Ajker Patrika

রংপুরের মিঠাপুকুরের ইউপি

ধর্ষণ মামলায় পলাতক চেয়ারম্যান, ভোগান্তি

  • ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে পরিষদে বসেন না চেয়ারম্যান।
  • সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
  • চেয়ারম্যানের দাবি, বিয়ের পর তালাক দিয়েছেন।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ০৭: ২৩
আবুল হাসনাত রতন। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হাসনাত রতন। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপির মহিলা সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন ওই নারী। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে পরিষদে বসেন না চেয়ারম্যান। এতে করে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত রতন (৪৮)। একই ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, রতন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাজে ইউনিয়নের বাইরে গেলে ওই নারী সদস্যকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতেন। এতে করে তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ২৮ মার্চ সরকারি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনার কথা বলে রংপুর নগরীর আদর্শপাড়ার ভাড়া বাসায় ওই মহিলা সদস্যকে ডেকে নেন। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তাঁকে শারীরিক মেলামেশার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই ইউপি সদস্য এতে রাজি না হলে তাঁকে জোর করে ধর্ষণ করেন চেয়ারম্যান।

ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘রমজান মাস, ঈদের কয়েক দিন বাকি। চেয়ারম্যান আমাকে রংপুর শহরে আদর্শপাড়ার বাসায় সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মডার্ন মোড় থেকে চেয়ারম্যানের পিএস আল আমিন আমাকে ওই বাসায় নিয়ে যান। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে আল আমিন চলে যান। চেয়ারম্যান রতন একা পেয়ে আমাকে ধর্ষণ করেন। এরপর চেয়ারম্যান ওয়াশরুমে গেলে আমি কয়েকজন ইউপি সদস্যকে ঘটনা জানাই। কিন্তু চেয়ারম্যান আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও আমি বিচার না পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে গত বুধবার বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। পাশের ইউপি সচিবের কক্ষেও তালা। সেবাপ্রার্থীরা চেয়ারম্যানের অপেক্ষায় পরিষদে ঘুরছিলেন। পরিষদ চত্বরে খন্দকারপুরের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে পরিষদে আসেন না। এতে আমাদের সেবা নিতে খুব ঝামেলা হচ্ছে। একটা স্বাক্ষরের জন্য হন্য হয়ে ঘুরতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান ঈদের আগে থেকেই পরিষদে আসেন না। এতে করে পরিষদে নানা ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। নানা প্রয়োজনে তাঁর বাড়ি, গোপন স্থানে যেতে হচ্ছে। তিনি আমাদের এক মহিলা সদস্যকে ধর্ষণ করেছেন। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তাঁকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে রতন বলেন, ‘গত বছরের ৭ আগস্ট তাঁকে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে করে রংপুর শহরে ভাড়া বাসায় রাখি। বিয়ের পর ধর্ষণ হয় না। আর্থিক সংকটে থাকায় বিবাহ নিবন্ধন করতে পারিনি। ২৮ রমজানের পর থেকে তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ৬ এপ্রিল তাকে একতরফা ডিভোর্স দিয়েছি। এ জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে ৩ মে আমার নামে ধর্ষণ মামলা দিয়েছে। ওই নারী আগেও এমন করে অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে।’

নিকাহ নিবন্ধন ছাড়াই কীভাবে ডিভোর্স দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন মুখ্য বিষয় নয়। এটা ছাড়াও তালাক দেওয়া যায়। আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে তালাক দিয়েছি।’ পরিষদে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রতন বলেন, ‘ঝামেলার পর থেকে মাঝেমধ্যে পরিষদে যাই। পরিষদে না গেলেও বাজারে অফিস আছে, সেখানে সব কার্যক্রম চলে। মামলায় জামিন পেলে পরিষদে নিয়মিত বসব।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত