়। রুটি-খিচুড়ি রান্না করে ক্ষুধার্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় বেশ অনেক দিন।
দেশের মানুষের যুদ্ধজয়ের ফসল ঘরে তোলার যে প্রত্যাশা, তা বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ নিজস্ব ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। অধনতান্ত্রিক বিকাশের পথে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র চর্চার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে থাকে, কিন্তু অপরদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালি জাতির কণ্ঠরোধ করে নিস্তব্ধ করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। কুচক্রীরা জনমতের তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। দেশের তৎকালীন শাসকদের সমালোচনা করতে তাদের কোনো কুণ্ঠা নেই, সংকোচ নেই, লজ্জা নেই। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে রক্তবন্যায় যে জাতি সিক্ত হলো, সে জাতির জন্য নতুন পরীক্ষার সময় এলো। পরাজিত শত্রুর ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। কতিপয় উচ্চাভিলাষী উর্দি পরা লোক কাপুরুষের বেশে রাতের আধাঁরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা চালিয়ে জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল ক্ষণজন্মা এই পুরুষের। তাদের সহায়তা করল খোন্দকার মুশতাক গং। বিশাল-বিস্তৃত মানবিক উদারতার অখণ্ড উদাহরণ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সমাপ্তি টেনে দিল খুনিরা। বাঙালি জাতি যাঁকে পেয়ে হারালাম, আবার পেলাম তাঁকে, ১৯৭৫-এর আগস্টে যে মহামানবকে হারালাম, তাঁকে কি সত্যিকার অর্থে আমরা হারিয়েছি? পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি বাকহীন...স্তব্ধ হয়ে গেছে... চোখ দিয়ে তাদের অশ্রু গড়িয়েছে ... কিন্তু উচ্চারণে বিদীর্ণ হয়নি পরিবেশ। জাতি যেন গুমরে মরেছে এক নিঃশব্দ চিৎকারে।
কালের অমোঘ নিয়মে আমরা পেরিয়েছি প্রায় ৫০ বছর। ১৯৯৬-তে যখন দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হলো, তখন দেখা গেল টেলিভিশনের পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে তর্জনী উঁচিয়ে সেই ৭ মার্চের ভাষণ দিতে। জনতা জাগল নতুন জোয়ারে; যা নাকি টিভির পর্দায় নিষিদ্ধ ছিল গত ২১ বছর। বাঙালির হৃদয়ের গভীর উৎসমূল থেকে বেরিয়ে এলেন স্মরণের পথরেখা বেয়ে বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি তো বঙ্গবন্ধুকে তাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছে, তা কি বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে! যুগ যুগ যে জাতি নীরবে স্মরণের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে, বঙ্গোপসাগরের বালুকাবেলায় যে মানুষ নগ্ন পায়ে হেঁটে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জাগরূক রাখতে আজীবন পণ করেছে, আজ তো সেই জাতির নতুন শপথের দিন।
ভ্রান্তিবিলাসে কেটেছে এ জাতির অনেকটা সময়। আজ যারা তরুণ, নব প্রজন্মের, নব পথরেখায় যাদের যাত্রা, তারা আত্ম-উন্মোচন করছে উত্তরাধিকারের। তারা অনেক দিন দেখেনি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার-টিভিতে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে। ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অস্তিত্বে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একটি উজ্জ্বলতম নাম, তা এই প্রজন্মকে জানতে দেওয়া হয়নি। সত্যকে চেপে রাখা হয়েছে গভীরভাবে। যারা এই ষড়যন্ত্র করেই ক্ষান্ত হয়নি, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; নতুন প্রজন্মকে বিপথে চলতে শিখিয়েছে তাদের মিথ্যাচারের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে শাস্তি দেওয়া হবে না?
শুধু বাঙালি নয়, শোষিত-বঞ্চিত জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক বিশ্বনেতা হয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে ফিরে আসেন। তাঁর চেতনা বাঙালির জীবন পাঁচালীর প্রতিটি গর্বের অফুরন্ত শক্তির আধার হোক। আত্মজিজ্ঞাসায় নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হোক। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় পথছায়ায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রচিত হোক। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির চেতনায় উজ্জ্বল হয়ে, প্রজ্বলিত হয়ে, চির অম্লান হয়ে ফিরে ফিরে আসুক নিরন্তর সময়ের ধারায়।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবের স্মৃতি নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতি রোমন্থনের পালা।
১৫ আগস্ট ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবের স্মৃতি নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতি রোমন্থনের পালা।
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবের স্মৃতি নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতি রোমন্থনের পালা।
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব, সূর্যস্তম্ভের মতো দৃঢ় একজন মহানুভব মানুষ। যাঁকে নিয়ে আজকে বাংলার মানুষের অফুরান গর্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই মহামানবের স্মৃতি নিয়ে আজ ঘরে ঘরে স্মৃতি রোমন্থনের পালা।
১৫ আগস্ট ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫