Ajker Patrika

মধুপুরে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
মধুপুরে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

টাঙ্গাইলের মধুপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রপের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে ঘিরে আজ শুক্রবার বিবাদমান দুই গ্রুপ পৃথক সমাবেশ পালনকালে সন্ধ্যায় এ সংর্ঘষ হয়। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্যাস গান ছুড়ে। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি, অন্তত ২০টি মটরসাইকেল, কাজী ডিজিটাল হাসাপাতাল ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে  জানা গেছে। 

সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। মধুপুর থানার ৪০ জন ও অন্যান্য থানার ৪০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্যাসগান ছুড়তে হয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর মেয়র সমর্থিত মধুপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করে। এদিকে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান আবু থানা মোড়ের দক্ষিণে পৃথকভাবে কর্মসূচির আয়োজন করে। 

সভায় যোগদান করতে আসা পৌর মেয়র সমর্থিত ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা পথিমধ্যে হামলার শিকার হন। হামলায় আহতরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান (৩২), দামপাড়া গ্রামের মাসরাফি (২৩), ইদিলপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৬০), ভবানটেকী গ্রামের সোয়াইফ (২০), গাংগাইর গ্রামের মাসরুর আহমেদ প্রিতম (৩০), দানবাবান্দা গ্রামের ছেলে চাঁন মিয়া (৬৫)। আহতদের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর ইসমাইল হোসেনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। 

মধুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, আলোকদিয়া ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা যোগে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের সমাবেশে আসার সময় থানা মোড়ে কতিপয় ছাত্র ও শ্রমিক নেতা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার নিকটে থাকা ৬০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। 

হামলাকারীরা সকলেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবুর নেতৃত্বাধীন কর্মী বলে দাবি করেন তিনি। 

মধুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় আওয়ামী লীগের দুই গ্রপের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকাএই ঘটনার পর মধুপুর পৌরসভার মেয়র সমর্থিত নেতাকর্মীরা লাঠি সোঁঠা নিয়ে এগিয়ে থানা মোড়ের দিকে এগিয়ে আসে। এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সভা শেষে ছরোয়ার আলম খান আবুর নেতৃত্বাধীন মিছিলটি ফিরছিল। থানা মোড়ে মিছিল আসা মাত্রই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ গ্যাস গান ব্যবহার করে পুলিশ। 

এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়, তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি, অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল, কাজী ডিজিটাল হসপিটাল। দুই গ্রুপের ইট পাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের গ্যাস গান ব্যবহারে থানা মোড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পার্শ্ববর্তী বাসা বাড়ির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মধুপুরের দোকান পাট মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে পাশ্ববর্তী থানা থেকে অতিরিক্ত আরও ৪০ জন পুলিশ যুক্ত করা হয় বলে দাবি করেন মধুপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. মুরাদ হোসেন। সন্ধ্যা থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্তও বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। 

রাত ৮টায় মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ করা সম্পূর্ণ সংগঠনবিরোধী। তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার এখতিয়ার নেই। তারপরও মেয়রের নেতৃত্বে গাড়ী, মোটরসাইকেল, দোকান, হাসপাতাল ভাঙচুর নেতা কর্মীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটিয়েছে। সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীদের ওপরে হামলা করে অন্তত ৬০ জনকে তারা আহত করেন। তারা নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি, সহসভাপতি কাজী আব্দুল মালেকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 

অপরদিকে মধুপুর পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম করার অপরাধে কেন বহিষ্কার করা হবে না মর্মে শোকজ করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কার্যক্রম করার এখতিয়ার তিনি হারিয়েছেন। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের থানা মোড়ে হামলা করে আহত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত