Ajker Patrika

লাইনে দাঁড়িয়ে সাহরি, তবুও মেলেনি ট্রেনের টিকিট

সৈয়দপুর (নীলফামারী) 
লাইনে দাঁড়িয়ে সাহরি, তবুও মেলেনি ট্রেনের টিকিট

‘মধ্যরাতে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। খাবার সঙ্গে এনেছিলাম। সাহরি লাইনে দাঁড়িয়েই করেছি। কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে এভাবেই কেটেছে সারা রাত। কিন্তু সকাল ৮টায় টিকিট দেওয়া শুরু করার মাত্র ঘণ্টাখানেক পরই কাউন্টার থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো—সব টিকিট শেষ! তাই শূন্য হাতেই ফিরে যেতে হচ্ছে।’ নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মো. দেলোয়ার হোসেন (৪২)। 

দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি এখানে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। গত দুই বছর করোনার কারণে গ্রামের বাড়ি যশোরে গিয়ে ঈদ করতে পারেননি। তাই এবার ১ মে বাড়ি যাবেন। ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রায় ৭ ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানতে পারেন টিকিট শেষ হয়ে গেছে! 

দেলোয়ার হোসেন একা নন। তাঁর মতো আরও শতাধিক মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। 

তবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যার বিপরীতে এখানে চাহিদা অনেক বেশি। তাই অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছেন না। 

জানা যায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাসহ অর্ধশতাধিক ব্যাংক ও পাঁচ শতাধিক শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঢাকা, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চাকরি করেন। প্রতি ঈদে তাঁরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যান। রেলপথে যাওয়াটাই তাঁদের জন্য সুবিধাজনক। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর থেকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী রুটে পাঁচটি আন্তনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের মধ্যে সৈয়দপুরের জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে ঢাকাগামী নীলসাগর আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার কোচ ৫৮, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ ১০ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাথ (শয়নকক্ষে) ২ টি। 

খুলনাগামী আন্তনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার কোচ ৭৫ টি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাথ ৪টি ও রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ ৪টি এবং শোভন চেয়ার কোচে ১৫ টি। এ ছাড়া রাজশাহীগামী আন্তনগর তিতুমীর ও বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন ৫০, শোভন চেয়ার ১৫ ও প্রথম শ্রেণির কোচে ৬টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি। যাঁরা টিকিট হাতে পেয়েছেন তাঁরা উৎফুল্ল। আর যারা পাননি হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবিদ হোসেন নামে একজন বলেন, ‘আমি রেলওয়ে কারখানায় চাকরি করি। ঈদে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল যাব। টিকিটের জন্য তারাবির নামাজ আদায় করে এখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তবুও সামনে প্রায় ৫০ জনের মতো ছিল। টিকিট পাব কি না, তা নিয়ে অনিশ্চিত ছিলাম। টিকিট পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।’ 

খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট নিতে আসা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাহরি খেয়েই স্টেশনে এসেছি। এসে দেখি বিশাল লাইন। তবুও অনেক আশা নিয়ে কয়েক ঘণ্টা লাইনে ছিলাম। এখন বলা হচ্ছে টিকিট শেষ। এবার ট্রেনে বাড়ি যেতে পারব কি না, সন্দেহ আছে।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্টেশনমাস্টার এসএম শওকত আলী বলেন, ‘একটি টিকিটের বিপরীতে ৫০-৬০ জনের চাহিদা। স্থানীয়রা ছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, খানসামাসহ পাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লোকজন এখানে টিকিট করতে আসেন। তাই লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন না। তাঁদের মধ্যে যারা আগে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরাই টিকিট পাচ্ছেন।’ 

কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ বিষয়ে স্টেশনমাস্টার বলেন, ‘টিকিট কাটার সময় জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে, যাতে টিকিটটা বাইরে বিক্রি বা কোনো কালোবাজারির হাতে না যায়। এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট। টিকিট অন্য কোথাও পাওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

সখীপুরে সন্তানদের সামনেই ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী পলাতক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত