Ajker Patrika

কোনো দলকে টার্গেট করে আমরা কথা বলি না: মিজানুর রহমান আজহারী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
Thumbnail image
সিলেটে মাহফিলে ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এক দল খেয়ে গিয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’—এই বক্তব্য নিজেদের গায়ে মেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই অনভিপ্রেত হয়েছে। কোনো দলকে টার্গেট করে বা কোনো দলের পক্ষে আমরা কখনো কথা বলি না। আমরা কোরআনের পক্ষে কথা বলি, ইসলামের পক্ষে কথা বলি।’

গতকাল শনিবার রাতে সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে আলোচনায় নিজেকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে মিজানুর রহমান আজহারী এসব কথা বলেন। আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন সিলেটের উদ্যোগে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

মাহফিলে সব দল-মতের লোকজনকে স্বাগত জানিয়ে ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘যারা আমাদের বিরোধিতা করে, ঘৃণা ছড়ায়; তাদের জন্যও আমাদের বুকভরা ভালোবাসা রয়েছে। কারণ, ভালোবাসা দিয়ে যা জয় করা যায়, কঠোরতা দিয়ে তা পারা যায় না। তো যারা বিরোধিতার জন্য আমাদের আলোচনা শোনেন, তাঁদেরও স্বাগত। যারা আমাদের আলোচনা আউট অব কনটেক্সটে নিয়ে এক জায়গার মাথায় আরেক জায়গার লেজ জুড়ে দেন, তাঁদেরও স্বাগত।’

আজহারী বলেন, ‘গত সপ্তাহে খুলনা বিভাগের প্রোগ্রাম ছিল যশোরের আদ্বদীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। তো যশোরের প্রোগ্রামের এক ভিডিওর পেছনে আমাদের কিছু দ্বীনি ভাই ছয় বছর আগের এক অডিও ব্যাকগ্রাউন্ডে জুড়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের প্রতিও আমাদের কোনো রাগ নেই, ক্ষোভ নেই। তাঁরা হয়তো দ্বীনি তাগাদা থেকেই এটা করেছেন। কিন্তু তাঁরা হয়তো বুঝতে পারেননি যে রিসেন্ট আলোচনার ভিডিওর পেছনে ছয় বছর আগের অডিও জুড়ে দেওয়া, এটাকে বাংলায় বলে প্রতারণা, ধোঁকাবাজি। বিশ্বনবী (স.) বলেছেন, “যে আমাদের ধোঁকা দেয়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” তো বিশ্বনবীর এই হাদিস তাঁরা মনে রাখেন না। এ জন্য বিশ্বনবীর প্রতি শুধু ভালোবাসা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না, যদি আপনি বিশ্বনবীর আদর্শ গ্রহণ না করেন।’

বিএনপি নেতাদের ইঙ্গিত করে মাওলানা আজহারী বলেন, ‘আমার গত সপ্তাহের যশোরের আলোচনার একটা লাইনকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ বন্ধু অনেক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। ওই কথাকে নিজেদের গায়ে টেনে, নিজেদের গায়ে মেখে তাঁরা ক্ষুব্ধও হয়েছেন। প্রিয় ভাইয়েরা, আমি বলেছিলাম, “এক দল খেয়ে গিয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে।” এখানে কি আমি কোনো দলের নাম বলেছি? বাংলাদেশে ৪৮টা প্রায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। কোনো দলের নাম আমি বলিনি। কথাটাকে আমি জেনারেল রেখেছি। দায়ীদের বৈশিষ্ট্যই এটা। দায়ীরা জেনারেল কথাই বলে, যার যে মেসেজ নেওয়ার, তারা সেখান থেকে নিয়ে নেয়। তো কোনো দল এটা নিয়ে কোনো কথা বলল না। আপনারা এটাকে নিজেদের গায়ে যে মাখালেন, এটা ঠিক হয়নি। এটা খুবই অনভিপ্রেত হয়েছে। কোনো দলকে টার্গেট করে বা কোনো দলের পক্ষে আমরা কখনো কথা বলি না। আমরা কোরআনের পক্ষে কথা বলি, ইসলামের পক্ষে কথা বলি।’

সিলেটে মাহফিলে ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিলেটে মাহফিলে ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কয়েক লাখ জনতার উপস্থিতিতে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে শেষ হয়েছে আঞ্জুমানের তিন দিনব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিল। শনিবার শেষ দিনে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসির শুনতে দুপুর থেকে এমসি মাঠমুখী শুরু হয় জনস্রোত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। বিকেলের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় এমসি কলেজ মাঠ। সন্ধ্যার পরপর জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে মাঠের বাইরে আশপাশের এলাকায়। এই মাঠে মাহফিলে এত লোক আগে দেখেনি কেউ। মাঠ ও মাঠের বাইরে আটটি প্রজেক্টর স্থাপন করা হয়।

মাহফিলের শেষ দিনের পৃথক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন সিলেটের সভাপতি প্রফেসর মাওলানা সৈয়দ একরামুল হক ও আল্লামা ইসহাক আল মাদানী।

ড. মিজানুর রহমান আজহারী ছাড়াও শেষ দিনে তাফসির পেশ করেন আল্লামা ইসহাক আল মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, মুফতি আমীর হামজা, শায়খ হাফিজ মাওলানা আবু সাঈদ, অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী, মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, শায়েখ আজমল মসরুর, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার, মাওলানা মাহবুবুর রহমান জালালাবাদী ও মাওলানা হাসানুল বান্না বিন শরিফ আব্দুল কাদির।

ড. আজহারী আরও বলেন, ‘চব্বিশের রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে আমাদের তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজ। এই তরুণদের হাতেই নিরাপদ আমাদের বাংলাদেশ, নিরাপদ লাল-সবুজের পতাকা। তরুণ প্রজন্মকে কোরআন-হাদিসের আলোয় আলোকিত করতে হবে। তাহলে দেশ-জাতি সমাজ উপকৃত হবে। আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন সিলেট অঞ্চলের জন্য একটি নেয়ামত। এই সংগঠনটির সঙ্গে শহীদ আল্লামা সাঈদী (র.)-এর স্মৃতি জড়িত রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ৩৫ বছর ধরে তিনি এখানে তাফসির করেছেন। সংগঠনটি শুধু দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে না, সামাজিক অঙ্গনে বিশাল ভূমিকা রেখে আসছে। মাহফিলে তিনি আল্লামা ফুলতলী (র.), আল্লামা গহরপুরী (র.), শায়খে কৌড়িয়া (র.)-সহ সিলেটের প্রবীণ আলেমদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ইউকে অ্যান্ড ইউরোপের সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল মতিন চৌধুরী, লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ ও টিভি আলোচক ড. ফয়জুল হক।

সকালে মহিলা মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান ও হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান। আলোচনা শেষে নারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শায়েখ শাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ। সঞ্চালনা করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

মাহফিলের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়েখ শাহ মো. ওয়ালী উল্লাহ, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী, আল্লামা সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী, শায়েখ সাঈদ বিন নুরুজ্জামান আল মাদানী, হাফিজ মিফতাহুদ্দীন, কারি মাওলানা মতিউর রহমান ও মাওলানা সাদিক সিকান্দর।

প্রথম দিন বৃহস্পতিবার তাফসির পেশ করেন মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমীন, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা কমর উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা আব্দুল হাই জিহাদী, শায়েখ আব্দুল হক, ড. মাওলানা এ এইচ এম সোলাইমান ও মাওলানা মাশুক আহমদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত