Ajker Patrika

সিলেটে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের মারধরের অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ২৩: ৫৮
বিএনপি নেতার ফেসবুক আইডিতে মন্তব্য। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতার ফেসবুক আইডিতে মন্তব্য। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি নেতার ফেসবুক আইডিতে মন্তব্যের জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাসহ তিনজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে জকিগঞ্জ বাজারের এম এ হক চত্বরের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে আজ বুধবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের কেউই থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।

আহত ব্যক্তিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের সদস্য ও জকিগঞ্জের আনন্দপুর গ্রামের সাফওয়ান ইমরান ও ইমরান হোসেন এবং জকিগঞ্জ প্রতিনিধি গন্ধদত্ত গ্রামের ওয়াসিম আকরাম। তাঁদের মধ্যে ওয়াসিম সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে, অন্য দুজন সাফওয়ান ও ইমরান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) কিছুদিন আগে জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সহায়তার জন্য গিয়েছিলেন। সে সময় নৌকা নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সহায়তা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নৌকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে মন্তব্য করেছিলেন ওয়াসিম আকরাম। এ নিয়ে মামুনুর রশীদের অনুসারীদের সঙ্গে ফেসবুকে ওয়াসিমের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল।

ওয়াসিম আকরামের অভিযোগ, ফেসবুকে ওই কথা-কাটাকাটির জেরে বিএনপি নেতার অনুসারী রাশেদ আহমদসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে এবং সাফওয়ান ইমরান ও ইমরান হোসেনকে মারধর করেন।

বুধবার রাতে ওয়াসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা তিনজন জকিগঞ্জ বাজারে বনফুল নামের একটি দোকানে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে রনি আহমদ নামের ছাত্রদল কর্মী তাঁদের দোকান থেকে বের করে। দোকানের বাইরে ডেকে নিয়ে খেলার ৩০০ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানায়। এ সময় তিনি কোন খেলার টাকা পাওনা জানতে চাইলেই আকস্মিক রাশেদসহ ছয়-সাতজন মিলে মারধর করেন। হামলাকারীরা তাঁর এবং সাফওয়ানের পিঠে কয়েক জায়গায় সুচালো কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। এ ছাড়া তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। হামলাকারীরা মারধরের একপর্যায়ে ফেসবুকে বুঝেশুনে মন্তব্য করতে বলে গেছে।

ওয়াসিম আরও বলেন, ফেসবুকের মন্তব্যে তিনি কোনো বাজে কথা বলেননি। বলেছিলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০টি পরিবার রয়েছে। পারলে তারারে সাহায্যে করে যাও।’ এরপর প্রকাশ্যে তারা তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় তাঁকে এবং তাঁর সহকর্মীকে মারধর করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন এবং এ ব্যাপারে মামলা করবেন।

হামলায় আহত একজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হামলায় আহত একজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের সদস্য সাফওয়ান ইমরান বলেন, ‘চাকসু মামুন সাহেবের ফেসবুকে বন্যার সময় কমেন্ট করেছিল ওয়াসিম। এর জেরে গতকাল হামলা হয়। আমরা বনফুলে বসে ছিলাম। হঠাৎ রনি-রাশেদসহ বেশ কয়েকজন এসে ডেকে নিয়ে মারধর করে। মাথায়, পিঠে ও হাতে গুরুতর জখম হয়েছে আমাদের।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা রাশেদ আহমদ বলেন, ‘খেলার টাকা নিয়ে আমার ছোট ভাইদের সঙ্গে ওয়াসিমদের মারামারি হয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে উভয় পক্ষকে থামিয়ে দিই। ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিতেই নাম ব্যবহার করা হতে পারে। আর মামুন ভাইয়ের ফেসবুকের বিষয়ের ঘটনার কেউ মারামারিতে ছিল না।’

জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) বলেন, ‘আমার ফেসবুকে কমেন্ট করা নিয়ে মারামারি, এমন কিছু আমি জানি না। উপজেলা সভাপতি-সেক্রেটারি হয়তো বলতে পারবেন।’

জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‌‘ওয়াসিমকে মারধর করা হয়েছে শুনেছি। তবে কে বা কারা মারধর করেছে, জানি না। রাশেদ ছাত্রদল করে, রনিকে চিনি না।’

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক আখতার হোসেনও কিছুই জানেন না। এমনকি ওয়াসিম আকরাম, সাফওয়ান ইমরান ও ইমরান হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী কি না, সেটাও বলতে পারেননি।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, মারামারির খবর তিনিও পেয়েছেন। তবে কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত