Ajker Patrika

বদরগঞ্জে ভিডব্লিউবি: বিনা মূল্যের চাল পাচ্ছে ধনীরা

  • কয়েক বিঘা জমির মালিকের বাড়িতেও আছে কার্ডধারী
  • কার্ড যাঁর নামে, তিনি চাল পান না, কে পান, তা-ও জানা নেই
  • নাম অন্তর্ভুক্ত করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে
আশরাফুল আলম আপন বদরগঞ্জ (রংপুর)
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
রংপুরের বদরগঞ্জের মৌলভীপাড়া গ্রামে বিডব্লিউবি কার্ডধারী এক নারীর বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরের বদরগঞ্জের মৌলভীপাড়া গ্রামে বিডব্লিউবি কার্ডধারী এক নারীর বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ভিডব্লিউবির সুবিধাভোগীদের তালিকায় ব্যাপক অসংগতি পাওয়া গেছে। কার্ডধারীদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, যাঁরা ধনী বা সচ্ছল পরিবারের। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাঁর নামে কার্ড তিনি নিজেই জানেন না। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া নামে কার্ড বানিয়ে চাল নয়ছয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে তালিকায় নাম তোলার জন্য অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৫৫ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি। দুবছরের জন্য এ কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা প্রতিমাসে বিনা মূল্যে পাবেন ৩০ কেজি করে চাল। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে।

তবে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির এ তালিকা হাতে নিয়ে আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদক সম্প্রতি তিন দিন সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। এতে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন ও কালুপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, যাঁরা পাওয়ার যোগ্য তাঁরা কেউই চাল পাননি। যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁদের পাওয়ার কথা নয়।

উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী হাজীপাড়া গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী খালেদা আক্তারের নাম ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। সরেজমিনে দেখা যায়, সম্পদ ও নগদ অর্থের দিক দিয়ে ওই গ্রামের সর্বোচ্চ ধনী তাঁরাই। তাঁদের রয়েছে বিশাল রাজকীয় দালান-বাড়ি ও মোটরসাইকেল। খালেদা ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনায় অবাক এলাকার মানুষও। তাঁর স্বামী আজিজুল হক বলেন, ‘আমাদের আবাদি জমি আছে ৫-৬ বিঘা। আমার স্ত্রী একজনের সাহায্য নিয়ে কার্ডটি করেছেন।’ তবে তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

কাঁচাবাড়ী শাহপাড়া গ্রামের কার্ডধারী আয়োবি খাতুনের ব্যাপারে জানা গেছে, তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান একজন আম ব্যবসায়ী। তাঁর ১০ বিঘার ওপরে আবাদি জমি রয়েছে। বাবার ভাগ পাবেন আরও ৭ বিঘা আবাদি জমির। বাড়ি দালানের, আছে মোটরসাইকেলও। কার্ড পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা মুখ খুলতে রাজি হননি। কাঁচাবাড়ী মৌলভীপাড়া গ্রামের রাহাদ হোসেনের বাড়ি আলিশান। আছে মোটরসাইকেল এবং আবাদি জমি। তাঁর স্ত্রী হাসি আক্তার ভিডব্লিউবির কার্ডধারী। তবে রাহাদ বলেন, ‘আমার বাবা-মা গরিব। মায়ের বয়স বেশি হওয়ায় আমার স্ত্রীর নামে কার্ডটি করে নিয়েছি।’

কালুপাড়া ইউনিয়নে দেখা গেল, ভিডব্লিউবির তালিকার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কার্ডধারীর নাম, অভিভাবক হিসেবে বাবা অথবা স্বামীর নামের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে, তাতে আবার গ্রামের মিল নেই।

কালুপাড়ার মাঝিপাড়া গ্রামের বরিতা রানী দাস নামটি ভিডব্লিউবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। অভিভাবক হিসেবে নাম রয়েছে ফ্যালানু দাস। তবে এলাকায় ফ্যালানু দাস নামের একজন ছিলেন, তিনি মারা গেছেন বহু বছর আগে। ফ্যালানু দাসের স্ত্রী শেফালী রানী দাবি করেন, এটা (বরিতা রানী দাস) তাঁর আরেক নাম। বিধবা ভাতার কার্ড থাকায় চেয়ারম্যান বরিতা রানী দাস নাম দিয়ে কার্ডটি করে দিয়েছেন।

উত্তরপাড়া গ্রামের শিমু আক্তার নামটি ভিডব্লিউবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। অভিভাবক হিসেবে নাম রয়েছে মোক্তার। ওই নামে জুলাই ও আগস্ট মাসের ৬০ কেজি চালও উত্তোলন করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে ওই গ্রামে শিমু আক্তার নামের কাউকে পাওয়া যায়নি।

কালুপাড়ার সরকারপাড়া গ্রামের সচ্ছল আব্দুর রহিমের মেয়ে রোকসানা খাতুনের নামে করা হয়েছে কার্ড। ওই নামে দুই মাসের চালও তোলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ থেকে পড়েন রোকসানা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আপনি এসব কী বলছেন! আমার অনেক আগে বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধায় জেলায়। আমার নামে এখানে কার্ড হবে কেন? হলেও সেই কার্ড গেছে কোথায়?’

কালুপাড়া ইউনিয়নে আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও ৫০-৫২ জনের নাম জানা গেছে। যাঁদের নাম তালিকায় আছে। কিন্তু তাঁরা চাল পাচ্ছেন না। চালগুলো নয়ছয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু লোহানীপাড়া ও কালুপাড়া ইউনিয়নেই নয় উপজেলার আরও ৮ ইউনিয়নেরও প্রায় একই অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মসূচিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা ৮-১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ কারণে অসচ্ছল পরিবারগুলো বঞ্চিত হয়েছে।

কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক বলেন, ‘কার্ড বিতরণ করেছেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। একজনের কার্ড অন্যজনের কাছে গিয়েছিল, সেটি পরে দেওয়া হয়েছে।’

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়ার্ড কমিটির তালিকাটি আমি উপজেলায় পাঠিয়েছি। যদি কোনো সচ্ছল নারীর নাম ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে আসে, তা এখনো উপজেলা প্রশাসন বাতিল করতে পারবে।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘বেশির ভাগ সচ্ছল নারী ভিডব্লিউবির আওতায় এসেছে, এটা সত্য। কার্ড বিতরণকালে বিষয়টি আমার চোখে ধরা পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি, তা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রায় ২৫০ কারখানার পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি: বিজিএমইএ সভাপতি

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন যেসব প্রশ্ন তুলল, সর্বশেষ যা জানা গেল

এখনো যথেষ্ট আগুন রয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রণে

শাহজালাল বিমানবন্দরে নাশকতার প্রমাণ পেলে ‘কঠোর ব্যবস্থা নেবে’ সরকার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত