Ajker Patrika

পাশেই পলিথিনে মোড়ানো আটা, অন্ধকার রাস্তায় পড়ে ছিল দিনমজুরের লাশ

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি 
রাস্তায় পড়ে আছে আখেরুল ইসলামের লাশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাস্তায় পড়ে আছে আখেরুল ইসলামের লাশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাত পৌনে ১১টা। আঁধার রাস্তা আলোকিত করছিল শুধু একটি মোবাইলের টর্চলাইট। পাশে পলিথিনে মোড়ানো আটা, উল্টে থাকা স্যান্ডেল আর রক্তমাখা নীরবতা—সবকিছুই যেন সাক্ষ্য দিচ্ছিল একটি আকস্মিক, নির্মম ঘটনার। প্রতিবন্ধী মেয়ের ওষুধ ও পরিবারের সকালের নাশতার জন্য আটা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন দিনমজুর আখেরুল ইসলাম (৩৫)। কিন্তু সেই পথ আর তাঁর জীবনে ফেরা হলো না।

জানা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভুটকা মধ্যপাড়ার ডুব্বিরপাড় এলাকায় গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, নিহতের মাথায় গভীর জখম রয়েছে। ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিন সন্তানের জনক আখেরুল কিছুদিন আগে কেরানীগঞ্জের একটি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, বাজার থেকে আটা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের পাশে ছিল আটা, উল্টে থাকা স্যান্ডেল এবং কিছুটা দূরে জমির ধারে পড়ে ছিল মোবাইল ফোনটি—টর্চলাইট তখনো জ্বলছিল। তাঁদের ধারণা, আচমকা আঘাতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।

ছেলের মৃত্যুতে বাবার আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছেলের মৃত্যুতে বাবার আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিহতের ছোট ভাই আখতারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় ওর ফোনে কয়েকটা কল আসে। কারও সঙ্গে তর্কও হয়। সেই কলের সূত্র ধরেই ওকে ডেকে নিয়ে পরে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।’ ঘটনাস্থলে ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা শামসুদ্দিন। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘কে আমার ছেলেটারে মারল? তিনটা নাতি, একটা আবার প্রতিবন্ধী— এদের নিয়ে আমার কী হবে?’

স্বামীকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েন স্ত্রী খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ওষুধ আনতে গেছিল। আটা আনবে বলছিল। আমার মানুষটা আর ঘরে ফিরল না। তিনটা ছাওয়ারে নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচম?’ বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে মেয়ের ওষুধ নিতে এসেছিল। দোকানে ছিল না, তাই বললাম গঙ্গাচড়া থেকে নিতে হবে। হাতে আটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। একটু পরেই শুনি ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

এদিকে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুশান্ত চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর বলেন, ‘এটি হত্যা নাকি সড়ক দুর্ঘটনা—এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...