Ajker Patrika

আনারসের রাজ্যে পেঁপের বিপ্লব

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল 
মধুপুরের মির্জাবাড়ী এলাকায় ছয় বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন কৃষক হাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
মধুপুরের মির্জাবাড়ী এলাকায় ছয় বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন কৃষক হাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা ‘আনারসের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। তবে এবার সেখানে পেঁপে চাষে বিপ্লব ঘটেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে আনারসের দাম পড়ে গিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার অনেকেই আনারসের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে পেঁপে চাষ করেছেন। কেউ আবার লিজ নিয়ে শুধু পেঁপের বাগান করেছেন। উন্নত জাতের চারা রোপণ করায় প্রতিটি গাছ থেকেই চার-পাঁচ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

মধুপুরের গাছাবাড়ী, বেরীবাইদ, মির্জাবাড়ী, ভাইঘাট, ইদিলপুর, টেলকি, বেরিবাই, গারো বাজার, দোখলা, আলোকদিয়া, লাউফুলা, অরণখোলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের মধ্যে পেঁপে চাষের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মধুপুরের পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো আনারস। এই আনারসের দাম মাঝেমধ্যেই ব্যাপকভাবে ওঠানামা করায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা আনারসের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে পেঁপে, আদা, হলুদ, কলা, লেবুসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করতে শুরু করেছেন, যাতে করে ক্ষতির শঙ্কা কম থাকে। এর মধ্যে পেঁপে চাষের প্রতি আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে নতুন অধিকাংশ আনারসের খেতেই পেঁপের চারা শোভা পাচ্ছে। অনেকেই আবার বিঘার পর বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুধু পেঁপের আবাদ করেছেন।

অরণখোলা ইউনিয়নের গাছাবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল হক ৩৩ বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ করছেন। তিনি উচ্চফলনশীল জাতের পেঁপে আবাদ করে ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন। পেঁপে চাষে ইতিমধ্যে তাঁর ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। তিনি বর্তমানে পেঁপে বাজারজাত করতে শুরু করেছেন।

আব্দুল হক জানান, মৌসুমের শুরুতেই কাঁচা পেঁপে ১ কোটি ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখনো গাছে গাছে প্রচুর পেঁপে ঝুলে রয়েছে। আগস্টের পরে পুনরায় নতুন করে পেঁপে আসতে শুরু করবে। ওই সময় পেঁপেগাছের পেছনে খুবই অল্প পরিমাণ ব্যয় হবে। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ার আশা করেন তিনি।

চলতি মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলতি মৌসুমে মধুপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের শাহজাহান বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। টপলেডি জাতের পেঁপের ফলন ভালো হয়েছে। পেঁপে বিক্রিতেও কোনো সমস্যা হয় না। দেশব্যাপী এর চাহিদা থাকায় পাইকারেরা খেতে এসেই ট্রাক বোঝাই করে পেঁপে নিয়ে যান। কোনো প্রকার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না।

মধুপুরের হাফিজুর রহমান ছয় বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ করতে গিয়ে ব্যয় করেছেন ১০ লক্ষাধিক টাকা। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে তিনি অন্তত ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন।

মধুপুরের গাছাবাড়ী এলাকার আব্দুল হক এবার ৩৩ বিঘা জমিতে সাথি ফসল আবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মধুপুরের গাছাবাড়ী এলাকার আব্দুল হক এবার ৩৩ বিঘা জমিতে সাথি ফসল আবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, ‘মধুপুরের মাটি ও আবহাওয়া সব ফসলের জন্যই উপযোগী। মধুপুরে আনারসের পাশাপাশি অর্থকরী ফসলের মধ্যে যুক্ত হয়েছে পেঁপে, কলা, পেয়ারা, ড্রাগনসহ বেশ কয়েকটি ফসল। এর মধ্যে ঝুঁকি কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় পেঁপের প্রতি কৃষকেরা ঝুঁকেছেন বেশি। তাঁরা উন্নত জাতের টপ লেডি, রেড লেডি, সুইট লেডি আবাদ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে কৃষকেরা অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত