Ajker Patrika

টাঙ্গাইলে সুরক্ষার অভাবে ছড়াচ্ছে এইডস

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে সুরক্ষার অভাবে ছড়াচ্ছে এইডস

২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে এইচআইভি/এইডসমুক্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই টাঙ্গাইলে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে এই ঘাতক ব্যাধি। ইতিমধ্যে জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) চারজনসহ পাঁচজনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এইডস প্রতিরোধ, প্রতিকার ও রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা না থাকা এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারের কারণে রোগটি বিস্তার ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র বেবিস্ট্যান্ড এলাকার কান্দারপাড়ায় রয়েছে ২০০ বছরের পুরোনো যৌনপল্লি। ৩০২ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ৫৯টি বাড়িতে রয়েছে ছয় শতাধিক যৌনকর্মী। এদিকে আবাসিক হোটেল, বাসাবাড়ি ও ভাসমান সহস্রাধিক যৌনকর্মীর পাশাপাশি রয়েছে ১ হাজার ২০০ জন হিজড়া। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার যৌনকর্মীর সঙ্গে কয়েক হাজার পুরুষ অবাধ মেলামেশা করে থাকেন। তাঁদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ায় নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যৌনকর্মী বলেন, ‘আমরা খদ্দেরের কাছে ভোগ্যপণ্য হিসেবে গণ্য হই। তাঁদের ইচ্ছামতো মনোতৃপ্তি দিতে হয় আমাদের। আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটাই রাখতে পারি, এর চেয়ে বেশি কিছু না। ফলে আমাদের জীবন সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি। আর আমরা আক্রান্ত হলে খদ্দেরদের মধ্যেও রোগ ছড়িয়ে পড়াটা স্বাভাবিক।’

এ দিকে, টাঙ্গাইলে যৌনকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই। এমনকি ঘাতক ব্যাধি এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও নেই। নেই রোগ শনাক্তের ব্যবস্থাও।

 টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবজেল হক বলেন, ‘এইডস রোগীর সংখ্যা শনাক্তের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ করে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের কার্যক্রম এইড দিবস পালনে সীমাবদ্ধ। তবে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অধীনে ড্রপ ইন সেন্টার ও লাইট হাউস এবং নারীমুক্তি সংঘ যৌনকর্মীদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে চিকিৎসাসেবা, অ্যাডভোকেসি সভা এবং নিরাপদ যৌনাচারের উপকরণ বিতরণ করে থাকে। নারীমুক্তি সংঘ সরাসরি পতিতাপল্লিতে কাজ করে। এ ছাড়া লাইট হাউস আবাসিক হোটেল, বাসাবাড়ি ও ভাসমান যৌনকর্মী এবং আহছানিয়া মিশনের ড্রপ ইন সেন্টার হিজড়াদের নিয়ে কাজ করে।

লাইট হাউসের সমন্বয়ক রাবিদ খান জানান, টাঙ্গাইলের আবাসিক হোটেল, বাসাবাড়ি ও ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে আবাসিক হোটেলগুলোতে চার শতাধিক, বাসাবাড়িতে প্রায় ৩০০ আর ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। লাইট হাউসের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেসি সভা ও বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়ে থাকে।

আহছানিয়া মিশনের ড্রপ ইন সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আবু হানিফ জানান, টাঙ্গাইলে ১ হাজার ২০০ জন হিজড়া রয়েছেন। তাঁদের জন্য চিকিৎসাসেবা, কাউন্সেলিং ও উপকরণ বিতরণ করা হয় ড্রপ ইন সেন্টার থেকে। আহছানিয়া মিশনের ড্রপ ইন সেন্টার থেকে গত আগস্ট মাসে যৌনকর্মীদের মধ্যে ২৬ হাজার ৪৭৬টি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। ৯০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। ১২২ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এসব পরীক্ষায় কতজনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে, সেই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন আবু হানিফ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২০০৯ সালে টাঙ্গাইলের যৌনপল্লিতে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এ ছাড়া কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইলে বর্তমানে চারজন হিজড়া এইডস রোগী রয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগীর এইডস ধরা পড়ে। ঘাটাইলের ওই রোগী স্ত্রীর মাধ্যমে এইডসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। পরে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কোনো চিকিৎসাতেই তাঁর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তাঁর এইচআইভি শনাক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এইচআইভি/এইডস রোগ নিরূপণের ব্যবস্থা নেই। তবে শিগগিরই এইডস রোগী শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এইড রোগের কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। তাই সচেতনতাই হলো এইডস থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম উপায়। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সহজ। যাঁরা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন, তাঁদের অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এইডস একবার হলে আর সারে না, তাই আক্রান্তের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাটা বাড়ানোর জন্য এন্টিরেক প্রো ভাইরাল থেরাপি দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে রোগীকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভুয়া সনদে প্রধান শিক্ষক, এবার সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নথি পাঠানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া অভিজ্ঞতা ও জাল সনদে একাধিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবার স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষা বোর্ডে নথি পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একটি সভার রেজল্যুশনে তিনি এই জালিয়াতি করেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে জমা হওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে ১৯ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার এই নির্দেশনার বিষয়টি জানা যায়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (উন্নয়ন) মো. রিদুয়ানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কর্তৃক গত বছরের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সভার কার্যবিবরণীর প্রথম ও শেষ পাতা ঠিক রেখে দ্বিতীয় পাতায় আলোচ্যসূচি ৩-এ ‘এমপিওভুক্ত কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও শিটে নাম, বয়স, জন্মতারিখ, ব্যাংক হিসাব নম্বর, পদবি ও বিষয় সংশোধন প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত’ শিরোনামে ভুয়া কার্যবিবরণী তৈরি করা হয়।

এই ভুয়া কার্যবিবরণীতে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (হিসাব ও নেজারত) মোহাম্মদ শাহজাহানের স্বাক্ষর জাল করা হয়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই জাল কার্যবিবরণী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলে পাঠানো হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম নিজেই বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে দোষ স্বীকার করেছেন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে।

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার অনলাইনে ‘ভুয়া অভিজ্ঞতা ও জাল সনদে একাধিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক, শাস্তির সুপারিশ বোর্ডের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ড থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এখনো চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাঁদের দাবি, এই ধরনের মুখোশধারী অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওমানের সড়কে ঝরে গেল বাংলাদেশি যুবকের জীবন

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
নিহত শেখ মো. কামরুল। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শেখ মো. কামরুল। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার শেখ মো. কামরুল (৩৬) ওমানের রাস্তায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ১৫ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে মার্কেটে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শেখ মো. কামরুল উপজেলার মাধবপুর গ্রামের শেখ বাড়ির মৃত কামাল হোসেনের ছেলে। তিনি ২৫ বছর ধরে ওমানে বসবাস করছিলেন এবং সিলাল মার্কেটে ব্যবসা করতেন।

কামরুলের চাচাতো ভাই শেখ মো. সজিব জানান, কোরবানির ঈদ শেষে কামরুলসহ পাঁচজন একসঙ্গে ছুটি কাটিয়ে ১০ অক্টোবর ওমানে ফিরে যান। ফেরার মাত্র ছয় দিন পরই ঘটে এই দুর্ঘটনা।

স্বজনদের ভাষ্যমতে, ১৫ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে সিলাল মার্কেটে যাওয়ার পথে একজন তানজানিয়ান চালকের প্রস্তাবে কামরুল একটি বাসে ওঠেন। নতুন সিলাল মার্কেটের গেটের সামনে পৌঁছালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি মাটি কাটার গাড়ির (জেসিবি) সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান কামরুল। বর্তমানে তাঁর মরদেহ রুস্তাক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার রাতে কামরুলের মরদেহ দেশে পৌঁছানোর কথা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর তাঁর নিজ এলাকা মাধবপুরে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।

তাঁর দুই শিশুপুত্র রয়েছে; একজনের বয়স চার বছর এবং অন্যজনের মাত্র পাঁচ মাস। কামরুল ১২ বছর বয়সে পরিবারের দায়িত্ব নিতে প্রবাসে পাড়ি জমান। তাঁর অকালমৃত্যুতে পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উল্টো পথে বাস, চাপা পড়ে প্রাণ গেল ইজিবাইকচালকের

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরের তারাগঞ্জে উল্টো পথে আসা বাসে দুর্ঘটনা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরের তারাগঞ্জে উল্টো পথে আসা বাসে দুর্ঘটনা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জে উল্টো পথে আসা একটি বাসের চাপায় মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক ইজিবাইকচালক নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের ইকরচালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোতালেব নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এই ঘটনায় গুরুতর আহত একজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী ‘ভাই ভাই মুরাদ ক্লাসিক’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ইকরচালী বাসস্ট্যান্ডে এসে হঠাৎ উল্টো পথে ঢুকে পড়ে। এ সময় মহাসড়কের বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকটিকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশে থাকা দোকানে গিয়ে সামনে থাকা পিলারে আটকে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকচালক মোতালেব হোসেন মারা যান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসটি বাঁ দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও ডান দিকে সড়কের ধারে রাখা পিলারে আটকর আছে। উৎসুক লোকজন ও স্কুলশিক্ষার্থীরা বাসটি ঘিরে রেখেছে। এতে সড়কের একাংশ সংকুচিত হওয়ায় আবারও দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে কোনো পুলিশ দেখা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ভাতের দোকানদার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার দোকানের সামনেই ঘটনা। সকালে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি বাসটা বাঁ থেকে ডান দিকের লেনে হাইস্পিডে ঢুকে যায়। এ সময় ডান দিক থেকে আসা অটোগাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়।’

পাশের আরেক দোকানের মালিক জিয়াউর প্রামাণিক বলেন, ‘আজ নয়; প্রায় গাড়ি ফাঁকা দেখে উল্টো পাশ দিয়ে ওভারটেক করে এই স্ট্যান্ডে। এর আগেও এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অনেক মানুষের। কিন্তু এগুলো বন্ধ করার উপায় নাই।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইজিবাইকচালক মোতালেব হোসেনের লাশ উদ্ধার করি। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা ও মুরাদ পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে হবে। বাসচালক পালিয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তাল বুয়েট: ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রকে বহিষ্কারের পর মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২২
মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্ক্রিনশট
মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্ক্রিনশট

‎বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে ডিএমপির চকবাজার থানায় এই মামলা করে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকবাজার থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক।

আজ বুধবার সকালে আজকের পত্রিকাকে এসআই আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে এই মামলা করেছে। গতকাল রাতেই আটক থাকা ওই শিক্ষার্থীকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

‎এর আগে মঙ্গলবার রাতে বুয়েটের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এতে রাতেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত এই অবস্থা চলে। বিক্ষোভকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই অভিযুক্ত সেই শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত