শিপুল ইসলাম, রংপুর
ঘনিরামপুর গ্রামের ছোট টিনের ঘরটিতে সকাল থেকে কান্নার শব্দ থামছে না। চার শতক জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দুটো টিনের চাল—এই ছিল রূপলাল দাসের সব সহায় সম্বল। তাঁর একার উপার্জনে চলত বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ ছয় সদস্যের সংসার। গতকাল শনিবার পর্যন্ত এই ঘরে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন, বড় মেয়ে নূপুরের বিয়ের প্রস্তুতি, ছোট ছেলেমেয়ের পড়াশোনার আশা। কিন্তু গতকাল রাতের একটি ভুল সন্দেহে সবকিছু মাটিতে মিশে গেল।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন বড় মেয়ে নূপুর (১৮)। তাঁর চোখে পানি, ঠোঁটে ক্ষোভ, গলায় এখন বুকভাঙা আহাজারি—‘অ্যালা কায় মাও কয়া ডাকপে? হামরা যে এতিম হয়া গেইনো। হামাক নিঃস্ব বানাইল।’
বাবার লাশ শনাক্তের বর্ণনা দিয়ে দিয়ে নূপুর বলেন, ‘আজ (রোববার) আমার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা। এ জন্য প্রদীপ দাদা আমাদের বাড়িতে আসতে ছিলেন। রাস্তা না চেনায় বাবা দাদাকে কাজীরহাট থেকে আনতে যান। সেখান থেকে প্রদীপের ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে বটতলায় লোকজন আটক করে মারধর করেন। খবর পেয়ে রাতে বুড়িরহাট গিয়ে বাবা-দাদার রক্তাক্ত দেহ শনাক্ত করি।’
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, নূপুরের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্যই রূপলাল রওনা হয়েছিলেন ভাগনি জামাই প্রদীপ দাসকে আনতে। কিন্তু সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ‘ভ্যান চোর’ সন্দেহে আটকা পড়ে যান তাঁরা। বস্তায় পাওয়া কয়েক বোতল তরলের ঘ্রাণে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্দেহ আরও বাড়ে। আর তারপর শুরু হলো নির্মম মারধর—যা শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল দুজনের প্রাণ।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রূপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি, মাতম। দলে দলে প্রতিবেশীরা বাড়ির ভেতরে-বাইরে ভিড় করছেন।
মেঝেতে বসে আছেন ভারতী দাস। চোখ লাল, গলা ভাঙা, বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন দুই সন্তান—১০ বছরের রুপা আর ১৩ বছরের জয়। তাদের মুখে অবুঝ আতঙ্ক, কিন্তু বোঝার মতো বয়স হয়ে গেছে যে বাবা আর ফিরবেন না। ভারতী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, আবার জ্ঞান ফিরেই বলতে থাকেন, ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম? ভগবান এ কেমন অন্যায় মোর সঙ্গে হইল। ছোট ছাওয়াগুলাক কায় খাওয়াইবে, পড়াইবে? মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল? বেটিটার বিয়ার কী হইবে? মুই কার কাছোত বিচার চাইম?’
এক কোণে বসে আছেন রূপলালের বৃদ্ধা মা লালিচা দাস। ভিড়ের মধ্যে তাঁর স্পষ্ট বিলাপ—‘মোর ছেলেটার দোষ কী? ও তো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণও করে নাই। কারও ক্ষতি করে নাই। জুতা সেলাই করি হামার সংসার চালাইছে। ওক ডাংগে মারিল কেন? হামাক দ্যাখপার যে এখন কায়ও থাকিল না।’
কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ গড়িয়ে পড়লেন। পাশের নারীরা চিৎকার করে পানি আনলেন, মুখে-মাথায় ঢাললেন, কিছুক্ষণ পর তিনি ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। কিন্তু চোখ খুলেও বারবার বললেন, ‘যারা মোর ব্যাটাক মারছে, তার বিচার চাই।’ গ্রামের প্রবীণ জয়নাল আবেদীন বলেন, রূপলাল দীর্ঘদিন তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাই করতেন। তিনি কখনো কারও সঙ্গে খারাপ কথা বলেননি। এইভাবে মানুষ মারা—এটা অমানবিক।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। কুর্শা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তুহিনুর ইসলাম বললেন, ‘ওর মেয়ের বিয়ের কথা ছিল। তাকে মেরে ফেলায় এই পরিবার এখন পুরো অসহায়। আল্লাহই জানেন, তাদের সংসার কেমন চলবে।’ এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, নিহত রূপলালের নামে কোনো মামলা নেই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, গতকাল রূপলালের মেয়ে নূপুরের বিয়ের দিন ঠিক করতে মিঠাপুকুর থেকে প্রদীপ দাস রূপলালের বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে রাস্তা না চেনায় কাজীরহাট এলাকায় রূপলালকে ফোন করেন। রূপলাল কাজীরহাটে যান। সেখান থেকে রাতে ৯টায় সড়কের বটতলা এলাকায় ভ্যান চোর সন্দেহে আটক হয়ে তাঁরা মারধরের শিকার হন। প্রদীপের ভ্যানে থাকা চারটি বোতলের গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্দেহ বাড়ে। মারধরের একপর্যায়ে তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। গতকাল রাতেই রূপলালকে মৃত ঘোষণা করা হয়, ভোররাতে প্রদীপও মারা যান।
ঘনিরামপুর গ্রামের ছোট টিনের ঘরটিতে সকাল থেকে কান্নার শব্দ থামছে না। চার শতক জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দুটো টিনের চাল—এই ছিল রূপলাল দাসের সব সহায় সম্বল। তাঁর একার উপার্জনে চলত বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ ছয় সদস্যের সংসার। গতকাল শনিবার পর্যন্ত এই ঘরে ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন, বড় মেয়ে নূপুরের বিয়ের প্রস্তুতি, ছোট ছেলেমেয়ের পড়াশোনার আশা। কিন্তু গতকাল রাতের একটি ভুল সন্দেহে সবকিছু মাটিতে মিশে গেল।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন বড় মেয়ে নূপুর (১৮)। তাঁর চোখে পানি, ঠোঁটে ক্ষোভ, গলায় এখন বুকভাঙা আহাজারি—‘অ্যালা কায় মাও কয়া ডাকপে? হামরা যে এতিম হয়া গেইনো। হামাক নিঃস্ব বানাইল।’
বাবার লাশ শনাক্তের বর্ণনা দিয়ে দিয়ে নূপুর বলেন, ‘আজ (রোববার) আমার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা। এ জন্য প্রদীপ দাদা আমাদের বাড়িতে আসতে ছিলেন। রাস্তা না চেনায় বাবা দাদাকে কাজীরহাট থেকে আনতে যান। সেখান থেকে প্রদীপের ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে বটতলায় লোকজন আটক করে মারধর করেন। খবর পেয়ে রাতে বুড়িরহাট গিয়ে বাবা-দাদার রক্তাক্ত দেহ শনাক্ত করি।’
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, নূপুরের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্যই রূপলাল রওনা হয়েছিলেন ভাগনি জামাই প্রদীপ দাসকে আনতে। কিন্তু সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ‘ভ্যান চোর’ সন্দেহে আটকা পড়ে যান তাঁরা। বস্তায় পাওয়া কয়েক বোতল তরলের ঘ্রাণে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্দেহ আরও বাড়ে। আর তারপর শুরু হলো নির্মম মারধর—যা শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল দুজনের প্রাণ।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রূপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি, মাতম। দলে দলে প্রতিবেশীরা বাড়ির ভেতরে-বাইরে ভিড় করছেন।
মেঝেতে বসে আছেন ভারতী দাস। চোখ লাল, গলা ভাঙা, বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন দুই সন্তান—১০ বছরের রুপা আর ১৩ বছরের জয়। তাদের মুখে অবুঝ আতঙ্ক, কিন্তু বোঝার মতো বয়স হয়ে গেছে যে বাবা আর ফিরবেন না। ভারতী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, আবার জ্ঞান ফিরেই বলতে থাকেন, ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম? ভগবান এ কেমন অন্যায় মোর সঙ্গে হইল। ছোট ছাওয়াগুলাক কায় খাওয়াইবে, পড়াইবে? মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল? বেটিটার বিয়ার কী হইবে? মুই কার কাছোত বিচার চাইম?’
এক কোণে বসে আছেন রূপলালের বৃদ্ধা মা লালিচা দাস। ভিড়ের মধ্যে তাঁর স্পষ্ট বিলাপ—‘মোর ছেলেটার দোষ কী? ও তো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণও করে নাই। কারও ক্ষতি করে নাই। জুতা সেলাই করি হামার সংসার চালাইছে। ওক ডাংগে মারিল কেন? হামাক দ্যাখপার যে এখন কায়ও থাকিল না।’
কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ গড়িয়ে পড়লেন। পাশের নারীরা চিৎকার করে পানি আনলেন, মুখে-মাথায় ঢাললেন, কিছুক্ষণ পর তিনি ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। কিন্তু চোখ খুলেও বারবার বললেন, ‘যারা মোর ব্যাটাক মারছে, তার বিচার চাই।’ গ্রামের প্রবীণ জয়নাল আবেদীন বলেন, রূপলাল দীর্ঘদিন তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাই করতেন। তিনি কখনো কারও সঙ্গে খারাপ কথা বলেননি। এইভাবে মানুষ মারা—এটা অমানবিক।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। কুর্শা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তুহিনুর ইসলাম বললেন, ‘ওর মেয়ের বিয়ের কথা ছিল। তাকে মেরে ফেলায় এই পরিবার এখন পুরো অসহায়। আল্লাহই জানেন, তাদের সংসার কেমন চলবে।’ এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, নিহত রূপলালের নামে কোনো মামলা নেই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, গতকাল রূপলালের মেয়ে নূপুরের বিয়ের দিন ঠিক করতে মিঠাপুকুর থেকে প্রদীপ দাস রূপলালের বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে রাস্তা না চেনায় কাজীরহাট এলাকায় রূপলালকে ফোন করেন। রূপলাল কাজীরহাটে যান। সেখান থেকে রাতে ৯টায় সড়কের বটতলা এলাকায় ভ্যান চোর সন্দেহে আটক হয়ে তাঁরা মারধরের শিকার হন। প্রদীপের ভ্যানে থাকা চারটি বোতলের গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়লে সন্দেহ বাড়ে। মারধরের একপর্যায়ে তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। গতকাল রাতেই রূপলালকে মৃত ঘোষণা করা হয়, ভোররাতে প্রদীপও মারা যান।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবনিয়ার সেগুনবাগিচা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
৪ মিনিট আগেযশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণে ৬৭০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফেল করা বিষয় থেকে বিভিন্ন গ্রেডে পাস করেছে ১৮৭ জন পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭১ জন।
১ ঘণ্টা আগেআজ সকাল থেকে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানসংলগ্ন মাঠে নগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠানে গৌরবকে গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। তখনই অনেক নেতা-কর্মীকে তাঁকে নিয়ে কানাঘুষা করতে দেখা যায়। নেতা-কর্মীদের অনেকেই তাঁকে নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সাত আসামিকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
১ ঘণ্টা আগে