Ajker Patrika

কনেকে ৩ বিঘা জমি লিখে দেওয়ার পর বিয়ে হলো কারাগারে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ২৩
কনেকে ৩ বিঘা জমি লিখে দেওয়ার পর বিয়ে হলো কারাগারে

প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর একপর্যায়ে তাঁরা দুজন পালিয়ে বিয়ে করেন। মেয়ের পরিবার বিষয়টি মানতে না পেরে ছেলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে। সেই মামলায় ছেলে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। শেষ পর্যন্ত মেয়ের নামে প্রায় তিন বিঘা জমি লিখে দেয় ছেলের পরিবার। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে লালমনিরহাট কারাগারে প্রেমিক যুগলের বিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ রাকিবুজ্জামান রাকিবের সঙ্গে গত ২৯ নভেম্বর ১৭ বছর বয়সী স্বর্ণা খাতুনের বিয়ে দেন। কারাগারে বিয়ে করা রাকিবুজ্জামান রাকিব আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর কালীরহাট এলাকার বাসিন্দা। আর কনে পাশের গ্রাম উত্তর বোবদার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন সাবুর মেয়ে।

এলাকাবাসী জানান, রাকিবুজ্জামান রাকিব তাঁর নিকটাত্মীয় ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত বছরের জানুয়ারিতে দুজন বাড়ি ছেড়ে গোপনে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। কিন্তু মেয়ের বাবা এ ঘটনায় অপহরণের মামলা করলে গত বছরের ১৩ জুলাই ঢাকা থেকে রাকিবকে গ্রেপ্তার ও স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। আদালত রাকিবকে জেলহাজতে পাঠান। উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্রীকে গর্ভবতী উল্লেখ করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। কিন্তু পরবর্তীকালে সন্তান নষ্ট হয়ে যায় ভিকটিমের। সেটাও আদালতকে অবগত করে চিকিৎসকের রিপোর্ট দাখিল করে পুলিশ।

প্রথমে উভয় পরিবারের সমঝোতার ভিত্তিতে উচ্চ আদালত বরের জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আপিল করলে জামিন বাতিল করেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। অবশেষে মেয়ের নামে জমি লিখে দিয়ে আপস মীমাংসা করে রাকিবের পরিবার। পরে বাদী তাঁর নাবালিকা মেয়ের (১৭) বিয়েতে রাজি আছেন মর্মে হাইকোর্টকে অবগত করেন।

এদিকে শুনানিতে ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে বলেন, তাঁর মেয়েও বিয়েতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। গত ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ তাঁদের বিয়ের নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ৮ লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। গত ৪ ডিসেম্বর কারাগারে থাকা রাকিবের জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। 

কারাগারে বিয়েতে উপস্থিত বর-কনের স্বজনেরা।আপিল বিভাগের মুক্তির নির্দেশের চিঠি কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় রাকিবের এখনো মুক্তি মেলেনি। এদিকে গত শুক্রবার মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন সাবু তাঁর অপর মেয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেন। সেখানে এক মেয়েকে তাঁর স্বামীর হাতে তুলে দিলেও অপর মেয়ে স্বর্ণাকে তাঁর স্বামীর অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দিয়েছেন আমি তাতে অনেক খুশি। সেই আদেশে আমি শুক্রবার বিয়ের কার্ড করে শত শত মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু আপিল বিভাগের সেই নির্দেশ এখন পর্যন্ত কারাগারে পৌঁছায়নি।’

বরের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে কারাগারে ছেলের বিয়ে দিলাম, ছেলের মুক্তির আশায়। বিয়ে হলেও এখন পর্যন্ত তার মুক্তি মেলেনি। বাদী বিয়াইসহ অ্যাডভোকেট ও আদালতে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। দু-এক দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তির আদেশ কারাগারে পৌঁছালে মুক্তি মিলবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কিছু জমি দিয়েছি। তবে এসব নিয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না।’

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নার্গিস তানজিমা বলেন, হাইকোর্টের আপিল বিভাগ বাদীর জবানবন্দি ও ভিকটিমের বিয়ের ইচ্ছের ওপর কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজনের নির্দেশ দেন। যা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় জামিনও মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতের কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, তা শেষে দু-এক দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তির নির্দেশনা কারাগারে পৌঁছে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে কারাগারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। ৮ লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে হয়েছে। শুনেছি, আপিল বিভাগ রাকিবের জামিনের আদেশ দিয়েছেন। আদেশের কপি হাতে পেলে রাকিব মুক্তি পাবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত